Posts

প্রবন্ধ

আমাদের বাঙালিয়ানা ও বাংলার সংস্কৃতি

April 18, 2025

সাজ্জাদুল করিম

227
View

সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ। বৈশাখ মাস এলেই আমাদের মধ্যে বাঙালি হয়ে উঠার প্রবনতা দেখা যায়, যদিও সারা বছর আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে মত্ত থাকি। আবহমান কালের বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে আমরা অনেক কিছু করি যা, সত্যিকারার্থে বাঙালিত্বের পরিচয় বহন করে না। যেমন বাঙালি হওয়ার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করি (অথচ এটি আমদানি করা হয়েছে মাত্র ৩৬ বছর আগে ১৯৮৯ সালে১), পান্তা-ইলিশ খাই, শাড়ি-পাঞ্জাবি পড়ি, রমনার বটমূলে যাই ইত্যাদি। কিন্তু বাঙালিয়ানা জাহির করার আগে তো আমাদের জানা দরকার বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কী, তাই না? তো চলুন এ সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করি। 

‘বাংলা’ বলতে ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান ও জনপদের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন- বঙ্গ, সমতট, হরিকেল, গৌড়, পুন্ড্র ইত্যাদি। তাছাড়া বর্তমান সময়ে ‘বাংলা’ বলতে বর্তমান বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার সম্পূর্ণ অংশ ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত অঞ্চলকে বুঝায়।২ কিন্তু আমরা এখানে ‘বাংলা’ বলতে ১৯৭১ সালে জন্মলাভ করা দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত দেশটি সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাচ্ছি, যার বর্তমান নাম ‘বাংলাদেশ’। এই অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ইত্যাদিই এই লেখার মূল উপজীব্য। 

২.

ঐতিহ্য হলো- কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরম্পরায় চলে আসা কোনো চিন্তা, বিশ্রুতি, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, অভ্যাস, প্রথা, ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বস্তু ইত্যাদি যা যুগ যুগ ধরে তাদের মাঝে টিকে থাকে। আর সংস্কৃতি হলো- কোনো স্থানে বসবাসরত মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবিকার উপায়, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য, সামাজিক সম্পর্ক, ধর্মীয় রীতি-নীতি, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশিত অভিব্যক্তির নাম।৩ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রবহমান স্রোতঃস্বিনীর ন্যায় যা যুগ যুগ ধরে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। জাতি-ধর্ম, সময়-কাল, ভাষা ভেদে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলার ঐহিত্য ও সংস্কৃতি মূলত গ্রাম বাংলার মানুষের আচার-আচরণ, চিন্তা-বিশ্বাস, মনন-রুচি, ধ্যান-ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।৪ তাই বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপরই নির্ভর করতে হবে। কেননা গ্রামই হলো বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের মোট ভৌগলিক আয়তন ও জনসংখ্যার (মোট গ্রাম সংখ্যা ৮৭,২৩০ টি৫ ও মোট জনসংখ্যার ৬৮ ভাগই গ্রামের অধিবাসী৬) অধিকাংশই গ্রাম কেন্দ্রিক। আসলে কোনো অঞ্চল বা দেশ সম্পর্কে জানতে হলে সেই দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার, সাহিত্য-সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানাটা অপরিহার্য। কেননা পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চল, দেশ, জাতি বা সভ্যতার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যা তাদের নিজস্বতা ও স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় বহন করে; যার মাধ্যমে সেই অঞ্চল, দেশ বা জাতিকে আলাদাভাবে চেনা যায়। ঠিক তেমনিভাবে বাংলা তথা বাংলাদেশেরও রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আচার, বিশ্বাস ইত্যাদি যার মাধ্যমে এই অঞ্চলের পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে আমরা বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রধানত পাঁচটি শিরোনামে ভাগ করেছি যেমন- ১. পোশাক-পরিচ্ছদ ২. আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য সামগ্রী ৩. অনুষ্ঠান ও উৎসব ৪. সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং ৫. খেলাধুলা। নিচে এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো-

পোশাক-পরিচ্ছদঃ পোশাক-পরিচ্ছদ কোনো দেশ বা অঞ্চলের সংস্কৃতির একটি বড় অনুষঙ্গ। ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু, রুচি-রেওয়াজ, কৃষ্টি-কালচার, জীবনাচার ইত্যাদি নানা কারণে অঞ্চলভেদে পোশাকের তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন আমাদের এই অঞ্চলে প্রধান পোশাক হলো- লুঙ্গি, ধুতি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, গামছা ইত্যাদি।

(ক) লুঙ্গি: দেহের নিচের অংশে পরার এক ধরণের পোশাক যা বাঙালি পুরুষদের সবচেয়ে প্রচলিত বস্ত্র। সাধারণত এটি বিভিন্ন নকশা ও বিভিন্ন রংয়ের সুতায় বুনা হয়।৭

(খ) ধুতি: এই অঞ্চলের পুরুষদের আরেকটি প্রচলিত পোশাক হলো ধুতি। এটি সাধারণত সেলাইবিহীন সাত হাত লম্বা চতুষ্কোণ একখন্ড কাপড় যা কোমড় ও পা জড়িয়ে পড়া হয়।৮

(গ) শাড়ি: এই অঞ্চলের নারীদের ঐতিহ্যবাহী ও নিত্যনৈমিত্তিক পরিধেয় বস্ত্র শাড়ি। এটি লম্বা ও সেলাইবিহীন কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত‍ একটি শাড়ি ১৮ থেকে ২১ ফুট দীর্ঘ এবং ২ থেকে ৪ ফুট চওড়া কাপড়ে তৈরি হয়, যা বিভিন্নভাবে ভাঁজ করে পরা হয়ে থাকে।৯

আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য সামগ্রীঃ প্রতিটি জাতি ও নৃ-গোষ্ঠীর দৈনন্দিন কাজকর্ম, জীবিকা নির্বাহ ও যাপিত জীবনের প্রয়োজনে নানাবিধ আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যা কোনো অঞ্চলের মানুষের কাজের ধরণ, উপকরণের সহজলভ্যতা ও সেই সময়ের প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়। আর ঐসকল আসবাবপত্র ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী সে অঞ্চলের ঐতিহ্যের সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে একসময়ের অপরিহার্য আসবাবপত্র ও ব্যবাহর্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- লাঙ্গল, ঢেঁকি, কুলা, কুপিবাতি, হারিকেন, শিকা, খড়ম, শীতল পাটি, পিঁড়ি, হুকা, শিল-পাটা, গোলা, জাঁতা, দোয়াত-কালি, পালকি, ইঁদারা, কুয়া ইত্যাদি।

(ক) লাঙ্গল: জমি চাষের এক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলো লাঙ্গল; যা গ্রাম বাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবারে ছিল অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ।

(খ) ঢেঁকি: গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়িতেই ধান ভাঙ্গানো (ধানের খোসা ছাড়ানো) ও চালের গুড়া তৈরি করতে ঢেঁকির ব্যবহার ছিল অপরিহার্য। তাছাড়া বিভিন্ন শস্য ও মসলা গুড়া করতেও এর ব্যবহার করা হতো।

(গ) কুলা: ধান, চালসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য থেকে ময়লা পরিস্কার করার জন্য কুলা ব্যবহার করা হতো।১০

(ঘ) কুপিবাতি / হারিকেন: বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার যখন শুরুই হয়নি গ্রাম বাংলায় রাতের অন্ধকারে দূর করতে তখন ব্যবহৃত হতো কেরোসিনের কুপিবাতি বা হারিকেন। 

(ঙ) শিকা: পাটের তৈরি দৃষ্টিনন্দন ও সৌখিন বস্তু যাতে বিভিন্ন দরকারি গৃহস্থালি জিনিস রাখা হতো।

(চ) খড়ম: কাঠের তৈরি এক প্রকার পাদুকা।

(ছ) শীতল পাটি: পাটি বেত বা মুর্তা নামক এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে তৈরি গালিচা বা মাদুর যা এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প।

(জ) পিঁড়ি: বসবার জন্য কাঠের তৈরি এক প্রকার ক্ষুদ্র ও নিচু আসন বা পাটা।

(ঝ) শিল-পাটা: রান্নাঘরে মশলা পেষার জন্য ব্যবহৃত দুই টুকরা পাথর।

(ঞ) পালকি: মানুষবাহী, চাকাবিহীন এক ধরণের বিলাসবহুল যানবাহন যাতে সাধারণত নতুন বৌকে পরিবহণ করা হতো।১১

অনুষ্ঠান ও উৎসবঃ আবহমান কাল থেকেই গ্রাম বাংলায় নানা রকম অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়ে আসছে; যা বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-নবান্ন উৎসব, গ্রামীণ হাট, বৈশাখী মেলা, যাত্রাপালা, পুঁথি পাঠের আসর, বায়স্কোপ, হালখাতা ইত্যাদি।

(ক) নবান্ন উৎসব: নবান্ন উৎসব হলো- নতুন আমন ধান কাঁটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত বাংলা অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ হেমন্তকালে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদ্‌যাপনের প্রথা রয়েছে।১২

(খ) বৈশাখী মেলা: নতুন বছরকে বরণ করে বাংলা সনের প্রথম মাসের প্রথম দিন তথা পহেলা বৈশাখ গ্রাম বাংলায় মেলার আয়োজন করা হতো। আর এই মেলাগুলোতে থাকতো লোকজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ যেমন-মাটির তৈজসপত্র, মুড়ি-মুড়কি, মন্ডা-মিঠাই, নকশিকাঁথা, শীতল পাটি ইত্যাদি।

(গ) পুঁথি পাঠের আসর: গ্রাম বাংলার বিনোদনের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছিল পুঁথি পাঠের আসর। সাধারণত সন্ধ্যার পর অবসর সময়ে গ্রামের মানুষ পুঁথি শুনতে বাড়ির উঠানে একত্রিত হতো।

(ঘ) হালখাতা: আনুষ্ঠানিকভাবে বছরের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াকে হালখাতা বলা হয়। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন।১৩

(ঙ) বায়স্কোপ: এটি এক প্রকার বিনোদন সামগ্রী যার মধ্যে বিভিন্ন ছবি প্রদর্শিত হতো। এটি চারকোণা বিশিষ্ট কাঠের বা টিনের বাক্স দিয়ে তৈরি, যার তিনদিকে একাধিক কাচের জানালা দিয়ে ঘেরা থাকে। দর্শকরা এই জানালা দিয়েই ভিতরে প্রদর্শিত ছবি দেখতো। একসময় গ্রামের বিভিন্ন মেলায়, হাটে-বাজারে, উৎসবগুলোতে নিয়মিত বায়স্কোপের আসর বসতো।১৪ 

সাহিত্য ও সংস্কৃতিঃ বাংলার বিশেষ করে গ্রাম বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি নানা বৈচিত্রে ভরপুর, যা এই অঞ্চলের ঐহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। বাংলার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো-ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন, লোক গাঁথা, লোক সংগীত, লোক কাহিনী ইত্যাদি।

(ক) ধাঁধা : ধাঁধা এক প্রকার বিনোদনমূলক ও বুদ্ধিবৃত্তিক খেলা, যার মাধ্যমে ব্যক্তির জ্ঞান ও চাতুর্য পরীক্ষা করা যায়।

(খ) প্রবাদ-প্রবচন: প্রবাদ হলো- মানুষের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত কাব্যিক অভিব্যক্তি, যার মধ্যে সরলভাবে সমাজ ও জীবনের কোনো সত্য প্রকাশ পায়। আর প্রবচন হলো-কোনো প্রজ্ঞাবান, মননশীল বা সৃজনশীল ব্যক্তির অভিজ্ঞতাপ্রসূত বাক্য বা বাক্যাংশ।১৫

(গ) লোক সংগীত: জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, গম্ভীরাসহ নানারকম লোক সংগীত এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ।

খেলাধুলাঃ খেলাধুলার মাধ্যমেও অনেক সময় কোনো একটি দেশ বা অঞ্চলের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে। আমাদের এই অঞ্চলেও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খেলাধুলার প্রচলন ছিলো। যেমন-হাডুডু/কাবাডি, লাঠি খেলা, কুস্তি খেলা, নৌকা বাইচ, ষাঁড়ের লড়াই, ঘোড় দৌড়, মোরগ লড়াই, কানামাছি, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, ঘুড়ি উড়ানো, পুতুল নাচ, বৌচি ইত্যাদি।

(ক) হাডুডু/কাবাডি: আমাদের জাতীয় খেলা। দেশের ঐতিহ্যবাহী খেলার মধ্যে এটি অন্যতম। গ্রামাঞ্চলে এই খেলা অধিকতর জনপ্রিয় হওয়ায় একে গ্রাম বাংলার খেলাও বলা হয়।১৬

(খ) নৌকা বাইচ: নৌকার দাঁড় টানার কসরত ও নৌকা চালনার কৌশল দ্বারা অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতা, যা নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতির ধারক।১৭    

(গ) ষাঁড়ের লড়াই: গ্রাম বাংলার আরেকটি জনপ্রিয় খেলা। বিভিন্ন মেলা ও উৎসব উপলক্ষ্যে এই খেলাটি একসময় নিয়মিত আয়োজন করা হতো।

(ঘ) কানামাছি: গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে শিশু-কিশোরদের প্রিয় একটি খেলা। এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বাঁধা হয় যাকে বলে ‘কানা’ আর তার চারপাশে যারা থাকে তাদেরকে বলে ‘মাছি’। 

(ঙ) পুতুল নাচ: এই অঞ্চলের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য পুতুল নাচ, যেখানে পুতুলের মাধ্যমে কাহিনী বলা হয়। গ্রামাঞ্চলে শিশু-কিশোরসহ সকল বয়সের মানুষের বিনোদনের এক বড় অনুষঙ্গ ছিলো এই খেলাটি।

৩.

উপরে বাংলার যে ঐতিহ্য, জীবনাচার ও সংস্কৃতির কথা আমরা আলাপ করলাম তা এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা হয়তো জানেই না। আর জানবেই বা কি করে? এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তো আমাদের মাঝে আর অবশিষ্ট নেই। আকাশ সংস্কৃতি, বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই সময়ে এসে আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি নানা বিজাতীয় সংস্কৃতিতে, যা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। আত্ম পরিচয় ভুলে গিয়ে, নিজেকে অবজ্ঞা করে বা নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বাদ দিয়ে কোনো জাতি কি টিকে থাকতে পারে? শেষ করছি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে উদ্ধৃত করে-“হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন; তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, পর-ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।”   

তথ্যসূত্র

১. বাংলাপিডিয়া (অনলাইন ভার্সন)

২. উইকিপিডিয়া (মুক্ত বিশ্বকোষ) 

৩. আলমগীর খোরশেদ, হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য, প্রতিদিনের সংবাদ, ২৮ এপ্রিল ও ০৫ মে ২০২৩ 

৪. রুবা তালুকদার, বাংলার লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, দৈনিক ইত্তেফাক, ০২ অক্টোবর ২০২১

৫. ওয়েব সাইট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর

৬. বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

৭, ৮ ও ৯. উইকিপিডিয়া (মুক্ত বিশ্বকোষ) 

১০. সৈয়দ রশিদ আলম, বাংলার হারিয়ে যাওয়া ব্যবহারিক উপকরণ, ঢাকা টাইমস, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

১১, ১২ ও ১৩. উইকিপিডিয়া (মুক্ত বিশ্বকোষ)

১৪. রুকাইয়া মিজান মিমি, বায়স্কোপ, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ জুলাই ২০২১                                             

১৫. উইকিপিডিয়া (মুক্ত বিশ্বকোষ)

১৬, ১৭. বাংলাপিডিয়া (২য় ও ৭ম খন্ড), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০১১

Comments

    Please login to post comment. Login