বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকজন বাদে বাকীদের মত আমিও 'নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই'। কর্মব্যস্ত দিন শেষে, সংসার সমুদ্রের ফেনায়িত জলরাশি সামলে, ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে, রাতের পর রাত, ঘন্টার পর ঘন্টা, ল্যাপটপ সামনে নিয়ে অক্ষরের পর অক্ষর দিয়ে, শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে, বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে, গল্পের পরম্পরা মাথায় রেখে, হাস্যরসের মসলা যোগ করে, একটা গল্প, একটা উপন্যাস, একটা কাহিনী চিত্র লিখতে হয়।
এরপর পান্ডুলিপি নিয়ে প্রকাশকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে, প্রচ্ছদ করিয়ে নিয়ে, এডিট করে, প্রেসে যখন পৌছায়, তখনও শংকা থেকে যায়, কেমন হবে বইটা!! পাঠক কিনবে কিনা, কিনলেও পড়বে কিনা, পড়লে ভালো লাগবে কি না!! প্রকাশকের মুখে হাসি ফুটবে কি না?
সবশেষে বইমেলায় গিয়ে যখন Hossen Asiful Mustafa টিটুর মত বুয়েটের প্রফেসরের সাথে দেখা হয়ে যায়, ২০ বছর পর দেখা হওয়ার পর জড়িয়ে ধরে; Abu Laich ভাইয়ার মত মানুষেরা বই কিনে উচ্চকিত প্রশংসা করে, কেউ কেউ সেই সুদূর নারায়নগন্জ কিংবা মুন্সীগন্জ থেকে এসে আমার বই খোজে, একজন পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষী বাসায় দাওয়াত দিয়ে জোর করেন; তখন সকল কষ্ট, গ্লানি, শংকা দুর হয়ে যায়। নতুন করে উজ্জীবিত হই, ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে নতুন উৎসাহের সন্চার হয়, ভালোবাসায় হ্রদয় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন মনে হয় লেখা চলতে থাকুক। অভাগা এদেশে অন্তত দুই চার জনের মনে অল্প সময়ের জন্যে হলেও উৎসারিত আনন্দের উপলক্ষ হয়ে উঠি, সেও কম কি। এরকম অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। হয় ভালোবাসা বিনিময়।
আমার মত একজন আনকোরা, অচেনা, অর্বাচীন লেখকের জন্য পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীর ভালোবাসা মাথা নত করে দেয়, হ্রদয়ের অলিন্দ নিলয় গর্বে ভরে ওঠে। গতকাল পর্যন্ত যারা আমার লেখার সন্ধান পাননি, খবর রাখেননি, তারাও হয়ত অন্য কোনদিন পড়বেন, কিংবা দুর থেকে নামটা অন্তত শুনবেন, সেও ঢের। তাদের সকলের জন্য ভালোবাসা।