রায়হান নামের ছেলেটা একটা অদ্ভুত ধরনের ছেলে। তার শখই অদ্ভুত—নতুন জামা, ঘড়ি, খেলনা এসব নয়, তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা হলো পুরনো বই! যত পুরনো, তত প্রিয়। পুরান ঢাকার Narrow Goli বইঘরের সব দোকানদার তাকে চিনে—ওই যে, “বইখোর রায়হান” নামে।
একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। খুব বেশি। ছাতা ভেঙে গেছে আগেই। মাথার চুল গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পরছে, তবুও রায়হান গলির ভিতরে হারিয়ে যাচ্ছে। আজ সে এসেছে “আনোয়ার সাহেবের বুক কর্নার” দোকানে। দোকানটা প্রায় ধ্বংসপ্রায়, বাঁশ দিয়ে ঠেকানো ছাদ, ছালাইনের নিচে জমে থাকা বৃষ্টির পানি মাঝে মাঝে ঝরে পরে।
আনোয়ার সাহেব বললেন, “এই যে রায়হান ভাই, আজকে একটা মাল নিয়ে এসেছি। পুরো তিনটা ট্রাঙ্ক ভর্তি ইংরেজি বই। ইংল্যান্ড থেকে এসেছে, কিন্তু কাস্টম ক্লিয়ার হয়নি ঠিকমতো। কিছু বই ছেঁড়া, কিছু আবার অদ্ভুত ভাষায়।”
রায়হানের চোখ চকচক করে উঠলো।
সে ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগল।
হঠাৎ, সে একটা পুরোনো কাঠের বাঁধাই বই পেল, যার নাম ছিল:
> *“THE LOST CITY INSIDE THE WORDS”*
পৃষ্ঠাগুলো বিবর্ণ, সাদা নয়, হালকা বাদামি। বইয়ের পাতায় পাতায় লেখাগুলো এমনভাবে ছাপা যে, মনে হয় শব্দগুলোর মধ্যে ফাঁক আছে। রায়হান খেয়াল করল—প্রতি তিনটা পৃষ্ঠার পর একটা করে পৃষ্ঠা কেমন যেন ভারি! মোটা! সে আঙুল বুলিয়ে দেখল, পাতাটার মাঝখানে কেমন যেন দাগ আছে।
সে একটাকে আলতো করে ছিঁড়তেই—চোখ কপালে! ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছোট্ট কাগজ, তাতে আঁকা ছিল অদ্ভুত এক মানচিত্র।
মানচিত্রটা অদ্ভুত। দেখতে অনেকটা পুরান ঢাকার মতো, কিন্তু মাঝখানে একটা শহর আঁকা—নাম লেখা “Lunaria”.
রায়হান বাড়ি ফিরে বিশ্লেষণ শুরু করল। সে বুঝতে পারল—এই শহরটা কোনো বাস্তব শহর নয়, বরং একধরনের “লুকানো শহর”, যেটা বইয়ের শব্দের মধ্যে লুকানো। একেকটি শব্দ, একেকটি রাস্তার নাম, একেকটি বাক্য হলো একেকটা সাইনবোর্ড। এ এক আজব কোড!
রায়হান অঙ্কন করল মানচিত্র, মিলিয়ে মিলিয়ে।
এক পর্যায়ে সে ভাবল—যদি এই বইয়ের শব্দ সত্যিই কোনো রহস্যময় শহরের রাস্তাঘাট হয়, তবে সেখানে ঢোকা যাবে কীভাবে?
**প্রথম চমক: বইয়ের ভিতরেই আসল দরজা**
সেই রাতে হালকা ঘুম আর দারুণ কৌতূহল নিয়ে রায়হান বইয়ের সামনে বসে ছিল। বইটার এক জায়গায় ছিল লিখা:
> “Say the phrase, and you may pass through.”
সাথে ইংরেজিতে একটা বাক্য:
> *“Between the lines, seek the gate where silence rhymes with stone.”*
রায়হান ভেবে ভেবে বুঝল—এটা তো একধরনের ধাঁধা! শব্দের মাঝে “silence” মানে হয়তো ফাঁকা জায়গা। “Stone” মানে কঠিন, নড়বে না এমন কিছু।
সে বইয়ের একটা পাতায় এক জায়গায় শব্দ নেই—শুধু একটা কালো বিন্দু। সেখানে আঙুল রাখতেই হঠাৎ পুরো ঘরটা নড়ে উঠলো! চোখের সামনে কুয়াশা, পেছনের দেয়াল গায়েব, আর সে পড়ে যাচ্ছে... নিচের দিকে...
যখন চোখ খুলল, রায়হান দেখল সে একটা অদ্ভুত জায়গায় আছে। রাস্তায় কেউ নেই, কিন্তু বাতি জ্বলছে। দেয়ালে ইংরেজি শব্দ লেখা, কিন্তু তা শুধু তখনই দেখা যাচ্ছে, যখন সে চোখ ঠিকভাবে ফোকাস করছে।
সামনে একটা চিহ্ন লেখা:
> **“Welcome to Lunaria – The City of Words”**
রায়হান তো অবাক!
**লুনারিয়া: শব্দের শহর**
শহরটা শব্দ দিয়ে তৈরি। ঘর, গাছ, ফুল—সব শব্দ! “Tree” শব্দটা গঠিত হয়ে দাঁড়িয়েছে গাছের রূপে, “Lamp” শব্দে আলো, “River” শব্দ বয়ে চলে শব্দের নদী।
মানুষ নেই, কিন্তু চারদিকে আওয়াজ—বইয়ের পাতার আওয়াজ, টাইপরাইটারের শব্দ, আর মাঝে মাঝে হাসির শব্দ—যেটা হয়তো কারও লেখার মধ্যে লুকিয়ে আছে।
রায়হান একটা দোকানে ঢুকল—সেখানে বসে এক বুড়ো লোক, যার মাথায় কলমের টুপি। তিনি বললেন, “তুমি আমাদের শহরে এসেছো... নিজের লেখার খোঁজে?”
রায়হান অবাক হয়ে বলল, “না, আমি তো স্রেফ একটা পুরনো বই কিনেছি...”
বুড়ো বলল, “তাহলে তো তুমি নির্বাচিত—কারণ Lunaria শুধু তাদেরকেই ডাকে, যারা শব্দ ভালোবাসে। তবে সাবধান—এখানে কিছু শব্দ আছে যা ভুলে গেলে ফেরত যাওয়া যাবে না।”
**দ্বিতীয় চমক: ভুলে গেলে আটকে যাবা!**
রায়হান শহরের মধ্যে ঘুরতে লাগল। সে বুঝতে পারল—এখানে কেউ শব্দ ভুলে গেলে, সে একটা অদৃশ্য ঘরে বন্দী হয়ে যায়। একটা ছোট ছেলে ছিল, নাম “Ben”। সে “Memory” শব্দটা ভুলে গিয়েছিল, তাই তার নিজের পরিচয় পর্যন্ত মনে নেই।
রায়হান ভয় পেয়ে গেল। সে ভাবল, তার বইয়ের জ্ঞানই এখানে ওর অস্ত্র। তাই সে লেখালেখি শুরু করল—তার ডায়েরি খুলে যা কিছু দেখছে, সব লিখে রাখল।
হঠাৎ সে একখানা দেয়ালে দেখল একটা দরজা আঁকা—আর নিচে লেখা:
> *“Writer’s Exit”*
তবে তার নিচে ছোট করে ইংরেজিতে ছিল:
> *"Write your own ending. Only then may you return."*
মানে, ফিরতে হলে তাকে নিজের গল্প শেষ করতে হবে। কিন্তু কোন গল্প?
সে বুঝল—এই শহরে ঢোকার গল্পটা শুরু হয়েছে বইয়ের পাতায়, এখন তাকে সেই বইয়ের শেষ অধ্যায় লিখতে হবে।
**তৃতীয় চমক: গল্পের মধ্যে নিজেকে হারানো**
সে ব্যাগ থেকে পেন বের করে লিখতে লাগল:
> “And so Rayan realized that the words he was reading were no longer someone else’s, but his own. He wrote about Lunaria, about the silent city, about the warning of forgotten words…”
সে লিখে চলল।
ঠিক শেষ লাইনে এসে লিখল:
> “And as he closed the final sentence, the world around him began to fold like paper, and he returned to where it all began.”
**শেষ মুহূর্তে: বাড়ি ফিরে এলো, কিন্তু...**
হঠাৎ তার চোখ খুলে গেল। সে বসে আছে নিজের বিছানায়। বইটা তার সামনে।
সব স্বপ্ন ছিল?
সে বইটা খুলে দেখল—না, কিছু লেখা বদলে গেছে। তার লেখাগুলো যেন কোনো অদৃশ্য হাতে বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়ে গেছে।
আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চমক?
শেষ পাতায় তার নিজের ছবি আঁকা—আর নিচে লেখা:
> *“Welcome, Citizen of Lunaria – Your story now lives inside.”*
তার হাত কাঁপে। সে বই বন্ধ করে রাখে, কিন্তু জানে—সে আর সাধারণ মানুষ নয়। সে এখন এক “Word Traveler”—যে শব্দের ভেতরে হারিয়ে যেতে পারে, আবার ফিরে আসতে পারে।
---
📘 **শেষ কথা:**
এই গল্পটা যদি তোমার মজা লাগে, তাহলে ভাবো—আমরা প্রতিদিন কত শব্দ পড়ি, কত গল্প দেখি, কিন্তু হয়তো কোথাও কোনো “লুকানো শহর” আমাদের ডাকে! তুমি কি তৈরি এমন এক ভ্রমণের জন্য?