Posts

উপন্যাস

তাকদীর ও হালাল ভালোবাসার সংঘর্ষ — চ্যাপ্টার ১: পার্ট ৫-৭

June 21, 2025

Morsalin

312
View

📘 উপন্যাস: তাকদীর ও হালাল ভালোবাসার সংঘর্ষ

✨ চ্যাপ্টার ১: অদেখা দোয়ার আলো

🕊️ পার্ট ৫: এক কাপ চা, এক দৃষ্টি, আর এক সতর্কতা

✍️ লেখক: Morsalin Ahmad

> 🌿 “যে ভালোবাসা হালাল, তার সাক্ষী হন আল্লাহ নিজেই।
আর যেটি হারাম, তার ইমাম হয়ে দাঁড়ায় শয়তান।”
— একটি অজানা চিঠি, রেখে যাওয়া হয়েছিল কুরআনের পাতায়


---

১. মায়ের চোখে ভেসে ওঠে এক দোয়ার ছায়া

বেলা ২টা ১৩ মিনিট।
রাবেয়া খাতুন, তাহমীদের মা, এক সময়ের সম্মানিত কিন্তু দরিদ্র বিধবার ঘরে আসেন।
তার সামনে চা রাখা আছে, কিন্তু তিনি চা খেতে আসেননি—
তিনি এসেছেন একজন মেয়েকে জানার জন্য, যার নাম আইমানা।

ঘরটি খুবই সাধারণ, কিন্তু তাতে লেগে আছে এক ধরনের নির্মল পবিত্রতা।
পর্দাগুলো পুরনো, কিন্তু পরিচ্ছন্ন।
দেয়ালে টাঙানো “সবর” লেখা একটি আয়াত,
আর একপাশে ছোট হাতে লেখা একটি দোয়া:

> “رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا” — হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।

রাবেয়া খাতুন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন:

> “আমি অনেক মেয়েকে দেখেছি।
কিন্তু তোমার চোখে যে দোয়ার দীপ্তি দেখলাম —
এটি কেবল সেই মেয়েদের চোখেই থাকে, যাদের আল্লাহ কোনো প্রিয় বান্দার জন্য রেখে দেন।”

আইমানা কিছু বলে না।
শুধু চোখের কোণে জমে ওঠে এক চিলতে কৃতজ্ঞ অশ্রু।


---

২. শফিক আসে — আর হারাম প্রেম দাঁড়ায় দরজায়

তাহমীদের মা চলে যাওয়ার পনেরো মিনিট পর,
বিকেল ৫টার দিকে, শফিক হাজির হয় চকোলেট আর সস্তা সুগন্ধি নিয়ে।

সে দরজায় দাঁড়িয়ে বলে:

> “তুই তো জানিস, ছোটবেলা থেকে তোকে চিনি।
তুই আমার হবি—আজ না হোক কাল।”

আইমানা হতবাক হয়ে যায়।
সে দরজা বন্ধ করতে গেলে শফিক হাতে ঠেকিয়ে দেয়।

> “দেখ, তাহমীদ তো হুজুর। তোদের বিয়ে হলে ওর রেট কমে যাবে।
আর আমি তোর খালাত ভাই। আমিই সবচেয়ে ঠিক।”

আইমানা এবার দৃঢ়ভাবে বলে:

> “আমি একজন হুজুরকে বেছে নিয়েছি, কারণ সে কুরআনের আয়াত মনে রেখে ভালোবাসে।
আর তুমি ভয় দেখাও — আমি এমন ভয় থেকেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।”

শফিক হেসে ব্যঙ্গ করে:

> “তুই কি ভাবিস তাহমীদের মা তোকে গ্রহণ করবে?
তুই তো গরিব ঘরের মেয়ে, আর সে শহরের সম্ভ্রান্ত আলেম।”

আইমানা দরজা বন্ধ করে দেয়। আর কিছু বলে না।


---

৩. রাতের বৃষ্টিতে চিঠির সুর

রাত ৮টা ৪২ মিনিট।
বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে চিঠির খামে, চোখের অশ্রু নয়।

তাহমীদ একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে লেখা:

> “আমি আপনাকে চেয়েছি, নাম জানার আগেই।
ভালোবেসেছি, কণ্ঠ শোনার আগেই।
আপনাকে চিনেছি, যখন আপনি ছিলেন আমার সিজদাহর এক দোয়া মাত্র।”

আরও লেখা ছিল:

> “আমার মা আপনাকে পছন্দ করেছেন।
আপনার মায়ের অনুমতি থাকলে,
আমি আগামী জুমার পর আপনাকে হালালভাবে গ্রহণ করতে চাই।”

চিঠির শেষ লাইনে লেখা:

> “হালাল ভালোবাসা হয়তো দেরি করে,
কিন্তু কখনো হেরে যায় না।”


---

৪. দুই মা, দুই আশীর্বাদ

আইমানার মা চিঠিটি পড়ে মেয়ের কপালে হাত রাখেন।

> “মা, যদি তুই চাস, তবে আমি চাই—
তোর জীবন শুরু হোক সেজদাহ দিয়ে,
আর শেষ হোক জান্নাতে।”


---

✨ পার্ট ৬: দুই হৃদয়ের মিলন, আর শয়তানের এক ভয়ঙ্কর চাল

✍️ লেখক: Morsalin Ahmad

> 💌 “হালাল ভালোবাসা পূর্ণতা পায় তখনই,
যখন তাতে থাকে মায়ের দোয়া আর আল্লাহর অনুমতি।
আর হারাম ভালোবাসা তখনই ভেঙে পড়ে,
যখন আল্লাহ বলেন: ‘তোমার জন্য এটি ছিল না।’”


---

১. চিঠির উত্তরে আমন্ত্রণ — প্রার্থনার উপহার

চিঠি পাওয়ার পর,
আইমানার মা নিজের হাতে তৈরি করেন এক প্লেট সুজির হালুয়া ও আদা চা।

তার সঙ্গে ছোট্ট একটি নোট পাঠানো হয়:

> 🕊️ “আমাদের ঘরে আসুন। আমরা প্রস্তুত না, কিন্তু আমাদের দোয়া প্রস্তুত।”

রাবেয়া খাতুন আবার আসেন।
আইমানার মায়ের সঙ্গে বসে বলেন:

> “আপনার মেয়েকে আমি মনে-মনে নিজের মেয়ে বানিয়েছি।
এখন চাই, সে হোক আমার ছেলের জান্নাতি সঙ্গী।”


---

২. শফিকের বিষাক্ত ষড়যন্ত্র

অন্যদিকে, শফিক পরিকল্পনা করে:

> “ওদের বিয়েটা ভাঙতেই হবে।
একটা গুজব ছড়াবো তাহমীদকে নিয়ে...
না, আমি নিজেই শেষ করব ওদের ‘চিরন্তন স্বপ্ন’!”

সে তখন হাতে ধরে একটি ছবি—
আইমানা ও তাহমীদের কবরস্থানে প্রথম সাক্ষাতের ছবি,
যেটা কেউ গোপনে তাকে পাঠিয়েছিল।

শফিক সেটি সম্পাদনা করে ভাইরাল করার সিদ্ধান্ত নেয়।


---

৩. তাহমীদের কান্না — ভরসার আলো

রাত ১টা ১৭ মিনিট।
তাহমীদ কুরআনের সামনে বসে পড়ছে:

> “ومن يتوكل على الله فهو حسبه”
“আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক: ৩)

তার চোখ অশ্রুতে ভেজা।
সে মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বলে:

> “আম্মু, আমি ভয় পাই না।
শুধু চাই, যেন আল্লাহ এতে সন্তুষ্ট থাকেন।”

মা বলেন:

> “মানুষ কী বলল—সে তোর ব্যাপার না।
তুই কাঁদিস আল্লাহর কাছে। সেই কান্নাই তো কবুল হয়।”


---

৪. নিকাহর ঘোষণা — তাকদীরের প্রকাশ

জুমার পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা হয়:

> 🕌 “আজ জুমার পর আমাদের মসজিদে এক পবিত্র নিকাহ অনুষ্ঠিত হবে—
তাহমীদ বিন কাশেম ও আইমানা বিনতে রহিমার মধ্যে।”

অনেকে অবাক।
কারণ শহরের পরিচিত হুজুর বিয়ে করছেন একজন গরিব ঘরের মেয়ে!

কিন্তু যারা তাকদীর বোঝে, তারা জানে—
এই মেয়ের পেছনে ছিল তিন বছরের সিজদাহ আর অগণিত কুরআনের আয়াত।


---

৫. শেষ ষড়যন্ত্র ভেসে গেল আল্লাহর কুদরতে

শফিক রাতে একটি গুজব ছড়ায়:

> “তাহমীদের নাকি অতীতে এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল।”

সে একটি ছবি ভাইরাল করে।

কিন্তু আল্লাহর কুদরতে এক হাফেজ ছাত্র ছবিটি দেখে বুঝে যায়—
তাতে তাহমীদের তাসবীহ রয়েছে,
যা সে শুধুই জানাজায় পরে।

এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যায় ছবিটি ভুয়া।


---

✨ পার্ট ৭: জান্নাতের পথে প্রথম নুপুর

✍️ লেখক: Morsalin Ahmad

> 💍 “যখন দুটি হৃদয় আল্লাহর নামে মিলিত হয়,
তখন আসমানের ফেরেশতারা বলে—
‘আজ আমরা সাক্ষী হলাম,
এই হালাল ভালোবাসা জান্নাত পর্যন্ত স্থায়ী হোক।’”


---

১. নিকাহ — দোয়ার সাক্ষী, কাবার কিবলা

জুমার দিন, দুপুর ১২:৪০ মিনিট।
তাহমীদ বসে আছে, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, মুখে কুরআনের দীপ্তি।

আলেম সাহেব জিজ্ঞাসা করেন:

> “আপনি ৩৩,৩৩৩ টাকা ও একটি কুরআন শরীফ দিয়ে
আইমানা বিনতে রহিমাকে হালাল স্ত্রী হিসেবে কবুল করছেন কি?”

তাহমীদের চোখে জল চলে আসে।
সে বলে:

> “আমি শুধু কবুল করছি না—
আমি এই মহব্বতকে আমার সিজদাহতে চেয়েছি।”

সবাই একসাথে বলে:

> “بارك الله لك… وبارك عليك…”


---

২. ওমরাহ — ভালোবাসা যখন কাবার দিকে হাঁটে

নিকাহের দিন বিকেলে,
তাহমীদ ও আইমানা একসঙ্গে বসে ওমরাহর নিয়ত করে।

তাহমীদ বলে:

> “তোমার প্রথম সফর হোক কাবার ঘরে।”

আইমানা হেসে বলে:

> “আমি চাই তোমার হাত ধরেই প্রথমবার ‘লাব্বাইকা’ বলতে।”

তাদের মা-বাবা পাশে বসে দোয়া করেন।

বৃদ্ধ আলেম বলেন:

> “আজ বুঝলাম—
হালাল ভালোবাসাও এক ইবাদতের পথ।”


---

৩. শফিকের পতন — যখন বিচার নামে আল্লাহর পক্ষ থেকে

শফিক যখন গুজব ছড়াতে যায়,
এক হাফেজ ছাত্র পোস্ট খণ্ডন করে দেয়।

শফিক অপমানে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়।
তার মা কাঁদতে কাঁদতে বলে:

> “তুই যে পথে যাচ্ছিলি, তা শুধু তাদের বিয়ে ভাঙত না—
তোর নিজের তাকদীরও শেষ হয়ে যেত।”

সেই রাতেই তাহাজ্জুদের সময় শফিক উঠে বলে:

> “হে আল্লাহ, আমাকেও হালাল ভালোবাসার পথে ফিরিয়ে নাও।”


---

৪. প্রথম রাত — ভালোবাসার অর্থ দয়া, আর ইজ্জতের মানে সম্মান

নিকাহর পর,
তাহমীদ ও আইমানা একসাথে ঘরে প্রবেশ করে।

তাহমীদ একটি খাতা খুলে, যেখানে লেখা:

> “প্রিয় স্ত্রী,
আমি চাই তুমি আমাকে চিনো কুরআনের আলোয়—
এবং ভালোবাসো এমনভাবে,
যেন জান্নাতে আল্লাহ আমাদের একসাথে রাখেন।”

তারপর সে আইমানার কপালে হাত রাখে।
দোয়া করে:

> “হে আল্লাহ, আমাদের মাঝে বরকত দাও।
আমাদের সম্পর্ক হোক তোমার সন্তুষ্টির পথের সবচেয়ে পবিত্র বন্ধন।”


---

৫. গল্পের শেষ — সিজদার চোখ, দোয়ার ভালোবাসা

তাহমীদ জানালার পাশে বসে, বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে:

> “তুমি জানো, আমি প্রথম তোমার জন্য দোয়া করেছিলাম কবরের পাশে।”

আইমানা হেসে বলে:

> “আর আমি বলেছিলাম— হে আল্লাহ,
যিনি আমার নাম জানার আগেই আমাকে ভালোবাসবেন,
তাঁকেই আমার কবর পর্যন্ত সঙ্গী করো।”

দু’জনেই চুপ করে কাঁদে—
এই কান্না ভালোবাসার নয়, বরং তাওয়াক্কুলের।


---

পরবর্তী পর্বের টিজার (চ্যাপ্টার ১: পার্ট ৮):

> 🌙 "যে রাত জান্নাতের দোয়া হয়ে আসে…"
তাহমীদ ও আইমানার নতুন জীবন শুরু হলেও…
তাকদীরের পাতায় লেখা ছিল এক অশ্রুজল মাখা কাব্য।
আগামী পর্বে: "কান্নার পর আসমান যখন সাক্ষী দেয়।"


🔁 চলমান সিরিজ:

📚 উপন্যাস: "তাকদীর ও হালাল ভালোবাসার সংঘর্ষ"

চ্যাপ্টার ১: পার্ট ১–২

 👉 https://fictionfactory.org/posts/11955

চ্যাপ্টার ১: পার্ট ৩–৪ 

👉 https://fictionfactory.org/posts/11989

পরবর্তী পর্বের লিংক, চ্যাপ্টার ১: পার্ট: ৮-১০

👉https://fictionfactory.org/posts/12058


🗂️ লেখকের অপর উপন্যাস:-

📖 “তাকদীরের ছায়ায় তুমি” 👉 https://fictionfactory.org/posts/11768

Comments

    Please login to post comment. Login