Posts

প্রবন্ধ

সড়ক দুর্ঘটনাঃ কেন হয়, করনীয় কি?

February 23, 2025

সাজিদ রহমান

118
View

এই গল্পটা আমরা অনেকেই জানি।

এক লোক রাস্তায় নিজের গাঁয়ের চকচকে শার্ট খুলে ময়লা জুতা পরিষ্কার করছিলো। পাশের এক লোক জিজ্ঞেস করে বসে, ভাই করছেন কি?

- দেখতেই পারছেন, কী করছি। আপনার কোন অসুবিধা আছে?

-না, তা নেই। কিন্তু কেন করছেন?

-জুতাটা আমার নিজের টাকায় কেনা, আর শার্টটা কেনা শ্বশুরের টাকায়। এরকম অনেক গল্প আছে। সেসব বলতে আপাতত আমি আগ্রহী নই। আলাপটা করতে চাই সড়ক নিয়ে।

দেখুন, সড়ক বা রাস্তা একটা জড়বস্তু। একে আমরা মানে লাইভ/চলমান ব্যক্তি বা বস্তু ব্যবহার করে থাকে। যেকোন জিনিসকে কিভাবে ল ব্যবহার করা হচ্ছে, এর উপর তার ভবিষ্যৎ ফলাফল নির্ভর করে। কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস। সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা হয়েছে অনেকটা এরকম।

সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর ফলে মানুষের মৃত্যু, আহতের পরিসংখ্যান আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন, সর্বত্রই অতি গুরুত্বপুর্ন। দিনকে দিন সড়কে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে, সমানুপাতিক হারে বাড়ছে হতাহতের পরিমাণ। একই সাথে আমরা যারা সড়ক নিয়ে কাজ করি তাদের উপর বাড়ছে চাপ। আমাদের অবকাঠামোয় অপ্রতুলতা রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন রকমের সীমাবদ্ধতা। এই অপ্রতুলতা ও সীমাবদ্ধতা আমাদের বাস্তবতা, একে অস্বীকার করা খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। একই সাথে হুট করে অবকাঠামোর বৈপ্লবিক পরিবর্তনও সম্ভব নয়।

কিন্তু দুর্ঘটনা কেন ঘটছে?

বুয়েটে এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে। তারা গবেষণা করে দেখেছে, #নির্দিস্ট সীমার অধিক গতি, #ড্রাইভারের বেপরোয়া মনোভাব এবং #যেখানে অভারটেকিং করা যাবে না এমন জায়গায় অভারটেকিং করতে গিয়ে ৯০% এর বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। বাকী ১০% এর মধ্যে আছে পথচারী, সড়কের সমস্যা, ইত্যাদি।

মহাসড়ককে বলা হয় হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রিক লাইনের মত, হাত দিলে মৃত্যু অনির্বার্য। অথচ সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা সম্পুর্ন উদাসীন। ইদানিং সবচেয়ে বড় বিপদ হয়েছে মহাসড়কগুলোতে থ্রি হুইলারের ইচ্ছেমত চলাচল। সড়কে আসলে আমরা হয়ে যাই কবিগুরুর সেই কাল্পনিক দেশের রাজা।

'আমরা সবাই রাজা

আমাদের এই রাজার রাজত্বে-

নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?'

ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, সাইন সিগনাল বুঝেনা অর্থাৎ কোন রকম কোন ধারণা না নিয়েই মহাসড়কে নেমে পড়ছে। মানে জ্বলন্ত আগুনে ঝাপিয়ে পড়ছে। এর পরের পরিণতি হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। এছাড়াও সড়কে গরু চরে, বন্ধুতে বন্ধুতে চায়ের কাপ নিয়ে আড্ডা চলে, অর্ধেক রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্ক করে, অবৈধ দোকান পাট তুলে, বাড়ির উঠানের মত সড়ক ব্যবহার করে। আমরা সবাই মিলেই এই আয়োজন করে ভীষনভাবে উদযাপন করছি।

এরপর কোনভাবে দুর্ঘটনা ঘটলে রাস্তা ব্যারিকেড, আর সেখানে স্পিড ব্রেকার তৈরি করে দেয়ার দাবি ছাড়া সমাধান নেই। দাবির মুখে করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। আর সেই স্পিড ব্রেকারের কারণে ঘটছে নতুন নতুন দুর্ঘটনা। একটা লুপে আটকে যাচ্ছি আমরা।

খুব ইন্টারেস্টিং একটা কথা মনে পড়ে গেলো। সড়ক প্রকৌশলী হিসেবে সকল মানুষকে আমি একরকম শ্রেণিহীন ভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছি। সব মানুষ চায়, তার বাড়ির সামনে দুই/একটা স্পিড ব্রেকার থাকবে। সেজায়গা দেখে শুনে আস্তে ধীরে পার হবে। কিন্তু ঢাকা বা দুরে কোথাও যেতে যেন আর কোথাও কোন স্পিড ব্রেকার না থাকে। কারণ স্পিড ব্রেকারে গাড়ি থামলে ব্রেনে আঘাত লাগে, সময়ের অপচয় হয়।

এই কথা কেন উঠল?

ইদানিং অনেক বেশি স্পিড ব্রেকারের দাবি আসছে। একজনকে বুঝাতে গেলাম, উনি আমাকে দেখে নেবেন বলে পরোক্ষভাবে হুমকি দিলেন। এরপরেও আমরা শক্ত থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার এক সহকর্মী বলল, যেখানে স্পিড ব্রেকার চাচ্ছে, সেখানে কোন কারণে এক্সিডেন্ট হলে মব সৃষ্টি হতে পারে, হতে পারে আরও অনেক কিছু। দুই দিন আগের কথা, একটা বাচ্চাদের স্কুলের সামনে স্পিড ব্রেকার দেয়ার জন্য অনেক অনেক দিন ধরে কর্তৃপক্ষ দেন দরবার করছিলো। অবশেষে আমাদের লোক সেই স্পিড ব্রেকার করতে গিয়ে এলাকার মানুষের রোষানলে পড়ে। অপদস্থ হওয়ার উপক্রম হয়।

প্রথমত, আমাদের কিছু পলিসিগত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। মূল সমস্যা চিহ্নিত করা আছে, সেদিকে নজর দিতে হবে। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের কিছু দায়িত্ব আছে, সে বিষয়েও সচেতন হওয়া জরুরী।

Comments

    Please login to post comment. Login