Posts

গল্প

পরশ পাথর

March 1, 2025

মোঃ আব্দুল আউয়াল

Original Author অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল

20
View

রঞ্জন দাশ ছিলেন এক সাধারণ স্কুলশিক্ষক। অল্প মাইনে, সাদাসিধে জীবন, কিন্তু তাতেই তিনি তুষ্ট। একদিন তিনি গ্রামের এক পুরনো মন্দিরের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে একটি অদ্ভুত পাথর কুড়িয়ে পেলেন—মসৃণ, কালচে, দেখতে সাধারণ হলেও স্পর্শ করামাত্রই আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটতে লাগল। হাতে ধরা কলমটি সোনায় পরিণত হলো। তিনি অবাক হয়ে আবার পরীক্ষা করলেন—মাটির পাত্রটি ছুঁইয়ে দিলেন, সেটিও সোনায় রূপান্তরিত!

প্রথমে তিনি আনন্দিত হলেন, ভাবলেন, এখন তো জীবনের সব কষ্ট দূর হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করলেন, সবকিছু সোনায় পরিণত হলে জগতের প্রকৃত সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে। ধান, জল, বাতাস—সব যদি সোনায় রূপান্তরিত হয়, তবে কি তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন?

তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন—এ পাথর কি আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ?

বিষয়টি একদিন তাঁর স্ত্রী রমলার নজরে এলো। তিনি রঞ্জনকে বললেন, "তুমি যদি সত্যি সুখী হতে চাও, তবে জিনিসপত্র নয়, মানুষের মনে পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করো।"

তখনই রঞ্জন ভাবলেন, যদি তিনি এই ক্ষমতা দিয়ে কিছু অন্যরকম করতে পারেন?

তাই তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন—এই পাথর যদি ধাতুকে সোনায় পরিণত করতে পারে, তবে মানুষকে কি পরিবর্তন করতে পারে? তিনি একজন গরিব ছাত্রের হাতে পাথরটি তুলে দিলেন, কিন্তু কিছুই ঘটল না। তারপর তিনি নিজের উপর চেষ্টা করলেন—একটি বিশুদ্ধ চিন্তা নিয়ে পাথরটি ধরলেন, মনে মনে ভাবলেন, “আমি আরও উদার হতে চাই, আরও ভালো শিক্ষক হতে চাই।”

এক অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটল! তাঁর মন প্রশান্ত হয়ে গেল, দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়ে গেল, যেন সত্যের পর্দা উন্মোচিত হলো। তিনি বুঝতে পারলেন—এই পাথর শুধু ধাতুকে সোনায় রূপান্তর করতে পারে না, মানুষকে প্রকৃত সোনার মতো উজ্জ্বল করে তুলতেও পারে।

এরপর রঞ্জন দাশ আর সোনা তৈরি করা নিয়ে চিন্তা করলেন না। বরং তিনি সেই পাথরটি ব্যবহার করলেন নিজেকে এবং আশপাশের মানুষদের উন্নত করার জন্য। ধীরে ধীরে তাঁর চারপাশের ছাত্ররা আরও মনোযোগী হলো, দুর্বল ছাত্ররা মেধাবী হয়ে উঠল, গরিব কৃষকেরা পরিশ্রমে আনন্দ পেতে শুরু করল।

অবশেষে একদিন, রঞ্জন বুঝলেন—পাথরটি আর প্রয়োজন নেই। কারণ, প্রকৃত "পরশ পাথর" বাহ্যিক বস্তুতে নয়, মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থাকে। তিনি সেটি নদীতে ভাসিয়ে দিলেন।

 

Comments

    Please login to post comment. Login