Posts

উপন্যাস

হাহাকার [চ্যাপ্টার ৭]

February 20, 2025

আব্দুল কুদ্দুস বিপ্লব

6
View

পর দিনই সাজ্জাদ গঞ্জে বাচ্চাদের কাপড় চোপর এবং রাহেলার শাড়ি এনে দিল। ওরা সবাই খুব খুশি কাপড় চোপর পেয়ে। আর কয়েক মাসের মধ্যে রাকিব দেশে এসে পরবে। মারিয়া দিন গুনছে কত তাড়া তাড়ি চলে যাবে সে।  এ বাড়ির জন্য, এ বাড়ির মানুষের জন্য কোনই আকর্ষণ নেই তার। শুধু তার ছেলে মেয়ের জন্য তার কিছুটা খারাপ লাগছে, তা ও সাময়িকের জন্য। সাজাদের মুখের দিকে তাকালেই সে সব কিছু ভুলে যায়। সে মনকে প্রবোধ দেয়, বড় কিছু পেতে হলে ছোট কিছু ছাড়তে হয়। নিভৃতে সাজাদের কথা মনে পরলেই তার দেহ জেগে উঠে, মনে তোলপাড় আরম্ভ হয়। কবে কখন সে সাজ্জাদকে নিয়ে স্বাধীন ভাবে থাকতে পারবে, মুক্ত আকাশে পাখা মেলে বিহঙ্গের মত উড়তে পারবে। সাজ্জাদকে বাহু ডোরে বেধে সব বন্ধনমুক্ত হতে পারবে সে। বউকে জড়িয়ে ধরে স্বাধীন ভাবে সাজ্জাদকে সকল আদর, সোহাগ, ভালবাসা উজার করে দিতে পারবে, তার প্রতীক্ষা নিশি দিনের, অনুক্ষন-প্রতিক্ষনের। সমস্ত বন্ধন শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে তাদের সৃজিত পৃথিবীতে কবে কখন মুক্ত সজীব নিশ্বাস নিতে পারবে, সে কল্পনায় বিভোর মারিয়া। মারিয়া এমন ভুবন চায় সে ভুবনটা শুধু সাজ্জাদময়। সে আর সাজ্জাদ হবে এ ভুবনের নিরংকুশ বাসিন্দা। ভয় সন্দেহ মুক্ত দুটো স্বাধীন প্রানীর দেহ মনের চির অভিসার, শুধু সোহাগ ভালবাসার ও বাহুল্গন্তার অবাধ দুটো প্রানের-দুটো দেহের নিরংকুশ নিশংক মহামিলন। পৃথিবীর কে কোথায় কোনদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার। 

রাকিব আসার মাত্র দুমাস বাকি। আর দেরি করা যায় না। আজগর মহুরিকে দিয়ে সাজ্জাদ একটি বাসা ভাড়া করিয়েছে গঞ্জে। সাজ্জাদ আজগরের সাথে গিয়ে বাসা দেখে এসেছে এবং এক মাসের ভাড়া অ্যাডভানস করে এসেছে। বাড়িওয়ালার যোগা যোগের নম্বর নিয়ে এসেছে।

সাজ্জাদ রাকিবের ছেলে মেয়েদের পড়াতে গিয়েছে মারিয়াকে বলেছে আজ রাত এগারতায় আসবে,দুজনে পরামর্শ করবে, কবে কখন যাবে তা ঠিক করতে। সাজ্জাদ নানা দুশ্চিন্তা করছে, যদি ধরা পরে যায়, সমাজের লোকেই বা কি বলবে ইত্য্যাদি ইত্যাদি। অবশেষে সে নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছে,সে কি কাপুরুষ, এ সে কি চিন্তা করছে?

সাজ্জাদ রাত ১১টায় এসে সে মারিয়াকেনির্ধারিত স্থানে দেখতে পেল।অন্ধকার। সাজ্জাদ এসে মারিয়াকে চুমু খেল, মারিয়ার হাতে সাজ্জাজের হাত ধরা। সাজ্জাদ বেশি দেরি করবে নাআজকের রাতই এ বাড়ির শেষ রজনী। অতপর  দুজনের পরামর্শ সভায় স্থির হল আগামি রোঁববার তারা বেরিয়ে যাবে। রাত ১১ টার সময় এই স্থান থেকে সাজ্জাদ দ্মারিয়াকে নিয়ে যাবে। গহনা টহনা সহ যাবতীয় সব কিছু নিয়ে মারিয়া রেডি থাকবে। অদ্য শেষ রজনী সফল করে সাজ্জাদ প্রস্থান করল।

পরদিনই সাজ্জাদ মারিয়ার সঞ্চয়ী হিসাব থেকে সমস্ত টাকা উঠিয়ে নিল। ব্যাংকের কেশিয়ার নাহিদ সাহেব সাজ্জাদদের রাকিবদের পাশের গ্রামের লোক। রাকিব ও সাজ্জাদকে নাহিদ সাহেব ভাল ভাবেই চেনেন। কেশিয়ার নাহিদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, রাকিব্ররা এমন বড় কি কাজ করবে এত টাকার প্রয়োজন?  সাজ্জাদ বলল, তা জানিনা ভাই, আমি কি অত খবর রাখি, ওদের বাড়িতে পুরুষ পুলানাই, ওদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাকেই করতে হয়। নাহিদ সাহেব আর বেশী দূর আগালেন না। তিনিও জানেন, সাজ্জাদ রাকিবের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউটর এবং বিশ্বস্ত। সাজ্জাদ টাকা উঠিয়ে কেশিয়ার সাহেবকে ছালাম দিয়ে বেরিয়ে গেল।

ইতোমধ্যে মারিয়া আজগর মহুরির সাহায্যে গোপনে তালাক দিয়ে দিল। সামনে আর মাত্র এক দিন্ তাই তারা চলে যাবে। সে কিছুটা চিন্তিতও। যত যাই হোক এ রকম কাজে নার্ভাস না হয়ে পারে না যে কেউ।      .রাতে তারা আজগর মহুরির বাড়ীতে উঠবে।রোববার রাতে সাজ্জাদ পূর্ব নির্ধারিত জায়গা থেকে মারিয়াকে নিয়ে এল। বড় ব্যাগটা মারিয়ার হাত থেকে সাজ্জাদ নিজের হাঁতে নিল।আজগর মহুরির বাড়ির রাস্তা কম. নয়।হেটে যেতে হবে। মহিলা মানুষ খালি হাঁতে হেটে যাইয়াই ভার। সাজ্জাদ ব্যাগের চেন খুলে দেখল গহনাগুলো আছে কিনা।হ্যা, সব ঠিক আছে, সে নিশ্চিত হল। তারা ভয়ার্ত ও সতর্ক পদবিক্ষেপে এলো মেলো রাস্তায় এগিয়ে যেতে লাগল। আজগর মহুরির বাড়িতে ভ্যান ও রিকশায় যাওয়া যায় শুধু অথবা হেটে। তারা হেঁটেই যাবে।ভ্যান ও রিকশায় গেলে পরিচিত মানুষ দেখে ফেলতেও পারে, এতে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। এলো পাথারি ভাবে হেটে গেলে বিপদের ভয় নেই বললেই হয়। সাধানের বিপদ কম। 

সুতরাং তারা সরবোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করবে। তাই সর্বক্ষেত্রে তাদের চোখ কান খোলা রাখতে হবে। তারা অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে হেটে চলছে। তাদের পরিকল্পনা হল, তারা আজগর মহুরির 

বাড়িতে রাতে থাকবে। সকালে আজগর মহুরিকে নিয়ে গ্ণজে যাবে। 

আজগরের সাহায্যে ও ব্যবস্থাপনায় কোর্ট ম্যারিজ করে তারা বাসায় উঠবে যে বাসা আজগর তাদের জন্য বাড়া করেছে, অ্যাডভান্স দেয়া আছে। এমন কোন কাজ নেই যা আজগর মহুরি করতে পারে না।  প্রয়োজন টাকার। সুতরাং টাকা আছে আজগর মহুরির মত মানুষ আছে,যেকোন কললা ফতে। অতএব, সাজ্জাদ বলল তাদের ভয় নেই। তারা আজগর আলী মহুরির বাড়িতে যেয়ে উঠলো, আজগর ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে আছে। একটা ঘরে তারা ঢুকলও। আজগর খাওয়া দাওয়ার সব ঠিক করে রেখেছে।  সে বলে গেল কারেন্ট ব্যবহার না করতে। কারেন্ট ব্যবহার করলে অনেক দূর থেকে আলো দেখা যায়। তারা খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লো। হারিকেন দিয়ে গেল,প্রয়োজনে জ্বালাবে, ম্যাচ রেখে গেল টেবিলের উপর । সে বলল--ঘরের বারান্দায় বালতিতে পানি দেয়া আছে। সে বলল,সে সকালে ডেকে দেবে ঠিকই । প্রভাতের আগেই সাজ্জাদ  ও মারিয়া গোসল করে নিল বাথ রুম থেকে।

রাকিবের ছেলে মেয়েদের তাদের মা সকালে ঘূম থেকে ডেকে উঠায়। কিন্তু আজ ডেকে দিবে কে? তাই তাদের উঠতে দেরি হচ্ছে।

আজগর আলী মহুরি সকালে সাজ্জাদ ও মারিয়াকে ডেকে উঠিয়ে দিল। ক্যান্টিন থেকে পরোটা ডিম ও ডাল এনে রেখেছে ওদের উঠার আগে। নাসতা করে তারা ভ্যান যোগে গঞ্জে যাচ্ছে। এক ঘণ্টা পর তারা গঞ্জে এসে পৌচল। আজগর মহুরি যেখানে যেখানে মোবাইল করা দরকার, সেখানে সেখানে কল করে দিল। কাজ সুসম্পন্ন হলেই সে তাদের কে ভাড়া বাসায় উঠিয়ে দেবে।তারা চা খেল।মারিয়া বোরকা পরা ,বাইরে থেকে চেনার উপায় নেই।

রাকিবের ছেলেব্লে ডেকে উঠল, দেখে, আম্মু পাশে নেই, তারা ,দাদি 

ও দাদি আম্মুকে তোমার ঘর থাইক্যা পাঠাইয়া দেও, ভাত খামু।

---তোর আম্মু তোঁ এই ঘরে আহে নাই। তোরা উঠ, আমি ডাইক্যা দিত্য্যাছি ।পায়খানা টায়খানায় গেছে মনে অয় । দাদি দেখে, পায়খানা খোলা, ও বউ, বউ করে ডাইক্যা কোথাও পেল না। পাড়া প্রতি বেশীর বাড়িতে খোঁজ নিল---নাই, কোথাও নাই। রাকিবের বাচ্চারা সবাই উঠেছে। আম্মুকে না পেয়ে আম্মু, আম্মু, বলে মেয়েটা কাঁদতে লাগলো। রাকিবের  মায়ের ডাকা ডাকি চিল্লা বিল্লায় পাড়া প্রতিবেশীরা এসে ভিড় করলো। 

রাকিবেরমা বলল---- তোমরা বহ, আমি সাজ্জাদকে ডাইক্যা আনি। সাজ্জাদদের বাড়িতে গিয়ে দেখল সা  জ্যাদ ও বাড়িতে নেই।

সাজ্জাদের মা বলল –দেহি সাজ্জাদ কহনে গেছে

---সাজ্জাদ ও বাড়িতে নাই কেরা আমাগো বউরে আইনা দিব?

সম্ভাব্য আত্মীয় বাড়ি লোক পাঠিয়ে দেখা গেল্, কোথাও মারিয়াকে পাওয়া গেল না. সাজ্জাদকেও খোজে পাওয়া যাচ্ছে না, এত সকালে সাজ্জাদ গেল কোথায়?  

 গ্রামের লোকদের কেউ কেউ সাজ্জাদ মারিয়াকে কেন্দ্র করে কানা কানি করতে লাগলো, কিন্তু মুখ ফুটে কেঊ বলতে সাহস করলো না । আশে পাশে রাষ্ট্র হয়ে গেল রাকিবের বউকে পাওয়া যাইতেছে না। কয়েক মিনিটের মধ্যে এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরল। 

বিকেলে ব্যাংকের কেশিয়ার নাহিদ সাহেব এ সংবাদ পেয়ে অফিস ছুটির পর রাকিবদের বাড়ি আসলেন। নাহিদ সাহেব রাকিবের মাকে জিজ্ঞেস করলেন

---চাচি, তোমরা এমন কি বড় কাজ করতাছ যার জন্য ব্যাংক থেইকা সব টাকা উঠাইতে ঐল?     

 ---রাকিবের মা বলল, টাকা লাগবো এই রহম কোন কামতো আমরা করতাছি না,বাবা? 

---তবে যে সাজ্জাদ তোমাদের বউ মারিয়ার সাইন করা চেক দিয়া আমাদের ব্যাংকের অ্যাকাউনটের সব টাকা উঠাইয়া লইয়া আইল। নাহিদ সাহেব বললেন।

---আমরা তোঁ ইহার কিছুই জানি না, তোঁ বউ জানে। রাকিবের মা বলল।   

এদিকে সাজ্জাদকেও কোথাও পাওয়া যাইতাছে না, মারিয়ারও খবর নাই, তবেঁ ঘটনা কি? উপস্থিত লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো। ব্যাংক এরিয়া সহ সব জায়গায় রাষ্ট্র হয়ে গেল, রাকিবের বউ মারিয়া সাজ্জাদের সাথে বাইরিয়া গেছে। এসব খবর তোঁ ছড়াতে সময় লাগে না।

রাকিবের বোন রাহেলা ও তার স্বামী আমজাদ হোসেন এলো। রাকিবের মা ও তার ছেলেমেয়েরা

হাউ মাউ করে কাঁদছে। রাকিবের মা তোঁ প্রায় পাগল হয়ে গেছে। সে মাটি থাবড়িয়ে বেড়া থাবড়িয়ে কান্না করছে। প্রতিবাশিরা গ্রামবাসীরা চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারছে না।তারা প্রবোধ মানছে না, আর এটা কি প্রবোধ মানার ব্যাপার!

রাহেলা ভাবীর নম্বরে কল করে দেখল মোবাইল বন্ধ, সাজ্জাদের নম্বরও বন্ধ। রাহেলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, সাজ্জাদ ভিজা বিলাই, বিশ্বাসঘাতক, বদমাইশ কি সর্বনাশ করলো। আমরা একটুও টের পাইলাম না।

রাকিবের মা বলছে, মানুষের বিশ্বাস নাই, সাজ্জাদরে আমরা কত বিশ্বাস করতাম ,কত খাওন খাওয়াইলাম।বিশ্বাস ঘাতক,বেঈমান, নিমক হারাম ,কি সর্বনাইশা  কামইন্যা করলো। আল্লায় সইবো না, আল্লা গজব দিব। 

পাশের বাড়ির শহীদের বউ বলল, সাজ্জাদের তো একলা একলা দোষ না। এক হাঁতে তালি,

 বাজে না। নিজের বাড়ির বউরে শাসন করতে পার না, শাসন নাই, বারন নাই, কনট্রোল নাই। সাজ্জাদ যেন নতুন জামাই!

মানুষ প্রেমের টানে,কামের উত্তাপে মোহে,প্রবৃত্তির বশে নিজের স্বামী, সংসার এমনকি গর্ব জাত সন্তানকে পর্যন্ত ভুলে যায়। স্বামীর সারা জীবনের রোজগার, সনচয় গহনা ইত্যাকার সব কিছু নিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে চলে যায়। স্বামী সর্বস্বান্ত হয়, সন্তানেরা রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, এটা কি? এটা মস্ত বড় প্রশ্নবোধক। এটা সামাজিক ব্যাধি? সামাজিক অবক্ষয়? মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা? না অন্য কিছু? মানুষ এক সময় প্রাগৈতিহাসিক ছিলো ।অসভ্য, বর্বর ও বিবেকহীন ছিল। মানুষ প্রাগৈতিহাসিকতা থেকে ইতিহাসে উন্নীত হল ।বিবেকের অনুশাসনাধীন হল। তবুও কি মানুষ প্রাগৈতিহাসিকতা মুক্ত? কোন কিছু কে ভ্রুক্ষেপ না করে সে নেগেটিগি টিভিটি বা নেতিবাচকতাকে বিজয়ী করার জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। 

জীবন সরল রেখায় চলে না। সত্য বলতে, জীবন নিজেই নিজের চলার পথ সৃষ্টি করে নেয়।

রাহেলার স্বামী আমজাদ হোসেন সবাইকে বলে দিল এ খবর যেন কেউ রাকিবকে না জানায়। ঘটনার পর থেকে কাউর খাওয়া দাওয়া হয় নি। রাহেলা বাড়ি থেকে তাড়া হুড়া করে খিচুরি ডিম রান্না করে নিয়ে এসেছে। সবায়কে গোসল করিয়েছে। সবায়কে খাওয়াল, নিজেরাও খেল। আমজাদ তার শাশুড়ি, রাকিবের ছেলে লিংকন,রনি ও মেয়ে রাফেজাকে শান্তনা দিল ,বুঝাল। কান্নাকাটি না করে শান্ত থাকতে ও বিশ্রাম নিতে বলল ।কিছুক্ষন শান্ত থেকে আবার কান্না কাটি আরম্ভ হল।রাকিবের মা বিলাপ করে কাণ্ণা আরম্ভ করল।

বিদেশ থেইক্যা রাকিব আইলে তার কি অইব? এত বড় শোক রাকিব সইব কেমনে? পুলাপানগো কি অইব? সমাজে মুক দেহামু কিভাবে? এই লজ্জা কহনে রাহুম? ইত্যাদি বিরাম হীনভাবে চলতেই থাকলো ।

রাহেলা সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে দেখল কোথাও গহনা নেই, সে মার কাছে বলল।

মা বলল,আমার বাড়িতে শনি নাগচে কিচ্ছু থুইয়্যা যায় নাই,সব লইয়া গেছে। রাক্ষসী তোর জানি ভাল অয় না,আটকুন্নি ঠেটকুন্নি  তোর কোনহানে জানি জাগা অয় না।

রাহেলা বলল, বদমাইশ, খানকিমাগি, এই বয়সে মাগির পেরেম আহে কহন থিকা? মাগির নাঙ্গ নাগে, নাঙ্গের পীরিত। আমাগো কথা না হয় বাদই দিলাম। তিনডা ছেলে মাইয়্যার কথাও একটু চিন্তা করল না, বুকের দুধ খাওয়া মাইয়াডার কথাও ভাবল না!! বেশ্যা মাগি। তুই, কি দেইখ্যা সাজ্জাদের হাতে গেলি? না আছে চাকরি না আছে জমাজমি। এ—ই কালের লাইলী-মজনু, মুখ দেইখ্যায্যাই প্যাট ভরবো? 

অনেকক্ষণ পর আমজাদ ঘরে ঢুকল। রাকিবের মা বলল খুব চিনতিতভাবে 

---হূনো তোমরা, খুব মুন দিয়া হুন, রাকিব পনের বছরের চাকরির টাহা কার নামে ব্যাংকে রাহে?

---আমজাদ বলল,ভাবীর নামে  রাখলে তোঁ সর্বনাশ!

---ভাইকি এত বোকা, সারা জীবনের জমানো টাকা বউর নামে রাখবো,রাহেলা বলল।

----আমজাদ বলল, না রাখলে তোঁ ভালই, আর রাখলে কামলা আর ভিক্ষা ছাড়া উপায় থাকবো না,

রাকিবের মা তার বড় ছেলেকে ডাকল

---লিংকন ও লিঙ্কন একটু এই ঘরে আয়?

---কি কও দাদি

---তোর বাপে যে এত বৎসর চাকরি করলো চাকরির ট্যাঁহা কার নামে ব্যাংকে রাখছে?

----আমি জানি না দাদি,তবে আমার মনে হয় মার নামেই রাকছে

সবার মুখ কাল হয়ে গেল

---আমজাদ বলল, অত ভাইবা লাভ নাই, ভাই আইলেই সব যানা যাইব।আমি চেয়ারম্যান সাবের সাথে বুইঝ্যা দেহি। লিংকন বাবা, ওইঘরে গিয়া ঘুমাও গা। আম্মা কাল সকালে বাড়ি যাইগ্যা? 

----তুমি যাইবা, যাওগা, রাহেলা থাকুক, তোমাগো ও তোঁ সংসার আছে, গরু বাছুরআছে—ও গুলাও তোঁ দ্যাহন লাগে। আর তুমি বাবা, দুই দিন পরপর আমাগো দেইখ্যা যাইও।

সাজ্জাদেরও কোন খবর নাই ওর মাও কান্না করছে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছে----কোথাও সাজ্জাদকে পাওয়া যায় নাই। সাজ্জাদের বাবা বললেন, রাকিব আইহ্যা যদি আমাগো নামে কেস দ্যায়?

----ওর বড় ভাই আনোয়ার বলল, আমরা কি দোষ করছি আমাগো নামে কেস দিব? যে দোষ করছে তার নামে কেস দিগগ্যা। হুদাই চাকরি চাকরি ‍কইর‍্যা সাজ্জাদের বিয়াডা ভার দেওয়া অইল।বিয়া করাইয়া দি্লে এই ঝামেলা অইতোঁ না,মাইন্সের বউ লইয়া বাইরিয়া গেল ---মান ইজ্জতের কিছু রইলো ?কোথাও মুখ দেহান যায় না, এহন গামছা মুর‍্যা দিয়া আইটো । 

সাজ্জাদ ও মারিয়া ভালই আছে। মন মত বাজার কইরা খাচ্ছে। মাছ মাংসের অভাব নেই। গরুর মাংস ও ইলিশ মাছ প্রায় প্রতি দিনই আছে। টাকার তোঁ অভাব নেই। নানা রকমের কসমেটিকস এনে দিচ্ছ, এগুলো  আধুনিক ও বেশ দামী।  দাম তোঁ আর ফ্যাক্টর না।  মারিয়া এগুলো জীবনে চোখে দেখে নাই। আজগর আলী মহুরি ওদের কোর্ট ম্যারিজ সুসম্পন্ন করে বাসায় উঠার সি, এন, জি, রিজার্ভ করে দিয়ে গিয়ে ছিল। সাজ্জাদ তার বাল্য বন্ধু আজগর আলী মহুরিকে আবারো মোটা অংকের টাকা দিল। সাজ্জাদকে ভাল ভাল বাজার করতে, মারিয়াকে দামী দামী কাপড় চোপর ইত্যাদি ইত্যাদি কিনে দিতে পরামর্শ দিয়েছে। মেয়েরা এই সময় এগুলো আশা করে। আজগর আরও একটি গোপন মোবাইল নম্বর সাজ্জাদকে দিয়ে বলল, ভয় নাই,আর কি ঝামেলা হবে? ঝামেলা আছে, আজগর মহুরি আছে। সুতরাং কোন চিন্তা নাই স্ফূর্তি কর, সাজ্জাদ মারিয়ার কাছে শুনে শহরে থাকার মত শাড়ি,সেলোয়ার কামিজ,নাইটি ,থ্রিপিস কয়েক সেট এনে দিয়েছে। টেলিভিশন এনে দিয়েছে। মারিয়াকে আপাতত মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছে না--- কোন ঝামেলা হ্য়,এই ভয়ে। তারা রুমেই থাকে,খায়, টিভি দেখে,গান শুনে এবং ফেসবুক দেখে । রান্না, গোসল, খাওয়া দাওয়া রুমেই চলে কাউ সাথে মিশে না, কথাও  তেমন বলে না। সাধারণত অন্যা ভাড়াটেরা  তাদের সাথে মিশতে আসেনা কারণ তাঁরা ভি,আই,পি ভাড়াটে না? চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে একসেট টাচ মোবাইল সজ্জাজ মারিয়াকে কিনে দিয়েছে।বাড়ির প্রতি দিনের খবর, এলাকার হালচাল আজগর পাঠায় সাজ্জাদকে । পেপারে খবর বেরিয়েছে ,তিন ছেলেমেয়ের মা প্রবাসীর স্ত্রী মারিয়া নগদ পনের লক্ষ সত্তুর হাজার টাকা সাত ভরি স্বর্ণের গহনা ও বিশ ভরি রৌপ্যের গহনা নিয়ে ২৭-৮-২০২৩ ইং তারিখে তার ছেলেমেয়ের প্রাইভেট টিচার বেকার মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের হাত ধরে উধাও’।

সাজ্জাদ ও মারিয়া পেপার কিনে এনে পড়েছে। মারিয়া সাজ্জাদকে বলেছে---

 -‘এখন কি হবে’?

---- কি আর হবে, আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে না? ।

সাজ্জাদ এফ, ডি, আর -এর টাকা এবং অন্যান্য টাকা থেকে নগদ কিছু টাকা রেখে বাদ বাকি টাকা থেকে প্রয়োজন মিটানোর জন্য নিজ নামে অ্যাকাউনট করে রেখে দিয়েছে। সামান্য কিছু টাকা কৌশলগত ভাবে সাজ্জাদ ও মারিয়ার নামে জয়েন্ট অ্যাকাউনট করে রেখেছে। এতে মারিয়া মহাখুশী। বস্তুত,সাজ্জাদ মারিয়াকে খুশী করার জন্যই এটা করেছে। পেপার দেখার পর পুলিশের চোখ এড়ানোর জন্য সাজ্জাদ চুল খুব খাটো করে কেটে এসেছে এবং মারিয়াকে বোরকা পরিয়ে পার্লারে যেয়ে চুল বব করে কাটিয়ে এনেছে, পেপারে প্রদত্ত  ছবির সাথে বর্তমান চেহেরা না মিলে এ উদ্দেশ্যে। তার পরও তারা  সরবোচ্চ সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করে চলেছে। 

Comments

    Please login to post comment. Login