আমাদের ১২ বৎসরের দাম্পত্য জীবন । আমার স্বামী অপু খুব শেয়ারিং কেয়ারিং। সুভাষী ও সুসভ্য এই ভদ্র লোকটিকে আমি স্বামী বলে পরিচয় দিত গর্ব করি। আমি স্ত্রী হিসেবে আমার সামর্থ্যর স্রবচ্চটা দিতে চেষ্টা করি। আমাদের পরিচিত এরিয়ার মধ্যে মানুষ আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ দম্পতির উদাহ্রন হিসেবে মনে করে। আমি কোন দিক থেকেই অপূর্ণ নই। আমরা দুজনেই সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা দুজনেই শেয়ার করি। আমি মনে করি আমার স্বামী সর্ব শ্রেষ্ঠ স্বামীদের অন্যতম । তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ঈরসনীয়। আমি আমার বান্ধবীদের মধ্যে স্বামীকে নিয়ে উচ্চস্বরে আলোচনা করি। আমাদের মধ্যে কোনই অবিশ্বাস নেই।
এক রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠি। পাশে চেয়ে দেখি আমার স্বামী নেই। ঘরের এদক ওদিক তাকিয়ে দেখি ঘরের কোথাও অপু নেই।বিছানায়,উঠোনে কোথাও নেই। ল্যাট্রিন ও বাথরুমে কোথাও নেই। টর্চ লাইট দিয়ে বাসার আসে পাশে খুজি কোথাও অপু নেই। আমি খুব বিচলিত হয়ে পরি। হঠাৎ ফোকাস করি দেখি দরকার তোঁ মানুষের থাকতেই পারে। কিন্তু এমন কি দরকার, আমাকে বলা যাবে না? বাসা থেক এত দূর সামনে যেয়ে কথা বলা কেন? হতে পারে অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে হয়তো কেউ মুক্তিপনের ভয় কিংবা ফাঁদে ফেলে কেউ টাকা বা কোন সুবিধা আদায় করতে চাইছে। অফিসে বড় ধরণের গোলমাল । কিন্তু ঘরে তোঁ আমি আর বাচ্চারা ঘুমে। হয় তোঁ আমি টেনশন করবো বলে আমার টেনশন এড়াতে আমাকে জানাবে না । নাহ, মাথা আর কাজ করছে না । ঐ তোঁ অপু আসছে। আখি তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে টাইমটা দেখেই ঘুমানোর ভান করলো, ঐ টাইম মত সার্চ করলেই নম্বরটা পাওয়া যাবে। নম্বরটা তাঁর দরকার । যে করেই হউক আখি টা জানতে চায়। কিছুক্ষন পর ঘরে ঢুকল অপু এবং স্ত্রীর পাশে গিয়ে শুয়ে পরল।
সকালে উঠে নির্ধারিত সময়ে আখি নাস্তা বানিয়ে অপুকে ডেকে উঠিয়ে নাস্তা দিল।স্ত্রী আখি কে নাস্তা খেতে বলল।সে বলল পরে খাবে। আখি সব কিছু গুছিয়ে দিল আগের মত। অপু অফিসে চলে গেল। অপু অফিসের সময় হয়ে গেলে গোসল না করেই অফিসে যায়। আজ ও গোসল করে নি । সারা দিন আখি দুশ্চিন্তা করে কাঁটালো অমঙ্গল চিন্তায় ।বিকেলে গোসলের পানি রেডি করে সে স্বামীর অপেক্ষা করছিল। অপু এসেই বাথ রুমে ঢুকল ।এই সুযোগে আমি ঐ নম্বরটা টুকে নিলাম.।
আমি আরও দুদিন সময় নিলাম। ঐ নম্বরে কল করতে। দেখলাম অপুর খাওয়াদাওয়া আচার আচ্ররন সব আগের মতই আছে ।কিন্তু কলটা কিসের, কেইবা কল করলো এত রাতে? কাউর সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারছি না ।আমার যন্ত্রণা আমি নিজে নিজেই ভোগ করতে লাগলাম। আমি আগামি কাল রিতাদের বাসায় যাব। রিতাকে মোবাইলে জানিয়ে দিলাম ।রিতা আমার অত্যন্ত বিশ্বস্থ বন্ধু, ওয়ান থেকে এক সাথে অনার্স পাশ করেছি। আমার বিয়ে হয়ে যাবার পর আর মাস্টার্স হয় নি, ও করেছে। অপু অফিসে যাবার পর রিতাদের বাসায় গেলাম।
----কিরে আখি কেমন আছিস?
----আছি একরকম ,আখি বলল।
----তুই কেমন আছিস?
----ভাল আছি
আখি সব কিছু বলল রিতার কাছে।
----দেখ, আখি, পৃথিবীর সবচে জটিল কাজ হল মানুষ চেনা ও তার মন বুঝা
-----কিন্তু আমার স্বামী আমার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু
আমি সব কিছু শেয়ার করি ওর সাথে। ও আমাকে সব চেয়ে বেশী শেয়ারিং ও কেয়ারিং মনে করে।
----সে তোঁ আমরাও জানি, তোরা হলি উত্তম দম্পতির উদাহ্রন ও মডেল ।
ভালবাসা ও বিশ্বাস যে কোন Reciprocal বা পরস্পর ভিত্তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানের প্রান স্বরুপ যা প্রেম বা বিয়ে যেটাই বলিস। কিন্তু এর কোনটাই বুদ্ধি নির্ভর নয়. আবেগ নির্ভর।ভালভাসা এবং বিশ্বাস ও এক প্রকার আবেগ। তবেঁ সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার জন্য শুধু আবেগ দিয়ে হয় না বুদ্ধিরও প্রয়োজন হয়। আবেগের তথা বিশ্বাসের প্রাবল্যে সম্পর্কের, প্রতিষ্ঠানের পাত্র প্রাত্রীদের দোষ বা দুর্বলতা গুলো ভেসে জায় , আমলে আসে না বা আনা হয় না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, সম্পর্ক বা প্রতিষ্ঠানের পতনের পর বা পতনের কারন গুলো যখন স্পষ্ট হয় কিন্তু তখন আর সংশোধনের সময় বা উপায় থাকে না।
----রিতা, আমি যতটুকু বুঝি, তোর এ মুল্যবান কথা গুলো সবার মন ও মগজে রাখা উচিত এবং সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি শুধু আবেগ ও বুদ্ধি নির্ভর না হয়ে আবেগ ও বুদ্ধির গড় ভিত্তিক হওয়া উচিত।
----Exactly right.তবেঁ হওয়া উচিত নয়,হতে হবে। পাত্র পাত্রীর বুদ্ধিমত্তার মাত্রা সম্পর্ক ও প্রতিষ্ঠানের সেন্তিমেন্ট ও অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবেঁ আগেই এত কিছু ভাবার দরকার নেই, মন খারাপের ও দরকার নেই ।Wait and see. অপেক্ষা করলেই দেখা যাবে। আমরা তোঁ দেশ ছেড়ে যাচ্ছি না। তবেঁ আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে যা তুইও জোর দিয়ে বলেছিস--- ফোনে Attain করতে এতদুর যেতে হবে কেন? কার ভয়ে? আর যদি অমাংগলিক কোন ফোন না হয়ে থাকে তা হলে তোঁ দুশ্চিন্তার কোন কারণই নেই।তবে শোন,আমি যা দেখেছি,বিশ্বাসের পাত্ররাই বেশী বিশ্বাসঘাতকতা করে।
---- হ্যা, তুই ঠিকই বলেছিস, সাহিত্য ও ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি প্রমান আছে। বেশী খাতিরে বেশী বিশ্বাসে বেশী সম্ভ্রম হানি ঘটে, পরিণামে সবচে বেশী মুল্য দিতে হয়। আর পুরুষ মানুষকে তোঁ এত বিশ্বাস করা যায় না।তারা তোঁ একজনে তৃপ্ত নয়।
---সেখানে আমাদেরও দোষ আছে,পুরুষরাতোঁ কোন নারীর কাছেই তৃপ্তি খুজে।
---তা ঠিক, এত চিন্তা করে কাজ নেই----দেখা যাক। চল, আমরা কিছু খেয়ে নেই । এস
-----আমার খিদে নেই রিতা,আখি বলল।
----খিদে নেই বললেই হল। প্রায় জোর করেই আখিকে খেতে নিয়ে গেল রিতা
সারা জীবন তোঁ আলোতেই থেকেছিস তাই আন্ধকার দেখেই ভয় পাস,আবিশ্য তোর ব্যাপারটা আমি ছোট করে দেকছি নে। তা দেখার মতোও নয়। পৃথিবীতে নিরংকুশ ভাল বলতে কিছু নেই। চলার পথে মানুষ দোষ করবে, ভুল করবে।তাকে সংগঠন করে আবার কাজে লাগাতে হবে, প্রয়োজনে নিজেকে সংশোধন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে। জানিস, হিরো এখনও আমাকে ফোন করে ।আমার বিয়ে হয়ে গেছে---হিরোও অন্যত্র বিয়ে করেছে, সন্তান সন্ততি বউ নিয়ে দিব্যি সংসার করছে। অথচ মাঝে মাঝে চুরাগুপ্তা ফোন দিচ্ছে। হিরো ও জানে এর ফল ভাল হবে না । জনাজানি হয়ে গেলে কি বিশ্রিই না কান্ড হবে। এটাই মানুষের স্বভাব, মানুষের জীবনের অংগ। ফলাফল জেনেও সে ভুল পথে পা বাড়ায় এবংভুলের মধ্যেও সে তৃপ্তি খুঁজে।
---তাই বুঝি বলা হ্য়, ভুল করাই, মানুষের স্বভাব। আখি বলল।
---- তা আমিা জানি না, তবেঁ মানুষ যা জেনেছে, তার চেয়ে অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে।
---হ্যা মানুষ ভুল করবে, সংশোধিত হবে পৃথিবীর সচল রাখবে। একদম নির্ভেজাল মানুষ দিয়ে কি সংসার চলে? তাই মানুষ একেবারে পারফেক্ট হবে না। কোন না কোন জায়গায় সে ইম্পারফেকট হবে। এটা সৃষ্টির ই রহস্য। জীবন সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক মানুষ দেখবে ---তাঁরা দোষেগুনে মানুষ।মানুষের দোষ, অসম্পূর্ণতা দেখে ব্যক্তি মানুষ নিজে ফিরে আসবে । নিজের উপর সে গবেষনা চালাবে। নিজের মধ্যে খুজতে যেয়ে সে দেখবে তার নিজের মধ্যেও দোষ আছে, অসম্পূর্ণতা আছে। সুতরাং নিজের মধ্যেকার দোষত্রুটি – অসম্পূর্ণতা দেখে দোষত্রুটি ও অসম্পূর্ণ মানুষের প্রতি সে সহানুভূতিশীল হবে এবং আবার জীবন ও জগত সংসার পরিচালনা করতে অগ্রসর হবে এসব দোষত্রুটি সম্পন্ন মানুসদের নিয়ে। অবশ্যি উন্নত হবে সে বিভিন্ন মাত্রিকায়, তা সংশোধনের মাধ্যমেই হউক আর গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমেই হউক।
----হৃদয়ের তৃষ্ণা থেকেই কি হিরো ভাই তোর কাছে ফোন করে না?
---আমার মতে হৃদয়গত ব্যাপার হৃদয়েই চাপা পরে থাক। হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটানোর ভার হৃদয়ের উপ্রই থাক, অনর্থক গা তাজা করার দরকার নেই। যে বিষয় নিজের ও অন্যের ক্ষতি করে তা নিয়ে ঘাটা ঘাটি করা ঠিক না। সুতরাং আমাকে হিরোর ফোন দেয়া উচিত নয়।কারন এর ফলে শুধু আমার, আমার স্বামীর ও আমার সন্তানেরই ক্ষতি করবে না হিরো,তার স্ত্রী,সন্তানেরও ক্ষতি করবে। শুধু এখানেই নয়, ক্ষতির বহর অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে যা কখনই কাম্য হতে পারে না। আর বাবামার অতীত ঘটনা বিশেষ করে হৃদয় ঘটিত ব্যাপার সন্তানের অবগতিতে আসা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। সন্তান সন্ততিরা কখনো বাবা মার এ বিষয় ক্ষমা করে না।
---তাই প্রত্যেক বাবামাকে এটা মনে রাখা উচত, আখি বলল।
----আবশ্যি। অপুর ফোন করার ব্যাপারটি প্রশ্ন উদ্রেক করে বটেঈ। তবুও সহজ ভাবে নিতে হবে। কক্ষনও কোথাও চরম হওয়া উচিত নয়। জীবন তোঁ সজা পথে চলে না-সর্পিল গতিতে একেবেকে চলে।এর প্রতি বাঁকেই অতি সাবধানে ও সতর্কভাবে নৌকা বাইতে হবে। আর তুই ঐ নম্বরে আগামী কাল ফোণ করতে চাস কর, তোর মত করে কথা বল। আমি তোর সাথে আছি ।খেয়ে দেয়ে আখি বাসায় চলে এল।
অপুর অফিসে যাওয়ার পরই ঐ নম্বরে কল করল আঁখি।
----হ্যাঁলো,কে আপনি কি চান বলুন,প্লিজ?
আমার নাম আঁখি,।ঢাকা থেকে বলছি, একটি ইনফরমেশন জানার জন্য।
---বলুন কি Information
----আপনি কি এই নম্বরটা চেনেন আখি নম্বরটি দিল।
---হ্যা চিনি
----আপনি কি গত পরশু [১১ ৯ ২৩]১২তটা১০শে এই নম্বরে কল করেছিলেন?
----কেন বলুন তোঁ?
---আমি সবকথাই বলব, আপনি যদি সরলভাবে সব কিছু বলেন আমাকে,
- নিশ্চয়, কেন নয়?
----আপনি ঐ নম্বরে কার কাছে কল করেছিলেন?
---- ঐ নম্বর যার আমি তার কাছেই কল করে ছিলাম, রাত তখন অনুমান ১২ টা ১০মি।
----ঐ নম্বর টা যার আমি তার কাছেই কল করেছিলাম, নম্বরটা অপু নামের এক ভদ্র লোকের।
----আপনার নাম টা বলবেণ,প্লিজ ?
----আমার নাম নিপা।
---আপনি কেণো অত রাতে ঐ ভদ্র লোকের কাছে কল করেছিলেন,আপনার সাথে কি কোন সম্পর্ক আছে তার?
----ব্যকিতগত কারনেই তার কাছে কল করেছিলাম ।আমি এত রাতে একজন মহিলা হয়ে কল করেছিলাম, তা থেকেই অনুমেয় হতে পারে ঐ লোকের সাথে আমার কি সম্পর্ক থাকতে পারে। আমি অপুকে ভালবাসি এবং অপুও আমাকে ভালবাসে।
- ---আপনারা কি বিয়ে করেছেন?
----না এখনো করিনি।
----আপনি কি করেন, প্লিজ?
---- অপু ও আমি একই অফিসে চাকরি করি
----সরি,অফিস টাইমে আপনাকে Disturb করলাম।
----NO, THANKS। আমি অফিস থেকেই কথা বলছি,আমরা ১০ বৎসর যাবত একে অপরকে ভালবাসি।আরও কোন প্রশ্ন আছে?
----আপনি কি জানেন অপু বিবাহিত,তার স্ত্রী সন্তান আছে?
----আমি জানি অপু বিবাহিত এবং তার স্ত্রী সন্তান আছে।
----আমি কি জানতে পারি আপনি কে?
---ok-অবশ্যি, আমি আখি,অপুর বিবাহিত স্ত্রী।আমাদের এক পুত্র সন্তান ও এক কন্যা সন্তান আছে।আমরা শ্বামী স্ত্রী ও সন্তানাদি নিয়ে একই সাথে আছি । আমাদের বিবাহিত জীবন ১২বছরের।
----আপনার আরও প্রশ্ন থাকলে বলুন আমার অসুবিধা নেই
----ধন্যবাদ মিস নিপা
---- স্বাগতম
-----আপণাকেঊ ধন্যবাদ মিসেস আঁখি।
ok----স্বাগতম। ।
সব কিছু জানার পর আখি অবাক,অস্বাভাবিক বিধ্বস্ত, ,ক্লান্ত, বিষন,হতাশ, দিকবিদিকজ্ঞানশুন্য,কিং কর্তব্যবিমুর। তার কাছে সে এক জন নৈরব্যক্তিক ব্যক্তি। এই কি তার ভালবাসার মুল্য? বিশ্বাসের এই মর্যাদা ? আমার চরম বিশ্বাসের পাত্র সেই আমার সাথে এই বিশাসঘতকতা করতে পারে?আমার ভক্তি,শ্রদ্ধা,প্রেম, ভালবাসা সব চুরমার হয়ে গেল।আমার ভালবাসা এতঁই দুর্বল দুবছরের বেশী ধরে রাখতে পারলো না অপুকে। বিয়ের দুবছর পরই অন্য মেয়ের ভালবাসা সান্নিধ্য তার প্রয়োজন হল। আমাদের দাম্পত্য জীবনের বয়স বার বৎসর আর তাদের প্রেমের বয়স দশ বৎসর। পঙ্গু আমার নারীত্ব। আমি কি বলতে পারি আমি অপুর জীবনে কোন ফ্যাক্টর?No,nothing. তারা একে অপরকে ১০ বৎসর যাবত ভালবাসে ।কি সহজ নিশংক স্বীকারক্তি, কত আস্থাবান ,কত নিরাপদ নিপা! তারই শরীক, আমার অকৃত্রিম বিশ্বাসের স্বামিত্বের। স্বামীর কোন শেয়ার হয়? কোন নারী তার ভাগ দেয়? একি এজমালী সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে নেবে কড়ায় গণ্ডায় তার স্ত্রী সকল! সে ১২ বৎসর এক ছাদের নিচে একই শয্যায় শুয়ে এর বিন্দু বিসর্গও জানতে পারলো না।,কী নিপুণ, কি অকৃত্রিম অভিনয়? তুলনা বিহীন আনকোড়া ছলনা? আখি অপুর সন্তানের মা হতে পারলো কিন্তু অপুর স্ত্রী হতে পারলো না! এই না হলে আমরা শ্রেষ্ঠ দম্পতির আদর্শ, মডেল? আমি ধন্যবাদ জানাই, পুরুস্কৃত করি ঐ মনীষীকে যিনি বিয়েকে সংজ্ঞায়িত করেছেন আইন স্বীকৃত বেশ্যালয় বলে। অপু হে দেবতা আমার, ফিরিয়ে দাও আমার পূজোর আরতি, পুজোর ফুল। অপুরা, দেবতারা তোমাদের জবাবদিহিতা কোথায়? তোমাদের পায়ের তলা থেকে আমাদের বেহেশত ফেরত দাও? অপু,শাজাহান, আমরা মমতাজরা তোমাদের তাজমহল চাইনা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাজমহল দেখলে, আমরা মমতাজরা তাজমহল দেখেনি, হেরেমখানা দেখেছি।
অপুকে সব কিছু জিজ্ঞেস করবো আমি। আমি সব জানতে চাই,এই মর্মন্তুত সত্য, ফুসফুসে অজস্র বানভেদী রক্তাক্ত সত্য। সন্ধ্যায় অপু খাওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলো আখি।
----অপু,নিপা নামের কোন মেয়েকে চিন?
---- হ্যা, চিনি
-----কত দিন হতে তাকে চিন?
----দশ বৎসরের অধিক সময়
----ওকে ভাল্ বেসে বিয়ে করেছ
--ok--ভালবাসি বিয়ে করিন
----বিয়ে করাতো প্রয়োজন হয় না ।
----তা যা মনে কর
----মেয়ে কি করে?
----আমার সাথে একই ব্যাংকে চাকরি করে ও আমার এক পোস্ট এক গ্রেড নিচে চাকরি করে
----ও কে বিয়ে করবে না?
----ভবিষ্যতের খবর ভবিষ্যতই জানে, যা কিছু করি তুমি জানবে
----তুমি জান না, বূঝ না তোমার স্ত্রী আছে, দুটি সন্তান আছে
----এত জেনে বূঝে সব কিছু হয় না
----তোমাকে আমি কত ভালবাসি কত বিশ্বাস করি
----টও মাকেও আমি ভালবাসি, বিশ্বাস করি।
----তুমি চা খাবে ?আঁখি বলল।
----খাব
----দুজনে এক সাথে বসে চা খেল।
মেয়েটা আঁখিকে ডাকল ,মা ভাত খাব।
--OK--আমি ওকে ভাত দিতে গেলাম।
আঁখি দুবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে মরতে মরতে বেচে যায় সে এখণ বাড়ির আতংক হয়ে পরেছে। কোন সময় কি করে ফেলে তা বলা যায় না। অবিশ্য পরে সে জানতে পেরেছে আত্মহত্যা করা কোন সমস্যার সমাধান নয়। অপু তার ছোট বোন পারভীনকে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। সে দু সপ্তাহ থাকবে এখানে । অপু অফিসে গিয়ে রিতাকে করলো তাদের বাড়ি আসতে এবং আঁখিকে ভাল করে বুজিয়ে বলতে। সকাল এগারটার দিকে আসবে বলে জানালো। অবিশ্য অপূর বুঝা উচিত ছিল আখির এত বড় ক্ষতে এত সামান্য মলমে কাজ হয় না,অপু বুঝতে চেষ্টা করেনি অথবা সে বূঝেও বুঝেনি অথবা বুঝার যোগ্যতাও তার নেই। আমি মনে করি পৃথিবীর অধিকাংশ স্বামী স্ত্রীরা তাদের পরস্পরদের বুঝার যোগ্যতা রাখেনা,বোঝার যোগ্যতা থাকলেও তাদের বোধগম্য শকতির সর্বোত্তম ব্যবহার ও সদব্যয় করে না। জাস্ট এগারটায় রিতা এসে পরল। রিতাকে জড়িয়ে ধরে আঁখি অসহায়ের মত কাঁদতে লাগলো। পারভীন ও রিতা আঁখিকে ধরে ঘরে নিয়ে গেল।
মানুষ যখন পৃথিবীর প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ ও ভরসা খূজে পায় না তখন সে আত্মহত্যা করে।
----আঁখি বলল আমি আর বাচতে চাই না রিতা।
----বাচতে না চাইলেও তাকে বাচতে হয় এবং সেটাই বাস্তবতা । আত্মহত্যা করে কাপুরুষেরা । আত্মহত্যা হল জীবন থেকে পলায়ন। জীবনে যাকিছু হবে বা আসবে তা গ্রহণ করতে হবে, মোকাবিলা করতে হবে চ্যালেঞ্জ সহকারে। এক কথায় আসন্ন যে কোন সমস্যা সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। রিতা বলল।
----আমাকে যে এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সেটা আমি মনেই করিনি।
----কাউর মর্জি অনুসারে তো সমস্যা আসবে না । আঁখি শোন, আমি একটা কথা বলছি তোকে, সেটা তোর মানতে হবে এবং সে অনুসারে আমাকে কথা দিতে হবে
----বল
----তুই আত্মহত্যা করবি না।
----আমার বেচে থেকে লাভ নেই
----লাভ লোকসানের খতিয়ান আমি বলতে পারবো না,তুই কথা দে-প্রমিজ। তুই ছেলেমি করবি না, ছেলেমি করা তোর খাটে না। কার সাথে রাগ করে তুই আত্মহত্যা করবি? এতে কার কি হবে? তোর স্বামীর জন্য সেটা হবে Open field---খোলা মাঠ। আর তোঁর সন্তান দুজন হবে এতিম। একমাত্র ওদের মঙ্গলের জন্য হলেও তোকে বাচতে হবে । তুই কি চাস তোর সন্তান এতিম হোক? মায়েরা তা চায় না---চাইতে জানে না।
okপারভীন বলল----রিতা ভাবী অত্যন্ত যৌত্তিক, সুন্দর ও সত্য কথা বলেছেন। কার মুখের দিকে ওরা বেচে থাকবে,কে ওদের ভাল চাইবে? ওদের বাবা---প্রশ্নই উঠে না ,আপনি আপনার পুতপবিত্র অকৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে যাকে আটকাতে পারলেন না,আপনার সন্তানের কল্যানের প্রশ্ন তাকে আটকাবে? বড়ই হাস্যস্কর ,অ রন্যেরধন, ওর বাবাই যদি ওদের কল্যাণ করবে তাহলে ঘরে সুন্দরি ল্কখমী বউ রাইখ্যা এ রকম সোনার সংসার মাটি কইর্যা দেয়? ঘরের শান্তি জলাঞ্জলি দিয়ে, সবার সুখ নির্বাসনে পাঠিয়ে এই বয়সে পেরেম করতে যায় কেউ? কবে যেন দেখবেন বিয়া কইরা রাণী সাজাইয়া নিয়া আইচে। সুতরাং রিতা ভাবী যা বলেছেন সে কথার উত্তর দিন এবং আমরাও দুশচিনতা মুক্ত হই ও বাচ্চা দুটাও ভরসা পাক। আপনি মনে করবেন না, আপনি আত্হত্যা করে মরবেন বলে আপনার প্রতি দাদার প্রেম উথলে উঠচে,মোটেই না । আপনি সুইসাইড করলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে--- সংশ্লিষ্টরা ঝামেলায় পড়বে, সেই জন্যেই আমাদের ডেকে এনেছে ঐ ওটকো ঝমেলা ঠেকাতে। ছেলে মেয়ে দুটো কি করে, কি খায়, কি না খায় খবর নিচেন ? ওদের আদর করেন, আশ্বাস দেন, আমি ওদের খাবার দেই।
---- হ্যা, আমি কথা দিচ্ছি,আমি আত্মহত্যা করবো না, তোরা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারিস। তোরা আমার পাশে থাকবি। স্বামী বলে আমার কেউ নেই। কাউর প্রতি আমার কোন প্রশ্ন ও অভিযোগ নেই। আমি okচাকরানি হয়ে সংসারের কাজ করবো ভাত খাব।
----হ্যা আপাতত সে ভাবেই বাঁচ। আর তুই কি করবি না করবি সেটা পরিস্থিতিই তোকে বলে দিবে। আমরা তোর সাথে আছি। মিতা বলল।
আর ননদ আসছে তোকে পাহারা দিতে আর পাহারার দরকার নেই, পিঠা বানা, পুলাউ মাংস রান্না কর ওর জামাইকেও আসতে বল, খেয়ে দেয়ে আনন্দ করে পারভীন কে নিয়ে যাক। আর আমাকেও দাওয়াত দিবি পিঠা খেতে। তোর জামাইকে বলিস বোয়াল মাছ আনতে,-মাগনা আর কত খাটাবে, কি বল পারভীন?
----ঠিক আছে ভাবী আপনি দুপুরে খেয়ে যাবেন।
----হ্যা, পারভীন রান্না বান্না কর। আমি আখির সাথে কথা বলছি ।আর শোন, ফ্রিজের কোন কিছু আমি খাব না, টাটকা আলু ভর্তা অনেক ভাল ফ্রিজের মমি গুলোর চেয়ে।