মেইল ট্রেনে সাধারনত সিট পাওয়া যায় না। সেই পুরোনো আমলের লাল টিকেট পাওয়া যায় শক্ত কাগজের, যেটাকে আসলেই বলা হয় টিকেট, এখনকার টিকেট তো বড় কাগজের হয়, কিন্তু লাল টিকেট যারা দেখে নাই তারা বুঝতে পারবে না যে আসলে ট্রেনের টিকেট ও-রকম হয়।
চট্টগ্রাম থেকে টিকেট নিলাম বাড়ি আসবো, বাড়ি কোথায় সে পরে বলবো। কিন্তু টিকেট নিয়েছি অর্ধেক রাস্তার, টাকাও অর্ধেক, পুরো টিকেট নিবোই বা কেন? সিট পাবো না, যাওয়া লাগবে দাড়ায়ে, তাই নিজের ক্ষতি কিছুটা যেনো পোষে সে হিসেবে নিলাম টিকেট।কিন্তু সরকারের ও তো পোষা লাগবে তাই না?
তাই আর কি টিকেট কাটা অর্ধেক রাস্তার।
মেইল ট্রেনে সাধারনত জনসাধারণের জন্যে তিনটা কামরা থাকে। অর্থাৎ তৃতীয়শ্রেনীর তিনটা কামরার পরেই একটা ডাকগাড়ি বা লাল কামরা, যেটাতে লাল রঙের উপর বড় করে লিখা থাকে ডাকগাড়ি।এর পরে কামরাটা থাকে জেনারেটরের জন্যে অর্থাৎ পাওয়ার-কার, এর পরের চারটা কামরা থাকে ১ম শ্রেনী লোকদের জন্যে, এর মধ্যে দুটো এসি কেবিন আর আর দুটো নন-এসি কেবিন, এর পরের দুটো কামরা থাকে মালবাহী গাড়ির জন্যে, এর পরে যদি কোন স্পেশাল বা VIP লোক যাতায়াত করে তবে তার জন্যে একটা সেলুনকার, নচেৎ একটা পরিচলাকের গাড়ি থাকে যিনি ট্রেনকে পরিচালনা করেন। এই হলো মেইল ট্রেনের পরিচতি।
তো এত লম্বা গাড়িতে জনসাধারণের জন্যে তিনটা কামরা, এতে কি আর জনসাধারণের হয়? হয় না, বেশিরভাগ সময় ই গাড়িতে একটা হুলুস্থুলু ব্যাপার লেগেই থাকে, মারামারি বাস্তবে হয় না তবে মৌখিকভাবে একজন আরেকজনকে খুন করে ফেলে, এই আর কি।
যখন গাড়িটা চট্রগ্রামে প্লাটফর্মে ঢুকে তখন ই বাধে এক মহাযুদ্ধ৷ না মারামারির যুদ্ধ না, এটা সিট নিয়ে যুদ্ধ, গাড়ি থামার অপেক্ষা কেউ করে না, আপনি গাড়ি থামার অপেক্ষা করছেন তো মরছেন, মানে আপনাকে পুরো রাস্তা ডলা,ধাক্কা আর হাওয়ার উপর ভেসে থেকে যাত্রা করতে হবে।
এখন তাহলে সিট নেওয়ার উপায়? ঐ একই পন্থা, গাড়ি রানিং অবস্থায় আপনাকে চট করে উঠে পরতে হবে, উঠেই যে সিট পাবেন তাও না, সিট নিতে গেলে হতে হবে আপনায় খলনায়ক৷
চট্টগ্রামের টোকাই ছেলেপেলেরা সাঙ্গু-পাংগু নিয়ে সিট রাখে দখলে, যদি দু একটা ধমক দেওয়া যায় ভালো করে তবে ভয়েই সিট ছেড়ে দেয়৷ কিন্তু কজনে বুঝে আর এই টেকনিক? বলেন?
যার ফলে অনেকেই টিকেট কেটেও তারা ১০০ টাকা করে চায়ের টাকা দেয় ছেলেদের। ছেলেরাও পেয়ে খুব খুশি৷ ওরে আল্লাহ তারা তখন এমন একটা ভাব করে যেনো আপনি তাদের পরিবারের বড়ভাই, আপনাকে আদর আপ্যায়ন করে বসিয়ে দিবে।
অনেকে যুদ্ধ চায় না, কিন্তু টাকা দিয়ে যুদ্ধ জয় করে ফেলে, এইটাকে বর্তমানে স্নায়ুযুদ্ধ বলে আর কি। তাহলে আমি? আমি কি করবো? আমি যুদ্ধ বেছে নিবো? নাকি স্নায়ুযুদ্ধ করবো?
নাহ বাবা টাকা নেই, কিন্তু যুদ্ধ করতে আর সমস্যা কই? সমস্যা নেই, গাড়ি ঢুকছে, আমিও পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ি আসবে আর আমি লাফ মেরে উঠবো, উঠে সিট একটা দখল করবো।
গাড়ি আসলো, লাফ মেরে কতোক্ষন ঝুলে ছিলাম বুঝতে পারি নি। ভিতরে যাওয়া হচ্ছে না, কারন এই যুদ্ধে আমার সাথে আরো অনেকেই শামিল হয়েছে, কারন না উঠলে তো আর সিট ই পাবে না, তাই মুল যুদ্ধটা হয় গাড়িতে উঠা নিয়ে, কার আগে কে উঠবে।
যাক নিজেকে কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো স্পাইডারম্যান, ওই স্পাইডারম্যান মুভির পরিচালক যদি দেখতো আমাদের এই কাহিনী তাহলে আসল নায়ক কে বাদ দিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে নুভির কিছুটা শট বানাতো।
ট্রেনে উঠার পর দেখি আল্লাহ আমিই শেষ ব্যাক্তি আর সবাই ওই আরো আগেই জীবনের মায়াত্যাগ করে করে উঠে পরেছে, অনেকে বসে বসে পা দুলাচ্ছে, কামরার এ মাথা থেকে ও মাথা অবধি একটা চক্কর দিতেই চোখে পরলো এক পিচ্চি দুটো সিট দখল করে বসে আছে৷ বসতে যাবো ঠিক সেই মুহুর্তেই বলে উঠলো ভাই লোক আছে,
বললাম কোথায় তোর লোক, ডাক দে,নইলে সিট ছাড়ো৷ বল্লো, না লোক আছে।
ধুত্তিরি তোর লোকের খ্যাতা পুরি, এর মধ্যে ছেলেটা একজনের কাছে একটা সিট বিক্রি করে ফেলেছে, কিন্তু যার কাছে সিট বিক্রি করেছে তার আবার মোবাইল গেলো হারিয়ে, হারিয়ে বলতে পকেটমার সযত্নে মোবাইলটা মেরে দিয়েছে, ওই যে বল্লাম, যে অনেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে আগেই গাড়িতে উঠে পরেছেন, এদের মধ্যে সেইব্যক্তি একজন, তার অবশ্য জীবন যায় নি তবে তার মোবাইলটা গচ্চা গেলো।
সে মোবাইলটা খুজতে গিয়েছে,কিন্তু অত দামি মোবাইল কি আর পকেটমার ফেরত দেয়? সে তো নিয়ে ধান্দায় আছে আরেকটা মারবার, কিন্ত সেই সিটের মালিক আবার ব্যাগ একটা এই ছেলের হাতে দিয়ে গেছে, ছেলে আবার খুব চিল্লাফাল্লা করছে এইখানে লোক আছে, এইখানে লোক আছে বলে।
আমি কইলাম লোক তো এক সিটের আরেক সিট কই? সর, এইখান থেইক্কা নইলে লাথি মাইরা ফেলামু গাড়ি থেইক্কা।
কি মনে হয় সিট টা আমি পামু?
জ্বি হ্যা ঠিক ই ধরেছেন, সিট আমি পাই নাই, আমি এই ছেলেকে ধমকাচ্ছি, ফাকে দিয়ে আরেক সজনেওয়ালা ভাই, টুপ করে তার নিতম্ব দুইখানা লাগিয়ে দিয়ে সিট বসে পরলো, ফাকে থেকে আমি হুদাই চিল্লাইলাম সিটের জন্যে, নাহ সেদিন আর সিট পাওয়া হলো না, ফলাফল ফাকে থেকে আরেকজন এসে সিট টা পেয়ে মেরে দিলো।
আমি কিছু বলতেও পারলাম না। কারন?
কারন একটাই, যে যেভাবে পারো সিট ধরো, ওই যে সেই ঐতিহাসিক লোকের ভাসনের মতো আর কি বিষয়টা, যে যা পারো তাই নিয়েই ঝাপিয়ে পরো, আমার তো আর যা ইচ্ছা তা নাই, তাই অত্যাচারি লোকদের মতো হেরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, যাত্রা শুরু দাঁড়িয়ে, এই হলো সিট নিয়ে কারাকারি বা সিট নিয়ে যুদ্ধ, আর মেইল ট্রেনে উঠা নিয়ে যুদ্ধ।
উঠার পরে গাড়ি ছাড়লো,এতিমের মতো সেই দাড়িওয়ালা ভাইয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকে দাড়িয়েই যাত্রা শুরু করলাম, কিন্তু যাত্রাটা হতো নিরিবিলি, কই আর থাকলো নিরিবিলি? থাকার আর কায়দা দেখি না,ওপাশে আবারো সেই সিট নিয়েই তর্কাতর্কি শুরু হলো, একজন তো বলেই ফেলেছে যে সামনে আয় কুপামু তোরে, তোর সিট তোর ত্যাগ করার জায়গা দিয়া দিমু, আমি আবার ভয় পেয়ে গেছি, বাবা বি-বাড়িয়ার লোক বলে কথা, বলাও যায় না, যদি ভরেই দেয় তাইলে ওই লোকটার কি অবস্থা হবে?
লোকটা দেখতে কেমন হবে? লোকটার আকৃতি পালটে যাবে, লোকটা ঠিক মতো হাটতে পারবে না, বসতে পারবে না, দেখা গেলো লোকটা বসতে গেলো, কিন্তু সোফা সিট মনে করে আরেকজন এসে নিতম্ব লাগিয়ে দিয়ে আরামে একটা সুন্দর বাতাস ছাড়লো, লোকটা তখন কি বলবে?
লোক টা রেগে যাবে না তো?রেগে গেলেই কি? কিছুই করতে পারবে না, জামাই বৌ এর মতো উপরে নিচেই বসে থাকা লাগবে, আর বিশেষ বায়ুর গন্ধে মো-মো অবস্থায় লোকটা সর্বোচ্চ নাকে হাত দিয়ে বলতে পারবে ভাই একটু সরে বসেন,
যে লোকটা সোফা মনে করে বসে পরেছিলো, সে আচমকা লাফ মেরে পিছনে তাকাবে, তাকিয়ে দেখবে ওমা এ দেখি আস্ত এক মানুষ, সে আবার এখানে এই অবস্থায় কেমনে?
জিজ্ঞাসা করতেই লোকটা বলবে বলিয়েন না ভাই, বি-বাড়িয়ার লোকের সাথে সিট নিয়ে তর্ক লাগছিলাম, লোকটা আমারে কইলো খালি আয় সামনে সিট তোর ওইদিক দিয়া ভরে দিবো, ভাই বিশ্বাস করেন আমি আসলে ওই দিকটা কোন দিক বুঝি নাই, বুঝলে আমি আগেই মাফ চাইয়া লইতাম কিন্তু এখন তো ভরেই দিলো, আর এর মধ্যে আপনি এসে বসেও পরলেন, বসে পেটটা পাতলা করে একটা হাওয়া ও ছারলেন, কামডা মিয়াভাই ঠিক করেন নাই!
লোকটা বলবে সরি ভাই বুঝতে পারি নাই, বলেই করমরদন করে বলবে থাক কষ্ট পাইয়েন না, বাড়িতে গিয়ে ভাবীরে কইলেই ছুটায়া দিবো।আপাতত এমনেই বসে থাকেন।
এই কাহিনী, ভাবতে ভাবতেই আমি মিটমিট হাসছিলাম।
ওমনি সাম্নের সিটের পাশেই চারজন জোয়ান ছেলে দাড়িয়েছে, গাড়িতে ভিড়, এত এত লোক, ধাক্কাধাক্কি তো হবেই, তাই না?কিন্তু না, এক মহিলা সেটা মানতে নারাজ, তার গায়ে একটু ঠেস লাগলেই ছেলেগুলাকে বকে বকে তুঙ্গে তুলে দিচ্ছে, ওরে বাবা কি সেই কথা, এমনিতেই দেখা যায় কোন এক সাধুবাবার ভক্ত জানি৷ কিন্তু সে যা বলে বেড়াচ্ছে মনে হচ্ছে সে গাড়িটা একাই কিনে নিয়েছে, কিন্তু সে তো আর জানে না যে এটা একটা মেইল ট্রেইন, এটা জনসাধারনের ট্রেন। এই ট্রেনে ধাক্কাধাক্কি হয়, মারামারি হয়, কিলাকিলি হয়,মোবাইল নাই হয়, বাদাম বিক্রি হয়, আবার মলম পার্টিও ধরে, ইশ কি সেই করুন কাহিনী।
সে আরেকদিন বলবো৷ এমনিতেই এখনো আপনাদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বেরুতে পারি নাই। মেইল ট্রেনের আরো কতো কিছু বাকি, সামনে ভাটিয়ারী এরপরে ফেনী, এর পরে লাকসাম, কুমিল্লা,কসবা,রাজাবাড়ির ক্রসিং, আখাউড়ার একঘন্টা হুদাই বসে থাকা,বি-বাড়িয়ার মারামারি, ভৈরবে এসে পুলিশ,নরসিংদী এসে সকালের যুদ্ধ, ঘোড়াশাল এসে এক মিনিট দাঁড়ানো, আড়িখোলা এসে অফিস যাত্রিদের চিল্লাচিল্লি, টঙ্গী এসে অফিস ধরা, বিমানবন্দর এসে গাড়ি খালি হওয়া, ক্যান্টমেন্ট এসে সরকারি চিঠিপত্র আদানপ্রদান, তেজগাও এসে কলা নামানো, ঢাকা এসে গাড়িকে রেস্ট এ দেওয়া, ইশ কতোকিছু এখনো বাকি৷ কন তো এতকিছু কবে শোনাবো আপনাদের?
আপাতত চট্টগ্রাম থেকে ভাটিয়ারি এসছেন আমার সাথে এ পর্যন্তই থাকেন৷ সে থেকে আবার মলম পার্টির কাহিনী শোনাবো নি, সে পর্যন্ত ভালোই থাইকেন।
চট্টগ্রাম থেকে টিকেট নিলাম বাড়ি আসবো, বাড়ি কোথায় সে পরে বলবো। কিন্তু টিকেট নিয়েছি অর্ধেক রাস্তার, টাকাও অর্ধেক, পুরো টিকেট নিবোই বা কেন? সিট পাবো না, যাওয়া লাগবে দাড়ায়ে, তাই নিজের ক্ষতি কিছুটা যেনো পোষে সে হিসেবে নিলাম টিকেট।কিন্তু সরকারের ও তো পোষা লাগবে তাই না?
তাই আর কি টিকেট কাটা অর্ধেক রাস্তার।
মেইল ট্রেনে সাধারনত জনসাধারণের জন্যে তিনটা কামরা থাকে। অর্থাৎ তৃতীয়শ্রেনীর তিনটা কামরার পরেই একটা ডাকগাড়ি বা লাল কামরা, যেটাতে লাল রঙের উপর বড় করে লিখা থাকে ডাকগাড়ি।এর পরে কামরাটা থাকে জেনারেটরের জন্যে অর্থাৎ পাওয়ার-কার, এর পরের চারটা কামরা থাকে ১ম শ্রেনী লোকদের জন্যে, এর মধ্যে দুটো এসি কেবিন আর আর দুটো নন-এসি কেবিন, এর পরের দুটো কামরা থাকে মালবাহী গাড়ির জন্যে, এর পরে যদি কোন স্পেশাল বা VIP লোক যাতায়াত করে তবে তার জন্যে একটা সেলুনকার, নচেৎ একটা পরিচলাকের গাড়ি থাকে যিনি ট্রেনকে পরিচালনা করেন। এই হলো মেইল ট্রেনের পরিচতি।
তো এত লম্বা গাড়িতে জনসাধারণের জন্যে তিনটা কামরা, এতে কি আর জনসাধারণের হয়? হয় না, বেশিরভাগ সময় ই গাড়িতে একটা হুলুস্থুলু ব্যাপার লেগেই থাকে, মারামারি বাস্তবে হয় না তবে মৌখিকভাবে একজন আরেকজনকে খুন করে ফেলে, এই আর কি।
যখন গাড়িটা চট্রগ্রামে প্লাটফর্মে ঢুকে তখন ই বাধে এক মহাযুদ্ধ৷ না মারামারির যুদ্ধ না, এটা সিট নিয়ে যুদ্ধ, গাড়ি থামার অপেক্ষা কেউ করে না, আপনি গাড়ি থামার অপেক্ষা করছেন তো মরছেন, মানে আপনাকে পুরো রাস্তা ডলা,ধাক্কা আর হাওয়ার উপর ভেসে থেকে যাত্রা করতে হবে।
এখন তাহলে সিট নেওয়ার উপায়? ঐ একই পন্থা, গাড়ি রানিং অবস্থায় আপনাকে চট করে উঠে পরতে হবে, উঠেই যে সিট পাবেন তাও না, সিট নিতে গেলে হতে হবে আপনায় খলনায়ক৷
চট্টগ্রামের টোকাই ছেলেপেলেরা সাঙ্গু-পাংগু নিয়ে সিট রাখে দখলে, যদি দু একটা ধমক দেওয়া যায় ভালো করে তবে ভয়েই সিট ছেড়ে দেয়৷ কিন্তু কজনে বুঝে আর এই টেকনিক? বলেন?
যার ফলে অনেকেই টিকেট কেটেও তারা ১০০ টাকা করে চায়ের টাকা দেয় ছেলেদের। ছেলেরাও পেয়ে খুব খুশি৷ ওরে আল্লাহ তারা তখন এমন একটা ভাব করে যেনো আপনি তাদের পরিবারের বড়ভাই, আপনাকে আদর আপ্যায়ন করে বসিয়ে দিবে।
অনেকে যুদ্ধ চায় না, কিন্তু টাকা দিয়ে যুদ্ধ জয় করে ফেলে, এইটাকে বর্তমানে স্নায়ুযুদ্ধ বলে আর কি। তাহলে আমি? আমি কি করবো? আমি যুদ্ধ বেছে নিবো? নাকি স্নায়ুযুদ্ধ করবো?
নাহ বাবা টাকা নেই, কিন্তু যুদ্ধ করতে আর সমস্যা কই? সমস্যা নেই, গাড়ি ঢুকছে, আমিও পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ি আসবে আর আমি লাফ মেরে উঠবো, উঠে সিট একটা দখল করবো।
গাড়ি আসলো, লাফ মেরে কতোক্ষন ঝুলে ছিলাম বুঝতে পারি নি। ভিতরে যাওয়া হচ্ছে না, কারন এই যুদ্ধে আমার সাথে আরো অনেকেই শামিল হয়েছে, কারন না উঠলে তো আর সিট ই পাবে না, তাই মুল যুদ্ধটা হয় গাড়িতে উঠা নিয়ে, কার আগে কে উঠবে।
যাক নিজেকে কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো স্পাইডারম্যান, ওই স্পাইডারম্যান মুভির পরিচালক যদি দেখতো আমাদের এই কাহিনী তাহলে আসল নায়ক কে বাদ দিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে নুভির কিছুটা শট বানাতো।
ট্রেনে উঠার পর দেখি আল্লাহ আমিই শেষ ব্যাক্তি আর সবাই ওই আরো আগেই জীবনের মায়াত্যাগ করে করে উঠে পরেছে, অনেকে বসে বসে পা দুলাচ্ছে, কামরার এ মাথা থেকে ও মাথা অবধি একটা চক্কর দিতেই চোখে পরলো এক পিচ্চি দুটো সিট দখল করে বসে আছে৷ বসতে যাবো ঠিক সেই মুহুর্তেই বলে উঠলো ভাই লোক আছে,
বললাম কোথায় তোর লোক, ডাক দে,নইলে সিট ছাড়ো৷ বল্লো, না লোক আছে।
ধুত্তিরি তোর লোকের খ্যাতা পুরি, এর মধ্যে ছেলেটা একজনের কাছে একটা সিট বিক্রি করে ফেলেছে, কিন্তু যার কাছে সিট বিক্রি করেছে তার আবার মোবাইল গেলো হারিয়ে, হারিয়ে বলতে পকেটমার সযত্নে মোবাইলটা মেরে দিয়েছে, ওই যে বল্লাম, যে অনেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে আগেই গাড়িতে উঠে পরেছেন, এদের মধ্যে সেইব্যক্তি একজন, তার অবশ্য জীবন যায় নি তবে তার মোবাইলটা গচ্চা গেলো।
সে মোবাইলটা খুজতে গিয়েছে,কিন্তু অত দামি মোবাইল কি আর পকেটমার ফেরত দেয়? সে তো নিয়ে ধান্দায় আছে আরেকটা মারবার, কিন্ত সেই সিটের মালিক আবার ব্যাগ একটা এই ছেলের হাতে দিয়ে গেছে, ছেলে আবার খুব চিল্লাফাল্লা করছে এইখানে লোক আছে, এইখানে লোক আছে বলে।
আমি কইলাম লোক তো এক সিটের আরেক সিট কই? সর, এইখান থেইক্কা নইলে লাথি মাইরা ফেলামু গাড়ি থেইক্কা।
কি মনে হয় সিট টা আমি পামু?
জ্বি হ্যা ঠিক ই ধরেছেন, সিট আমি পাই নাই, আমি এই ছেলেকে ধমকাচ্ছি, ফাকে দিয়ে আরেক সজনেওয়ালা ভাই, টুপ করে তার নিতম্ব দুইখানা লাগিয়ে দিয়ে সিট বসে পরলো, ফাকে থেকে আমি হুদাই চিল্লাইলাম সিটের জন্যে, নাহ সেদিন আর সিট পাওয়া হলো না, ফলাফল ফাকে থেকে আরেকজন এসে সিট টা পেয়ে মেরে দিলো।
আমি কিছু বলতেও পারলাম না। কারন?
কারন একটাই, যে যেভাবে পারো সিট ধরো, ওই যে সেই ঐতিহাসিক লোকের ভাসনের মতো আর কি বিষয়টা, যে যা পারো তাই নিয়েই ঝাপিয়ে পরো, আমার তো আর যা ইচ্ছা তা নাই, তাই অত্যাচারি লোকদের মতো হেরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, যাত্রা শুরু দাঁড়িয়ে, এই হলো সিট নিয়ে কারাকারি বা সিট নিয়ে যুদ্ধ, আর মেইল ট্রেনে উঠা নিয়ে যুদ্ধ।
উঠার পরে গাড়ি ছাড়লো,এতিমের মতো সেই দাড়িওয়ালা ভাইয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকে দাড়িয়েই যাত্রা শুরু করলাম, কিন্তু যাত্রাটা হতো নিরিবিলি, কই আর থাকলো নিরিবিলি? থাকার আর কায়দা দেখি না,ওপাশে আবারো সেই সিট নিয়েই তর্কাতর্কি শুরু হলো, একজন তো বলেই ফেলেছে যে সামনে আয় কুপামু তোরে, তোর সিট তোর ত্যাগ করার জায়গা দিয়া দিমু, আমি আবার ভয় পেয়ে গেছি, বাবা বি-বাড়িয়ার লোক বলে কথা, বলাও যায় না, যদি ভরেই দেয় তাইলে ওই লোকটার কি অবস্থা হবে?
লোকটা দেখতে কেমন হবে? লোকটার আকৃতি পালটে যাবে, লোকটা ঠিক মতো হাটতে পারবে না, বসতে পারবে না, দেখা গেলো লোকটা বসতে গেলো, কিন্তু সোফা সিট মনে করে আরেকজন এসে নিতম্ব লাগিয়ে দিয়ে আরামে একটা সুন্দর বাতাস ছাড়লো, লোকটা তখন কি বলবে?
লোক টা রেগে যাবে না তো?রেগে গেলেই কি? কিছুই করতে পারবে না, জামাই বৌ এর মতো উপরে নিচেই বসে থাকা লাগবে, আর বিশেষ বায়ুর গন্ধে মো-মো অবস্থায় লোকটা সর্বোচ্চ নাকে হাত দিয়ে বলতে পারবে ভাই একটু সরে বসেন,
যে লোকটা সোফা মনে করে বসে পরেছিলো, সে আচমকা লাফ মেরে পিছনে তাকাবে, তাকিয়ে দেখবে ওমা এ দেখি আস্ত এক মানুষ, সে আবার এখানে এই অবস্থায় কেমনে?
জিজ্ঞাসা করতেই লোকটা বলবে বলিয়েন না ভাই, বি-বাড়িয়ার লোকের সাথে সিট নিয়ে তর্ক লাগছিলাম, লোকটা আমারে কইলো খালি আয় সামনে সিট তোর ওইদিক দিয়া ভরে দিবো, ভাই বিশ্বাস করেন আমি আসলে ওই দিকটা কোন দিক বুঝি নাই, বুঝলে আমি আগেই মাফ চাইয়া লইতাম কিন্তু এখন তো ভরেই দিলো, আর এর মধ্যে আপনি এসে বসেও পরলেন, বসে পেটটা পাতলা করে একটা হাওয়া ও ছারলেন, কামডা মিয়াভাই ঠিক করেন নাই!
লোকটা বলবে সরি ভাই বুঝতে পারি নাই, বলেই করমরদন করে বলবে থাক কষ্ট পাইয়েন না, বাড়িতে গিয়ে ভাবীরে কইলেই ছুটায়া দিবো।আপাতত এমনেই বসে থাকেন।
এই কাহিনী, ভাবতে ভাবতেই আমি মিটমিট হাসছিলাম।
ওমনি সাম্নের সিটের পাশেই চারজন জোয়ান ছেলে দাড়িয়েছে, গাড়িতে ভিড়, এত এত লোক, ধাক্কাধাক্কি তো হবেই, তাই না?কিন্তু না, এক মহিলা সেটা মানতে নারাজ, তার গায়ে একটু ঠেস লাগলেই ছেলেগুলাকে বকে বকে তুঙ্গে তুলে দিচ্ছে, ওরে বাবা কি সেই কথা, এমনিতেই দেখা যায় কোন এক সাধুবাবার ভক্ত জানি৷ কিন্তু সে যা বলে বেড়াচ্ছে মনে হচ্ছে সে গাড়িটা একাই কিনে নিয়েছে, কিন্তু সে তো আর জানে না যে এটা একটা মেইল ট্রেইন, এটা জনসাধারনের ট্রেন। এই ট্রেনে ধাক্কাধাক্কি হয়, মারামারি হয়, কিলাকিলি হয়,মোবাইল নাই হয়, বাদাম বিক্রি হয়, আবার মলম পার্টিও ধরে, ইশ কি সেই করুন কাহিনী।
সে আরেকদিন বলবো৷ এমনিতেই এখনো আপনাদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বেরুতে পারি নাই। মেইল ট্রেনের আরো কতো কিছু বাকি, সামনে ভাটিয়ারী এরপরে ফেনী, এর পরে লাকসাম, কুমিল্লা,কসবা,রাজাবাড়ির ক্রসিং, আখাউড়ার একঘন্টা হুদাই বসে থাকা,বি-বাড়িয়ার মারামারি, ভৈরবে এসে পুলিশ,নরসিংদী এসে সকালের যুদ্ধ, ঘোড়াশাল এসে এক মিনিট দাঁড়ানো, আড়িখোলা এসে অফিস যাত্রিদের চিল্লাচিল্লি, টঙ্গী এসে অফিস ধরা, বিমানবন্দর এসে গাড়ি খালি হওয়া, ক্যান্টমেন্ট এসে সরকারি চিঠিপত্র আদানপ্রদান, তেজগাও এসে কলা নামানো, ঢাকা এসে গাড়িকে রেস্ট এ দেওয়া, ইশ কতোকিছু এখনো বাকি৷ কন তো এতকিছু কবে শোনাবো আপনাদের?
আপাতত চট্টগ্রাম থেকে ভাটিয়ারি এসছেন আমার সাথে এ পর্যন্তই থাকেন৷ সে থেকে আবার মলম পার্টির কাহিনী শোনাবো নি, সে পর্যন্ত ভালোই থাইকেন।