নীরব দুপুর। রুমের জানালা দিয়ে শেষ বিকেলের আলো ঢুকছে। বাতাসে হালকা শীতলতা। জানালার পাশে চেয়ারটিতে বসে আছে অরিত্র। চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা, মুখে বিষাদের ছাপ।
অরিত্রর জীবনে সবকিছু ছিল। বড় চাকরি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি—সবই ছিল তার কাছে। কিন্তু যার জন্য এই সমস্ত সংগ্রাম, সেই মানুষটিই আজ পাশে নেই। প্রিয়তমা স্ত্রী রিতার হঠাৎ চলে যাওয়া অরিত্রকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে।
"অরিত্র, তুমি সব সময় কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত কেন? আমাকে একটু সময় দাও,"—রিতা কতবার বলেছে! কিন্তু অরিত্র শোনেনি। তার কাছে তখন ক্যারিয়ারই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভেবেছিল, রিতাকে বিলাসী জীবন দিলে সব দায়িত্ব পূর্ণ হবে।
একদিন রিতা আর সহ্য করতে না পেরে চিরদিনের মতো চলে যায়, রেখে যায় একটি চিঠি—
"অরিত্র, তুমি ভালোবাসা দিতে জানো না, শুধু দায়িত্ব পালন করো। কিন্তু আমি দায়িত্বের মধ্যে বন্দি থাকতে পারি না। বিদায়।"
চিঠির প্রতিটি শব্দ ছিল তীরের মতো। অরিত্র বুঝতে পারল, সে রিতাকে সব কিছু দিয়েছে, শুধু সময় দিতে পারেনি।
আজ এত কিছুর মাঝে অরিত্র নিঃসঙ্গ। চারপাশের বিলাসিতা তার কাছে অর্থহীন মনে হয়। কাজের ব্যস্ততা শেষে যখন ঘরে ফিরে, তখন রিতার অভাব তাকে কুরে কুরে খায়।
কফির মগ হাতে নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায় অরিত্র। বাইরে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সেই শেষ বিকেলের আলো রিতার খুব পছন্দ ছিল। প্রতিদিন বিকেলে তারা ছাদে বসে সূর্যাস্ত দেখত। রিতা তখন তার কাঁধে মাথা রেখে বলত, "অরিত্র, ইশ! সময়টা যদি থেমে যেত!"
অরিত্র বুঝতে পারে, রিতার চাওয়া ছিল শুধু তার সঙ্গে কিছু মুহূর্ত কাটানো, যা সে কখনো দেয়নি। আজ সময় আছে, আছে অসীম নিঃসঙ্গতা, কিন্তু রিতা নেই।
অরিত্রর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। একাকীত্বের এই গভীর কষ্ট তাকে আরও বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। চারপাশে মানুষের ভিড় থাকলেও তার জীবন ফাঁকা, রিতাহীন।
দিন যায়, রাত আসে। কিন্তু অরিত্রর দিনগুলো থেমে আছে সেই বিদায়ের মুহূর্তে। সে অপেক্ষা করে, হয়তো কোনোদিন রিতা ফিরে আসবে। কিন্তু জানে, সেই আশা শুধুই মরীচিকা।
শেষ বিকেলের আলো ক্রমেই ম্লান হয়ে আসে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসে অরিত্রর চারপাশে, ঠিক যেমন তার হৃদয়ে গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে রিতার অভাবে।