নতুন বছর এলেই রাসেলদের পাড়ায় বিশাল মেলা বসে। খেলনা, মিঠাই, নাগরদোলা—সবকিছুতেই আনন্দের ছোঁয়া। রাসেলের মনটা ভীষণ খুশি, কারণ এ বছর সে তার বাবার সাথে মেলায় যাবে। আগের বছরগুলোতে বাবার কাজের ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয়নি, কিন্তু এবার বাবা কথা দিয়েছে, যেকোনো মূল্যে ওকে নিয়ে যাবে।
সকাল থেকেই রাসেল ঘুরঘুর করছে বাবার চারপাশে। কখন যাব, কী কিনবে, সবকিছু তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বাবা হেসে বলল, “আগে আমার প্রিয় ছেলেটা একটু নাস্তা করে নে, তারপর মেলায় যাব।” মা হাসিমুখে গরম লুচি-আলুর দম এগিয়ে দিলেন। রাসেল এক নিমেষে খেয়ে নিয়ে বাবার হাত ধরে টানতে লাগল, “চলো, বাবা, দেরি করো না!”
মেলায় পৌঁছেই রাসেলের চোখ ছানাবড়া। চারপাশে রঙিন বাতি, বেলুনের সাজ, আর নানা রকম খেলনার দোকান। বাবার হাত শক্ত করে ধরে রাখল, যেন ভিড়ে হারিয়ে না যায়। প্রথমেই সে গেল নাগরদোলায়। উপরে উঠতে উঠতে তার মনে হলো, সে যেন আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আনন্দে চিৎকার করতে লাগল, “আহা! কী মজা!”
নাগরদোলার পর রাসেল বাবাকে নিয়ে গেল খেলনার দোকানে। সেখানে নানা রকম রোবট, গাড়ি, পুতুল—কত কিছু! রাসেলের নজর পড়ল একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ির দিকে। বাবা কিছু না বলে সেটা কিনে দিলেন। রাসেলের মুখে তখন যেন বিজয়ের হাসি!
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে রাসেলের খিদে পেয়ে গেল। বাবা নিয়ে গেলেন মিঠাইয়ের দোকানে। গোলাপি রঙের বাতাসা আর খয়েরি রঙের মোয়া দেখে তার জিভে জল চলে এল। বাবা হেসে বললেন, “আজকে তোর কোনো মানা নেই, যা খুশি খা।” রাসেল মিঠাই খেতে খেতে বলল, “তুমি সেরা বাবা!”
এরপর রাসেল গেল ম্যাজিক শো-তে। জাদুকর একের পর এক মন্ত্র পড়ে হাতের ছড়ি দিয়ে কখনো ফুল বানাচ্ছে, কখনো পায়রাকে উড়িয়ে দিচ্ছে। রাসেলের চোখগুলো বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। সে বাবাকে ফিসফিস করে বলল, “তুমিও কি এমন জাদু জানো?” বাবা হেসে বললেন, “হ্যাঁ রে, তোর মুখে হাসি ফোটানোর জাদু আমার জানা আছে!”
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এলো। মেলায় তখন আরও বেশি ভিড় জমেছে। বাবা রাসেলকে নিয়ে গেলেন পুতুল নাচ দেখতে। কাঠের পুতুলগুলোকে তাঁতি মামা এমনভাবে নাচাচ্ছিলেন, যেন সত্যি সত্যি তারা কথা বলছে। রাসেল হাততালি দিয়ে হাসতে লাগল, “আবার নাচাও, আবার!”
মেলার শেষে রাসেলের মন খারাপ হয়ে গেল, “বাবা, মেলা কি শেষ হয়ে গেল? আর আসতে পারব না?” বাবা হেসে বললেন, “কেন? আগামী বছর আবার আসব।” রাসেল উচ্ছ্বাসে চিৎকার করে বলল, “তুমি পৃথিবীর সেরা বাবা!”
সেই রাতে ঘুমানোর আগে রাসেল বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আজকের দিনটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আমি আজ একদিনের জন্য রাজা ছিলাম, ঠিক না বাবা?” বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তুই তো আমার চিরদিনের রাজা, আমার ছোট্ট রাজপুত্র!”
এভাবেই রাসেলের একদিনের রাজা হওয়ার গল্প শেষ হলেও তার মনে গেঁথে থাকল স্মৃতির রঙিন পাতাগুলো। প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা হাসি, প্রতিটা আনন্দ—সবকিছু যেন তার শৈশবের শ্রেষ্ঠ উপহার হয়ে রইল।