সময়টা ছিল তখন ১৮-ই মে ২০২৪। মাহিন একসময় এলাকার সবচেয়ে গর্বিত ছেলে ছিল। পড়াশোনায় ভালো, কথাবার্তায়, মার্জিত আর আচার-আচরণে, ভদ্র-সব মিলিয়ে যেন এক আদর্শ ছেলে। মাহিন মাত্র ১২ বছরের এক সাধারণ ছেলে।
সে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার পোড়াবাড়ীর "আলহাজ্ব মাওলানা গিয়াস উদ্দিন মডেল স্কুল" নামক এক স্কুলে সে পড়তো। সে পড়তো ক্লাস পঞ্চম শ্রেণিতে। প্রতিদিন সকালে নিজের হাতে সে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়।
কিন্তু তার চোখে স্বপ্ন আছে - "একদিন বড় কিছু হবে সে"।
স্কুলে একদিন ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হলো। মাহিন খুব আগ্রহ নিয়ে একটি পাহাড়ের দৃশ্য এঁকে জমা দিল। রঙ ছিল পুরনো, কিছুটা শুকনো, তবু সে প্রাণ ঢেলে দিয়েছিল ছবিতে।
ঘোষণা হলো বিজয়ীর নাম। ধনী ঘরের ছেলে, তার বড় বড় রঙ, নতুন তুলির সেট, চকচকে কাগজ।
কিন্তু যখন স্যার মাইকে বললেন,
— "অনেকেই ভালো চেষ্টা করেছে, তবে কিছু আঁকা ছিল খুবই দুর্বল, যেমন মাহিনের আঁকা ছবি। এভাবে কেউ প্রতিযোগিতা করে না।"
সবাই হেসে উঠল। মাহিন চুপচাপ বসে থাকল। তার মুখের দিকে কেউ তাকাল না, কিন্তু তার ভিতরটা যেন ফেটে গেল। ছোট ছেলে হলেও অপমানের কষ্ট সে বুঝতে পারছিল।
সেদিন সে বাসায় ফিরে কান্না করল না। রঙের খাতা বের করে আবার আঁকা শুরু করল। সে নিজেকে বলল,
— "আমি না পারলে শিখব। আবার আঁকব। যতবার লাগবে।"
পরের বছর জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হলো। স্কুল থেকে তিনজন নির্বাচিত হলো, মাহিন তার মধ্যে একজন। এবার সে প্রথম হলো। সেই একই স্যার মঞ্চে উঠে তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
— "মাহিন, তুমি আজ সত্যিকারের শিল্পী।"
মাহিন মৃদু হেসে বলল,
— "স্যার, অপমানও মানুষকে বদলাতে পারে। আপনার কথা ভুলিনি। তবে এখন কষ্ট পাই না, শুধু শিখি।"