পোস্টস

নন ফিকশন

শ্বাপদ সনে

২০ মে ২০২৪

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

মূল লেখক ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

গ্রাফিক নভেল রিভিউ

শ্বাপদ সনে

প্রকাশক : গ্রাফিক বাংলা পাবলিকেশন
লেখক : নাবিল মুহতাসিম
আর্টিস্ট : এড্রিয়েন অনীক
সংলাপ : নাবিল মুহতাসিম ও এড্রিয়ান অনীক
প্রচ্ছদ : এড্রিয়েন অনীক
কনসেপ্ট আর্ট সমগ্র : এড্রিয়েন অনীক
জনরা : হরর / সাসপেন্স / থ্রিলার
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

প্রমিনেন্ট ইনডাস্ট্রিয়ালিস্ট আব্বাস রহমান খানের একমাত্র সন্তান জামশেদ। একসময়ের সাফ গেমসে শুটিং ক্যাটাগরির গোল্ড মেডালিস্টের জীবন তাঁর বাবার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর কেমন জানি ছাড়া ছাড়া হয়ে যায়। ধনী ব্যক্তির সন্তান জামশেদ তাঁর কাজিন ডাক্তার সামাদ এবং অকাল্টের প্রতি অত্যন্ত প্যাশনেট, চলন্ত ট্রিভিয়া সাংবাদিক বন্ধু শিপলুসহ এক বড় বিপদে পরেন। এর আগে অবশ্য জামশেদের সাফ গেমস শুটিং কোচ খালেকুজ্জামান তাঁকে সাবধান করে যান যাতে জামসেদ আসল নকল বিচার করে। ডোপ টেস্টে ধরা খেয়ে অলিম্পিকে যাওয়ার সব প্রস্তুতির পর‌ও ছিটকে পড়া এই শুটার তেমন কিছু বুঝে উঠতে পারে না এই প্রাক্তন কোচের কথাবার্তা।

বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, অদ্ভুত সব স্বপ্ন এবং হ্যালুসিনেশনে ভুগা জামশেদ দেরিতে হলেও সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যান। জেদী, বদরাগী, ঘারত্যাড়া জামশেদ কারো চিকিৎসকের কথাও শুনতে রাজি না। জীবনে এমন সব দুঃস্বপ্নের মতো স্মৃতি আছে এই গোল্ড মেডালিস্টের যে তাঁর এরকম খিটখিটে হয়ে যাওয়াটাই মনে হয় অবধারিত ছিল। আনফেইথফুল গার্লফ্রেন্ডের সন্ত্রাসী এক্সের সাথে গন্ডগোলে জড়িয়ে যান কাজিন সামাদ ও সাংবাদিক বন্ধু শিপলুসহ। ঘটনাচক্রে বেশ কিছু লাশ পড়ে। জামশেদ, সামাদ ও শিপলু মার্ডার কেইসে গ্রেফতার এড়াতে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান।

এক চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া শিপলু ছোট বেলা থেকেই ভৌতিক, অকাল্ট এবং পরাবাস্তব বিষয়ের প্রতি অনুরক্ত‌। এসব বিষয় নিয়ে এত রিসার্চ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শিপলুর আছে যে তাকে বাংলাদেশে বিষয়গুলোর উপর লিডিং অথরিটি বলা যেতে পারে। যদিও জামসেদের কাছে এসব হাস্যকর ব্যাপার-স্যাপার।

ঢাকা থেকে পালিয়ে যে ভূতুড়ে অজপাড়াগাঁয়ে তিনজন গিয়ে পৌছান সেখানে না গিয়ে মনে হয় খুনের দায়ে জেল খাটা আরো ভালো হত। ৭১ এর গনহত্যার স্বাক্ষী এই গ্রামে কোন এক অজানা স্বাপদের শিকার হচ্ছেন একের পর এক নিরীহ মানুষ। শিশু থেকে শুরু করে নারী কেউ এই ভৌতিক প্রাণী থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। নিজের সাথে সবসময় থাকা এলকোহল, বন্দুক, বন্ধু ও কাজিনসহ সাফ শুটিং গোল্ড মেডালিস্ট নেমে পড়েন স্বাপদ শিকারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গ্রামের পুলিশের আচরণ এত অদ্ভুত কেন? গ্রামবাসীও কি কিছু লুকাতে চায়? স্বাপদ হোক বা কোন বাঘ বা শিয়াল, সেটার শিকার করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই ঐ তিনজন কি শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছেন?

লেখক নাবিল মুহতাসিমের নাম অনেকবার শুনেছি। পেশাগত জীবনে চিকিৎসক এবং বর্তমান সময়ের তরুন লেখকদের মধ্যে খুব সম্ভবত সেরা পাঁচ বা দশে আছেন বলে শুনেছি। তবে তাঁর লিখা "স্বাপদ সনে" বাতিঘর প্রকাশনী থেকে ব‌ই আকারে ২০১৬ সনে প্রকাশ পায় এবং ভারতের অভিযান পাবলিশার্স থেকে ২০১৯ সনে প্রকাশ পায়। নাবিল মুহতাসিমের এই গল্পের গ্রাফিক নভেল ফরম্যাট খুব ভালো লেগেছে। লেখনীতে একটা ইন্টেন্সিটি আছে। তরুনদের মধ্যে এগিয়ে এসে গ্রাফিক নভেলের মতো ভালো মাধ্যমে কাজ করার জন্যে তাঁকে ধন্যবাদ। গল্পে গ্রামের এক বাউলের গান আছে যেটার লিরিক লেখক যেভাবে লিখেছেন তা অনেকদিন মনে থাকবে। নাবিল মুহতাসিম একজন ব্রিলিয়ান্ট রাইটার।

কমিক্স আর্টিস্ট এড্রিয়ান অনীকের অঙ্কনের আমি বিগ ফ্যান সেই পিশাচ কাহিনি সাগা থেকেই। হরর স্টোরি অঙ্কনে শিল্পীর মুন্সিয়ানা আছে বেশ। এছাড়া হরর সিকোয়েন্স ছাড়াও ফুল স্টোরিতে দুর্দান্ত আর্ট করেছেন এই শিল্পী। থ্রিলারের থ্রিল বলুন বা হররের চিল, এড্রিয়ান অনীক অঙ্কনের মাধ্যমে আপনার মনোজগতে ভালোই ধাক্কা দিতে পারেন।

গল্প দুই ধরনের অধ্যায়ে ভাগ করা।

১) জামশেদের জবানবন্দি

২) শিপলুর জার্নাল

এখানে লেখক কয়েক লেয়ারে গল্প লিখেছেন। পাঠকের জন্যে অপশন রেখেছেন যেকোন একটা বেছে নিতে। দু'টি অপশনের যেকোন একটি পাঠক নিজের চিন্তার মাধ্যমে সঠিক মনে করতে পারেন। পাঠকের প্রতি এরকম চয়েস দিয়ে দেয়াটা খুব ভালো লেগেছে। এন্ডিং পাঠক নিজ বিবেচনায় বেছে নিতে পারবে। অসাধারণ এক প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সেই সাথে ৪০০ পৃষ্ঠার গ্রাফিক নভেল প্রি-অর্ডারে মাত্র ৩০০ টাকায় পেয়ে ( জানি না এই অফার এখনো আছে কিনা) আমি বলতে গেলে সারপ্রাইজড হয়েছি। ব‌ইয়ের সামনের ফ্ল্যাপে যে কথাগুলো ছিল প্রথমে বুঝতে পারিনি সেসবের অর্থ, জামশেদ কি পেরেছে? পাঠক আপনি কি পারেন? কারণ ফ্ল্যাপে লিখা ছিল,

"আসল নকল বিচার করো" "আসল নকল বিচার করো"

"আসল নকল বিচার করো" "আসল নকল বিচার করো"