তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো একটি নফল ইবাদত, যা রাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা হয়। এটি প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল এবং এটি আত্মশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
১. তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
- ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিক (ফজরের আজানের আগে) পর্যন্ত যে কোনো সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।
- তবে সবচেয়ে উত্তম হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে, অর্থাৎ রাতের দুই-তৃতীয়াংশ কেটে যাওয়ার পর।
২. তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত নেই, তবে মনে মনে এই নিয়ত করা যায়:
"আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি"
নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট, মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই।
৩. তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা
- তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাত (বা ৮ রাকাত) পড়া সুন্নত।
- রাসূল (সা.) সাধারণত ৮ রাকাত পড়তেন, তবে কেউ চাইলে ২, ৪, ৬, ৮ বা ১২ রাকাত পড়তে পারেন।
৪. তাহাজ্জুদ নামাজের পড়ার নিয়ম
প্রতিটি দুই রাকাত করে সালাম ফিরিয়ে পড়তে হয়।
প্রথম রাকাত:
- নিয়ত করা
- তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা
- সানা পড়া (সুবহানাকাল্লাহুম্মা...)
- তাউজ ও তাসমিয়া পড়া (আউজুবিল্লাহি... বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম)
- সূরা ফাতিহা পড়া
- যেকোনো সূরা (যেমন সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস) পড়া
- রুকু, সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানো
দ্বিতীয় রাকাত:
- সূরা ফাতিহা ও যেকোনো সূরা পড়া
- রুকু, সিজদা করা
- শেষ বৈঠক (আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরিফ ও দোয়া মাসুরা পড়া)
- সালাম ফিরানো
৫. তাহাজ্জুদের দোয়া
তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেশি বেশি দোয়া করা উত্তম। আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, জান্নাত ও দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ কামনা করা উচিত।
রাসূল (সা.) তাহাজ্জুদের সময় এই দোয়াটি পড়তেন—
اللَّهُمَّ لَكَ الحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ... (সহীহ মুসলিম: 769)
যারা দোয়া দীর্ঘ করতে চান, তারা নবিজির শেখানো বিভিন্ন দোয়া পড়তে পারেন।
৬. তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত
- এটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত।
- এটি গুনাহ মাফের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
- রাসূল (সা.) বলেছেন, "রাতের নামাজ দুটি দুটি রাকাত করে পড়ো।" (সহীহ বুখারি: 993)
- কুরআনে এসেছে:
"তারা রাতে খুব কমই ঘুমায় এবং শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।" (সুরা আয-যারিয়াত: ১৭-১৮)
৭. কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- ঘুমানোর আগে ইশার নামাজ ও বিতর নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো।
- যদি কেউ তাহাজ্জুদের পর বিতর না পড়ে থাকেন, তবে শেষে ১ বা ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়তে পারেন।
- নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে আগে ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট করা দরকার।
উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অত্যন্ত নৈকট্য অর্জন করা যায়। এটি রিজিক বৃদ্ধি, দুশ্চিন্তা দূরীকরণ, গুনাহ মাফ এবং জান্নাত লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তাই যতটুকু সম্ভব এই নামাজ পড়ার চেষ্টা করা উচিত।