সেদিন একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ চোখে পড়েছিল।
একটি বাচ্চা মেয়ে—বয়সটা হয়তো বারো-তেরো, সদ্য কৈশোরে পা দেবে এমন।
তার সামনে একটা পুরোনো থালা। থালায় একটিমাত্র শক্ত হয়ে যাওয়া রুটি, তার উপরে একটু লবণ আর একটা শুকনো মরিচ।
মেয়েটি একটি ম্যাচ জ্বালিয়ে সেই শুকনো মরিচটা পোড়ায়।
তারপর পোড়া মরিচ আর লবণ একসাথে মেখে কচলিয়ে নেয়।
সেই শক্ত রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছে—আর কাঁদছে।
আমি জানি না, ভিডিওটা সত্য ছিল কি না।
কিন্তু এটুকু নিশ্চিত জানি—এই দুনিয়ার একেক কোনায় এমন হাজারো মানুষ, এমন হাজারো শিশু আছে—যাদের কাছে একটা গোশতের টুকরো, একটু ভাত, একটু ডাল, কিংবা একটু মায়া... একেকটা স্বপ্নের মতো।
রাস্তাঘাটে যখন দেখি বয়োবৃদ্ধ কোনো মানুষ রিকশা চালাচ্ছেন...
বা গুলিস্তান, চকবাজার, বাংলাবাজারে ভারী মাল বোঝাই ভ্যান ঠেলছেন কোন এক অশক্ত হাত,
মাঠ ফেটে চৌচির হওয়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকা অশীতিপর এক বৃদ্ধ
কয়েক আঁটি শাক আর প্রায় শুকিয়ে যাওয়া সবজি নিয়ে গ্রাহকের আশায় তাকিয়ে আছেন—অন্তরটা কেমন হুঁ হুঁ করে ওঠে।
মাযলুম উপত্যকাগুলোর বাচ্চারা ঘাস রান্না করে খায়—
কেউ কচ্ছপ ধরে আগুনে পোড়ায়, কেউ খাবার বলতে মাটি-পানি মিশিয়ে খায়।
তারা শুধু বেঁচে আছে, এই পৃথিবীতে ‘আছে’—এইটুকুই।
আর আমরা?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের জীবনকে কতো সহজ করে দিয়েছেন!
আমাদের খাবারের অভাব নেই, কাপড়ের চিন্তা নেই,
চাইলেই ঘুরে বেড়াতে পারি, চাইলে অর্ডার করে আনি পছন্দের সব খাবার।
আমাদের ফ্রিজ ভরা খাবার, আলমিরা ভর্তি জামাকাপড়,
আমাদের চাওয়া-পাওয়ার খাতায় খুব কম ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকে।
এই যে আরামে থাকা,
এই যে নিরাপদ থাকা,
এই যে পেট ভরে খাওয়া আর মাথা গোঁজার জায়গা থাকা—
এ সব কিছুই তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অশেষ দয়া।
আমরা কি কখনো রাতের গভীরে, একাকী নির্জনে,
ভরাকৃতজ্ঞ এক মোনাজাতে—এই সব আরামের জন্য আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে শুকরিয়া আদায় করেছি?
দুনিয়ার কেউ কেউ ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’-এমন বাস্তবতায় বাঁচে না,
তাদের ঘরে নুনও থাকে না, পান্তাও থাকে না।
তবুও—আমরা সব কিছু পেয়েও কখনো ভাবি না,
একটু কৃতজ্ঞ হই না,
একটু চোখ ভেজাই না...
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে নরম করে দিন।
আমাদের যেন তওফিক দেন—আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার,
আর যারা বঞ্চিত—তাদের পাশে দাঁড়ানোর।