Posts

নন ফিকশন

ডিয়ার ট্রিনিটি

February 25, 2025

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

Original Author ‌ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

114
View

শিমুলতুলার বালিশ

"আমাদের একটা বিশাল শিমুলতুলার গাছ ছিল। ফুলের সময়ে সেই গাছের মাথা লাল হয়ে থাকত ফুলে ফুলে, হাওয়া এলে মনে হতো যেন লাল ফুলের সমুদ্র ঢেউ ভাঙছে গাছের মাথায়। সেইগাছ থেকে শিমুলফুলের পর তুলা হতো। আর ফেটে বাতাসে উড়ত। কিছু পেকে ঝরে পড়ত মাটিতে, আমরা বাতাস থেকে মেঘের মতো উড়ে বেড়ানো তুলা ধরতাম, আর মাটি থেকে কুড়াতাম। মা সেই তুলা দিয়ে বালিশ বানাত‌। মা আমার জন্য‌ও দুটো ছোটো ছোটো বালিশ বানিয়েছিল‌। বাবার পুরানো দুটো প্যান্ট, একটা কালো আর একটা খাকিরং প্যান্ট কেটে থলে বানিয়ে তার মধ্যে শিমুল তুলা ভরে দিয়ে বানানো বালিশ‌।

মায়ের বানানো সেই দুটো বালিশ এখনো আমার কাছে আছে। আমি মাথায় দিয়ে ঘুম যাই। আর মনে হয় শৈশবে মায়ের কোলে মাথা ডুবিয়ে ঘুম যাচ্ছি।"

পৃষ্ঠা - ৫৬

লেখক নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের অনেক পরিচয় আছে। তিনি একাধারে শিল্পী, প্রচ্ছদকার, কবি। ইন্ট্যারেস্টিং শৈশব, কৈশোর ও যৌবনযাত্রার কারণে তাঁর লেখনিতে ধরা পড়ে অনেক কিছুই। মুক্তগদ্য নিয়ে অনেক বছর কাজ করা লেখকের 'ডিয়ার ট্রিনিটি' এক বিচিত্রগদ্যের ব‌ই। হয়তো গ্রামে কিংবা শহরে বেড়ে ওঠা যেকোন জেনারেশন ওয়াই সদস্যের জীবনে এরূপ বিচিত্র অভিজ্ঞতা কমবেশি আছে। নির্ঝর নৈঃশব্দ্য চমৎকার গদ্যভাষার অধিকারী হ‌ওয়ার ফলে চোখের সামনে যেন ভেসে ওঠে কখন‌ও স্বপ্ন আবার কখন‌ও দুঃস্বপ্নের মতো এসব স্মৃতিকাহিনি। মানুষের প্রায় সব স্মৃতিচারণ তো দিনশেষে কাহিনি-ই। ফিকশনে নির্ঝরের জাদুবাস্তবতার জমিন যেমন তীব্র হাহাকারভরা প্রেমের উপর দাড়িয়ে থাকে, তাঁর নস্টালজিয়ায় ভরা আত্মকথা দাড়িয়ে আছে এক ধরণের নির্লিপ্ততা ও বিষণ্নতার পোক্ত জমিনের উপর। যে গদ্যভাষার ভূমির উপর চোখের জল পড়লে শুকিয়ে যায় না। কোথায় লুকিয়ে থেকে আবার কোত্থেকে যেন ফিরে আসে সেই অশ্রুধারা। ৮০-৯০ দশকের অনেক বিস্মৃত গল্প পরবর্তি প্রজন্মের জন্যে ফিরে ফিরে আসে এ ব‌ইয়ে। লেখকের প্রকাশিত ২০+ ব‌ইয়ের জার্নি দিয়ে যাওয়ার ভাগ্য যে পাঠকের হয়েছে, কিছু বিষয় তাঁর কাছে একটু পুনরাবৃত্তিমূলক মনে হতে পারে। তবে শুধুমাত্র বুকে ধাক্কা দেয়ার মতো কিংবা মাথা ঠিক কামড়ে ধরা নয় বরং মাথায় স্ট্যাপলার মেরে দেয়ার মতো কথাবার্তা নির্ঝর তো বলেই থাকেন। যে স্ট্যাপল খুলে ফেলার পর চিনচিনে সেই ব্যথা থেকেই যায়।

আমার সমুদ্র

"খুব ছোটো বেলায় মা একবার বলেছিল, 'জানিস তো! মানুষের বুকের ভেতর একটা সমুদ্র থাকে, সেটা গলার কাছে এসে আটকে থাকে। কখনো তার ঢেউ চোখের পেছনে এসে আছড়ে পড়ে। তখন মানুষ কাঁদে। তাই চোখের পানি গড়িয়ে জিভে এসে লাগলে নোনতা লাগে।'

মা বলেছিল বলে এই কথা আমি সেইদিন বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখনো সমুদ্র দেখিনি। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে বড়ো আয়নাটার সামনে বড়ো হাঁ করে সমুদ্র দেখার চেষ্টা করতাম কখনো নিঝুম দুপুরবেলা। কিন্তু কোনো সমুদ্র দেখতে পেতাম না। আমার তখন ধাঁধা লাগত সবকিছু।

মা আর পৃথিবীতে থাকে না। এখন আমি বুঝি, প্রিয় ট্রিনিটি, মা কোন সমুদ্রের কথা বলেছিল সেইদিন।"

পৃষ্ঠা-৭৪

ব‌ই রিভিউ

নাম : ডিয়ার ট্রিনিটি

লেখক : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

প্রকাশক : চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন

জনরা : বিচিত্রগদ্য

রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ।

Comments

    Please login to post comment. Login