পোস্টস

গল্প

গল্প রিসার্চ

১৯ মে ২০২৪

জালাল উদ্দিন লস্কর

মূল লেখক জালাল উদ্দিন লস্কর



রিসার্চ 
জালাল উদ্দিন লস্কর 

আবুল ছালাম দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের  অধ্যাপক।তার একটি গবেষণার খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে এখন দেশের প্রায় সবাই এক নামে চেনে।তিনি এখন তুমুল আলোচনায়।এটাই চেয়েছিলেন আবুল সালাম নিজেও।
পক্ষে-বিপক্ষে তাকে নিয়ে আলোচনা।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাখ লাখ শেয়ার কোটি কোটি কমেন্ট।পক্ষে বিপক্ষে।এসব দেখে আবুল সালাম না খুশী না বেজার।তিনি নিজেও জানেন এবং বিশ্বাস করেন তার এই গবেষণা ভিত্তিহীন। এর মোটেও কোনো সারবত্তা নেই।

এর আগে দেশে পোল্ট্রি ফিড নিয়ে একবার গবেষণা করে কিছুটা আলোচনায় আসেন তিনি।সেই গবেষণায় তিনি দেখান ব্রয়লার মুরগীর খাবারে মিষ্টিজাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব থাকার কারনে যারা এ মুরগীর মাংস খাবেন তারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পড়বেন।দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেল তখন  অধ্যাপকের ভুল গবেষণা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করে।সেই সংবাদে ডঃ আবুল ছালাম মাত্র দুইটা মুরগী নিয়ে করা তার গবেষণার কথা স্বীকারও করেন।একটি নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের একজন অধ্যাপকের এমনতরো গবেষণার কথা জানাজানি হলে চারিদিকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।তিনি হাসির পাত্র হন সব মহলে।এরপর থেকেই  আবুল ছালাম নতুন ফন্দি আঁটতে শুরু করেন।আগের গবেষণাটি হালে পানি না পাওয়ায় বরং উল্টো হাসির পাত্র হওয়ার প্রতিশোধ নিতে তিনি মনে মনে পণ করেন।চিন্তা করতে থাকেন কি করা যায় এরপর। পাবলিককে কোন বিষয়টা সহজে গেলানো যায় ভাবতে থাকেন।বেশ কয়েকদিন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে মেতে থাকেন।খেয়াল করতে থাকেন বর্তমানে এদেশের বেশীরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কোন বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশী সেনসেটিভ। তিনি খেয়াল করে দেখলেন সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের এ দেশে অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই ধর্মীয় ইস্যুতে বেশ একাট্টা। ধর্ম বিষয়ক যে কোনো পোস্টেই হাজার হাজার লাইক কমেন্ট হয়।শেয়ারও হয় দেদার।তবে লেখাটা হতে হয় আবেগজাগানিয়া ও মুখরোচক।তিনি একদিন একজনের একটা পোস্ট  দেখলেন। পোস্টদাতা হযরত আদম(আঃ) এর কবরের একটা ছবি পোস্ট করে লিখেছেন,আমিন না বলে কেউ যাবেন না।লক্ষ লক্ষ লাইক আর আমিন লেখা কমেন্ট দেখে তিনি রীতিমতো ভীমড়ি খেলেন।অন্য একজনের পোস্টে নুহ নবির কিস্তির ছবিতেও একইভাবে লাইক কমেন্ট আর শেয়ারের সুনামী দেখা গেলো।তিনি অবাক হলেন।
ইউটিউবে কবরের আজাবের কিছু ভিডিওতে সোবহানাল্লাহ কমেন্ট গুনে শেষ করতে পারলেন না তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়র একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী ফুল প্রফেসরের মানুষের সেন্টিমেন্ট বুঝতে গবেষক হতে হয় না।এই সামান্য কয়েকটি বিষয় থেকেই আবুল ছালাম সাহেব এদেশের পাবলিক সেন্টিমেন্টের প্যারামিটারটা ধরে ফেললেন।মনে মনে বললেন,ইউরেকা।পেয়েছি।আর যায় কোথায়।

আবুল ছালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে একটা বিজ্ঞপ্তি দেখলেন।প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা ও প্রকাশনা মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে।সংস্লিষ্ট বিভাগগুলোর অংশগ্রহণের আহবান সম্বলিত এ বিজ্ঞপ্তিটি আবুল ছালামের মনে আশার আলো জ্বেলে দেয়।এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে হবে নিজেকেই নিজে শোনান আবুল।ডিপার্টমেন্টের নিজের অফিসক্ষে বসে চিন্তা করতে থাকেন তাহলে কি করা যায়।এই মেলা নিশ্চয়ই জাতীয়ভাবে বেশ কাভারেজ পাবে।সংবাদপত্র এবং টিভি মিডিয়া ঘটা করে প্রচার করবে মেলার খবর।প্রথমবারের মতো আয়োজন।তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও বাড়তি মনোযোগ থাকবে প্রচারের আলোয় কিভাবে থাকা যায় সেদিকে।মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন আবুল ছালাম।
রসায়নের অধ্যাপক হলেও তিনি বেশ ভালো আর্ট করতে পারেন।ছোটবেলায় মামার সাইনবোর্ডের দোকানে কিছুদিন বসেছেন।মামার কাজ দেখে দেখে তার নিজের মনও আর্টিস্ট হওয়ার স্বপ্ন তৈরী হয়েছিল তখন।মাঝেমধ্যে এটা-সেটা আঁকতেনও।এভাবেই আর্টের কাজে কিছুটা হাত পাকান আবুল ছালাম।
নিজের ড্রয়ারে থাকা একটা মার্কার পেন বের করে একটা কাগজে কয়েকটা অক্ষর লেখার চেষ্টা করলেন আবুল ছালাম।নিজের পারফরমেন্সে নিজেই মুগ্ধ হলেন।কনফিডেন্স পেলেন নিজের উপর।আরবী হরফ লিখলেন এবার কয়েকটা।বেশ সুন্দর হলো হরফগুলো।

অফিসের পিওনকে ডেকে বিভিন্ন কালারের কয়েকটা 
স্কেচ পেন আর কিছু আর্ট পেপার কিনে আনতে বললেন নীলক্ষেত থেকে।

আর্ট পেপারে সুন্দর করে একটা  কংকালের ছবি আঁকলেন আবুল ছালাম।তারপর সুবিধামতো জায়গায় মার্ক করলেন।
মার্কিং করা জায়গাগুলোতে তিনি কিছু সাংকেতিক চিহ্ন এঁকে এগুলোর ধর্মীয় একটা ব্যাখা দাঁড় করালেন।
নির্দিষ্ট দিনে গবেষণা ও প্রকাশনা মেলায় আবুল ছালামের পোস্টার প্রদর্শনের জন্য রাখা হলো।বেশীরভাগ দর্শনার্থীই বিস্ময়কর এমন গবেষণার কোনো সারবত্তা খুঁজে না পেলেও কিছু আবুল ভক্ত ফেসবুকে  ভক্তিতে গদগদ হয়ে এই গবেষণা বিষয়ে পোস্ট দিতে থাকে।তারা মিঃ আবুল ছালামকে একজন কামেল সাধক মনে করে ফুলিয়ে ফাপিয়ে প্রচারণা চালাতে থাকে।কিন্তু বাঁধ সাধে মিডিয়া।মূলধারার মিডিয়াগুলো আবুল ছালামকে ধুয়ে দিতে থাকে।বুদ্ধিজীবীরাও বসে থাকেন না।তারাও একচোট নিতে থাকেন আবুলের উপর।বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর কি করে এমন সস্তা ও চটুল গবেষণা করেন আবার কেমন করে তা ছড়িয়ে দিয়ে জনপ্রিয়তা ও সম্মান পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তা ভেবে পায় না সচেতন নেটিজেনরা।

'আমি তো আর চুরিচামারি কিছু করি নি।এদেশে তো অনেকে অন্যের পিএইচডি থিসিস চুরি করেও ডক্টরেট ডিগ্রী বাগিয়ে নিয়েছেন।পরে ধরাও খেয়েছেন।পত্রপত্রিকা টেলিভিশনে সেসব খবর দেদার চাউর হয়েছে।কই তাদের তো আর জেল ফাঁসি কিছুই হয়নি।একটা ইনক্রিমেন্ট বন্ধ কিংবা চাকুরীতে একধাপ অবনমন ছাড়া তাদের কিছুই হতে শুনেনি কেউ।
আর আমি যেটা গবেষণায় দেখাতে চেয়েছি সেটা আমার নিজের মাথা থেকেই তো বেরিয়েছে।আমি তো আর কারো কাছ থেকে আইডিয়া ধার করিনি।আমার গবেষণা ইউনিক।একসময় হয়তো আমার গবেষণাকর্ম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেতে পারে।মরণোত্তর কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জুটে যেতে পারে আমার।'
নিজের মনে নিজেই ভাবতে থাকেন প্রফেসর আবুল সালাম।