Posts

গল্প

না পাওয়ার আক্ষেপ

February 17, 2025

AKM Mehedi Hasan Chowdhury

90
View

তিয়াসা প্রতিদিনের মতো আজও ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের টুকরো। মনে হচ্ছে, ওদের মতোই অস্থির তার মন। আকাশটা যেমন বিশাল, তার ভাবনাগুলোও তেমনই গভীর। মনের মধ্যে কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে একজনের মুখ—অর্ণব।

অর্ণব... কলেজের সেই চঞ্চল ছেলেটা, যে সবসময় হাসি-ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখত সবাইকে। তিয়াসার কাছে অর্ণব মানে ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি, এক অদ্ভুত টান। প্রথমবার যখন কলেজের করিডরে অর্ণবের সাথে চোখাচোখি হয়, তখন থেকেই যেন তার হৃদয় অন্য রকম ছন্দে নাচতে শুরু করেছিল। কিন্তু অর্ণব তো কিছুই জানত না, জানবেই বা কীভাবে! তিয়াসা কখনো প্রকাশ করার সাহসই পায়নি।

দেখতে দেখতে দুই বছর পেরিয়ে গেল। অর্ণবের সাথে বন্ধুত্বটা ঘনিষ্ঠ হলেও মনের কথাটা বলা হয়নি। তিয়াসা প্রতিদিন অপেক্ষা করত, যদি কোনোভাবে অর্ণব বুঝে ফেলে। কিন্তু না, অর্ণবের চোখে তিয়াসা শুধুই একজন ভালো বন্ধু।

ক্লাসের পর দুজনে লাইব্রেরিতে বসে একসাথে পড়াশোনা করত, ক্যান্টিনে চা-সিঙ্গাড়া খেতে খেতে গল্প করত, তবু তিয়াসা বলতে পারেনি তার মনের কথা। যদি অর্ণব দূরে সরে যায়? এই ভয়ে নিজের অনুভূতিগুলোকে চেপে রেখেছিল গভীর মনের কোণে।

একদিন অর্ণব হঠাৎ করেই বলল, “তিয়াসা, একটা কথা বলব? রাগ করবি না তো?”
তিয়াসার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। কী বলতে চায় অর্ণব? মনের ভেতর অজানা শিহরণ, হয়তো সেই কথাটা, যেটা সে কতদিন ধরে শুনতে চেয়েছে। তিয়াসা মুচকি হেসে বলল, “বল না, আমি কখনো তোমার উপর রাগ করতে পারি?”

অর্ণব একটু ইতস্তত করে বলল, “আমি সোহানার জন্য প্রপোজাল রেডি করেছি, তোর কাছে ঠিক আছে কিনা জানার জন্য শেয়ার করতে চাই।”
তিয়াসার চারপাশটা যেন হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল। মনে হলো, কেউ তার বুকের মাঝখানে ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো, চোখের কোনায় জমা হলো অশ্রু। তবু হাসিমুখে বলল, “ওয়াও! দারুণ তো! নিশ্চয়ই পছন্দ করবে। আমি তো জানতামই তোর আর সোহানার মধ্যে কিছু একটা চলছে।”

অর্ণব খুশি হয়ে প্রপোজালটা দেখাতে লাগল, আর তিয়াসা ভাঙা মন নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখল। অর্ণব চলে যাওয়ার পর তিয়াসা ছাদে উঠে এল, যেখানে তার কান্না লুকানোর কেউ নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শুধু ভাবল, “তুই কেন বুঝলি না অর্ণব? আমার চোখের ভাষা কেন পড়তে পারলি না?”

এরপর থেকে তিয়াসার কাছে অর্ণব মানে ছিল শুধু না পাওয়ার আক্ষেপ, অপূর্ণতার ব্যথা। অর্ণব এখনো তার বন্ধু, কিন্তু সেই বন্ধুত্বের আড়ালে তিয়াসার অগোছালো ভালবাসা লুকিয়ে আছে, যা সে কোনোদিন অর্ণবকে জানাতে পারবে না।

তিয়াসা আজও সেই ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, মনে মনে শুধু একটাই কথা ভাবে, “কিছু মানুষ হয়তো জীবনজুড়ে থেকে যায়, কিন্তু কখনো আমাদের হয়ে ওঠে না...”

Comments

    Please login to post comment. Login