Posts

নন ফিকশন

আনারকলির অন্তিম যাত্রা

February 22, 2025

সাজিদ রহমান

6
View

হিন্দি সিনেমা দিল্লী-৬ এ খুব জনপ্রিয় একটা গান আছে। সেই 'মাসাক্কালি মাসাক্কালি...গানের ভিডিওতে নায়ক-নায়িকার সাথে কিছু সুন্দর কইতর উড়তে দেখা যায়।

বাংলায় যারে কবুতর বা কইতর কয়, হিন্দিতে তাই মাসাক্কালি। তবে তুর্কিতে (Turkey অফিসিয়ালি দেশের নাম বদলিয়ে Turkiye করেছে) মাসাক্কালির আরও বৃহৎ অর্থ আছে। মাসাক্কালি হলো রুপকথার গল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পাখি। এখন গানের অর্থ খেয়াল করে দেখেন। কেমন একটা মেটাফোর... কবুতর একটি সুন্দর পাখি, প্রেমিকের কাছে প্রেমিকাও শুধু সুন্দরই নয়, একটা রুপকথার মত। কোথাকার পানি গড়িয়ে কিভাবে সাগরের জলে মিশে গেলো।

বেশ কিছুদিন ধরে মেটাফোর আমাকে খুব টানে। লম্বা হওয়ার পরেও নাম কেন গোলপাতা, ৮১ গম্বুজ নিয়েও কেন ষাটগম্বুজ? অর্ধচন্দ্র দেয়া, সাত-সতের, ১৮ মাসে বছর, এরকম অনেক শব্দ, গল্প, ঘটনা আছে যার শাব্দিক অর্থের সাথে প্রকৃত অর্থ একেবারে ভিন্ন। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনেও বহুভাবে, ব্যাপক আকারে মেটাফোরের ব্যবহার রয়েছে।

২.

রংপুর ফিরছি ঢাকা থেকে। বাস ফুড ভিলেজে বিরতি দিয়েছে। উপর তলায় উঠে নানরুটি, গরু অর্ডার দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। গরুর বাটিতে মাংস নাই বললেই চলে। দাম শুনে চোখ কপালে উঠলো (এই মাত্র একটা মেটাফোর ব্যবহার করলাম।)। আপিল করে গরুর পরিমানগত সুরাহা হলো বটে, কিন্তু মন থেকে উচ্চমূল্যের খচখচানি গেলো না। এই দেশে বড় বড় মানুষেরাও সমাজের বৃহৎ বৃহৎ বিচ্যুতি দেখে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। ওসব ভেবে সান্ত্বনা লাভের চেষ্টা করলাম।

খাওয়া শেষে বাসের ধারে দাড়ালাম। এখানে এক সাথে বহুত বাস এসে রেস্ট নেয়। সঠিক বাস খুজে পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। বাসের স্টাফকে বললাম, এসি কমিয়ে দিয়েন, গরমের দিনে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। আর এতে আপনার জ্বালানিও কম লাগবে।

সে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করলো। এসি কমালেও একই পরিমান তেল লাগবে। এই হলো তার যুক্তি।

এবার আমি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।

হাটলে যে শক্তি লাগবে, দৌড়ালে কি একই লাগবে?

এরপরেও সে তার মতে অনড়।

শেষে বললাম, ভাই আমি একজন ছোটখাটো এন্জিনিয়ার।

তারপরেও শক্ত পাথর দিয়ে তৈরি তার হ্রদয়ে সামান্য আচড়ও কাটতে পারলো না। সে যা বোঝে ভালোই বুঝে।

ওই লোকের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা বেশিরভাগ মানুষই তার মত। নতুন কিছু জানার ইচ্ছে নাই, দুনিয়া কই থেকে কই চইল্লা গেছে। সেসবের কোন খোজ না নিয়েই আমরা সব জানি, সব পারি, সব বুঝি। অন্যের যুক্তি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিই।

৩.

বাসের স্টাফের কাছে পাত্তা না পেয়ে ফের ফুড ভিলেজের ভিতরে ঢুকলাম। গুরু বলেছেন, যেখানে পাত্তা পাবে না, সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়বা। সে নিয়মে মেনেই ঢাকায় টেনিস টিম রেখে সটকে পড়ছি। চেয়ার থেকে টেনে হিচড়ে নামানোর আগে নিজেই চেয়ার ছেড়ে দেয়া উত্তম। এটাও গুরুজি বলেছেন। গুরুজি টা কে, জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না।

দুই প্রকারের বিস্কুট কিনলাম। অরিজিনাল ফুড ভিলেজ মেড। পাশে অন্য একজন আনারকলি অর্ডার দিলো। দোকানি নিচ থেকে বের করলো। আমি আড় চোখে আনারকলিকে দেখে নিলাম। আমিও একটা আনারকলি অর্ডার দিলাম। দোকানি একটা আনারকলি আমার হাতে তুলে দিলো।

আনারকলি ও সেলিম কোনটাই তাদের আসল নাম নয়। নাদিরা বেগম বা শরিফ উন নিসা আর ওস্তাদ জাহাঙ্গীর হলো ওদের আসল নাম। এখানেও ভিন্ন নাম, মেটাফোরের আমদানি। জগৎ টাই একটা মেটাফোর। যা সামনে দেখা যায়, তারচেয়েও বেশি কিছু চোখের আড়ালে রয়ে যায়।

ফুড ভিলেজ তিল, গুড়, আটা ময়দা দিয়ে না বিস্কুট, না লাড্ডু টাইপ একটা জিনিস বানাইছে। নাম দিয়েছে আনারকলি। আনারকলি নাম শুনলেই সেলিম কিংবা দিলীপকুমারের আনারকলির কথা মনে আসবে। মুখে চালান করে দিয়ে খাবে এক জিনিস, স্বাদ পাবে অন্য কিছুর।

সেই আনারকলি নিয়ে রংপুরে ফিরছি। আর আমিও লিখলাম, আনারকলির অন্তিম যাত্রা!! আনারকলি দোকানে ছিলো ভালোই ছিলো। আমার হাতে পড়ে শুরু হয়েছে তার অন্তিম যাত্রা। কারন গিয়ে খাওয়া শুরু হবে!!

এটাও কি মেটাফোরের মধ্যে পড়েছে? উত্তর না দিয়ে যাবেন না!! নইলে অন্ধকার রাতে গোরস্থানের পাশ দিয়ে গেলে আপনাকে মেটাফোরে ধরবে!!

Comments

    Please login to post comment. Login