Posts

প্রবন্ধ

প্রশ্ন-উত্তর

February 25, 2025

তৌকির আজাদ

192
View

এই যে আমরা বেঁচে আছি - এই বেঁচে থাকাটা কতটা আমাদের নিজের, কতটা আমাদের একান্ত নিজস্ব কিংবাব্যক্তিগত আর কতটুকুই বা অন্যের থেকে পাওয়া বা ধার করা, সেটার উপলব্ধি আমাদের আত্মিক বোধজাগরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। 


 

নিজ নিজস্বতাকে জানা বা নিজেকে বুঝতে পারার প্রক্রিয়াটা নিঃসন্দেহে  জটিল তবুও আমরা  আমাদের জানতে চাই। 


 

আমরা নিজেদের কে  নিজেরাই মনে মনে প্রশ্ন করি, 'আচ্ছা!  আমি কে' , 'আমি কেমন',  'আমি কেনো আছি' , 'আমি কোথায় যাচ্ছি' বা 'এখন কোথায় আছি' ইত্যাদি।  এসব ভেবে অর্থহীন শূন্যতায় তাকিয়ে থাকারআদৌও কি কোনো অর্থ আছে


 

এর অর্থ অনেক রকম হতে পারে।


 

তবে একটা সহজ অর্থ হচ্ছে, একটু ভাবার ফুরসত পাওয়া। নিজ অবস্থান আর নিজ পারিপার্শ্বিকতার মাঝেনিজে ঠিক এই মুহূর্তে কোন অবস্থাতে আছি এবং এই অবস্থান বদলে অন্য কোন নতুন অবস্থানে আদৌওপৌঁছাতে হবে কিনা, যদি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তবে কোন কোন কাজ করণীয় বা কোন কাজ থেকে নিজেকেবিরত রাখতে হবে, ইত্যাদি ভেবে বের করার ভাবনার স্থান যে আসলে আমাদের মনেসেটা বুঝতে পারার বাউপলব্ধি করার স্থান আমাদের মনের কল্পনায় আবিষ্কার করা প্রয়োজন। 


 

এখানেবলে নেয়া জরুরি যে আমাদের অবস্থান বা এই বর্তমান অবস্থা কখনোই একই রকম থাকে না।অবস্থার ভালো-মন্দ ভিন্ন বা অভিন্ন উভয় দিক থেকে থাকতে পারে, প্রাসঙ্গিক ভাবেই সেটা অবস্থার অবস্থান, কিন্তু বাস্তবতা নামক আমাদের বর্তমান অবস্থার অনবরত ঘটতে থাকার ব্যস্ত অবস্থা তাসর্বদাই  পরিবর্তনশীল। 


 

মোদ্দা কথা হচ্ছে, এই যে অর্থহীন শূন্যতার সময়ের দিকে তাকিয়ে থেকে আমরা আমাদেরকে একটু চিন্তায়হারিয়ে নিয়ে নিজেকে পুনরায় ফের খুঁজে পেতে সাহায্য করে থাকি। সম্ভবত এটা আমাদের চিরাচরিত  উপলব্ধিরতাগিদ। মূল কথায় ফিরে আসি।


 

আমাদের জন্ম যদি ভুল না হয়, জন্মকে যদি অপরাধ না মনে করি তবে আমাদের জন্মটাই আমাদের সব থেকেবড় প্রাপ্তি, বড় অর্জন।


 

যেপরিবারে আমরা জন্মগ্রহণ করি সেপরিবার এবং তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিস্থিতি আমাদের প্রথমশেখার স্থান হয়ে ওঠে। এখানে, মনে রাখতে হবে যে আমাদের পরিবার, আমাদের পরিচয় ভাগ্য কিছু অর্থেআমাদের পরিবারের উপর নির্ভর করে তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।  এই নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করার থেকেবর্তমানটাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের নির্ধারিত নিয়তির সাথে সম্পর্ক তৈরি করার তাড়না সম্ভাবনার অবস্থারব্যবস্থা করতে থাকে।


 

পরিবারের পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে থাকা শিশুটি যে ভাবনার জগতে খেয়াল করতে করতে সচেতনথেকে স্ব'জ্ঞান  অবস্থায়  পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত যেই জ্ঞান সে আহরণ করে বা করতে থাকে সেটা 'আমি কেনো' এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য যথেষ্ট। 


 

আমরা শিখছি, শিখতে থাকছি, আমরা টিকে থাকার জন্য শিখতে শিখতে নিজেরা নিজেদের আত্মস্থ করছি।এটা আমাদের দরকার। আমাদের স্বার্থ।


 

এই যে আমি - মুহূর্ত  লিখছি বা বলছি সেটার জ্ঞান দুই রকম, এক প্রাতিষ্ঠানিক দুই দার্শনিক, প্রাতিষ্ঠানিকজ্ঞান সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই জানি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের দর্শনটা। 


 

ভেবে দেখতে হবে আমাদের  ভেতরের এই দর্শন কি করে আমার বা আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে


 

এদের কিছু আমরা আমাদের চারপাশের মানুষদের দেখে, তাদের কথা শুনে, আচার আচরণ বুঝে বা তাদেরঅবস্থান বিচার বিবেচনা বিশ্লেষণ করে - যেমন, তাদের কোন ভাল বা মন্দ গুণ, কারো কোন মিষ্টি অভ্যাস, কারো হাসির আনন্দ প্রকাশের বা আকর্ষণের ভঙ্গি, কারো থেকে কোন রসিক স্বভাব ইত্যাদি নানান আবেগেরঅভিব্যক্তিআমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত আত্মস্থ করে নিচ্ছিনিয়েছি বা ইন্সটল করেছি, সচেতন এবংঅসচেতন, এই দুই ভাবে।


 

বাইরে থেকে অন্য মানুষ আমাদের মধ্যে কি ইন্সটল  করে দিয়ে যাচ্ছে সেটা সচেতন ভাবে বোঝার দরকারআছে। 


 

আমাদের জীবনটা একান্তই আমাদের নিজেদের  ~ অন্যের দর্শন বা অভিব্যক্তির মাধ্যমে অনুভূত অনুভূতি যেআমাদের চিন্তাভাবনা এবং কর্মকে প্রভাবিত করছে, সেটা নিজেকে বিকশিত করার পথে বাঁধা স্বরূপ। আমাদেরনিজেদেরকেই  এই ধাঁধাঁর বাঁধা অতিক্রম করতে হবে।


 

আমার আমি কে জানতে চাইলে আমার কাজকে প্রথমে জানতে হবে আর সেটা আমার চিন্তার সাথেওতপ্রোতভাবে  জড়িয়ে আছে। আমার চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত কর্ম কর্মফল 'আমি কেমন' সেটা বলে দিবে।


 

'আমি আছি' - আমার আমিত্বকে প্রকাশের মধ্যেঅবশ্যই আমার ভাল গুলো - যেগুলো দেখে যেন অন্যসবাই পছন্দ করে, তাদের মনে আনন্দের অনুভূতি জাগে, যেন আমার থেকে শিখতে বা জানতে আগ্রহ বোধকরেন, নতুন ইচ্ছায় কোন কাজ করতে উৎসাহ বোধ করেন, যেন ভালো কোন  অনুপ্রেরণার জন্ম হয়, প্রভাবমুক্তহয়ে যেন নিজেকে আরো সুন্দর ভাবে তুলে ধরার ইচ্ছা কাজ করে  - এই বোধ যেন জাগ্রত হয় সেভাবে নিজেকেউপস্থাপন করা। নিজেকে প্রকাশ করা বা তুলে ধরা বা 'আমি' কে প্রকাশ করা অর্থ হচ্ছে নিজেকে স্বীকার করেনেয়া।


 

আমরাআমাদেরকে অন্যের কাছে যতটুকু না উপস্থাপন করি তার থেকে বেশি উপস্থাপন করি আমাদেরনিজেদের কাছে। এটা আমাদের ভালো লাগা। 


 

আয়নায় নিজেকে দেখে ভালো লাগে কিন্তু কেনো যে এই 'ভালোলাগাটা' সেটা মনের দ্বৈত সত্তার চেতন বা তার  চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


 

আমাদের জীবনটাই আমাদের সব থেকে বড় অর্জন। 


 

জীবন থেকে পাওয়া, আমাদের, 'বেঁচে থাকার জীবনটা' আমাদের সব থেকে বড় উপহার। 


 

আমরা আমাদের জীবনটাকে নিয়ে অন্য সবার কাছে যাচ্ছি। সেই অন্য কেউ আমার জীবন থেকে উঠে আসাসম্ভাবনাময় ভাবনাগুলো ভেবে আমাকে স্বীকৃতি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। 


 

আমরা ক্রমশ নিজেদের ভেতরে যাচ্ছি। গভীরে যাচ্ছি - সেখানে যে আমি আছি।


 

জগৎ সংসার থেকে আমাদের যত কিছু পাওয়ার সেটার বিনিময়ে আমাদের করণীয় গুলো  - মানুষের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি, সেগুলো করলেই নিজের ভেতরের জগৎ বিকশিত হবে  


 


 

সেজন্য যে পরিচয়ের প্রয়োজন হয় সেটাই আমার বা আমাদের একমাত্র পরিচয় - আমার একমাত্র পরিচয়'আমি মানুষ'

Comments

    Please login to post comment. Login