Posts

উপন্যাস

নিশিথের অভিশাপ!!

March 24, 2025

bd gamer 2

36
View

নিশীথের অভিশাপ

পরিচ্ছেদ ১: অশরীরীর পদচারণা

সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিম আকাশে রক্তিম সূর্য অস্তগামী, আর গাছের ছায়া ক্রমশ দীর্ঘতর হয়ে গ্রামের মাটির পথ ঢেকে দিচ্ছে। গাঁয়ের নাম নিশিপুর। ছোট, নিস্তব্ধ এক গ্রাম, যেখানে রাত নামলেই সব যেন থমকে যায়। কিন্তু এই গ্রামেরই এক প্রান্তে, বাঁশবনের পাশে একটি পুরনো জমিদারবাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর ধরে, শূন্য, নিঃসঙ্গ, আর এক রহস্যময় আতঙ্কের আধার হয়ে।

গাঁয়ের মানুষেরা বলে, ওখানে নিশীথের অভিশাপ রয়েছে। নিশীথ ছিল জমিদার রাজনারায়ণ রায়ের একমাত্র ছেলে। লোকমুখে শোনা যায়, এক রাতে অদ্ভুত এক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। কেউ বলে, সে নিজেই পুকুরে ডুবে মরেছিল, আবার কেউ বলে, তাকে কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর থেকেই বাড়িটিতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে থাকে।

রাতের বেলা ওই বাড়ির জানালাগুলো খুলে যায়, ছাদে কারও পায়ের শব্দ শোনা যায়, আবার অনেকেই নাকি দেখেছে সাদা ধোঁয়ার মতো একটি অবয়ব ছায়ার মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। যারা ও বাড়িতে রাত কাটিয়েছে, তারা আর কোনোদিন ফিরে আসেনি।

পরিচ্ছেদ ২: অভিশপ্ত রাতের শপথ

গাঁয়ের যুবক রবি, সুজন, আর করিম ছিল দুর্দান্ত সাহসী। তারা এসব ভূতের গল্পে বিশ্বাস করত না। এক রাতে তারা ঠিক করল, জমিদারবাড়িতে গিয়ে নিজের চোখে দেখে আসবে সত্যি কিছু আছে কি না। গাঁয়ের বয়স্করা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তারা কারও কথা শুনল না।

রাত তখন বারোটা। তিন বন্ধু হাতে টর্চ আর লাঠি নিয়ে জমিদারবাড়ির মূল দরজার সামনে দাঁড়াল। বাড়িটা বিশাল, অথচ পুরোপুরি পরিত্যক্ত। বিশাল কাঠের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই যেন একটা ঠান্ডা বাতাস তাদের শরীর শিহরিত করে তুলল। বাড়ির ভেতরটা ভাঙাচোরা, মেঝেতে ধুলো জমে আছে, আর কোথাও কোথাও মাকড়সার জাল ঝুলছে।

"দেখেছ? এখানে কিছুই নেই!" রবি হাসতে হাসতে বলল।

ঠিক তখনই একটা দরজা হঠাৎ সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল। তিনজনেই চমকে উঠল। করিম কাঁপা গলায় বলল, "কেউ... কেউ আছে?"

কিন্তু কোনো উত্তর এল না। চারপাশের নিস্তব্ধতা আরও ঘন হয়ে এল। তারপর হঠাৎ করেই করিডোরের এক কোণ থেকে একটা ফিসফিস শব্দ শোনা গেল—"তোমরা এখানে কেন এসেছ?"

পরিচ্ছেদ ৩: ভয়ঙ্কর বাস্তবতা

তিন বন্ধু একসঙ্গে পেছনে ঘুরে তাকাল। আলো ফেলতেই দেখা গেল, একটা ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তার চোখ দুটো যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে, আর তার গলায় শিকল বাঁধা!

সুজন এক ধাক্কায় দরজার দিকে দৌড় দিল, কিন্তু দরজা আগের মতোই বন্ধ। করিম এক কোণে দাঁড়িয়ে কাঁপছে, আর রবি দম আটকে তাকিয়ে আছে ছায়ামূর্তিটার দিকে।

"তোমরা চলে যাও!"—একটা ফিসফিসানি আবার শোনা গেল, এবার যেন আরও করুণ সুরে।

হঠাৎ করে মূর্তিটা চোখের সামনে মিলিয়ে গেল। ঠিক তখনই সিঁড়ির ওপর থেকে এক বিকট হাসির আওয়াজ শোনা গেল। এবার আর অপেক্ষা না করে তিন বন্ধু দরজা ধাক্কাতে লাগল, আর কিছুক্ষণ পর দরজাটা হঠাৎ খুলে গেল। তারা তিনজনই প্রাণপণে ছুটে বেরিয়ে এল বাড়ি থেকে।

পরিচ্ছেদ ৪: রহস্যের উন্মোচন

পরদিন সকালে গাঁয়ের সবচেয়ে বৃদ্ধ ব্যক্তি, হরিহর দাদু, তাদের ডেকে পাঠালেন।

"তোমরা কি নিশীথকে দেখেছ?"

রবি বিস্মিত হয়ে বলল, "কে নিশীথ?"

হরিহর দাদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "নিশীথ ছিল জমিদারের ছেলে। সে খুব ভালোবাসত এই গ্রামকে, কিন্তু একদিন জমিদার তাকে জোর করে কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিশীথ কিছুতেই যেতে চায়নি। গোপনে সে বাড়ির পেছনের পুকুরে এসে লুকিয়েছিল, কিন্তু সেখানেই এক রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়। কেউ জানে না, সে আত্মহত্যা করেছিল, না তাকে কেউ মেরে ফেলেছিল।"

করিম বলল, "তাহলে সে এখনো এই বাড়িতে কেন?"

হরিহর দাদু বললেন, "কারণ সে এখনো মুক্তি পায়নি। অভিশাপের শেকলে সে বাঁধা।"

পরিচ্ছেদ ৫: শেষ মুক্তি

রবি, সুজন, আর করিম ঠিক করল, তারা নিশীথের আত্মাকে মুক্ত করবে। তারা পুরোহিতের সাহায্যে একটি বিশেষ পূজা আয়োজন করল। পূজার সময়, গভীর রাতের মধ্যে, বাড়ির ভেতর থেকে আবার সেই অদৃশ্য কণ্ঠস্বর শোনা গেল—"তোমরা আমায় মুক্তি দেবে?"

পুরোহিত মন্ত্র পড়তে পড়তে বললেন, "তোমার অভিশাপ আজ শেষ হবে। শান্তিতে থাকো!"

এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর হঠাৎ, বাড়ির চারপাশে বাতাস বইতে লাগল, আর একটি মৃদু আলোর আভা দেখা গেল। কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল, এবার তা ছিল শান্ত—"ধন্যবাদ!"

সেই রাতের পর থেকে জমিদারবাড়িতে আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটেনি। নিশিপুরের মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেল। তবে তিন বন্ধু আজও মাঝেমধ্যে রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে—নিশীথ কি সত্যিই মুক্তি পেয়েছে, নাকি অন্য কোনো সময়, অন্য কোনোভাবে সে আবার ফিরে আসবে?

Comments

    Please login to post comment. Login