পোস্টস

নন ফিকশন

সুহান রিজ‌ওয়ানের জার্নাল

২০ মে ২০২৪

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

মূল লেখক ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

"দিনলিপি লিখতে বসে এসব আলাপ করতে ইচ্ছে করে না। ডায়েরি তো লিখা উচিত প্রফেসর শঙ্কুর মতো, পাতার পর পাতা যেখানে ভরে থাকবে রোমাঞ্চকর অভিযানে। 'মরুরহস্য' গল্পে উধাও হয়ে যাওয়া ডিমেট্রিয়াস ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিল: 'আমার চাই উন্মুক্ত প্রান্তর। আমার চাই সাহারা।'
কী চাই, অমন স্পষ্ট করে ডায়েরিতে তা লেখা কি আমার পক্ষে সম্ভব হবে কখনো?"

সুহান রিজ‌ওয়ান। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ সনে লিখেছিলেন এসব কথা, তার দিনলিপিতে। তাঁর জার্নালের এ কথাগুলো তো আসলে খুব‌ই সত্য। মানব মনের বহু চিন্তা টেক্সট আকারে কখনো রূপান্তরিত হয়‌ই না। তার উপর সেই ইউটোপিয়ান সম্পূর্ণ বাকস্বাধীনতা পাওয়ার পর‌ও কি কোন লেখক সব লিখতে পারবেন? এমনকি তাঁর দিনলিপিতে?

২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালের নানামুখী চিন্তা-ভাবনা পাওয়া যায় অদ্ভুত নামের এই ব‌ইয়ে। ব্লগ যুগের শেষের দিকের সময় থেকে শুরু করে করোনাকালের একাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এসব লেখালেখি। লেখক সেই সময়কার প্রাসঙ্গিক, অস্বস্তিকর এবং বিভিন্ন পরিবর্তনের কথা বলে গেছেন বেশ সুন্দর ভাষায়।

সুহানের ঔপন্যাসিক হ‌ওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষার সাথে দেখা মিলতে পারে পাঠকের। পুরো জার্নাল জুড়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লেখকের সাথেও সাক্ষাত হয়ে যাবে রিডারের অনেকটা জাদুবাস্তবতার মত‌ই। উপন্যাস, গল্প তথা রাইটিং নিয়ে যেমন লেখক আলোচনা করেছেন প্রচুর, ঠিক তেমনি বিভিন্ন ব‌ইয়ের খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু মোক্ষম অংশে দৃষ্টিপাত করেছেন সুহান।

লেখকের এঞ্জিনিয়ারিং জীবন, ইউরো ট্রিপ, চীনের অভিজ্ঞতা, ‌ইতিহাসবোধ, সমসাময়িক বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থলন একদম স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে এসেছে তাঁর অনন্য গদ্যের হাত ধরে। সুহান রিজ‌ওয়ানের লেখার মধ্য বা আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পাঠক হয়তো বা হয়ে যেতে পারেন মুগ্ধতার কারণে অন্যমনস্ক। আবার তাঁর মধ্যে সবকিছু ছেড়েছুড়ে শুধুমাত্র নভেলিস্ট হ‌ওয়ার প্রচন্ড ডিজায়ার এবং সেরূপ জীবনযাপন হয়তো ঈর্ষান্বিত করতে পারে অনেককেই।

সুহান রিজ‌ওয়ান সম্ভবত কবিতা লিখেন বা লিখতেন। কারণ বারবার বিভিন্ন উপমা, ভঙ্গিমা, ইশারা চলে আসে তার গদ্যে। তবে এইসকল ইনডাইরেক্ট কথাবার্তা পাঠকের সহ্যের সীমা ছাড়াবে না, মনে হয়। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে আমি শুধুমাত্র 'পদতলে চমকায় মাটি' পড়েছি। স্লো বার্ণ এই উপন্যাস আমাকে চমৎকৃত করেছিলো। বিশ্বজুড়ে অত্যাচার-বৈষম্যের শিকার, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির প্রতি লেখকের অনন্য পক্ষপাত আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এ‌ক‌ইসাথে ঢাকার এবং সেই অদ্ভুত শহরের ভৌগলিক এবং যাপনের চিত্রায়ণ‌ও আছে উক্ত ব‌ইয়ের ছত্রে ছত্রে।

সুহান রিজ‌ওয়ানের দিনলিপি সুন্দর এবং শক্তিশালি গদ্যে রচিত। লেখক যে প্রথমে একজন পাঠক তা তাঁর লেখায় ঘুরেফিরে আসে। প্রচুর ব‌ই পড়েন তিনি যা দিনলিপিটি পাঠ করলে বুঝা যায়। ব্যক্তিগত কোন পরিচয় না থাকলেও লেখক আমার গুডরিডসেও আছেন। তাই সুহানের বহু ব‌ই পড়ার আপডেট আমার গুডরিডস নিউজফিডে চলে আসে।

সুহানের মতে, একজন ঔপন্যাসিক হ‌ওয়ার জন্য যে বিপন্ন বিস্ময় দিয়ে যেতে হয়, যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সাথে থাকতে হয় ঠিক সে কারণেই ঔপন্যাসিকের পদতলে চমকায় মাটি।

ধানমন্ডির যে ল্যাটিচিউড এবং লঙ্গিচিউড ( অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ) দিয়ে নিজের পছন্দের অবস্থানের উপর ব‌ইয়ের নামকরণ, এবং এক বসায় পড়ার মত গ্রন্থটি পড়ে আমার মতে, একজন ঔপন্যাসিকের শুধুমাত্র পদতলে মাটি চমকায় না। সেই নভেলিস্টের আশেপাশে, এমনকি মহাকাশ পর্যন্ত অসীম উপরিতল চমকাতে থাকে।

ব‌ই রিভিউ

২৩° ৪৪' ৪৮"
৯০° ২২' ৫০"

( সুহান রিজ‌ওয়ানের জার্নাল )

লেখক : সুহান রিজ‌ওয়ান
প্রথম প্রকাশ : ব‌ইমেলা ২০২৩
প্রকাশনা : চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
প্রচ্ছদ : আজকা ঈশিতা
জঁরা : নির্দিষ্ট সময়কালের আত্মজীবনীমূলক, জার্নাল, দিনলিপি।
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ (less) [edit]