শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের একজন গ্র্যান্ডমাস্টার বলা যায় লেখককে। আত্মজীবনীমূলক এই বইয়ে নিজ জীবনের করা ভুলগুলি নিয়ে নিঃশঙ্কোচে কথা বলেছেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। সব ভুলগুলিই কি মধুর ছিল?
'যারা পকেটে শৈশব নেই, প্রতিভার সাগরে সাঁতড়ানো তার পক্ষে অসম্ভব।' উক্ত কথাটি গ্রন্থে বারবার বলেছেন কিংবদন্তি লেখক। অদ্ভুত সৌন্দর্যে এবং নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ এক বৈচিত্রময় শৈশব পেয়েছিলেন শ্যামল। লেখকের বাবা একটি মহাযুদ্ধের সাক্ষী। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় দ্বিতীয়টির।
যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষজনের পেশায় পরিবর্তন থেকে শুরু করে দেশবিভাগের মত নির্মম বাস্তবতা, সবকিছুর মধ্য দিয়ে এক বর্ণীল ভ্রমণ করে বেরিয়েছেন গল্পকার। নিজের ঠাকুর্দা এবং দাদামশাই সম্পর্কে তার বিশ্লেষণ সচেতন পাঠকের কাছে গুরুত্ববহ হতে পারে। কারণ শ্যামল মনে করতেন প্রতিটি ব্যক্তি প্রায় ১০০ বছরের অভিজ্ঞতার এক ক্যাপশুল যেন। নিজের ৬০-৭০ বছরের সাথে আগের এবং পরের কিছু বছরের কল্পনার যোগফল থেকেই তার এই ধারণা।
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জীবনে ব্যাপক অর্থকষ্টে ভুগেছেন। প্রায় সবধরণের পরীক্ষায় ফেল মেরেছেন। জায়গা-অজায়গায় প্রচুর মার খেয়েছেন। হয়েছেন অপমানিত। বিভিন্ন রকমের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। প্রেম এসে বারবার ছেড়ে ছেড়ে গিয়েছে। নিজ জীবনের সবচেয়ে বিব্রতকর অধ্যায়গুলো অকপটে লিখে গেছেন ঐতিহাসিক এক সময়ের এই নক্ষত্র।
লেখালেখির ক্ষেত্রে শ্যামল জটিল ভাষা প্রয়োগ করা থেকে সঙ্গত কারণে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছিলেন। তার লেখালেখির ক্রাফ্ট এবং তৎসংশ্লিষ্ট নানা রঙের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুনেছেন আত্মজীবনীমূলক এই বইটি। শ্যামলের রাইটিং এ চলে এসেছে কলকাতার শহর বা একটি দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার সন্ধিক্ষণের কাহিনি। বিভিন্ন লিজেন্ডারি লেখকদের সান্নিধ্য এবং তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে অনেক প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা। বাংলা সাহিত্যে 'দেশ' পত্রিকা ছাড়াও আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সাময়িকীর গোড়ার গল্প বলেছেন গল্পকার শ্যামল।
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের চোখের সামনে ঘটেছে ঐতিহাসিক অনেক নারকীয় ঘটনা। মহাযুদ্ধ, দেশবিভাগ এবং এসবের আঁচে নিজেরও জ্বলে-পুড়ে যাওয়াটা কত স্নিগ্ধতার সাথেই না লিখেছেন গ্রন্থকার। কিছু কিছু ঘটনায় পাঠক ব্যাপক উইট এবং হিউমারের দেখা পাবেন। আবার বেশিরভাগ ঘটনা যেন ডার্ক কমেডি ছাড়া কিছু নয়।
জীবনভর লেখকের যে ফিলসফিক্যাল জার্নি তা হৃদয়ের গহীন ছুয়ে যায়। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখকের সাথে তার বন্ধুত্ব পাঠকের মনে চমক সৃষ্টি করতে পারে। ইচ্ছে করে নামটি লিখলাম না। নিজ সময়, কাল বা জীবনকে এলোমেলো ড্রাইভারের মত চালিয়েছেন বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিশালি এই গদ্যকার। বিভিন্ন যন্ত্রণায় অগ্নিস্নান করে যেন অদম্য এক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়।
বাংলা সাহিত্যে আগ্রহী পাঠকদের জন্য আমার মতে এই বইটি একটি ইমোশনাল গাইডলাইন। গুরুত্বপূর্ণ লেখক, বই, ছোটগল্প, উপন্যাস, কবিতা, পত্রিকা, সম্পাদক এবং অদ্ভুত এক সময়ের অপূর্ব সাক্ষ্য দিয়েছেন লেখক। পুরো বইজুড়ে তার ক্ষুরধার বিশ্লেষনী ক্ষমতা, গভীর জীবনবোধ এবং উৎকৃষ্ট ভাষার প্রয়োগ দেখে উপলব্ধি হয় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনের অগুনতি ভুলগুলি প্রকৃতপক্ষে মধুর ছিল।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
এই জীবনের যত মধুর ভুলগুলি
লেখক : শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০০৩
দ্বিতীয় মুদ্রণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৯
প্রকাশনা : কাগজ প্রকাশন
প্রচ্ছদ : সুকান্ত ভৌমিক
জঁরা : আত্মজীবনীমূলক
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
'যারা পকেটে শৈশব নেই, প্রতিভার সাগরে সাঁতড়ানো তার পক্ষে অসম্ভব।' উক্ত কথাটি গ্রন্থে বারবার বলেছেন কিংবদন্তি লেখক। অদ্ভুত সৌন্দর্যে এবং নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ এক বৈচিত্রময় শৈশব পেয়েছিলেন শ্যামল। লেখকের বাবা একটি মহাযুদ্ধের সাক্ষী। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় দ্বিতীয়টির।
যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষজনের পেশায় পরিবর্তন থেকে শুরু করে দেশবিভাগের মত নির্মম বাস্তবতা, সবকিছুর মধ্য দিয়ে এক বর্ণীল ভ্রমণ করে বেরিয়েছেন গল্পকার। নিজের ঠাকুর্দা এবং দাদামশাই সম্পর্কে তার বিশ্লেষণ সচেতন পাঠকের কাছে গুরুত্ববহ হতে পারে। কারণ শ্যামল মনে করতেন প্রতিটি ব্যক্তি প্রায় ১০০ বছরের অভিজ্ঞতার এক ক্যাপশুল যেন। নিজের ৬০-৭০ বছরের সাথে আগের এবং পরের কিছু বছরের কল্পনার যোগফল থেকেই তার এই ধারণা।
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জীবনে ব্যাপক অর্থকষ্টে ভুগেছেন। প্রায় সবধরণের পরীক্ষায় ফেল মেরেছেন। জায়গা-অজায়গায় প্রচুর মার খেয়েছেন। হয়েছেন অপমানিত। বিভিন্ন রকমের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। প্রেম এসে বারবার ছেড়ে ছেড়ে গিয়েছে। নিজ জীবনের সবচেয়ে বিব্রতকর অধ্যায়গুলো অকপটে লিখে গেছেন ঐতিহাসিক এক সময়ের এই নক্ষত্র।
লেখালেখির ক্ষেত্রে শ্যামল জটিল ভাষা প্রয়োগ করা থেকে সঙ্গত কারণে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছিলেন। তার লেখালেখির ক্রাফ্ট এবং তৎসংশ্লিষ্ট নানা রঙের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুনেছেন আত্মজীবনীমূলক এই বইটি। শ্যামলের রাইটিং এ চলে এসেছে কলকাতার শহর বা একটি দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার সন্ধিক্ষণের কাহিনি। বিভিন্ন লিজেন্ডারি লেখকদের সান্নিধ্য এবং তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে অনেক প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা। বাংলা সাহিত্যে 'দেশ' পত্রিকা ছাড়াও আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সাময়িকীর গোড়ার গল্প বলেছেন গল্পকার শ্যামল।
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের চোখের সামনে ঘটেছে ঐতিহাসিক অনেক নারকীয় ঘটনা। মহাযুদ্ধ, দেশবিভাগ এবং এসবের আঁচে নিজেরও জ্বলে-পুড়ে যাওয়াটা কত স্নিগ্ধতার সাথেই না লিখেছেন গ্রন্থকার। কিছু কিছু ঘটনায় পাঠক ব্যাপক উইট এবং হিউমারের দেখা পাবেন। আবার বেশিরভাগ ঘটনা যেন ডার্ক কমেডি ছাড়া কিছু নয়।
জীবনভর লেখকের যে ফিলসফিক্যাল জার্নি তা হৃদয়ের গহীন ছুয়ে যায়। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখকের সাথে তার বন্ধুত্ব পাঠকের মনে চমক সৃষ্টি করতে পারে। ইচ্ছে করে নামটি লিখলাম না। নিজ সময়, কাল বা জীবনকে এলোমেলো ড্রাইভারের মত চালিয়েছেন বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিশালি এই গদ্যকার। বিভিন্ন যন্ত্রণায় অগ্নিস্নান করে যেন অদম্য এক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়।
বাংলা সাহিত্যে আগ্রহী পাঠকদের জন্য আমার মতে এই বইটি একটি ইমোশনাল গাইডলাইন। গুরুত্বপূর্ণ লেখক, বই, ছোটগল্প, উপন্যাস, কবিতা, পত্রিকা, সম্পাদক এবং অদ্ভুত এক সময়ের অপূর্ব সাক্ষ্য দিয়েছেন লেখক। পুরো বইজুড়ে তার ক্ষুরধার বিশ্লেষনী ক্ষমতা, গভীর জীবনবোধ এবং উৎকৃষ্ট ভাষার প্রয়োগ দেখে উপলব্ধি হয় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনের অগুনতি ভুলগুলি প্রকৃতপক্ষে মধুর ছিল।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
এই জীবনের যত মধুর ভুলগুলি
লেখক : শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০০৩
দ্বিতীয় মুদ্রণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৯
প্রকাশনা : কাগজ প্রকাশন
প্রচ্ছদ : সুকান্ত ভৌমিক
জঁরা : আত্মজীবনীমূলক
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ