পোস্টস

নন ফিকশন

মরণ বিলাস

২০ মে ২০২৪

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

মূল লেখক ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

আশির দশকের প্রায় শেষাংশ। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন একজন মন্ত্রী। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে এলাহী সেই পাঞ্জায় ভোর হ‌ওয়ার আগেই হারছেন। সেটা তাঁর অজানা নয়। ছেলেমেয়ে, দুই স্ত্রী, এবং অসংখ্য তথাকথিত শুভাকাঙ্খীর কেউ নেই মন্ত্রীর শেষ সময়ে।

ম‌ওলা বক্স। ধূর্ত, তোষামুদী এবং উচ্চাকাঙ্খী এই তরুন নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন শেষ সময়ে ফজলের মৃত্যুশয্যা পাশে থাকার। মানবতার চেয়েও তৎকালীন সরকার থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার উদগ্র ইচ্ছে থেকেই তাঁর এহেন প্রকল্প।

পুরো আখ্যান জুড়ে ফজলে এলাহী এবং ম‌ওলা বক্সের কথোপথন‌ই আছে। মৃত্যুমুখে পতিত মন্ত্রী মনের সব ঝাল মিটিয়ে ম‌ওলাকে বলছেন তাঁর জীবনের অন্ধকার সব অধ্যায়ের কাহিনি। ম‌ওলা খারাপ মানুষ হলেও ফজলের বিভিন্ন নারকীয় কীর্তিকলাপের বিবরণ শুনে সময়ে সময়ে তাঁর নিজস্ব সহ্যশক্তির সুকঠিন এক পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন যেন।

মন্ত্রীর শৈশব থেকে উত্থান, বিভিন্ন ভয়ানক অপরাধে জেনে বা না জেনে জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ফিলসফি ম‌ওলার সাথে সাথে পাঠক‌ও শুনতে পাবেন। ফজলে এলাহীর জীবনের বিভিন্ন সংশয়, দ্বন্দ্ব, আবার তীব্র আত্মবিশ্বাসের বয়ানে সৃষ্টি হয় এক প্যারাডক্সের। কখনো ম‌ওলা তাঁর আদরের ভাইটির মত আবার কখনো মন্ত্রীর দৃষ্টিতে ম‌ওলা একজন শু*ড়ের বাচ্চা। তবে ভোর হ‌ওয়ার আগেই যা কিছু সম্ভব তা ম‌ওলাকে বলে যেতেই হবে।

আহমদ ছফা হাসপাতালের রুমে ডেথবেডে শুধুমাত্র দু'জনের কথোপকথনে এমন এক গল্পকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন যে পাঠক ভুগবে অস্বস্তিতে। অবশ্য জীবনের মত সাহিত্য‌ও অস্বস্তিকর বিষয় এবং অশ্লীল। দ্রুতগতিময়তার এই গল্পে ইতিহাসের অনেক অধ্যায়‌ও চুপিসারে চলে এসেছে। মানব‌ ইতিহাসের দুঃখজনক কিন্তু অবশ্যম্ভাবী এক উপাদান সেই ভায়োলেন্সের কথা অনবদ্যভাবে চলে এসেছে আহমদ ছফার গল্পকথনে।

এগিয়ে আসছে মহাশক্তিধর মৃত্যু। ভোর হ‌ওয়ার আগেই মন্ত্রী বলে যেতে চান ম‌ওলাকে যা যা সম্ভব। এটি-ই ফজলে এলাহীর মরণ বিলাস।

পাঠ প্রতিক্রিয়া

মরণ বিলাস
লেখক : আহমদ ছফা
(প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৯)
খান ব্রাদারস অ্যান্ড কোম্পানি প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০১৬
পুনর্মুদ্রণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৯
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ