স্বাধীন ও আগমনি দুজনেই কেন্দ্রে এলো, পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাদের এস, এস,সি,পরীক্ষার কেন্দ্র হরিণ ডাঙ্গা কলেজে। ভাল পরীক্ষা দিচ্ছে তারা। স্বাধীন ও মনি দুজনের বাসা অর্থাৎ পরীক্ষার সময় থাকার জায়গা বেশি দূরে নয়। নোট আনার ছুতায় তারা দেখা করে। পরস্পরকে দেখে উজ্জীবিত হয়, মনোবল বৃদ্ধি করে। আবার নবোদ্যমে পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা ভাল হলে উৎসবের আনন্দ জাগে মনে।
পরীক্ষা ষেশ। আগমনি বাড়ি যাবে এবং স্বাধীন স্কুল বোর্ডিঙে তাপর বাড়িতে। দুজন দুজনকে কলম উপহার দিল। তাদের স্কুল জীবন শেষ। স্কুল জীবনের কত শত স্মৃতি ভিড় জমাতে থাকলো তাদের মনে। স্বাধীনের বাবার ইচ্ছা তাকে ঢাকা কলেজে পড়াবেন। অবিশ্যি স্বাধীন ও আগমনির ইচ্ছা তারা দুজনে একই কলেজে পড়বে। কিন্তু শেষ মেষ বাবার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। দুজনে দুজায়গায় থাকবে ভাবতেই অবাক লাগে।
আজ বিকেলে স্বাধীন ও আগমনি রেশমিতে যাবে, স্বাধীন বোর্ডিং থেকে এবং আগমনি বাড়ি থেকে। রেশমি পার্কে পৌঁছেই তারা আসল বিষয়ে চলে এলো। তুমি কিন্তু ঢাকায় ভর্তি হবে যদি আমাকে ঢাকা কলেজে কিংবা ঢাকার অন্য কলেজে ভর্তি হতে হয়। স্বাধীন মনিকে বলল।
-----আমি তো চাইলেই নিজের ইচ্ছায় ভর্তি হতে পারি না, স্বাধীন।
----তবে কি করবে? স্বাধীন জিজ্ঞেস করলো।
---আমি চেষ্টা করবো, তুমি আমি এক সাথে কোন কলেজে ভর্তি হতে। ঢাকা কলেজ তো শুধু ছেলেদেরকে ভর্তি করে। তবে আমি চাইবো ঢাকার অন্য কোন কলেজে ভর্তি হতে। মনি বলল।
-----কি অদ্ভুত নিয়ম?
-----কোন নিয়ম?
-----এই যে, ছেলেরা ভর্তি হতে পারবে, মেয়েরা নয়।
-----অদ্ভুতটাই দেখতে দেখতে স্বাভাবিক হয়ে যায়, এমনও কলেজ আছে, যেখানে মেয়েরা ভর্তি হতে পারে,ছেলেরা নয়।
----আমার এ নিয়ম ভাল লাগে না। ছেলেমেয়ে সবাই এক সাথে ভর্তি হতে পারে, সেটাই তোঁ ভাল।
----তোমার আমার ভাল লাগার মন্দ লাগার কোন মুল্য নেই।
----তার মানে আমরা পড়বো অথচ আমাদের ভাল লাগার মন্দ লাগার কোন মুল্য নেই? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তোঁ ছেলে মেয়েরা একই সাথে পড়ার সুযোগ পায় যা সহ শিক্ষা নামে অভিহিত। সহশিক্ষাও তোঁ পণ্ডিতেরাই চালু করেছন --নিয়ম কানুন বানিয়েছেন, তারা কোন যুক্তিতে করেছেন? স্বাধীন বলল।
----নানা মনির নানা মত।
----ছাত্র ছাত্রীরা যদি ঐ সব কলেজে ভর্তি না হয়?
-----হ্যা, আমাদের রানীগঞ্জ কলেজেই দেখ, পাশে মহিলা কলেজ থাকা সত্বেও মেয়েরা মহিলা কলেজে ভর্তি না হয়ে রাণীগঞ্জ কলেজে ভর্তি হয়। অথচ মহিলা কলেজে ছাত্রী খুঁজে পায় না। আমার যে ভাই ইউ নিভারসিটির শিক্ষক উনি আমাকে মহিলা কলেজে পড়াবেন না।
-----কেন?
----- এটা তার পয়েন্ট অব ভিউ। তার মতে তারা সহজে পুরুষদের সাথে মিশতে পারে না, এমন কি স্বামীর সাথেও মিশতে পারে না, অ্যাডজাস্ট করতে পারে না এবং ছেলেদের কলেজে পড়ূয়ারাও অনুরুপভাবে মেয়েদের সাথে মিশতে এমন কি স্ত্রীর সাথেও মিশতে বা অ্যাডজাষট করতে পারে না।
---- তোমার একথা আমার কাছে না বলে কোন Talk Show তে বলা উচিত ছিল। এখানে বলছ, মানুষ বলবে, ‘হ্যা,তা হলেই তোঁ প্রেমের বাজার বইতে সহজ হয়’।
----আমি একটি Opinion pass করছি, তা কোথায় বসে বলছি, তার কি দরকার? আমি আমার ভাই য়ের মতকে Support করছি এবং এটা আমারও মত।
----ঠিক আছে। আমি এদিকে আর বাড়ব না। আমি বলছিলাম কি, পণ্ডিতদের মধ্যে এত মতভেদ কেন, আমরা কোনটা গ্রহণ করবো?
----As you think fit. থাক নানা মনি নানা মত নিয়ে ।মনি বলল।
-----মুনি বা পণ্ডিতেরাও তোঁ ভুল করতে পারেন?
---- তা হয়তো পারেন।
-----পণ্ডিতদের ভুলকে ভুল বলা হয় না, বলা হয় পণ্ডিতি ভুল। স্বাধীন বলল।
----- মনি বলল, এ নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানো দরকার নেই। তুমি কি আমাদের রানীগঞ্জ কলেজে ভর্তি হবে? কলেজে হোস্টেল আছে।
----- আমি তোঁ বললাম বাবার ইচ্ছে, বাবার ইচ্ছে হল, আমি ঢাকা কলেজে অথবা ঢাকার যে কোন কলেজে ভর্তি হই। দেখা যাক রেজাল্ট হোক।
----- তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না, স্বাধীন।
-----আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, মনি।
আমরা অবিশ্যি জীবনের অন্য একটি পর্যায়ে চলে যাচ্ছি অর্থাৎ আমরা আগের অবস্থা থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি, মনি বলল।
-----সেটা স্থান গত। কিন্তু আত্মার দিক থেকে আমরা দুজনে এক ও অভিন্ন। তোমার হাতটা দাও মনি, স্বাধীন বলল মনির হাতে হাত রেখে------‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি তোমাকে ছেঁড়ে কখনও কোথাও যাব না, প্রয়োজনে জীবনভর অপেক্ষা করবো’
আগমনি স্বাধীনের হাতে হাত রেখে অনুরুপ ভাবে বলল, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি তোমাকে ছেড়ে কখনও কোথাও যাব না, প্রয়োজনে জীবনভর অপেক্ষা করবো’।
দুজনে দুজনকে বুকে জড়িয়ে ধরল এবং দুজনেই বলল----
স্বাধীন--‘আমি তোমাকে ভাল বাসি ,মনি’।
আগমনি ---আমি তোমাকে ভালবাসি ,স্বাধীন’
দুজনেই দুজনকে চুমু খেল,দুজনের চোখেই জল।
স্বাধীন আত্মস্থ হয়ে বাদামওয়ালাকে ডাকল, বাদাম নিল, মনিকে কোলে এনে বসাল। মনি স্বাধীনের কোলে শুয়ে পরল। মনি বাদামের খোসা ছাড়িয়ে স্বাধীনকে বাদাম খাইয়ে দিল, স্বাধীনও মনিকে খাইয়ে দিল। মনি কোল থেকে উঠে ক্লোজড হয়ে বসলো এবং বলল আমরা যেন দুটি পৃথক দ্বীপে হারিয়ে যাচ্ছি।
----- মনি তোমার কণ্ঠে হতাশার সুর শুনছি?
---- হতাশা তোঁ বটেই। ইচ্ছে করলেই আমরা আমাদেরকে দেখতে পেতাম। আজ সে সুযোগ হারালাম, জীবনের প্রয়োজনে আমরা কে কোথায় ভেসে যাব।
স্বাধীন বলল -----আমরা যে যেখানেই ভেসে যাইনা কেন, আমাদের মনের নোঙ্গর তো একই জায়গায়। আমরা একে অপরের হৃদয়ে বসত করি,-তোমার হৃদয়ে আমি, আমার হৃদয়ে তুমি। আমরা যত দূরেই ভেসে যাই না কেন তোমাকে আমি এবং আমাকে তুমি নিজ হৃদয় থেকে বের করে দেখতে পারি।
মনি আবেগ আপ্লূত হয়ে স্বাধীনকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। স্বাধীন টিস্যু দিয়ে মনির চোখ মুছিয়ে দিল, মনি আঁচল দিয়ে স্বাধীনের অশ্রু মুছিয়ে দিল
দুজনের হৃদয়ে অনুরণিত হতে লাগলো বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অশ্রু-অঞ্জলি—
যেতে নাহি দিব হায়
তবু যেতে দিতে হয়
তবু চলে যায়।
দুটি অনভিজ্ঞ কচি প্রান, স্বাধীন ও আগমনি। প্রেমের উত্তাল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রেমকে আঁকড়ে তারা জী বনের নৌকা বেয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ।সফলতা বিফলতার দোলায় দোল খাছে । তাদের সংলাপ চারিতায় উঠে আসছে কখনও সফল প্রেমের বর্ণচ্ছটা, কখনও ব্যর্থ প্রেমের নাভিশ্বাস। তাদের জীবন আছে,জীবন সংগ্রাম আছে, জীবনের আশা আছে, বিভিন্ন পরিস্থিতি আছে, আর এ সব কিছু মিলিয়ে হচ্ছে বাস্তবতা। বাস্তবতার নিষ্ঠুর আঘাতে কেউ টিকে থাকে, কেউ গুড়িয়ে যায় ।পরিণাম কেউ জানে না। আমাদের আগমনি ও স্বাধীন কোন দিকে যাবে, কি তাদের পরিণতি?
Protiva protiva
।
স্বাধীন বলল, মনি,কবে কখন মিলিত হবো জানি না, আমরা অনেকক্ষণ থাকবো, ভাত খাব, দই-মিষ্টি খাব
----আচ্ছা,স্বাধীন, মনি বলল।
--- চল, আমরা আপাতত ভাত খেয়ে নিই।
----চল।
তারা হোটেলে যেয়ে বসল। বয়,ভাত এনে দিল। টেবিলের চার দিকে হলুদ কাপড়ে ঘেরোঁয়া পর্দা। তারা বোয়াল মাছ অর্ডার দিল। দুজনেরই বোয়াল মাছ পছন্দ। মনি লেবু চিপরিয়ে রস দিল স্বাধীনের প্লেটে। আজ তারা তেমন রোম্যান্টিক নয়। বিদায়ের সুর অনুরনিত দুজনের হৃদইয়েই। দুজেনে খেল, খাইয়ে দিল। বিল দিয়ে তারা আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল। ফুল কিনল। চা খেল। আবার আগের জায়গায় এসে বসে পরল।
স্বাধীন মনির মুখের দিকে চেয়ে রইলো। ব্যথা মথিত হৃদয় রস প্রাধান্য পেল সমস্ত আনন্দ ছাপিয়ে। জীবনে মনে হয় হাঁসির চেয়ে কান্নার প্রাধান্যই। কোনটি মধুর জানিনা।
-----কি দেখছ, আগমনি বলল
----কিছু না
---- মনি স্বাধীনের থুথনি ধরে তার কপালে, চোখে মুখে চুমু খেল, আদর করলো।
দুজনে দুজনকে ফুল দিল। প্রত্যেকেই উপহারের কলম বের করে স্বাধীন আগমনির হাতের তালুতে স্বাধীন লিখে দিল, আগমনিও স্বাধীনের হাতের তালুতে অনুরুপ আগমনি লিখে দিল।
প্রতিদিনিই মোবাইলের করো, মোবাইলের ফাঁকে চিঠি লিখো, আগমনি বলল।
----ঠিক আছে।
---চল।
তারা মিষ্টির দোকানে দই-মিষ্টি খেল, খাইয়ে দিল। স্বাধীন বলল, রেজাল্ট হবার আগপর্যন্ত মাঝে মাঝে আমি তোমার কাছে চলে আসবো। মোবাইলে আগেই তোমাকে জানাব। আব্বা যদি ঢাকায় কোচিং করতে বলেন তাহলে ঢাকা চলে যেতে হবে। তখন হয়তো, এত ঘণ ঘণ আসা যাবে না। তুমি অ্যাডমিশন কোচিং করবে মনি?
----আমি বাড়ি থেকে জেনে তোমাকে বলবো।
----ঠিক আছে
বিল পরিশোধ করে তারা যার যার গন্তব্যের দিকে চলল। দুজনের দুটি নাম হৃদয়ে অশ্রু দিয়ে খোদিত হল ।
স্বাধীন ও আগমনি দুটি অপরিপক্ক প্রাণ। তারা একে অপরকে পাগলের মত ভালবাসে। তারা যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত । সাহিত্য জীবনের পটভূমিতে সৃষ্ট, জীবনের গল্প। দুয়ে দুয়ে চার হয়। এটা গানিতিক হিসাব। জীবনের হিসাবে সাহিত্যের হিসাবে দুয়ে দুয়ে চার না হয়ে পাচ ও হতে পারে। তাদের ভালবাসায় কোন ঘাটতি নেই, শত ভাগ খাঁটি ভালবাসা। তবুও কেউ কি বলতে পারে বা তারাও কি নিশ্চিত তাদের ভালবাসার হিসাব দুয়ে দুয়ে চার হবে –পাঁচ না হয়ে।
দুয়ে দুয়ে চার মানে ---- একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসল। মেয়েটি নাইনে এবং ছেলেটি আই,এসসি পড়ে। তারা প্রমিজ করল তারা ওকে অপরকে ছাড়া বিয়ে করবে না, তবেঁ বিয়ে মাস্টার্স পাশের পর। তাদের দুজনেরই মাস্টার্স পাশ করে চাকরি হল এবং তাদের বিয়ে হল, এটা হল দুয়ে দুয়ে চারের উদাহরণ। অন্য কিছুই হল না শুধু বিয়ে হল। এটাও দুয়ে দুয়ে চারের উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়।
দুয়ে দুয়ে পাঁচ হল। দুজনেই দুজনকে ভালবাসল। স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে হবার কথা ছিল ,বিয়ে হল না, ছেলে ও মেয়ে দুজনেরই অন্য জায়গায় বিয়ে হল বা দুজনের একজনের ও বিয়ে হল না। দুজনই চির কুমার চির OKকুমারি থাকলো। এক্ষেত্রে দুয়ে দুয়ে পাঁচ হল। এরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যাব, বিভিন্ন সমাজে। এরুপ উদাহরণ আরও জটিল হতে পারে। যেমন—বড় ভাইয়ের প্রেমিকার সাথে ছোট ভাইয়ের বিয়ে হল। এতে বড় ভাই আত্ম হত্যা করল বা চির কুমার থাকলো। অথবা বড় বোনের প্রেমিকের সাথে ছোট বোনের বিয়ে হল বড় বোন সুইসাইড করলো কিংবা চিরকুমারি থাকলো।বিপরীতভাবে ছোট ভাইয়ের প্রেমিকার সাথে বড় ভাইয়ের, ছোট বোনের প্রেমিকের সাথে বড় ভাইয়ের বিয়ের ফলে একই পরিণতি হল। ইত্যাদি ইত্যাদি বহু উদাহরণ দেয়া যাবে। ত্রিভুজ প্রেম রয়েছে। ইদানিং পরকীয়া প্রেমও মহামারীর আকার ধারন করছে
আজ অপুর অফিস ছুটি। নাস্তা খাবার পর অপু ও আখি পাশাপাশি বসে চা খাচ্ছে, চা একটু বেশীই গরম,ধুয়া উড়ছে।
তোমার মন খারাপ? অপু আখিকে জিজ্ঞেস করলো।
----না
----তবেঁ এমন করে বসে আছো যে?
----আমি যেমন সে রকম ভাবেই বসে আছি
----তার মানে তুমি ভাল নেই
--- আমার ভাল থাকায় মন্দ থাকায় কার কি এসে যায়?
----অবশ্য, এসে যায়, তুমি আমার স্ত্রী নও?
----অবশ্য, তোমার স্ত্রী হিসেবে আমি কোন কাজ না করছি?
----শুধু কাজ করলেই স্ত্রী হওয়া যায়?
----এ প্রশ্ন আমাকে কেন তোমাকে কর, এর উত্তর পেয়ে যাবে।
--/--তুমি কি ভুলে গেছ আমি তোমার স্বামী?
---- ভুলি নি তুমি আমার স্বামী, তুমি আমার হর্তাকর্তা, আমার সন্তানের জণ্মদাতা।
---- শুধু জণ্মদাতা, ভালবাসার কেউ নই?
----না, তুমি আমার ভালবাসার কেউ নও, ভালবাসার অনেকেই আছে তোমার।
--- তুমি অমন করে কথা বলছ কেন, আমি তোমার জন্য কিছু করিনি?
----হ্যাঁ করেছো, আমি তো তা অস্বীকার করিনি, তুমি আমার স্বামীর ভালবাসার শরীক বানিয়েছ, আমার ভরন পোষণ দিচ্ছ, আমাকে সতীন উপহার দিতে যাচ্ছ, আরও কত কি দেবে?
----ভালবাসার কথা বলছ? আমার ভালবাসার অভাব আছে, আমি ভালবাসার নদী, ভালবাসার দরিয়া, ভালবাসার সাগর। কত ভালবাসা লাগবে তোমার ?
----হা হা তুমি তো ভালবাসা অনেক বেশি দিয়ে ফেলেছো আমাকে ।তুমি অনুগ্রহ করে ফারাক্কা বাঁধের মত তোমার ভালবাসার নদীতে, ভালবাসার দরিয়ায় বাধ দিয়ে দাও।
----তুমি সীমার বাইরে যাচ্ছ
----মোটেঈ না। অন্তরে আগুন লাগছে আমার তোমার নয়। আমার অন্তরের আগুনের সামান্য তাপ লাগতেই তুমি ওহ আহ করছ, তোমার ভালবাসার নদীতে, ভালবাসার দরিয়ায় বন্যা বইয়ে দিলেও আমার অন্তরের আগুন নিভবে না। এই প্রসঙ্গে আমি কোন কথা উঠাতে চাইনি, তুমিই উঠিয়েছ, আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও। আঁখি বলল।
---বল
--- ভালবাসার কথা বলছ? ভালবাসার মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে। স্বামীর ভালবাসার শেয়ার করা যায়? ইহা কি বণ্টন যোগ্য? তুমি আমার কাছে শুয়ে অন্যের কথা ভাববে, আমার দেহে অন্যকে অনুভব করবে আর মুখে আমার প্রতি তোমার ভালবাসার বন্যা বইয়ে দিবে এটা আমার প্রতি তোমার অবিচার নয় কী? আমি তোমার স্ত্রী অথচ তোমার চিন্তা রাজ্য অন্যের দখলে, তোমার চিন্তা রাজ্যের অধিকর্তা আমি ছাড়া অন্য কেউ এটা কি স্ত্রীর জন্য ট্র্যাজেডি নয়?
----আমি কি তোমায় ভালবাসা দিচ্ছি নে? অপু প্রশ্ন করলো।
----আশা করি আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। আগে আমার কথা গুলো মন দিয়ে শোন, এঁর মধ্যেই তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। ভালবাসা তো বাজারে কেনাবেচার জিনিষ নয়, আর এটা বণ্টনযোগ্য জিনিষও নয় যা আমাকে পাচ কেজি অন্যকে পাচ কেজি দিলে।
আমার ভালবাসা এত তুচ্ছ যে, যা তোমাকে দেয়া যায়, তাই যদি না হবে আমার ভালবাসা তোমাকে দু বৎসরের বেশি ধরে রাখতে পারলো না, কেন? তোমার তুষ্টি ও সন্তুষ্টির জন্য অন্য নারীর সংলগ্নতা ও ভাল বাসার গ্যাঁটেজ দরকার হল। আমি যদি অন্য পুরুষকে ভালবাসতাম ,বিয়ে করতাম তোমার কাছে থেকে তুমি কি তা সহ্য করতে? সব কিছু তোমাদের জন্য আমাদের জন্য কিছুই না। এটা পুরুষতন্ত্রের আশীর্বাদ যা তোমদের জন্য হীটকড়,পোয়াবার।
----তোমার চূপ করা উচিত। পুরুষতন্ত্র পুরুষতন্ত্র বলে চিৎকার করছ, কোথায় পুরুষতন্ত্র? সব জায়গায় এখন নারীতন্ত্র ,মহিলাতন্ত্র ,মাতৃতন্ত্র সমস্ত কিছু তোমাদের করায়ত্তে আর বাইরে শ্লোগান পুরুষতন্ত্র পুরুষতন্ত্র বলে, অসহ্য,বিব্রতকর।
----এটা থাক, আজকের প্রসঙ্গে আসা যাক। আঁখি বলল।
----হ্যাঁ বলল, তুমি ক্রমশই সেন্টিমেন্টাল হয়ে যাচ্ছ
---- মোটেই না, আমি যেটি সত্য, সেটিই বলছি, আর সত্য চির দিনই তিক্ত হয়।
---- হ্যাঁ, সত্য তিক্ত সবই বল সেন্টিমেন্টাল হইও না শুধু।
অপু মনে করলো এভাবে বারগেনিং চলতে ঝগড়ার সৃষ্টি হবে, পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যেতে পারে।তাইসে বলল ঠিক আছে, তুমি Rest নাও আমি একটু হেটে আসি, এই বলে অপু ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আখি OKকাঁদছে ।দুচোখে শ্রাবন নেমেছে। সে হৃদয় নিংড়ে ভালবাসে অপুকে। আখিও মনে করে অপু তাকে অনুরুপ ভালবাসে। অপুর স্পর্শ ছিল স্বর্গীয়,চোখে চোখে চেয়ে চেয়ে থাকা কতই না আনন্দের। তাদের মিলন সুখ কতই না অমৃত আস্বাদন। মিলন সরোবরে অবগাহন কতই না তৃপ্তি মধুর। তাদের ভালবাসায় ছিল আকাশের OKবিস্তার ,সমুদ্রের গভীরতা ও হিমালয়ের উচ্চতা।
কত সুন্দর জীবন সংসার তাদের, তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে, খাওয়া পরার কোনই আভাব নেই , ছিমছাম পরিবার, বিশুদ্ধ পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন দৃষ্টি ভংগি। কিন্তু কোত্থেকে কাল বৈশাখী ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল তার আনন্দ সুখ সর্বস্ব। জীবন প্রভাতেই গোধূলির ছায়াপাত হল। ভালবাসার দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়লো ---জীবনের অঙগনে---হৃদয়ের প্রাঙ্গণে---সর্বত্র। চোখের জলের বন্যায় ভেসে গেল সুখ, আনন্দ,সোহাগ---সব। আমি জানতাম প্রকৃত ভালবাসায় বাস করে সত্য, সুন্দর ও শিব। তবে আমার ভালবাসা ছিল না কি প্রকৃত হে বিধাতা?
অফিস ছুটির পর নিপার কথামত ওদের বাসায় গেল অপু।
নাস্তা খাওয়ার পর নিপা বলল, তা কেমন আছো, অপু?
----ভাল থাকার আর উপায় আছে?
----কেন? নিপা প্রশ্ন করলো
--- তোমার জানা নেই?
----আছে সব না অপু, আমি সরাসরি প্রসঙ্গে আসছি। আমাদের বিয়েটা হওয়া দরকার এবং তাড়াতাড়িই
----হবে একটু সবুর কর।
---- কত আর সবুর করবো দশ বৎসর অপেক্ষা করছি, আর অপেক্ষা করা যায় না
---- তোমার স্ত্রী আখি কেমন আছে?
----আছে ঐ এক রকম। সেই তোঁ সব কিছুর মুলে। সব কিছু ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।
----সে যাবে সেটা আমি আগেই জানতাম। সম্পর্কের শুরুতেই যদি তুমি সত্য কথাটা বলতে ‘তুমি বিবাহিত’, তাহলে আমি আর এগুতাম না। এখন ঠেলা
সামলাও। সম্পর্কের দুই বৎসরের মাথায় বললে তুমি বিবাহিত। তোমার স্ত্রী আছে----সন্তান আছে। আমি তোঁ আকাশ থেকে পড়লাম, তখন আর ফেরার পথ ছিল না। কেন তুমি সত্যটা বললে না?
----বলিনি ভয়ে
----কিসের ভয়?
----তোমাকে হারানোর
----এতো পুরানো কথা সব পুরুষেরাই বলে
----সে যাই বল। ভাবলাম সত্যটাই বলি, মিথ্যা নিয়ে আর কত এগুবো? তুমি ও মেনে নিলে, অপু বলল।
----মেনে না নেয়ার কি ছিল? পরেছি গলায় মরণ বিষের তাজ। প্রেমের তাজ খুলা যায়? তাছাড়া----
---- তাছাড়া কি?
---- তোমরা পুরুষরা কোন নিষেধ বারন মান? তুমি তোঁ নাছোড় বান্দা ‘বসতে পারলে শুয়ার চান্স নিতে ছাড় না।‘
---- সব পুরুষ মানুষের দোষ, তুমি মার্শাল ‘ল’ জারি করতে। শাস্তির ভয়ে ১৪৪ ধারা ভাংতাম না?
দুজনে দুজনার দিকে চেয়ে দুষ্ট হাঁসি হাঁসলো।
----তুমি মার্শাল ‘ল’ মানার মানুষ? পাগলা ঘোড়া পায়ে বেরি দিলে মানে না, আবার বড় বড় কথা বলে। তাছাড়া প্রেমিকের আবদার মানা না যায়? সবচেয়ে বড় কথা আমি তোমাকে বিশ্বাস করতাম। আমি মনে করতাম আমার কোন ত্যাগই বিফলে যাবে না, এ আস্থা আমার ছিল।
----এখন বিশ্বাস কর না? আস্থা রাখ না? অপু বলল।
----এখন তখন নয় সব সময়ই আমি তোমাকে বিশ্বাস করি এবং তোমার উপর আস্থা রাখি। তাই যদি না হবে তাহলে দশ বৎসর কিসের উপর ভরসা রেখে অপেক্ষা করে আছি।
----যদি কোন কারণে বিশ্বাস ও আস্থার অমর্যাদা হয়?
---- হবে না। আর যদি হয়, তাহলে তুমি-আমি ময় পৃথিবীটার যে আস্বাদ নেব তাতেই চলে যাবে বাকী জীবন, আর কিছুরই প্রয়োজন হবে না। যখন আমি সর্বস্ব তোমাকে দিলাম ,তখন তুমি বললে সব ঠিক হয়ে যাবে, সব তুমি ম্যানেজ করবে। আমার বারবার ভাল ভাল বিয়ের সম্বন্ধ এলো, আমি সব সম্বন্ধ না কর লাম—নাকচ করলাম। পরিবার থেকে বার বার তাগিদ দিতে লাগলো, ক্রমশ চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো। আমি তাদের তাগিদ, চাপ কোন কিছুরই তোয়াক্কা করলাম না। আমি বিদ্রোহ করলাম। আমি তাদের কাছে তিক্ত হয়ে উঠলাম। তিক্তটার মাত্রা যখন চরমে উঠে গেলো, বাড়ি থেকে একাই চলে এলাম। মেসে সিট না পেয়ে বাসা নিলাম। এসবই তোমার আমার জানা। আমি বিয়ের কথা বললেই তুমি বলেছ , ‘অপেক্ষা কর’। ‘অপেক্ষা কর’ শব্দটি বেশ পুরানো হয়ে গেল—বৈচিত্র হারাল। এখনো বলছো ,’অপেক্ষা কর’। এভাবে দশ বৎসর , আর কতো? এখন আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
---- নিপা, একটু চা হলে হয় না?
----কেন তোমার অস্বস্তি লাগছে শুনতে?
---- না, তা কেন হবে?
----তুমি তো মনোযোগী শ্রোতা ---ATTENTIVE LISTENER. এদের ইতিবাচক দিকই বেশি, এদের নেতিবাচক দিক হল, বক্তা বুঝতে পারেন না, মনোযোগী শ্রোতারা আসলে মনোযোগী কিনা। কারণ তারা মনোযোগের সময় তো মনোযোগ দেয়ই, বোরিং বা অস্বস্তির সময়ও মনোযোগী থাকে। তাদের মনোযোগ স্বস্তি ও অস্বস্তির সময় একই থাকে। তাই তারা কখন মনোযোগী আর কখন মনোযোগী না তা বুঝা যায় না।
----নিপা তুমি প্রফেসর হলে ভাল করতে, অপু বলল।
----কেন ব্যাংকার হিসাবে খারাপ করছি?
---- না, ব্যাংকার হিসাবে যথেষ্ট ভাল করেছো, প্রফেসর হলে আরও ভাল করতে
-----ধন্যবাদ একটু বস ,আমি চা করে আনছি। দুজনেই বসে চা খেল।
----হ্যা,তুমি বলছিলে, তোমার অপেক্ষা করার সময় নেই,কেন? অপু জিজ্ঞেস করলো।
----অপু প্রত্যেকটা মেয়েই চায় মা হতে । মাতৃত্বেই মেয়েদের পূর্ণতা।আমি বেশিদিন অপেক্ষা করলে আমার দেহ আর সন্তান ধারন করতে পারবে না। আমার বান্ধবী ডাক্তার, কবিতা স্ত্রী রোগ বিশেসজ্ঞ আমাকে পরীক্ষা করে এরুপ রিপোর্ট দিয়েছে এবং আমাকে বিস্তারিত বলেছে।
----এক্তহা তুমি আগে ব্লনি কেন?
--- আগে বলিনি এখন বললাম। নিপা বলল
কবিতা বলেছে এক বৎসরের মধ্যে বিয়ে করে নিতে----
---- ঠিক আছে শোন নিপা, আমিও দায়িত্ব জ্ঞানহীন নই, আমার কি ইচ্ছে নেই,তোমার গর্ব জাত সন্তানের পিতা আমি হই।
----সে তোমার ব্যাপার, এখনকার সিদ্ধান্ত বলো। আর যদি কাউর সাথে তোমার বুঝতে হয়,সময় নেও, ভেবে চিন্তে বল।
----আমার আর এমন কেউ নেই, তার সাথে তোমার বিষয়টা বুঝে উত্তর দিতে হবে। তুমি আমাকে ছয় মাসের সময় দাও। ছয় মাসের মধ্যে আমি তোঁমাকে বিয়ে করবো। আমি ওদের ম্যানেজ করার জন্য চেষ্টা করছি, আর কেউ ম্যানেজ হউক আরনা হউক তুমি মনে রেখ ছয় মধ্যে তোমার আমার বিয়ে হচ্ছে।
---ঠিক আছে ধন্যবাদ, হাত মুখ ধুয়ে এসো ভাত খাবে। গরুর মাংশ আর টেংরা মাছ রান্না করা আছে। আর দুচিন্তা কর না আমি সবার সাথে Adjust করতে পারি।
----সে আমি জানি, নিপা।
অপুর বাড়ি ফিরতে রাত হল। খাবার ইছে হচ্ছে না, নানা প্রশ্ন এড়াতে সামান্য কিছু খেয়ে শুয়ে পরল। শরীর মন দুটোই খারাপ। অফিসে যেতে মোটেই মন চাচ্ছে না। অপু তার এক কলিগকে বড় স্যার কে এ খবর জানাতে বলল। নিপা রয়েছে তার অন্তর জুড়ে। নিপার কথা, দশ বৎসর অপেক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম,সখ্য, বাধ্যতা, ভদ্রতা,শাড়ীর খস মস শব্দ, ইত্যাকার যত রোম্যান্টিক আচরণ কত কত কি তার হৃদয় পটে ভেসে উঠছে।
আজকের কথা বার্তা, খাওয়া, বিয়ের প্রস্তাব প্রভৃতি আরও জীবন্ত হয়ে উঠছে তার মনের পর্দায়।মিশ্রচিন্তা যে মনে উদিত হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়।
সে কিভাবে বলবে এ নিষ্ঠুর সত্য আখিকে। আর না বললে সে পাষাণ ভার থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।সে শুয়ে আছে, এপাশ ওপাশ করছে। সর্ব শক্তি নিয়োগ করে সে আখিকে বলল, আখি তার পাশে এসে বসল---
----খুব সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তোমার সাথে।
---- বল
--- নিপার সাথে তোমার পরিচয় হয়েছে? তার সাথে আমার সম্পর্কের কথা তোমাকে বলেছি। নিপা বিয়ের কথা বলেছে এবং তা যত তাড়া তাড়ি সম্ভব। সে সম্পর্কে তোমার বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত কি?
নিপার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। যদিও সে তাদের ভালবাসার কথা জানে কিন্তু বাস্তব ধাক্কা যে এত কঠিন তা সে প্রথম প্রত্যক্ষ করলো। নিজেকে কোন মতে সামলিয়ে বলল,
----বিয়ে করতে বলেছে বিয়ে কর, আমার আর কি বক্তব্য থাকতে পারে। আর আমার সিদ্ধান্তের কিই মুল্য আছে। তোমার সিদ্ধান্তই আসল।
----এটা তোমার মনের থা নয়
---- আমার মনের কোন দাম আছে তোমার কাছে?
---- তোমার বক্তব্য ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে বলেই তোমাকে বলতে বলছি।
----দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে সেই আইনি প্রয়োজনে?
-----না তুমি একজন ব্যক্তি, আমার স্ত্রী। ব্যক্তি হিসাবে তোমার একটি মূল্যবোধ আছে। সেই মূল্যবোধ থেকে তোমার একটি মত ও সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। তাই সে টাই আমি তোমার কাছে জানতে চাচ্ছি। আগেও বলেছি বিয়ের সময় আমি তোমাকে জানাব, তাই জানালাম। আমার কাজ মানে তোমারও কাজ, তাই এক্ষেত্রে আমাকে জানা প্রয়োজন তোমাকে। তাই তোমার অবগতিতে আনা প্রয়োজন মনে করছি।
----শোন, আমি অত প্যাজ গোঁজ বুঝি না। মেদ যেখানে প্রবল, অস্থি সেখানে দুর্বল। তাই কথার ফুলছুরি যেখানে যত বেশি সত্যতা সেখানে তত কম। আমি শোজা কথায় বলছি, তোমার বিয়েতে আমি কোন বাঁধা OKহবো না, কোন রূপ বিরোধিতা করবো না। আমার যদি কোন দামই থাকতো তাহলে এরকম কাজ তুমি করতে পারতে না। যখন সম্পর্ক করেছো তখন আমার দিকে আমার সন্তানের দিকে তাকিয়েছ, বিবেচনা করার প্রয়োজন মনে করেছো? এখন বিয়েতে আমার অনুমতি লাগবে তাই জন্য আমার মতামত চাচ্ছ। তোমার বিয়েতে আমি কোন সমস্যা সৃষ্টি করবো না।
----সব কিছু পরিকল্পনা করে হয় না। কিছু কাজ এমনি এমনি হয়। কারও ইচ্ছার ধার ধারে না।
----এমনি এমনি অনেকের অনেক কিছুই হয়, তাই তারা সব গ্রহণ করে? মনে অনেকের অনেক কিছুই হয়, তাই বলে মানুষ সব কিছু বাস্তবায়ন করেনা। সব চাওয়া পাওয়ায় পরিণত হলে দুনিয়ায় অনেক অরাজকতা সৃষ্টি হতো। তোমার খাম খেয়ালির জন্য যা হতে যাচ্ছে তার মুল্য দিতে হবে আমার ও আমার ছেলে মেয়ের । ছেলেমেয়েরা তোমাকে আগের মত সম্মান দিতে পারবে? নিপার কথা আমি বলেছি? আমি কখনও বলেছি নিপা খারাপ মেয়ে? ভাল মেয়ে বলেই তোঁ তোমার মত মানুষকে প্রেমে ফেলতে পেরেছে?
--OK-- দেখ, একটি মেয়েকে ১০ বৎসর অপেক্ষায় রাখা যায় না। তার সংসার করার ইচ্ছা থাকে, সন্তানের মা ডাক শুনার সাধ জাগে।
----সবার সব সাধ জাগে, শুধু আমাদের কোন সাধ আহলাদ জাগে না।
----তোমার সাধ আহলাদ পুরন করতে বাকি রেখেছি আমি? তোমাদের কোন ইচ্ছা আমি অপূর্ণ রেখেছি?
----হ্যা, সব ইচ্ছা আকাংখা পুরন করেছো তুমি। আমাদের সব আশা আকাংখা পুরন করেছো বলেই তোঁ এখন অন্য মানুষের আশা আকাংখা পুরন করছ।
----তোমার কথার খোঁচা আমি বুঝি,
----অবশ্যই, তুমি তোঁ নির্বোধ নয়।
----তুমি মনে রেখ, তোমাকে আমি ভালবাসি, চিরদিনই আমি তোমাকে ভালবাসবো।
----ভালবাসার আশা তোঁ পূর্ণ করে দিয়েছ, এখন আর কি ভালবাসা।
অতিরিক্ত ভালবাসা রাখবো কোথায়?ভালবাস তো ভালবাসাই, তার আবারঅতিরিক্ত কি? একটি মেয়ের বা নিপার দশ বৎসর অপেক্ষার কথা বলেছ। এ শুনে আমার লাভ আছে? এ ব্যাপার তোমার আর নিপার। কে কোন কারনে কিসের জন্য অপেক্ষা করেছ, সে সম্পর্কে তোমরাই ভাল জান। এতে লাভ যদি থাকে সেটা তোমাদেরকেই স্পর্শ করবে। মা হবার আশা সহ বিভিন্ন আশা পুরনের কথা বলেছ। এগুলো আমাকে শুনিয়ে লাভ কি? এটা তোমার ও নিপার ব্যক্তিগত ব্যাপার । আমি তোঁ এতে বাঁধ সাধছি না।
---তুমি স্টুডেন্ট লাইফে ভাল বিতারকিক ছিলে । তোমাদের নিয়ে সমস্যা হল কি জান, তোমরা সব ক্ষেত্রকেই বিতর্কের মঞ্চ মনে কর, তাই বিতর্কের অস্ত্র হিসাবে খোচা দিতে ছাড়ো না, এতে কার কত টুকু
রক্তাক্ত হল সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যেমন তুমি বলছ অতিরিক্ত ভালবাসা রাখবে কোথায়, এরকম okআরও অনেক আছে
----কথা প্রসঙ্গে কথা চলে আসে। এটা উত্তরদাতা কথকের দোষ নয়। বিতারকিকও এক ধরণের কথক। সুতরাং প্রয়োজন অনুসারে তার বাক নৈপুণ্য প্রকাশে বাক হাতিয়ার ব্যবহৃত হতে পারেই, এতে কথকের কোন দোষ নেই। আসল প্রসঙ্গে আসলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। তুমি বল, তুমি ভালবাসার দরিয়া যত দিবে তা আর ফুরাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এ জবানীর উত্তর দিতে কথা প্রসঙ্গে কি কথা এসেছে এবংকিছু বাক কৌশলের প্রয়োগ হয়েছে। আমি আবার বলছি, তোমার সমুদ্র ভরা ভালবাসার খোঁড়া যুক্তি আমি মানতে পারি না। আর তোমাকে আমি অনুরোধ করবো, একথা বাইরে জনসমক্ষে বলবে না, কারন, তুমি অপমানিত হবে। সবায়কে মূর্খ ভাবা ঠিক হবে না। তোমার একথার উত্তর আমি অনেক বার দিয়েছি, আর দিবার মনবাঞ্ছা নেই। শুধু এটুকু বলছি তুমি তোমার একাজের মাধ্যমে আমাকে যতটুকু রক্তাক্ত করেছো তোমার ভাবাসার দরিয়ায় এত ভালবাসা বা জল নেই যা আমার রক্তাক্ত হৃদয়ের শত ভাগের একভাগ ঠাণ্ডা করতে পারে। তুমি বুঝবে না, একজন নারী কখনও তার স্বামীর ভালবাসা কাউকে ভাগ দিতে পারে না। তোমরা পুরুষরা তোমরা সব পার, আমরা মূর্খ অসহায় নারী মুখ বুঝে সব সহ্য করি। মাফ করবে এপ্রসঙ্গে আমি আর কথা বলতে চাই না।
----চা খাব, চা দাও প্লিজ, অপু বলল।
---- তুমি চা খাবে না?
okনা, এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি বিষণ্ণ ও বিধধস্ত। আমার মাথা কোন কাজই করছে না। আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে পরেছি। আমি রিতা ছাড়া কাউর সাথে এসব শেয়ার করি না। আমি রিতাকে মোবাইল করলাম এবং আগামি কাল বাসায় আসতে বললাম। রিতা আমাকে বললও, তুই আমাদের বাসায় চলে আয়, সেটাই ভাল হয়। তুই কাল অপু অফিসে যাওয়ার পর আমাদের বাসায় চলে আয়।আমি বললাম ঠিক আছে।
পরদিন নাস্তা করে আমি রিতাদের বাসয় চলে গেলাম। ছেলে সংগীত ও ছোয়া কে বলে গেলাম,ভাতঁ তরকারি সব মীটশীফে রাখা আছে , তোমরা ওগূলো খেয়ে নিও,আমি তোমাদের রিতা অ্যান্টিদের বাসায় চলে গেলাম।
রিতা বারান্দায় বসে ছিল, রিতা বলল, আঁখি কেমন আছিস?
----আমি ভাল আছি। তুই যে ভাল নেই তা তোঁ দেখেই বুঝতে পারছি, আখি তোকে এত বিধবস্ত লাগছে কেন?
-----আখি উত্তর দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রিতা তাকে জড়িয়ে ধরে ঘরে নিয়ে বিছানায় বসাল। ফ্যান বাড়িয়ে দিল।তার কান্না সহজে থামতে চায় না।
--ok--আবার নতুন করে কি সমস্যা হল?
----সে পুরানো সমস্যাই বারবার বিভিন্ন চেহারা নিয়ে হাজির হচ্ছে। তবেঁ আজকের ঘটনা সিরিয়াস। আমি সব কিছু সবিস্তারে রিতার কাছে বললাম।
---- রিতা বলল আখি, ভদ্র লোকেরাই সব চেয়ে অভদ্র কাজ বেশি করে।
---- আমার মনে হয় ভদ্র লোকের একটি শ্রেনী ভেদ থাকা উচিত----ভদ্রলোক ও মুখোস পরা ভদ্র লোক। আখি বলল।
তাই হওয়া উচিত হয়তো। বাইরের ভদ্র অবস্থা ও চেহারা দেখে সবাই আকৃষ্ট হয়। চিনতে চিনতেই আসল কাজ হয়ে জায়----আর ঐ পথ থেকে ভুক্ত ভোগীরা ফিরতে পারে না।
----এখন কি করা যায় সেটাই চিন্তা ভাবনা করে বল, আখি বলল।
----তার আগে কিছু খেয়ে নি।
----না, আমার খিদে নেই, আমি নাস্তা খেয়ে এসেছি
----তুই খেয়ে এসেছিস না না-খেয়েছিস সে আমার জানার দরকার নেই, এই বলে রিতা পরোটা ও মাংস এনে দিল এবং বসে বসে সেগুলো আখিকে খাওয়াল।
--- রিতা, আমি কোন চিন্তাই করতে পারছি না
----বিপদে পরলে সবাইর একই অবস্থা হয়----আর তোর বিপদ তোঁ সহজ বিপদ নয়, সব কিছু মন থেকে ঝেড়ে ফেল, Relax কর, শান্ত হ।
----আমার তোঁ মনে হয় সংসারের মুখে লাথথি মাইর্যা চইল্যা আয়, কিন্তু সব কিছুর বুঝার পরও আরও কিছু বুঝার থাকে তাই আবেগের ভরে কোন সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না ।তোরা তোঁ রাজনীতি করলি নে। তুই তোঁ জানিস স্কুল জীবন থেকেই আমি রাজনীতি করি। রাজ নীতি কইর্যা তোঁ কিছুই অইতে পারলাম না। তবেঁ জীবন পরিচালনার বাস্তবে অনেক কিছুই জীবনের ঝুড়িতে জমা হয়েছে।
-----পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তোর বাস্তব জ্ঞানের সবাই প্রশংসাঁ কর
----তুঁই ওর বিয়েতে মত দিয়ে ভালই করেছিস। তুই সবকিছু ছেড়ে এসে কোথায় দাঁড়াবি? ছোটবেলায় তোর বাবা-মা মারা গিয়েছেন। ভাইয়েরাও যার যার মত সংসার করছে। এতে ভাইদের ওখানে গিয়ে উঠলে আরও সমস্যার সৃষ্টি হবে। এক সমস্যা ছেড়ে আরেক সমস্যায় পরা ঠিক হবে না। ভাইদের ওখানে পাঁচ মাস , আমার এখানে দুমাস রইলি সেটা কোন সমস্যার সমাধান নয়। ছেলেমেয়ের পড়াশুনা ডিস্টার্ব হবে ইত্যাদি। সমস্যার মধ্য থেকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে, রিতা বলল ।
--- ok তা ঠিক।
----শুনছি মেয়েটা নাকি খুব সুন্দরী
---- সুন্দরী না ছাই, এত সুন্দরী হলে বউ ছেলেমেয়ে থাকা পুরুষ মানুষের জন্য দশ বৎসর অপেক্ষা করে ?
-সুন্দরী মেয়ে দেখলে পুরুষের মাথা ঠিক থাকে? যদিও তুই আমি কখনো অসুন্দর নই, চেহারা টেহারা ও খারাপ নয়।
----আমরা এখন পুরাণ হয়ে গেছি না? দামি পূরান কাপড়ের চেয়ে কম দামা নূতন কাপড়ের চটক বেশী আঁখি বলল। কথায় বলে না, পুরাণ চাল ভাতে বাড়লেও গন্ধ কয়।
----okতা ঠিক
---- আমাদের উচিত হবে ধৈর্য ধারণ করা। ধৈর্য ধারণ তিক্ত হলেও ফ লাফল সুমধুর। লাথতি খেয়েও তার সামনে থাকতে হবে, রিতা বলল।
----আর কত ধৈর্য ধরতে হবে, রিতা?
---- এছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই, বোন। আমাদের তো এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। এখন বিষ খেয়েও অমৃতের স্বাদ বলতে হবে। ঐ মেয়ের রুচি জ্ঞান থাক আর না থাক, ভালবেসে বিয়ে না--- তার গুণ তো বটেই তার দোষ গুলোও গুণের মত মনে হবে। বড়ো বয়সে সুন্দরী বউ, বিধাতার উপহার বলে মনে হবে। এই মোহ বেশী দিন থাকবে না। মোহ কাটলেই তোর ছায়াতলে আসতে বাধ্য। সুতরাং এখন মোক্ষম ঔষধ ধৈর্য ধারণ।
---- আমার আর ইচ্ছে নেই ভাল কিছু পাওয়ার, মোহ মুক্ত হউক আর মোহাবিষ্ট হউক, আমার আর দরকার নেই---- অনেক হয়েছে। আঁখি বলল।
----আঁখি, আমরা জেতার জন্য ধৈর্য ধরবো, হারার জন্য নয়। তোর সামনে ম্যারাথন দৌড়---এটা জিততে হবে, সব কৌশল, সব ট্যাঁকটিস নিপুণ ভাবে প্রয়োগ করতে হবে সতর্কতার সহিত। সব কিছু হালকা ভাবে নে, বাস্তবতা, গাদ্যিক বাস্তবটাকে গ্রহণ কর। রিতা বলল।
----আমার এত দিনের গড়া সংসার, স্বপ্ন, আশা ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে, কাল কে বা কারা এসে okআমার উপর কর্তৃত্ব ফলাবে সেটা আমি সহ্য করবো কেমনে?
-----আমি বললাম না, সব কিছু হালকাভাবে নিতে হয়। মনে করবি কিছুই ঘটেনি, কিছুই হয় নি as it is. আর এখনি এটাকে চরম ভাবা যাবে না। নিপা এসেই তোর উপর কর্তৃত্ব ফলাবে কি না, তোর সংসার , স্বপ্ন ভেংগে যায় কিনা সেটা দেখতে হবে, অগ্রিম ভাবা ঠিক হবে না। আগেই তার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন হলে তারভাল কাজও খারাপ মনে হবে। এমনও হতে পারে নিপা তোর অধীনে থেকে তোর ছোট বোনের মত তোকে মান্য করছে----কাজ করছে। সব কিছু সুচারুভাবে চলছে, এরুপ অভিজ্ঞার আলকে বিবেচনা কর। আর যদি তোর উপর কর্তৃত্ব ফলাতে চায় তাহলে ব্যবস্থা নিতে হবে অন্য ভাবে। তবেঁ বাস্তব ঘটনাই ঘটছে শীঘ্রই, সে ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তব ঘটনা ঘটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কখখনও তার কাছে ক্ষমতা ও okকর্তৃত্ব দেওয়া যাবে না। সাময়িক ভাবে একটু Relax করতে হবে ,তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সব তোর কর্তৃত্বাধীনে চলে আসবে। তবেঁ Handling করতে হবে নিপুন ভাবে।আমার কথা আপাতত্ভাবে খারাপ লাগতে পারে কিন্তু এভাবেই এগুতে হ বে।
----না,না, আমার খারাপ লাগবে কেন-----তুই ঠিক বলছিস, রিতা।
---- বাড়ি আমার ভাল লাগে না, রিতা, কেমন যেন থমথমে লাগে, বড্ড একা লাগে।
----আমার একটি প্রস্তাব আছে। আমার স্কুলে একটি টিচারের পদ খালি আছে।মর্নিং ও ডে সিফট আছে। তুই চাইলে টিচার হিসেবে জয়েন করতে পারিস, যে কোন শিফটে। প্রতি মাসে বেতন পাবি, দু তিন তাইখের মধ্যেই। এতে তোর ভাল লাগবে। আসলে নিজের রোজগারের টাকা সেটা যত কমই হউক এঁর দামই আলাদা ।তারপর ণীপা ভাল চাকরি করে, তুও একটা কিছু করলি অসুবিধা কিসের প্রয়োজনে একজন কাজের মেয়ে রেখে নিলি। কিণডার গাঁরটেণ্ট দশম শ্রেণী পর্যন্ত। তারপর ইনটার মেডিয়েটের ক্লাশ অপেণইউনিভার্সিটির আন্ডারে । সময় দিতে পারলে এখানে ক্লাশ নিতে পারিস। কিন্ডার গারটেনে প্রাইভেট পড়িয়েও অনেকে ভাল ইনকাম করে। তুই আমার প্রস্তাবটা বিবেচনায় রাখতে পারিস।
----ঠিক আছে, আমি যত শীঘ্র পারি তোকে জানাব।
--ok--আর আমার দরজা তোর জন্য সব সময়ই খোলা, খারাপ লাগলেই আমাকে কল দিয়ে চলে আসবি।