কবিদের গদ্যভাষায় প্রতি বরাবরের মতো আগ্রহবোধ করি আমি। কারণ অনেক। অনেক সময় গৎবাধা কিছুর বিপরীতে ব্যতিক্রমধর্মি গদ্যের দেখা পেয়ে যাই। কবিতায় অনেক অনেক কথা অল্পে কবি প্রকাশ করেন বিধায় সেই কবির গদ্য থাকে বাঁচালতামুক্ত। কাব্যিক এক ধরণের ভঙ্গিমায় গল্প এগুতে থাকে।
নাহিদ ধ্রুব এর 'যূথচারী নক্ষত্রের বনে' গল্প বইয়ে মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠায় ১৩ টি গল্প স্থান করে নিয়েছে। গল্পগুলির সাথে স্বপ্ন দেখার সাথে একটা মিল আছে। আপনি যখন স্বপ্ন দেখেন শুরুটা যেন কোন ঘটনার মাঝখান থেকে ঘটছে এরকম মনে হয়। অদ্ভুত সব গল্পে নাহিদ বলে গেছেন সমসাময়িক বাস্তবতার থেকে শুরু করে কল্পবিজ্ঞানের জগতের কথাও।
নাম পুরুষে গল্পকথন করা লেখকের অনেক গল্প ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করা। ঐ অধ্যায়সমূহকে আলাদা স্টোরি হিসেবে যেভাবে ট্রিট করা যায়, আবার অধ্যায়গুলির সমন্বয়ে একজন দক্ষ ক্রাফ্টম্যানের মতো এক সূত্রে পুরো স্টোরি গেঁথেছেন নাহিদ ধ্রুব।
'যূথচারী নক্ষত্রের বনে'র কয়েকটি গল্পকে ওটিটি প্লাটফর্মে সার্থক রূপান্তর করা সম্ভব। যেন অনেকগুলি ছাড়া ছাড়া ফিল্ম সমান্তরালে এগিয়ে এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। যেখানে আশ্চর্যরকমের গুমঘর আছে, আছে নিয়তির আখ্যান, মানুষের মধ্যকার তীব্র একাকীত্ব, অ্যাবসার্ডিটি, এক কুয়োর ঢুকে হাজার বছরের সময় পরিভ্রমণ কিংবা কথা না বলা কারো আচমকা সব বিষয়ে কথা বলার সমূহ বিপদের আখ্যান। খ্যাতিমান লেখক জ্যাক লন্ডনের আত্মহননের প্রতিও এক গল্পে নড দেয়া হয়েছে।
কাউকে অজানা এক ম্যাপ খুঁজে আনতে দেয়ার পর সে যখন তার পরিবর্তে গুপ্তধন এনে দেয় তখন তাঁর কী পরিণতি হয়? লেখকের চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অনেক উপাদানে ভর্তি প্রায় সব গল্প আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রতিটি গল্পের শেষে নাহিদের থিম্যাটিক ড্রইং ভালো লেগেছে অনেক। এ গল্প বইয়ে ফিরে আসা যাবে বারবার।
বই রিভিউ
নাম : যূথচারী নক্ষত্রের বনে
লেখক : নাহিদ ধ্রুব
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ২০২৪
প্রকাশক : চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
প্রচ্ছদ : আল নোমান
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ।