মারিয়ার নামে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা এফ,ডি,আর, করে রাখা আছে। প্রায় পনের বছরের হাড় ভাংগা পরিশ্রমের উপার্জিত টাকা। তা থেকে সঞ্চয় করেছে রাকিব। সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকবে বলে স্ত্রীর নামে ফিক্সড ডিপোজিট বা এফ, ডি, আর, করে রেখেছে সে। সে মারিয়াকে ভালবেসে বিয়ে করেছে। এফ,ডি,আর, ভাংগানর একক ক্ষমতা দিয়েছে রাকিব মারিয়াকে। মারিয়াকে সে নিজের চেয়ে বেশী বিশ্বাস করেছে। মারিয়া তাঁর ভালভাসা । তাঁর চাকরির পনর বৎসর পূর্ণ হলে দেশে ফিরে এসে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী পথ চলবে সে। সংসারের খুচরা খরচ ও ছেলে মেয়েদের ইত্যাকার খরচাদি চালানোর জন্য মারিয়ার নামে আলাদা কারেন্ট সঞ্চয়ী হিসাব খুলে দিয়েছে যাতে এফ,ডি,আর –এর উপর হাত না পরে । ঐ এফ,ডি,আর, ভাংগিয়ে পরিকল্পিত কাজ করবে রাকিব। সে আর বিদেশে থাকবে না। ছয় মাসের মধ্যে বাড়ি আসবে। মায়ের সেবা যত্ন করবে। মারিয়াকে সময় দিবে। সবার সাথে পরামর্শ করে ভবিষ্যৎ গড়বে যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা থাকবে সর্বক্ষণ অনড়।বাবা-মা এক সাথে না থাকলে সন্তানেরা নিরাপত্তা ফিল করে না। তাই শান্তি ও নিরাপদ বলয়ে রেখে দুটি ছেলে ও একটি মেয়েকে ভালভাবে পড়াশুনা করাবে---মানুষ করবে। বৃদ্ধা মায়ের সেবা যত্ন করবে ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে বাকি জীবনটা অতিবাহিত করবে।ছক বাধা তাঁর পরিকল্পনা।
শুধু টাকার লোভে এবং দেশে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ জীবন গড়ার প্রত্যাশায় নিজেকে প্রবোধ রাখে প্রবাসীরা।তারা যেন একেকটা যন্ত্র মানুষ। সৌদির আইন কানুন খুব কঠোর।অনেক কিছু মনে চাইলেও শাস্তির ভয়ে নিজেকে সংযত রাখে। স্ব-জারীকৃত মার্শাল ‘লয়ে শারীরিক ও মানুসিক চাহিদা জলাঞ্জলি’ দেয়।
ছক্কে বাঁধা এক ঘেয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়। রাতে পারিবারিক ছবিগুলো বের করে দেখে আর কাঁদে। তাঁর এতিম আশা আকাংখা গুলো গুমরে মরে ।মা স্ত্রী সন্তানের ছবি গুলো বুকে চেপে ধরে সে নিজেকে Rnew বা নবায়ন করে নেয়।শুধু সে নয়, সকল প্রবাসীদের একই দশা। দূরে থাকলে আত্মীয় স্বজনের কথা, দেশবাসীর কথা মনে পরে। দূরে বা প্রবাসে থাকলে দেশের পরকেও আপন মনে হয়। বাড়ির পোষা কুকুরটিকেও মনে পরে। ক্ষুধিত অনুভুতি গুলো কেঁদে কেঁদে নীরব হয়ে যায়।
সাজ্জাদ মনে মনে কৌশল আটে কিভাবে সুদে আসলে মারিয়ার নামের এফ, ডি, আরের সমস্ত টাকা নিজ নামে আনা যায়? মারিয়ার সাত ভরি স্বর্ণ ও বিশভরি রুপা হস্তগত করা যায়? কিভাবে কোন কৌশলে কি করা যায় সাজ্জাদ শুধু সেই ফন্দি খুজে। মারিয়া লাল রং পছন্দ করে এবং কাপড় চোপরে তাঁর দুর্বলতা আছে । সুতরাং খুব সুন্দর লাল টুকটুকে একটি শাড়ি, একই রঙ্গের একটি ব্লাউজ ও একটি ব্রা কিনে দেয় সাজ্জাদ মারিয়াকে। খুব খুশি হইয়েছে মারিয়া। লোকে জিজ্ঞেস করলে মারিয়া বলে তাঁর ভাই কিনে দিয়েছে।
সাজ্জাদ বলছে স্ব ঠিক আছে তোঁ মারিয়া?
----ঠিক আছে। আমি যে তোমার, তাই আমার সব কিছুই তোমার।
----শুধু মুখে বললেই তোঁ হল না, এফ, ডি,আর,এর টাকা আমার নামে আনতে হবে না?
-----তা আন, আমি কি অমত করেছি? সব ব্যবস্থা কর।
-----ভাবী
-----আবার ভাবী কেন? আমি তোমাকে মানা করে দিয়েছি না, আমাকে ভাবী ডাকতে ।
-----সরি, মারিয়া ঐ লাল শাড়িটায় যা মানিয়েছে না তোমাকে? কালকে গোসলের পর তোমাকে মনে হয়েছে লাল বসনা সুন্দরি!
----কি যে বল না তুমি, নীল বসনা সুন্দরি শুনেছি, লাল বসনা সুন্দরি তোঁ শুনি নি।
----কেউ বলেনি তাই শুননি, আজ আমি বললাম সবায় শুনবে---বলবে এখন থেকে।
- তোমার পছন্দ হয়েছে,মারিয়া?
----অবশ্যই পছন্দ হয়েছে,তুমি এনেছ না? তোমার রুচি দারুন সজ্জাদ। তা তোমার কত দূর?
----মারিয়া, যা দুনিয়া হ্ইয়েছে না, টাকা ছাড়া কোন কিছুই হয় না। ঐ গুলো ব্যবস্থা করতে দশ হাজার টাকা লাগবে। আমার কাছে টাকা পয়সা নাই মারিয়া?
----তোমার কাছে না আছে, আমার কাছে আছে। নাহ সাজ্জাদ,তুমি ইজি হতে পারছ না, আমাকে বলবে না? আমার কাছে তোঁ নগদ টাকা থাকে না, তবেঁ সোনালী বাংকে আমার নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্ট আছে, আমি চেক সাইন করে দিতাছি। তুমি তের হাজার টাকা উঠাইবা।
----এত টাকা লাগবে না।
----হ্যা আমি তো শুনছি। তুমি তিন হাজার টাকা দিয়া এক সেট প্যান্ট শার্ট বানাইবা আর বাকি টাকা দিয়া ব্যবস্থা করবা।
-----প্যান্ট শাটের টাকা লাগবে না।
-----কি লাগবো আর কি লাগবো না সেটা আমি জানি।
----সাজ্জাদ এদিক ওদিক দেখে মারিয়াকে টেনে কোলে বসাল এবং ঘন ঘন চুমু খেতে লাগলো, মারিয়াও সাজ্জাদকে চুমু খেল। সাজ্জাদের হাত আর মারিয়ার বক্ষ দেশ এক অতি ইনটিমেট বা নিবিড় চারণ ক্ষেত্র।
-----ছাড়ো ব্যথা লাগে, বলে সে সাজ্জাদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
সাজ্জাদ ও মারিয়া একে অপরকে ছাড়া বাঁচে না। মারিয়ার নামের এফ, ডি,আরভাংগিয়া সুদ সহ সমস্ত টাকা সাজ্জাদ উঠিয়ে নিল।মারিয়া প্রয়োজনে যথাযথ সাহায্য করলো। মারিয়া সাত ভরি স্বর্ণ ও বিশ ভরি রুপার গহনা সাজ্জাদ চাইলেও সাথে নিয়ে যাবে বলে জানালো ।মারিয়া মনে করলো সাজ্জাদ যদি বিয়ে করতে অসবীকার করে তাহলে গহনা তাঁর কাছে থাকলে অন্তত গহনার লোভে হলেও তাকে বিয়ে করতে অমত করবে না। গহনার দামও বর্তমান বাজারে কম নয়।মারিয়া বিয়ের জন্য তাগিদ দিলে আগে তাঁর okস্বামীকে তালাক দিতে হবে----তারপর কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে।
সাজ্জাদের বন্ধু আজগ্র
আলী মহুরি বিয়ে ও ডিভোর্সের ব্যাপারে যা যা সাহায্য সহযোগিতা লাগবে সে করবে। আজগর আলী জেলা কোর্টের মহুরি এবং সাজ্জাদের বিশবস্থ বাল্য বন্ধু। কিছু টাকাও সে দিয়ে রেখেছ আজগরকে । বিয়ে করে সে সরাসরি বাড়িতে নিবে না,কারন
সাজ্জাদের এরকম বিয়ে তাঁর বাপমা ও ভাইয়েরা মেনে নিবে না।আইনত ঝামেলাও হতে পারে। সুতরাং আপাতত থাকার একটা নিরাপদ ব্যবস্থা ও করে রাখতে হবে। এ সমস্ত কথা সব বিস্তারিত বলেছে সাজ্জাদ মারিয়াকে। তাছাড়া নগদ কিছু টাকারও ব্যবস্থা করেছে সাজ্জাদ।
-----টাকার জন্য তোমার দুশ্চিন্তা করতে হবে না, সাজ্জাদ ।তুমি যা কিছু পার সংগ্রহ কর বাকিটা আমার চলতি হিসাব থেকে উঠিয়ে রাখবো আগে থেকেই। শুভ কাজে দেরি করতে নেই, মারিয়া সাজ্জাদকে বলল।
-----সাজ্জাদ বলল, সব কিছু ব্যবস্থা রেখ, আমি শীঘ্রই ব্যবথা করছি।
-----যত তাড়াতাড়ি পার. তাঁর শাশুড়িও টের পেয়ে যেতে পারে। তুমি আমার ডাক খোজও এত নিও না। যতটুকু পড়ান প্রয়োজন ততটুকু পড়িয়ে ঝটপট চলে যেও ।
----আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি কোন দুশ্চিন্তা কর না, সব কিছু স্বাভাবিকভাবে কর।
রাকিবের ছোটবোন রাহেলা এসেছে তাঁর মাকে দেখতে।তাঁরা তাড়াতাড়ি চলে যাবে----আটদিন মাত্র থাকবে। রাহেলার মেয়ে শেফালী ও তাঁর ছেলে আরিফুলকে আদরযত্ন করছে,তাদের সাথে আন্তরিকভাবে মিশছে মারিয়া ।ননদের মাথার চুল বেধে দিচ্ছে হাঁসি মুখে। যদিও এগুলো কৌশলগত । রাহেলা খুব খুশি। ভাবীর oপ্রশ্ংসায় পঞ্চমুখ শ্বশুরবাড়ি এবং অন্যত্রও । শাশুড়ির সেবা যত্ন করছে নিয়মিত মারিয়া। শাশুড়ির কাছে শুনে নিত্য নুতন পিঠা বানাচ্ছে,সেমাই করছে।প্রায় প্রতি দিনই এসব চলছে।
-----শাশুড়ি বলছে, ‘বউ আইজক্যা সাজ্জাদকে কইও দুপুরে এহানে খাইয়া যাইতে ?’
-----ঠিক আছে, বলবো।
রাকিবের ছেলেমেয়েগো খুবযত্ন কইর্যা পড়ায়,সাজ্জাদ। রাহেলাকে বলছে তাঁর মা।
----রাহেলা বলল, ওগো রেজাল্টও তো বরাবরই ভাল ঐত্যাছে।
----হ্যা, রাকিব ফোন কইরা কইছে, সাজ্জাদকে তোমারা ছাইরোঁ না। ওকে আদর যত্ন কইরোঁ,নাস্তা দিও ঠিক মত, ভাল রান্না ঐলে সাজ্জাদকে খাওঁয়াইও। আমি আসার সময় ওর জন্য দামী উপহার লইয়া আহুমু।।
----মা, আমরা গাধা ঐছি ভালভাবে লেখাপড়া না কইর, তোমার নাতি নাতনিদের বেলায় এই ভুল আর করুম না। ও গো পড়ালেখা করাইয়া অনেক বড় লোক বানামু----অনেক ভাল মানুষ বানামু।
সাজ্জাদ এসে ঘরে ঢুকল ।দুপুরে তাকে খেয়ে যেতে বলেছে।
----রাহেলা তুই বউ কে ডাকদে,সাজ্জাদকে খাইবার দিতে ।মারিয়ার শাশুড়ি রাহেলাকে বলল।
-----আম্মা, আপনি রাহেলাকে বলেন সাজ্জাদ ভাইকে খাইবার দিতে।আর মাত্র কয়টা পিঠা আছে আমি ছেইক্যা আসতাছি ।
-----কেমন আছেন সাজ্জাদ ভাই?রাহেলা জিজ্ঞেস করলো।
-----ভাল, আল্লায় ভালই রাখছে তোমাদের দোয়ায় ।তোমরা কেমন আছো, রাহেলা?
-----ভালই আছি, সাজ্জাদ ভাই।
----সাজ্জাদ, বাবা আমাগো একটা কাম কইরা দিবা? মারিয়া শাশুড়ি বলল।
।রাকিবের ছেলে মাইয়্যার জন্য ও রাহেলার ছেলেমাইয়ার জন্য গঞ্জে যাইয়া ভাল দেইখ্যা ড্রেস আইন্যা দিবা।
----অবশ্য দিব,চাচি।
----আমার রাকিব সইদি থিকা ছয় মাস পর দ্যাশে আইত্যাছে, তোমরা দোয়া করবা, বাবা
----দোয়া তোঁ অবশ্যই করি
----রাকিব বাড়ি আইস্যা ছেলে মাইইয়্যা গো পুরান কাপড় দেখলে মুন খারাপ করবো। তুমি বউ ও রাহেলার কাছে থাইক্যা ওগো মাপ লইয়া যাইবা, আমি ট্যাঁহা দিতাছি।
----আম্মা, রাহেলার জন্য একটা শাড়ি আনবার দেন।আমার ভাই আমার জন্য যে লাল শাড়িটা দিছে ঐ শাড়িটার মতো ।
----রাহেলার জন্য শাড়ি রাকিব আইহাই আইন্যা দিব।
----তখনও দিব ,আমরা একটা শাড়ি আইনা দেই।
----তা অইলে তোমার লাইগ্যাও একটা শাড়ি আনবার দেই?
---- না আম্মা, আমার পরার কাপড় আছে, আমার কাপড় আপনার ছেলে আসলেই দিব।
----তা দ্যাহ? মারিয়ার মত মাইয়্যা পাইছে দেইখ্যাই রাকিব বিদ্যাশ করতে পারল।কি আক্কেল,আর স্বামীর প্রতি কি ভক্তি! ননদের জন্য শাড়ি আনবার দিত্যাছে, কিন্তুক নিজের লাইগা আনবো না---স্বামী আইলেই দিব,স্বামীর আতের শাড়িই পরবো । আল্লা,তুমি বউর হায়াত দারাজ কইর্যা দিও।রাকিবের মা বউর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আল্লার কাছে দোয়া চাইল।
সাজ্জাদকে বলল, তুমি বাবা, যতদিন বাড়িতে আছ তত দিন আমার নাতি নাতনিগো পড়াইও ।তোমার চাকরি অইলে তহনতোঁ আর পড়াইবার কমু না। আল্লাহ তোমার একটা ভাল চাকরি দিক, তোমার একটা ভাল চাকরি ভাইগ্যে করুক ।
----সে আপনাদের দোয়া।
----দোয়া তোঁ আমরা সব সময়ই করি।মারিয়ার শাশুড়ি বলল।আমার রাকিব তোমাকে খুব ভালবাসে, ছোট ভাইয়ের মত দ্যাহে। ও কইছে, বাড়িতে আহার সময় তোমার লাইগ্যা উপহার লইয়া আইব। আল্লাহ জানি আমার রাকিবকে সহিসালামতে বাড়িতে আনে।
-----সব আল্লার ইচ্ছা, সাজ্জাদ বলল।
মারিয়া খুশীর হাঁসি হেসে চলে গেল।
----সাজ্জাদ বলল,চাচি, আমি কালকেই গঞ্জে গিয়া পোশাক নিয়ে আসবো।
----দেইখ্যা হুইনা যাইও।
---- জি চাচি।
----আগামি মাস থাইক্যাই তোমার বেতন বাড়াইয়া দিমু, আমি বউর সাথে বুইঝ্যা কাইল পরশুর মধ্যেই জানাইয়া দিমু।