Posts

নন ফিকশন

ফেসবুকে “পলিটিক্যাল সেন্সরশিপ” নিয়ে বড়সড় পরিবর্তন

March 7, 2025

মো; আহসান-উজ-জামান

Original Author মার্ক জুকারবার্গ

Translated by আহসান উজ জামান

17
View

ফেসবুকে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের উপর প্রচলিত সেন্সরশিপ নিয়ে বড়সড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ২০২৫ এর জানুয়ারীতে এই ঘোষণা দেন মার্ক জুকারবার্গ। শুনুন তার মুখেই।
 

সবাইকে অভিবাদন।
 

আজ আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে চাই, কারণ সময় এসেছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে স্বাধীন মতপ্রকাশের মূল চেতনায় ফিরে যাওয়ার। আমি যখন সামাজিক মাধ্যম তৈরি করা শুরু করি, তখন উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা। পাঁচ বছর আগে জর্জটাউনে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলাম যেখানে আমি স্বাধীন মতপ্রকাশের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছিলাম। আমি এখনও সেই বিশ্বাসে অটল, কিন্তু গত কয়েক বছরে অনেক কিছুই ঘটে গেছে।  

অনলাইনে ক্ষতিকর বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। সরকার এবং লিগ্যাসি মিডিয়া ক্রমাগত আরও বেশি সেন্সরশিপ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর অনেক কিছুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তবে আসলেই অনেক ভয়ংকর বিষয়ও আছে—যেমনঃ মাদক, সন্ত্রাসবাদ, শিশুদের শোষণ। এসব আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নেই এবং দায়িত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে চাই। এজন্য আমরা জটিল কনটেন্ট মডারেশন সিস্টেম তৈরি করেছি, তবে সমস্যা হলো, জটিল সিস্টেম ভুল করে—যদি ১% পোস্টও ভুলভাবে সেন্সর হয়, তাহলে তা লক্ষ লক্ষ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে।  

আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যেখানে অনেক বেশি ভুল হচ্ছে, অনেক বেশি সেন্সরশিপ হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে, সাংস্কৃতিকভাবে আমরা আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দিকে এগোচ্ছি। তাই আমরা আমাদের শিকড়ে ফিরব, ভুল কমানোর দিকে মনোযোগ দেব, আমাদের নীতিগুলো সরল করব এবং আমাদের প্ল্যাটফর্মগুলোতে মুক্ত মতপ্রকাশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।  

আমরা যা করবো

প্রথমত, আমরা ফ্যাক্ট-চেকারদের সরিয়ে ফেলব এবং এক্স (আগের টুইটার)-এর মতো “কমিউনিটি নোটস” সিস্টেম চালু করব, শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর, লিগ্যাসি মিডিয়া লাগাতার প্রচার চালিয়েছে যে ভুল তথ্য গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। আমরা সৎ উদ্দেশ্যে এই সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলাম, তবে ফ্যাক্ট-চেকাররা এতটাই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠেছিল যে তারা বিশ্বাস তৈরির পরিবর্তে অবিশ্বাসই বাড়িয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। তাই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমরা কমিউনিটি নোটস সিস্টেম চালু করব।  

দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের কনটেন্ট নীতিগুলো আরো সহজ করবো এবং “ইমিগ্রেশন” ও “জেন্ডার” সংক্রান্ত অনেক বিধিনিষেধ সরিয়ে ফেলব, যেগুলো মূলধারার আলোচনার সঙ্গে আর খাপ খাচ্ছে না। যা একসময় অন্তর্ভুক্তির জন্য শুরু হয়েছিল, এখন তা ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, এভাবে আর চলতে পারে না। তাই আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, মানুষ তাদের বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করতে পারে।  

তৃতীয়ত, আমরা “নীতিগুলো প্রয়োগ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করব” যাতে ভুল কমানো যায়। আগে আমরা স্বয়ংক্রিয় ফিল্টার ব্যবহার করতাম যা নীতিমালা ভঙ্গের জন্য সব কনটেন্ট স্ক্যান করত। এখন আমরা কেবল অবৈধ ও উচ্চ-স্তরের ক্ষতিকর বিষয়বস্তু শনাক্ত করব, এবং কম-গুরুত্বপূর্ণ লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, আমরা কেবল তখনই ব্যবস্থা নেব যখন কেউ রিপোর্ট করবে। কারণ, ফিল্টারগুলো ভুল করে এবং অনেক কনটেন্ট অপ্রয়োজনীয়ভাবে মুছে দেয়। তাই এগুলো সীমিত করে আমরা সেন্সরশিপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনব। আমরা আমাদের ফিল্টারগুলো এমনভাবে সমন্বয় করব যাতে শুধুমাত্র অত্যন্ত নিশ্চিত হলেই কনটেন্ট সরানো হয়। এর ফলে কিছু খারাপ কনটেন্ট হয়তো থেকে যাবে, কিন্তু একইসঙ্গে নির্দোষ অনেক পোস্ট ও অ্যাকাউন্টও আর ভুল করে মুছে যাবে না।  

চতুর্থত, আমরা “সিভিক কনটেন্ট ফিরিয়ে আনবো”। কিছুদিন আগে মানুষ রাজনৈতিক পোস্ট কম দেখতে চেয়েছিল কারণ রাজনৈতিক পোস্টের কারণে মানুষের মাঝে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছিলো, তাই আমরা সেগুলো সুপারিশ করা বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছি, এবং মানুষ আবার এই বিষয়গুলো দেখতে চায়। তাই আমরা এটি ধাপে ধাপে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং থ্রেডসে ফিরিয়ে আনব, তবে সম্প্রদায়কে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক রাখার জন্য কাজ করব।  


পঞ্চমত, আমরা আমাদের “ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি এবং কনটেন্ট মডারেশন টিম”কে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সরিয়ে টেক্সাসে নিয়ে যাব। মুক্ত মতপ্রকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে, আমি মনে করি এই কাজের জন্য এমন একটি জায়গা বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যেখানে আমাদের টিমের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে কম উদ্বেগ থাকবে।  


 বিশ্বব্যাপী সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে লড়াই  


পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্বব্যাপী সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করব”। বিভিন্ন সরকার আমেরিকান কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং সেন্সরশিপ আরও কঠোর করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী সাংবিধানিক সুরক্ষা রয়েছে, কিন্তু ইউরোপ ক্রমাগত নতুন নতুন আইন তৈরি করে সেন্সরশিপ প্রতিষ্ঠা করছে, যা সেখানে উদ্ভাবনের পথ রুদ্ধ করছে। লাতিন আমেরিকায় কিছু গোপন আদালত কোম্পানিগুলোকে চুপিচুপি কনটেন্ট মুছে ফেলার আদেশ দিতে পারে। চীন তো আমাদের অ্যাপগুলোকে দেশেই চালাতে দেয় না।  

আমাদের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে, গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেন্সরশিপকে আরও উৎসাহিত করেছে। কিন্তু এখন, আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি, এবং আমি তা কাজে লাগানোর জন্য আগ্রহী।  

এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে, এবং আমাদের সিস্টেমগুলো কখনও নিখুঁত হবে না। এখনও অনেক অবৈধ বিষয়বস্তু রয়েছে, যা আমাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু মূল বিষয় হলো—বছরের পর বছর ধরে আমরা শুধু কনটেন্ট মুছতে মনোযোগ দিয়েছি, এখন সময় এসেছে “ভুল কমানো, আমাদের সিস্টেম সহজ করা এবং মানুষের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে দেওয়ার।  


আমি এই নতুন অধ্যায়ের জন্য উদগ্রীব। সবাই ভালো থাকুন, আরও আপডেট শীঘ্রই আসছে!

Comments

    Please login to post comment. Login