পোস্টস

গল্প

দ্য বয় উইথ দ্য বাই-সাইকেল

২০ মে ২০২৪

রিপন হালদার



দ্য বয় উইথ দ্য বাই-সাইকেল
রিপন হালদার 

যত এগোচ্ছে গল্পটা ততই যেন গোলক ধাঁধায় আটকে পড়ছে। টুইস্টের পর টুইস্ট গল্পটাকে ওঠালো বাস্তব থেকে অনেক উপরে- যেখানে গরুর চার পা হাতের আবেষ্টনী হয়ে ধীরে ধীরে উঠে যায় গাছে।
 
  ছবির নাম “দি বয় উইথ দ্য বাইসাইকেল”। বেশ লাগলো নামটা। একটা পনের-ষোল বছরের ছেলে দাঁড়িয়ে পোস্টার দেখছে।  পোস্টারে দেখা যাচ্ছে প্রায় ওরই বয়সি একটা ছেলে ছোট একটা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ মেঘলা। ছেলেটির বিষণ্ণ দুই চোখ ওই দিকে। শুক্রবার নুন শো দেখার জন্য ছেলেটি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। শহরের সিনেমা হল ওদের এলাকা থেকে প্রায় ছয় কিমি পথ।  পঞ্চাশ টাকার একটি চারকোনা নোট বেশ কয়েকদিন ধরেই ছেলেটির  ছোট্ট কালো মানিব্যাগে আস্তানা গেড়েছিল। ছেলেটা দেখে নিল যথাস্থানে আছে কিনা। 
 
  কিন্তু টাকাটা অন্য খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। আজ ওর মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরবে। নেট ক্যাফে থেকে জানার কথা ছিল। ও তো জানেই রেজাল্ট কেমন হবে। তারপর বাড়িতে কী হবে, তাও জানে। বাবা মায়ের যুগ্ম আক্রমন,ফুল ভলিউমে চিৎকার। গালে থাপ্পর, আর থাপ্পরের ভাই চড়- পিঠে গায়ে...। বাবার মনেহবে যত নষ্টের গোড়া ঐ সাইকেলটা। এবং সর্ব শক্তি সহযোগে ওটাকে ভাঙতে যাওয়া, ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া রাস্তায়। বছর দুই ধরে গল্প এক জায়গাতেই পাক খাচ্ছে।    
                                                      তারপর দেহের শিরা উপশিরার মত ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা সরু পিচ রাস্তার উপর দিয়ে ঢিমেতালে এগোতে থাকে সাইকেলটি। চারপাশের সমস্তটা ভীষণ ফাঁকা। এক পাশে মাঠ, এদিক ওদিক কিছু বাড়ি। রাস্তার পাশে ছড়িয়ে থাকা আবছা মানুষ-জন। কারণ ছেলেটির মন ছিল সিনেমার ভাবনায় মশগুল। কিছুক্ষণ পর বাঁ দিক থেকে আসা একটা লম্বা দেওয়াল রাস্তাটাকে প্রায় ঘিরে ধরেছিল। তারপর আবার মাঠ। বিপরীত দিকে ছেঁড়া ছেঁড়া বাড়ি ঘর। কিছুক্ষণ চলার পর রাস্তার ডান দিকে এসে পড়ে দীর্ঘ রেল লাইন। রোদে চকচক করছে।  তাও ফাঁকা। হঠাৎ দেখা যায় শব্দ করে এগিয়ে আসছে লম্বা একটা ট্রেন। যতক্ষণ না সম্পূর্ণ অদৃশ্য হচ্ছে ট্রেনটি ছেলেটি তাকিয়ে থাকল।   
  শহরে যাওয়ার এই দৃশ্যপথ ওর  নিজেরই আবিষ্কার। ভদ্র লোকেরা এই পথ দিয়ে শহরে আসেনা। কিন্তু ওর  খুব প্রিয় এই রাস্তাটি। বাড়ির মায়া কাটানো একটা দূরত্ব-ব্যঞ্জক হাহাকার যেন ছড়িয়ে আছে। এখানে কালো  পিচ জুড়ে। আছে অসামাজিক মানুষজনের হাতে পড়ার ভয়। কিন্তু সেই ভয় ওকে দমাতে পারে না। এই মৃদু ভয়টুকু বরং ওকে সান্ত্বনা যোগায়। একটা অজানা গন্তব্যের নিষিদ্ধ ইশারা ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। হিংস্র কোনো জন্তু যেন পুষে রাখা আছে হৃদয়ে।    

  তারপর প্রায় মিনিট চল্লিশ পর এসে যায় সিনেমা হল। ছেলেটি ঢুকে পড়ে। 

*                                         
  এই পর্যন্ত দেখার পর ইন্টারভ্যাল হলো। কেমন যেন অসহায় বোধ করল ছেলেটি। গল্পের খেই হারিয়ে ফেলেছে। বেরিয়ে এলো হল থেকে। গ্যারেজে রাখা সাইকেলটি ছাড়িয়ে নিল। তারপর প্যাডেল চাপতে শুরু করে দুটি কিশোর পা।    

 উত্তর-পশ্চিম আকাশে তখন কালো মেঘ। এখনই অন্ধকার মনেহচ্ছে চারদিক। ততক্ষণে শহরের ঘিঞ্জি সরু রাস্তা পার হয়ে ছেলেটি ছোট্ট একটা ব্রিজের উপর উঠে এসে পড়েছে। আকাশের দিকে চোখ পড়তেই কী  ভেবে যেন দাঁড়িয়ে পড়লো। পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে চলাচল করছে মানুষজন। কী হবে এখন! বাড়ি ফিরবে কী করে! সাইকেলের উপর বসে ছেলেটি। ভাবতে থাকে। ডান পা প্যাডেলে। বাঁ পা রাস্তায়। ভাবছে ও স্থির হয়ে। ভাবতে ভাবতে, ভাবতে ভাবতে ও স্থির চিত্র হয়ে যায়। পোস্টার হয়ে যায় ধীরে ধীরে।   

  এই সময় সামনের দিকে অনেক মানুষ আর বাহনের ভিড়। তা  ভেঙে বিশেষ একটি সাইকেল সামনের দিকে এগিয়ে আসে। তার সওয়ার বছর পনেরোর একটি ছেলে। রঙ চটা বাস্কেট আর কেরিয়ারের শিক ভাঙ্গা সাইকেলটা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সে বিশাল দেওয়াল জোড়া এই পোস্টারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। অবাক। ছেলেটি শোয়ের সময় দেখে।  নুন শো দেখাই তো যায়!   

  তারপর একটা পঞ্চাশ টাকার নতুন নোট টিকিট কাউন্টারের অন্ধকার গর্ত আলোকিত করতে করতে সামনের দিকে এগোয়। 
                                          
*
  বাকি সিনেমাটা এভাবেই এগিয়ে চলে...