গাছে ফোটা যত রক্ত-লাল শিমুল ফুল, প্রকৃতির মাঝে আছে যত এমন সুন্দর ফুল, তারই সকল সৌন্দর্যমাখা অকৃত্রিম শুভেচ্ছা জানবেন। ভালোবাসা জানাই যারা এ অধমের জন্মদিনে ফেসবুক, মেসেন্জার, হোয়াটসএ্যাপ, ভয়েস কলে কিংবা সাক্ষাতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাদের সকলকে।
গতকাল ৭ মার্চ ছিলো এ অধমের জন্মদিন। আর গতকালই এই ছবি খানা তোলা। রংপুর জেলার কাউনিয়ায়। রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাশে। কিছুক্ষণ আগে সেই মহাসড়ক ধরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তের কাণ্ডারি, প্রধান প্রকৌশলী মহোদয় কুড়িগ্রাম চলে গেছেন। ওনার গন্তব্য ভুরুঙ্গামারী। দুধকুমার নদের উপর নির্মাণাধীন সেতু পরিদর্শন। একটি সেতু তৈরিতে অনেক যাতনা থাকে। সেই যাতনাই প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়কে ঢাকা থেকে টেনে এনেছেনে এতটা পথ।
রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল মেনে আমরাও জেলার সীমানায় অবস্থিত তিস্তা সেতু পর্যন্ত এগিয়ে যাই। তিনি বিকেলে ফিরলে আবারও কিছু সময় ব্যস্ততা তৈরি হবে। ফেরার পথে পথের ধারে এই শিমুলগাছকে অবনত মস্তকে দাড়িয়ে থাকতে দেখি। গাছটি বেড়ে উঠেছে মহাসড়কের জমিনের বুক চিরেই। সেজন্য কি না, প্রধান প্রকৌশলীর আগমন সংবাদে তার সকল রুপ-রস সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করে। নত মস্তকেই। কিন্তু মহোদয়ের সময় কম, নোটিশ না করেই চলে গেছেন।
আমাদের অত ব্যস্ততা নেই। কিন্তু ড্রাইভার আমজাদের সেটা জানা নেই। সে এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে তরতর করে এগিয়ে চলে। শিমুল গাছকে পিছনে ফেলে দেয়। এবার আমি রাশ টেনে ধরি। গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। আমি ও আমার সহকর্মী মোঃ সাজেদুর রহমান (সংযুক্ত ছবি খানও তাঁরই তোলা) নেমে পড়ি। মহাসড়কের উঁচু বাধ থেকে জমিনে। শিমুল তলায় অনেক শিমুল ফুল পড়ে থাকতে দেখি। অপেক্ষায় থেকে থেকে, অনাদরে হয়ত ঝরে পড়েছে ওসব শিমুল ফুল।
পাশে একটা ইটভাটা। সেখানে তৈরি ইট এই সড়ক ধরে কাউনিয়া, হারাগাছ, রংপুরে যায়। বড় বড় দালান তৈরি হয়। সে দালানে ধনী লোকেরা বাস করে। সুখে থাকে। শান্তিতে আদম সন্তানের চাষবাস করে।
কিন্তু সেই শিমুল গাছের চলার ক্ষমতা নাই। সে সেখানে ঝিম মেরে পড়ে থাকে। ইটভাটা যে কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে, শিমুল সেটা শোষন করে নেয়। শুধু তাই না, বিনা শর্তে অক্সিজেন দান করে শান্তিতে আদম সন্তান চাষাবাদে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
তবুও দালানের লোকেরা পাশ দিয়ে চলার পথে একটু দাড়ায়না। দাড়ায়ে বলে না, শিমুলগাছ তোমাকে ধন্যবাদ। শুধু অক্সিজেন নয়, দৃষ্টিনন্দন শিমুল ফুল দিয়ে আমাদের ধন্য করেছো। চাইলে তোমার শিমুল তুলার বালিশ মাথায় দিয়ে অনাবিল শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।
আমাদেরও অত কিছু মাথায় থাকে না। শুধু হঠাৎ ব্যস্ততা কমে যাওয়ায় শিমুলের রক্ত-লাল আবেদনকে উপেক্ষা করতে পারি না। অনাদরে পড়ে থাকা অনেক ফুলের মধ্যে কয়েকটা হাতে নিই। খানিক সামনে এসে দাড়াই। পিছনে সার বেধে আগে থেকে সেজে থাকে গাছের যত শিমুল। সমস্ত শিমুলের স্মৃতিকে মনের স্মৃতিতে গেথে নিই।
পথে পথে এমন অনেক শিমুল, জারুল, নাম না জানা অনেক ফুল চোখে পড়বে আপনাদের। খুব ব্যস্ততা না থাকলে খানিক সময়ের জন্য দাড়িয়ে যেতে পারেন। প্রকৃতি ঠকাবে না, কখনও ঠকায় না। সে আপনাকে ভালোবেসে ভালো থাকার নানা উপাদান যুক্ত করবে।
সড়ক নিবাস, রংপুর
৮ মার্চ ২০২৫