পর্ব ১: রহস্যময় আমন্ত্রণ
রাত তখন প্রায় ১১টা। অমিত, সায়ন, তিথি, আর মৌলি একসাথে বসে গল্প করছিল। হঠাৎ অমিত বলল, “শুনেছ, আমাদের শহরের পাশে পুরনো রাজবাড়িটা নাকি অভিশপ্ত?”
সায়ন হাসল, “আবার ভূতের গল্প? এসব বাজে কথা।”
তিথি বলল, “না না, সত্যি! লোকেরা বলে, ওই রাজবাড়িতে গেলে মানুষ আর ফিরে আসে না।”
মৌলি একটু ভয় পেয়েই বলল, “আমরা সেখানে গেলে কেমন হয়?”
সিদ্ধান্ত হলো, মধ্যরাতে রাজবাড়িতে যাওয়া হবে। পরদিন রাতে, চার বন্ধু টর্চ আর ক্যামেরা নিয়ে পৌঁছে গেল বিশাল সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ির সামনে। গেটটা মরচে ধরা, লম্বা লম্বা লতাপাতা জড়িয়ে আছে। বাতাসটা হিমশীতল, আশপাশের নিস্তব্ধতা যেন আরও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল।
তারা ধীরে ধীরে দরজাটা ঠেলে খুলল। একটা গুমোট গন্ধ বেরিয়ে এলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগল। ঠিক যেন কেউ তাদের দেখছে!
পর্ব ২: অতিপ্রাকৃত উপস্থিতি
রাজবাড়ির ভেতরের বড়ো হলঘরটা ধুলোয় ঢাকা, মাটিতে শুকনো পাতা আর ভাঙা আসবাবপত্র ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ করেই একটা দরজা আপনা-আপনি খুলে গেল!
মৌলি কেঁপে উঠল। “দরজাটা এমনিতে খুলতে পারে না! কে খুলল?”
তিথি টর্চের আলো ফেলতেই একটা ছায়ামূর্তি দেখতে পেল! গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে তারা দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
“হ্যালো? কেউ আছেন?” অমিত বলল, কিন্তু কোনো উত্তর এল না।
হঠাৎ তারা শুনতে পেল, কার যেন কান্নার শব্দ আসছে রাজবাড়ির পুরনো দরবার হলের দিক থেকে। তারা চারজন আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে গেল। দরবার হলের মাঝখানে একটা পুরনো সিংহাসন, আর ঠিক তার সামনে একটা সাদা শাড়ি পরা মহিলা বসে কাঁদছে!
মৌলি ফিসফিস করে বলল, “ও কি মানুষ?”
মহিলাটি ধীরে ধীরে মাথা তুলল। তার চোখদুটো ছিল কালো গহ্বরের মতো, মুখ ফ্যাকাশে! এক মুহূর্তের জন্য সে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর হঠাৎ এক বিকট শব্দ করে চিৎকার করল!
চারজন আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে পিছিয়ে এল। কিন্তু তাদের পিছনের দরজাটা তখন বন্ধ হয়ে গেছে!
পর্ব ৩: রাজবাড়ির অভিশাপ
চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে এলো। কানে ভেসে আসছিল অসংখ্য কান্না আর ফিসফিসানি। হঠাৎ করেই, একটা পুরনো চিত্রকর্মে আগুন ধরে গেল! ছবিটায় ছিল একজন রাজার মুখ, আর তার নিচে লেখা ছিল— “অভিশপ্ত রাজবংশ! যারা এই রাজবাড়িতে প্রবেশ করবে, তারা আর জীবিত ফিরবে না!”
তিথি আতঙ্কে বলল, “আমরা কি মারা যাব?”
“না, বের হতে হবে!” অমিত চিৎকার করল।
ঠিক তখনই একটা পাথরের স্তম্ভ ধ্বসে পড়ল, আর পেছন থেকে শোনা গেল সেই মহিলার গম্ভীর কণ্ঠ, “এখন তোরা এলো, এখন আর ফিরে যাবি না!”
চারজন প্রাণপণে দরজার দিকে দৌড় দিল। হঠাৎ রাজবাড়ির এক কোণ থেকে একটা অদৃশ্য হাত মৌলির পা চেপে ধরল! মৌলি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
সায়ন দ্রুত মৌলির হাত ধরে টান দিল, কিন্তু মনে হলো, কোনো এক অশরীরী শক্তি তাকে ধরে রাখছে। শেষ মুহূর্তে, তিথি একটা পুরনো লোহার দণ্ড তুলে সেই অদৃশ্য হাতের দিকে আঘাত করল। মুহূর্তেই বাতাসে এক বিকট চিৎকার ধ্বনিত হলো, আর মৌলি মুক্ত হয়ে গেল।
পর্ব ৪: শেষ রক্ষা
তারা দৌড়ে রাজবাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে আসতেই রাজবাড়ির দরজা বিকট শব্দে বন্ধ হয়ে গেল, আর ভিতর থেকে শোনা গেল ভৌতিক হাসির শব্দ।
তারা তখনো বিশ্বাস করতে পারছিল না, তারা সত্যিই বেঁচে ফিরেছে! শহরে ফিরে আসার পর তারা জেনেছিল, সেই রাজবাড়ির এক প্রাচীন অভিশাপ ছিল—যা রাজবংশের সাথে যুক্ত প্রত্যেককে গ্রাস করত।
কিন্তু এখনও, মাঝরাতে রাজবাড়ির কাছ দিয়ে কেউ গেলে শুনতে পায় সেই কান্নার শব্দ… আর দূরে কোথাও কেউ বলে ওঠে—
“এখন তোরা এলো, এখন আর ফিরে যাবি না…”