Posts

উপন্যাস

হাহাকার [চ্যাপ্টার ৩]

February 20, 2025

আব্দুল কুদ্দুস বিপ্লব

123
View

সাজ্জাদ আর মারিয়া ঘনিষটভাবে পঙ্কিল জীবন যাপনে ডুবে আছে ,খুব আনন্দিত –উত্তেজিত ব্যস্ত জীবন । সাজ্জাদের চাকরি আর কবে হবে? সে এখন কৌশল খুজছে কিভাবে মারিয়ার নামের টাকা নিজের নামে নেয়া যাবে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? মারিয়াকে কবজা করতে না পারলে তোঁ টাকা হস্তগত হবে না।কিন্তু বিয়ে না করলে তোঁ ধরা দিবে না। আর সজ্জাদকে বিয়েই করবে কিনা কে জানে। মারিয়া তোঁ বিয়ের কথা নিজে থেকেই বলেছিল । ঐ গুলো তার আবেগি বা দুর্বল সময়ের কথা ও হতে পারে। যে করেই হোক সে তার পরিকল্পনা সফল করবে। পরিকল্পনা থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসবে না সজ্জাদ। তার রাজ্য ,রাজ কন্যা এক সাথেই চাই আমি মারিয়ার মন চাই,শরীর চাই, প্রতিসঠা চাই। সাজ্জাদ ভাবছে মারিয়াই বিয়ের প্রস্তাব দিক। তাতে পরিস্থিতিটা  আরও অনুকুলে আসবে। কৌশলে সাজ্জাদ, ঘুজব ছড়িয়ে দিল তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।  এ সংবাদ মারিয়াকে খুব আহত করে, বিচলিত করে ও মর্মাহত করে। 

----সাজ্জাদ বিয়ে করবে আর আমি জানবো না।সে কি করে হ্য?সাজ্জদ মারিয়ার খুব প্রিয়। রাকিব ও স্বামী হিসেবে খারাপ না,তবে সাজ্জাদের সাথে তার তুলনা হয় না। সাজ্জাদের শক্ত মজবুত দেহ, উচুলম্বা ফিগার আঁটসাঁট শরীরের বাঁধন ,সুবিস্তৃত কপাল প্রায় জোড়ভ্রু অতুলনীয়। যে কোন নারীর কাছে সে স্বপ্ন পুরুষ।নিঝুম রাতে সাজ্জাদ এসেছে। বারান্দায় অপেক্ষা করছিল মারিয়া । সাজ্জাদ মারিয়ার গলার উপর হাত উঠাইয়া দিল ।কিন্তু একি! মারিয়া কাঁদছে ।

-----মারিয়া কাদছ কেন?

----তোমার বিয়ে ঠিক হবে অথচ আমি জানবো না

----বিয়ে তোঁ একদিন করতেই হবে।

----তা করতেই হবে। আমার কি হবে? আমি যে দেহ মন সব সপে দিয়েছি তোমাকে ।আর তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে ,আমি তার কিছুই জানবো না?

---সে কি তোমার স্বামী-ছেলেমেয়ে আছে না?

   রাকিব ভাইও কয়েক মাসের মধ্যে দেশে আইসা পরবে ।

----তোমরা পুরুষরা না সবই পারো, তুমি না কোন দিনই আমাকে ছাইড়া যাইবা না? 

----হ্যাঁ তাতো যাইবই না,তুমি আমার মনে আছো না? তুমি আমার মনের রানী,রানী হয়েই থাকবা। তুমি আমার ভালবাসা।

----এসব আমি বুঝি না,রানী হবার দরকার নাই আমার। আমি তোমাকে চাই,তোঁমার মন চাই ,দেহ চাই ভালবাসা চাই, সব।

----সে কেমন কইর‍্যা হয়, তুমি আমার আরেক জন্মের স্ত্রী না?

----আরেক জন্মের তোমার স্ত্রী হবার দরকার নাই আমার। আমি তোমাকেই চাই ,ইহ জন্মেই চাই, তুমি আমাকে বিয়া কর। আমি তোমারে ছাড়া বাচুম না।

----আমার চাকরি নাই, বাকরি নাই, ব্যবসা নাই, ধন দৌলত টাকাপয়সা কিছুই নাই। আমি তোমাকে বিয়া করবো কি কইর‍্যা ?

----সে ব্যবস্থা আমি দেখবো ।তোমাকে আমি ভালবাসি ।আমার সর্বস্ব তোমার, তোমার সর্বস্ব আমার  তুমি আমাকে বিয়া কর ,আর যদি না কর  তাহলে আমি ফাঁস লইয়া ,বিষ খাইয়া মরুম।

----সাজ্জাদ মনে মনে বলে, এই টাইতোঁ চাইছিলাম ।ঔষধ ধরেছে মোক্ষমভাবে। ডাবল আনন্দে কাজকর্ম  সেরে বাড়ি চলে গেল। রাত তখন ১১.৩০ টা ।      

  মারিয়া রাত ১.৩০ টায়ও ঘুমায়নি। শুধু চিন্তা আর চিন্তা। সাজ্জাদকে পেতে হলে তার সব কিছু ছেড়ে যেতে হবে। তার সন্তানের কি হবে? ছোট বাচ্চা রাফেজাটা এখনও বুকের দুধ খায়, কে তাকে দুধ খাওয়াবে? সমাজ সমাজের মানুষ তাকে কি বলবে? কলঙ্কিনী ,বেশ্যা, কুলটা, নিষ্ঠুর ও পাষণ্ড? রাকিব 

তাকে কি বলবে, সর্বনাশী, বিশ্বাসঘাতক,অকৃতজ্ঞ,নিমকহারামী। শাশুড়ি তাকে কি ভাববে ,কি বলবে?

---ভাবুক যে যা ভাবার, বলুক যে যা বলার। থোরাই কেয়ার করি সমাজের, সমাজের মানুষের। সমাজ ,শুধু বিধান দিতে পারে, উপদেশ বিলাতে পারে, প্রতিকার, উপশম দিতে পারে কি? তার সন্তান? থাক, সেতো আর তাদের কাছেই থাকবে, আমেরিকা তোঁ যাচ্ছে না? এ আমি কি ভাবছি? এভাবনা যে আমাকে পোষা করে দিচ্ছে। দুর্বল করে দিচ্ছে। সমাজ, সংসার, সমাজের মানুষ কিইবা দিতে পারে, কানে বিষ ও অমৃত ঢালা ছাড়া?  কি আর ক্ষমতা আছে পঙ্গু সমাজের আমাকে খুশি করার? না, আমি সময়ের সাহসী সন্তান। সারা পৃথিবী একদিকে আর সাজ্জাদ আর আমি আরেক দিকে ,কোন শক্তিই আমাদের পৃথক করতে পারবে না।  সমাজ –সংসার আমাদের দরকার নাই, আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য আলাদা ভুবন সৃষটি করে নেব। মানুষের তথা জীবের মনের ও দেহের দুয়েরই ক্ষুধা রয়েছে, দুয়েরই পরিতৃপ্তি প্রয়োজন ।এ ক্ষুধা স্বামী রাকিব ও সাজ্জাদ উভয়েই মিটায় । এ ক্ষেত্রে যে বেশী তৃপ্তিদানকারী সেই অগ্রগণ্য ।সে বলে পৃথিবীর অনেকেই কমবেশি চোর ।যারা ধরা পরে, তারাই ঘৃণ্য চোর অভিধায় অভিযক্ত । অন্যান্যদের চোর বলার সাহস কাউর নেই। তাই কি তারা সাধু? লোক নিন্দা, কলঙ্ক, অপবাদ তার অহংকার। ইত্যাকার নানা কিছু চিন্তা করতে করতে সে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পরে।   

 তিন মাস পর বৃত্তির রেজাল্ট হল। স্বাধীন, আগমণী,প্রদীপ ও সুহানা ফাস্ট গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে , সাধারন গ্রেডে তিনজন । অনেকদিন পর এতো গুলো ছেলেমেয়ে বৃত্তি পেয়েছে। গেলো বছর গুলতে ২ টা ৩ টার বেশী বৃত্তি পায় নি। সমগ্র স্কুলে আনন্দের ঢল নেমেছে। শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী- অভিবাবকরা সবাই আনন্দে উন্মুখ। আজ অনুষ্ঠান ।অনেক বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে। অভিবাবক,শিক্ষানুরাগি,রাজনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ সারকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী আসছেন।. বিশেষ আমন্ত্রণ লিপি আমন্ত্রণ পত্র প্রদান ও বিলি করা হয়েছিল। সম্মানিত অতিথিদের আসার আগে ছাত্র-ছত্রীরা আনন্দ করছে, ঘুরাঘুরি করছে। আনিস স্যার ও শ্রাবন্তী ম্যাডামের নেতৃত্বে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয়কে বিচিত্র সাজে সাজানো হয়েছে।

দেখ আগমনী, আজ কাকে নিয়ে ঘুরছে রক্তিমা, সবিতা বলল।

----কিরে রক্তিমা, আজ আবার নূতন মেহমান? আগমনী জিজ্ঞেস করলো।

----আমার কাছে সবাই নূতন সবাই পুরান, এ হল আমার বন্ধু আলিংগন, আর বন্ধু আগমনী ও সবিতা

---Hi

---রক্তিমা, ওদের সাথে দেখা হল তুমি ওদের সাথে সময় পাস কর, আমি ঐদিকটা দেকে আসি,That side.

---o.k যাও 

নূতন আর পুরাতন কী, একটা ধরবি আরেকটা ছাড়বি ,আরেকটা ধরবি নিত্য নুত্রন----ওয়ান টাইম ইউজ।বুঝলি?

----তোর পোশাক কিন্তু চমৎকার, আগমনী বলল।

----নুতন ফ্যাশন, গেট আপ আছে না? রক্তিমা বলল।

----হ্যাঁ ,দরজা জানালা, গবাক্ষ সব খোলা ,সবিতা বলল।

----হ্যাঁ তা বটে, শোন ,বন্ধু আর ফ্যাশন একই ,শুধু পরিবর্তন।শুধু একজনে রুচি লাগে? যত দিন ভাল লাগবে,থাকবে তাঁর পর Rejected---বাতিল।

----যাইরে, এই আলিঙ্গন এদিকে এসো, দশ মিনিট পর আসছি

----দেখ মনি, নামের ছিরি, দরজা জানালা একদম খুলা, সবিতা বলল।

----সবিতা, তুই রক্তিমার মত একসেট পোশাক নিয়ে লো।

-----তাঁর মানে?

-----তোর না দেহ মন বড় হবার জন্য বাইরের আলো হাওয়া প্রয়োজন ।এতে তোর আর বাইরে যেতে হবে না ঘুরতে, আলো হাওয়ার কোনই কষ্ট হবে না তোকে সাক্ষাত দিতে। 

----আমার দরকার নেই আলো হাওয়ার।

-----দরকার নেই মানে? এক মুখে দুই কথা? তুই না বলেছিস দেহ মন বড় হবার জন্য বাইরের আলো হাওয়া দরকার।

----আমার আলো হাওয়ার প্রয়োজন নেই----কোন রুচিতে ঐ পোশাক পরে, ঐরূপ কথা বলে?

----ওর কথা বাদ দে, তোর আবার রুছি যে বড়? 

---- তোর রুছি তোর, আমার রুছি আমার। সিভিক্স ম্যাডাম বুঝালেন না, রুচি গনতান্ত্রিক নয়, ব্যক্তি তান্ত্রিক, সিভিক্স বইয়ে দেখিস ভাল ভাবে দেয়া আছে।

-----রক্তিমা আবার এসে বল ,তুই আবার বই নিয়ে আসসিস, ম্যাম নিয়ে আসসিস,সবি Don’t care anythlng,anybody.দুনিয়াটা শরীর প্রদর্শনীর -- এক্সিবিশন বুঝলি? আমি ভাই ক্ষতিতে নেই,Okay?

-----একটু বেশী হয়ে গেল না?আগমনী বলল।

-----Not at all

----তুইতোঁ ভাল ইংরেজি শিখেছিস, রক্তিমা?আগমনী বলল।- 

----আরে, না, না, তুই তোঁ জানিস মনি, আমি ইংরেজিতে কত কাচা। কোচিং এর হাসনাত সারকে দিয়ে কিছু কমন ডায়ালক লিখিয়ে মুখস্ত করেছি, বলতে বলতে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কথাবার্তার মধ্যে কিছু কিছু ইংরেজি বলার মুডই আলাদা, দামও আছে, বস্তা বস্তা বিদ্যা থাকলেই হবে না, তা কাজে লাগাতে হবে।Lets’ go আলিঙ্গন।Thanks bye,bye.

----আগমনী-আলিঙ্গন মিশে ভাল 

---দেখ সবি, পিঞ্চিং কইর‍্যা কথা কইবি না.

--- All right 

 ---এই তোঁ তুইও ইংরেজি শিখে গেছিস। 

   

  সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হল। কৃতিরা হল ---স্বাধীন, আগমনী, প্রদীপ, সুহানা, আতিক, সবিতা ও পলাশ । প্রথম চার জন ফাস্ট গ্রেডে এবং শেষের তিন জন দ্বিতীয় গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেছে। তাঁরা মাল্য ভূষিত হয়ে সমবর্ধিত হল। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে একটি অভিধান,একটি জীবনী গ্রন্থ ও প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে একটি কলম গ্রহণ করলো। অনুষ্ঠানে স্বাধীন,আগমনী,প্রদীপ, আতিক ও সুহানা বক্তব্য রাখল। সাবেক ছাত্র ছাত্রীদেরে মধ্যে হান্নান ও কনিকা সাহা বক্তব্য রাখল। শিক্ষক শিক্ষিকা, বিদ্যানুরাগী, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কৃতিদের উদ্দেশ্যে এবং বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানের কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সম্মানিত প্রধান শিক্ষক উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে, কৃতিদের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করে,তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করে এবং সবায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে, সম্মানিত প্রধান অতিথিকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তাঁর জ্ঞানগর্ব বক্তব্য শেষ করেন। সর্বশেষে সম্মানি প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আ,আ,মাহসিন হক বলেন,

কৃতিদের অভিন্দন, সবায়কে ধন্যবাদ। কৃতিরা শুধু নিজেরা কৃতিত্ব অর্জন করেনা, অন্যকেও কৃতিত্ব অর্জনে উৎসাহিত ,অনুপ্রানিত ও উজ্জীবিত করে। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে তাদের কৃতিত্ব অর্জন এবং এভাবে পরিশ্রম ,সাধনা ও অধ্যবসায়ের নুতন দ্বার উন্মোচন করে। তাঁরা সময়ের মূল্যায়ন করে এবং মেধার উপযুক্ত জায়গা সৃষ্টি করে। প্রধান অতিথি তাদের দায়িত্ব সচেতন ,সমাজ সচেতন, ও রাজনৈতিক সচেতন ভুমিকা রাখতে আহবান করেন । অন্ধ অনুকরন নয় ,যুক্তিমুলক অনুশীলন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। দেশ সেবা ও মানব সেবার আদর্শ ও ব্রত গ্রহনের পরামর্শ দেন। গতানুগতিকতা পরিহার করে সাহিত্যপ্রেমী, সৃস্টিশীল  ও  বিজ্ঞান মনস্ক হতে আহবান করেন। তাদেরকে সম্পদে পরিণত হয়ে শিক্ষার মুল সত্যের উদ্বোধন করতে আত্মনিয়োগ করতে বলেন। খামাখা যুদ্ধ, আগ্রশন্‌ বন্ধ করতে বলেন, সন্ত্রাস ও অশান্তির পথ পরিহার করে  বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে বলেন এবং সমগ্র শ্রেয় বোধ গ্রহণ ও পরীক্ষা করে মানুষের কল্যাণে তা নিয়োগ করতে বলেন।নিজেকে সর্বাধিক যোগ্য করে গড়ে তুলতে এবং ‘Show your best’ উপদেশ প্রদান করেন। আবার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। 

অতঃপর প্রত্যককে একপ্লেট ক্ষীর, একটি আপেল, একটি কলা ও একটি পেয়ারা এবং একটি সেভেঞ আপ দিয়ে আপ্যায়িত করেন । 

শেষ পর্বে, মনোজ্ঞ সাংস্কৃাতিক,অনুষ্ঠান উপভগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষিত হয়। 

আগমনী  ও স্বাধীন অনুষ্ঠানের দিন ডেটিং করে এসেছে তাঁরা রেশমি পার্কে যাবে। একটি মাত্র বাকি রেশমিতে যাওয়ার । দুজনের কাউর ঘুম আসছে না। রাতের চৌহদ্দিতে বন্দি দুটি বুবুক্ষু হৃদয়। মোবাইল থেকে ভেসে আসছে,’ আমার মন বলছে তুমি আসবে এ হৃদয়ের বসন্ত বাহারে’।   কে বলছে তুমি আসবে না, অবিশ্যি আসবে। সামনে শুধু দীঘল রাত । রাতের  দীর্ঘতা শুধু বাড়ছে।ঘুম ও দ্বীপান্তরে গেছে চলে। অলস ঘড়িটার কাঁটা শুধুই বিরক্তি উৎপাদন করছে। দুজনেই তিন এজারস। ভলকানো আবেগ দুজনেরই। অস্থির মতি, চঞ্চল গতিবিধি। রাতের অন্ধকার ইনভেলাপে দুজনের গনতব্য আটকা । রাতে দুপ্রান্তে দুটি কচি মন । মাঝখানে কোঁকড়ানো অধকার। বড়ই অস্বস্থিকর । সূর্যদেব অনুগ্রহ না করলে কোনই উপায় নেই কাউর। দীগল রাতের দুপ্রান্তে প্রিয় সান্নিধ্যে ব্যাকুল দুটি হিয়া –অদৃশ্য চুম্বক। অন্ধকার বুক চিরে উকি দিচ্ছে সূর্যদেব, বোধ হয় ঘুম ভাংল। নরম স্নিগ্ধ হাঁসি ফোটেনি এখনও অবয়বে । তাঁর আগেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে প্রসাধনী মাখছে ব্যস্ত কম্পমান দুটি নড়বড়ে হাত।মা বলছেন রান্না ঘর থেকে। এতো সাজ গোঁজ কেন এত সকালে, স্কুলও তোঁ আজ ছুটি।

---আমার এক বান্ধবীর খুব অসুখ,ওদের বাড়িতে যেতে হবে, এক্ষনি রওনা হতে হবে। রেডিমেড চিরন্তন মিথ্যে বুঝি প্রিয় সান্নিধ্যের জন্যেই ।

----যেখানেই যাস খেয়ে জাস,কালের তরকারি, আমি গরম করে রেখেছি,তার আগে ডিম সিদ্ধটা খেয়ে নিস।খাবার পর গ্লাসে দুধ রাখা আছে চুমুক দ্দিয়ে নিস।

----ঠিক আছে আম্মু।চোখে মুখে কিছু খেয়ে দুধটুকু চুমুক দিয়েই রাস্তায় বেরুল, আগমনী।

----স্বাধীন ও একই ভাবে হন্তদন্ত হয় স্কুলবোর্ডিং থেকে রেশমির দিকে রওনা হল। কিছু ক্ষনের মধ্যেই দুজনে রেশমি পার্কে। গাছের ছায়ায় আড়াল আবডাল দেখে দুজনে বসলো ,কাউর মুখে কোন কথা নেই। দুজনের চোখে মুখেফুটে উঠেছে চোর চোর ভাব।চুপি চুপি কি যেন দেখার লজ্জা স্নাত চোখ মুখ, কখনো আন ত, কখনো উন্মীলিত। 

 ----আসতে অসুবিধা হয়নি তোঁ তোমার রাস্তায়? স্বাধীনই প্রথমে নীরবতা ভাংলো।আসলে শুরুটাই কঠিন।

----না, তোমার? আগমনীও জিজ্ঞেস করলো।

------আমার কোন অসুবিধা হয়নি, স্বাধীন আরও একটু এগিয়ে এসে মনির একটি হাত তাঁর মুঠোর মধ্যে নিল ।হাত কাঁপছে কেন তোমার, মনি?

-----তোমার হাত ও কাঁপছে।

রাতে কথার ভিড় জমে ছিল দুজনেরই। এখন একটি কথা ও মুখে আসছে না কাউর। এত কথা গেল কোথায়? প্রিয় সান্নিধ্যে সব কথা কি হারিয়ে যায়? বাঁচাল রাতটি এখন কোথায়? কথার জটে কথা আটকে গেছে।দুজনের দুটি হাত দুজনের হৃদয় স্পর্শ করছে।আমি তোমায় ভালবাসি---ভালবাসি। যে ভালবাসা রাতে অনুরাগের স্বপ্ন আঁকছিল, এখন সেই ভালভাসা অন্তরে অন্তরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, অনুরনিত হচ্ছে ,অনুভুতিরা কথা কয়ে উঠছে। জীবনে কোন দিনই বসেনি দুজনে মুখোমুখি। অস্বস্তি লাগছে দুজনেরই, পরম আনন্দের ক্ষনে বোধ হয় হয়।

----স্বাধীন আরও ঘনিষট হয়ে, তাকে কোলের কাছে টেনে আনে এবং কম্পিত ঠোঁটে চুমু খায়। আরও কাছে এনে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নেয়,দেহে তোলপাড় আরম্ভ হয়, আগমনী লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মিষ্টি একটা অনুভুতি কথা কয়ে উঠে শরীরে-মনে, কম্পনে,শিহরনে । দুটি মানুষের অনুভুতি এক হয়ে সোচ্চার হয়ে উঠে  একদেহে একমনে অভিন্ন চেহারায় অভিন্ন অবয়বে। হোক না প্রথম দেখা, এত সময় নষ্ট করার সময় কোথায়? যাকে ভাবি অনুক্ষন তাকে আপন করতে কতক্ষণ?

----স্বাধীন বলল, মনি,আমাকে একটি চুমু দেবে না? 

----আমার লজ্জা করে। 

----কিসের লজ্জা? কোন লজ্জা নাই।

অনেক সাহস করে আগমনী চুমু দিতে গেল স্বাধীনের কপালে,কিন্তু সে কাঁপছে থর থর---ব্যর্থ হয়ে এল। সে সর্ব শক্তি নিয়োগ করে চুম্বন একে দেয় স্বাধীনের গালে, কম্পিত ঠোঁটে।

----স্বাধীন তাকে কোলে বসিয়ে ক্ষুধার্ত নেকরের মতচুমু খেতে লাগলো মনির কপোলে ,ঠোঁটে, চোখে এবং হাতে।স্বাধীন তাঁর বুকে হাত দিল , নূতন ব্রা অনেকটা আলগা হয়ে গেল। মনি স্বাধীনের হাত সরিয়ে দিয়ে কোল থেকে সরে এলো। দুজনেই টিসু দিয়ে হাত মুখ মুচে, মাথা আচরিয়ে বসলো। স্বাধীন বাদামওয়ালাকে ডেকে দশ টাকার বাদাম নিল

----জাল লবন লাগবে?

----হ্যাঁ দাও।

তাঁরা দুজনেই বাদামের খোসা ছাড়াতে লাগলো। মনি খোসা ছাড়িয়ে দুটি বাদাম স্বাধীনকে খাইয়ে দিল। মনিকেও স্বাধীন খাইয়ে দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে মনি চিৎকার করে উঠলো,’ছাড়ো ছাড়ো হাত কামড়ে দিছ। আহারে,আংগুল কাইটা ফালাইছ।

----স্বাধীন হাসছ --ব্যথা লাগছে?

----ব্যথা লাগছে? তুমি খুব খারাপ,দস্যির মত আমার শরীর ব্যথা করে দিয়েছ।হাতে কামউড় দিয়ে আংগুল চিঁরে ফেলেছ,আমার ব্যথা লাগে না?

----মেয়ে মানুষ ব্যথা লাগছে বললে, ছেলেদের কাছে খুব রোঁমানটিক লাগে।

-----তাই তুমি কামুড় দিয়ে পরীক্ষা করলে রোমান্স ঠিক আছে কিনা?

-----আমি কি কখনও মেয়েদের ব্যথা লাগার শব্দ শুনেছি?

----- না বাকি রেখেছ, এমনি এমনি এত বড় হয়েচ।দুজনেরই জড়তা কেটে গেছে।

-----আমিতো বড় হয়েছি তোমার জন্য।

-----আগমনী তাঁর গালে কামড়ে দিয়ে কয়েকটি চুমুও খেল।স্বাধীনের হাত দুটো মনির ব্লাঊজ ঘনিসট হল।  কয়েকটি চুমুও দিল এলো পাথারি।মনিও কম গেল না ভালবাসলেই ভালবাসা থাকে না, হৃদয়ে ভালবাসার চাষ করতে হয় , পরিচর্চা  করতে হয়,লালন পালন ও অনুশীলন করতে হয়,সাধতে হয়।

তার মানে তুমি এত অভিজ্ঞ ---স্বাধীন তুমি এত কিছু জান? দূর বোকা আমাদের এক বড় ভাই বলেছিলেন। 

-----আমি কিছুই জানি না, তোমাকে ভালবেসে শিখছি --যা তুমিও শিখছ।

-----হয়তো, শোন স্বাধীন, মনে হয় আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। 

-----এটাও হয়তো ভালবাসার দান,ভালবাসতে বাসতে ইহা অর্জিত হয়।

আরও দুটি জুটি আসতে দেখলো তাঁরা তাদরই সমবয়সী ।সাধারনতঁ পার্কে আসে মানুষ বিকেলে,বিকেল পর্যন্ত সইলও না অদের।অনেকটাই জড়তা, সংকোচ ,লজ্জা ও অস্থিরতা কেটেছে তাদের। চালচলনে স্বাভাবিকতা এসে গেছ প্রায়ই।

 দুজনে চোখে চোখ্রে রেখে অন্তরের ভালবাসা ঢালতে থাকলো দুটি অন্তরে এবং তাবাঙময় হয়ে উঠলো পরস্পরের সমগ্র অস্তিত্বে ।

----তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, মনি।

----তোমাকেও 

----আমি তোমাকে ভালবাসি, মনি।

----আমি তোমাকে ভালবাসি, স্বাধীন

মনে হয় দুজনে দুটি বিশ্ব জয় করে এল।

‘ভালবাসা’ শব্দটি কঠিন ন্য়,বানানও জটিল নয়, না উচ্চারণও। তবু মানুষ ভালবেসে জীবনকাল পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়,তবুও আমি তোমাকে ‘ভালবাসি ‘কথাটা বলতে পারে না ভালবাসার মানুষটিকে ।হয়তো ঐ গানটির মত,’ভালভাসি বলে ভালভাসা বলা হল না’।

স্বাধীন ও আগমনী রেস্টুরেন্টে বসে মিষ্টি খেল, অপরকে খাইয়ে দিল।তার পর যার যার গন্তব্যে রওনা                  হল। তারপর চোখে চোখে মনের নিম্নত্রন জানিয়ে দুজনের রিকশাকে যেতে বলল।

মনি, ভালবাসা নিও ।গতকাল রেশমি থেকে এসেছি, মন রয়ে গেছে তোমার কাছে। তাই সব কিছু তোমাতেই নিব্দধ।কিচ্ছু ভাল লাগছে না। অনেক কথা বলবো বলে কথার ঝুরি নিয়ে গেছি কিন্তু কথা যে 

কিছুই গুছিয়ে বলতে পারলাম না। ভাব যেখানে গভীর ভাষা সেখানে স্তব্ধ ।লিখতে গিয়েও একই দশা।আমরা 

এমনিতেই চিঠি পত্র লিখি না। মোবাইল কেড়ে নিয়েছে ভাষা, লিখার সক্ষমতা। আমার চোখ ভরা শুধু তুমি,তুমি ছাড়া কোথাও কেউ নেই,কিছু নেই। শুধু তোমাকেই ভাবী প্রতিক্ষন—অনুক্ষন।– মনের আংগিনায় শুধু তোমারি সুরভি, নিঃশ্বাসে তোমারই গন্ধ। গালে লেগে আছে তোমার চুম্বন—এখনও সিক্ত।তোমার তাজা সুবাস আসছে। মনি,,আমাদের এখন থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশী লেখাপড়া করতে হবে।আর সব সময় খুব সাবধানে  চলাফেরা করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। আমাদের বিষয়টা যেন কেউ টের না পায় কোনক্রমেই । তুমি এতভাল ,মন চায় তঅমাকে ভাবতে---সাধতে।রাতে ঘুম হয় না।তোমার কথা রাতে প্রতিধবনিত হয় রাতের নীরবতায়। তোমার হৃদয়ের পুস্পধাম থেকে সুঘ্রাণ মিশ্রিত বাতাস আসে আমার মনের উঠোনে ।পৃথিবী যে এত সুন্দর তা আগে টের পাইনি কখনও ।আস, রংগিন দৃষ্টিতে নূতন পৃথিবীটাকে দেখি সত্য ও সুন্দরের  নিরিখে।

;বাতাসে বহিছে প্রেম 

নয়নে লাগিল নেশা

এসো হে,সত্য ,এসো হে,  সুন্দর

এসো মোদের হ্রদ মন্দিরে।

OKআবার আমরা কবে যাচ্ছি রেশমিতে, জানাবে।আনেক চুমু।

স্বাধীন।

জীবন পরিক্রমায় বিভিন্ন স্তর বা STAGE আছে।একেক স্তর-এর একেক স্বাদ, একেক গন্ধ । নর নারীর প্রেমের স্তরটা খুবই গুরুত্ববাহি, স্বাদ ও বিচিত্রতায় ভরা। প্রেম সব বয়সেই কিছু না কিছু আনন্দ নিয়েই আসে। সেই সাথে নিয়ে আসে আশা আকাংখা ,দুঃখ বেদনা ,প্রত্যাশা ও নাভিশ্বাস ইত্যাদি। স্বাধীন ও আগমনীর এই Stage ভলকানো আবেগের Stage. স্বাধীন ও আগমনীর এ Stage প্রগাঢ় আবেগ, তীক্ষ্ণ ও শানিত এবং ভালবাসায় রংগিন, সর্বাত্মক এক জীবন স্তর ।ইহা বিচিত্র, অনন্য ও চ্যালেঞ্জিং । স্বাধীন ও আগমনী জীবনের এই অঙ্গনের বাসিন্দা। স্কুলে স্বাধীন খুব সাবধানে আগমনীর নিকট পত্র হস্তান্তর করলো। আগমনী ভাবছে কখন স্কুল ছুটি হবে।

  স্কুল ছুটির পর তাড়াতাড়ি আগমনী বাড়িতে চলে এলো। চিঠিটা বের করে বুকে ও মুখে ছুইয়ে পড়তে আরম্ভ করলো। বুকের ভেতর টিপ টিপ শব্দ ক্রমশই বেড়ে চলল । ভয় ও আনন্দের মধ্যে একবার নয় ,দুবার নয়, পর পর তিন বার পড়লো। তাঁর পর ও এর স্বাদ শেষ হয় না, তৃপ্তি মেটে না। চিঠিটা বুকে মুখে  ছুইয়ে ব্রার নিচে রেখে দিল। মা ডাকছে খেতে। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে পড়ার টেবিলে বসে স্বাধীনকে লিখতে আরম্ভ করলো।

স্বাধীন,ভালভাসা ও চুমু ।কিছুক্ষন আগে বাড়ি এসে বারবার তোমার চিঠি পড়লাম ।এখন লিখছি । আমার OKমনের কথা তুমি তো লিখেই ফেলেছ। মন খালি তোমাকে কাছে চায়। মন চায় চুমু দিতে, চুমু খেতে। তোমাকে দেখে এত লজ্জা করে কেন? শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধু তোমাকেই দেখি ---তোমার প্রেম মাখা মুখটি দেখি---আদর করি --ভালভাসি। তোমাকে ভাবতে এত সুখ,এত শান্তি কেন? এত কাংখিত কেন  তোমার সান্নিধ্য? মন হৃদয় সমগ্রটাই তোমার দখলে। ঘুম তোঁ মনে হয় ঠিকানা হারিয়েছে।ঘুমের ভান করে তোমাকেই চিন্তা করি,সাধি। প্রতিটি প্রহর যেন তোমার আমার বাসর। আগেকি জেনেছি এরই নাম প্রেম? এরই নাম ভালভাসা?আমার মন কি বলে জান? তোমার চোখে চোখ রেখে শুধু সুধা ঢালি, আর নিংড়ে তোমার প্রসাদ সুধা গ্রহণ করি। কতই না মিষ্টি এই চেয়ে চেয়্ থাকা, কতই না স্বাদ তোমাকে ভাবা? চোখের সাগরে তুমি, হৃদয়ের গহীনে তুমি! পৃথিবীটাই তুমিময় ।আমার মনটা তুমি চূরি করলে? রেশমিতে যে কোন বিকেলে যাব ---স্কুল থেকেই জাব।আম্মূকে ম্যানজ করে আসবো ।তুমিও কৌশল করে যেও । দিনটা তুমিই ঠিক করে জানিও ।তবে তাড়াতাড়ি করও। এবার অনেকক্ষণ থাকবো,বহুক্ষণ কথা বলবো। তুমিই ঠিকই বলেছ অনেক বেশী পড়া শুনা করবো। তবে সাবধানে গোপনে চলতে হবে।অনেক ভাল ভাসা, অনেক সহস্র চূমূ---আর না। রেশমি তে গিয়ে দিব । তোমারই মনি।

Comments

    Please login to post comment. Login