Posts

গল্প

নিস্পাপ – Part-1 পেছনের দরজা

July 16, 2025

SAYED MOTIUR RAHMAN

Translated by Part:-1

83
View


লেখক: সৈয়দ মতিউর রহমান

⛈️ রাতের বৃষ্টি আর মেয়েটির মুখ

ঢাকা শহর কখনো কখনো এমন চুপ করে যায়, যেন কোনো অপরাধের পর শহর নিজেই দম বন্ধ করে আছে।  
আজকের রাতটা ছিল ঠিক সেরকম।

বেইলি রোডের ঠিক একপাশে, পুরোনো লাল ইটের একটি দোতলা বাড়ির পেছনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। ভেজা চুলে পানি গড়িয়ে পড়ছে, কাঁধে একটা ছেঁড়া ব্যাগ, আর গা থেকে ভেসে আসছে কিছু একটা পোড়া প্লাস্টিকের মতো গন্ধ।

তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে কাঁদছে না হাসছে।  
চোখে ভয়, কিন্তু ঠোঁটে এক অদ্ভুত নীরবতা।

তার নাম তাসনিয়া রহমান।  
ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ক্লাসে টপ করা সেই মেয়েটা, যাকে সবাই “ডাক্তার আপা” বলে সম্মান করত। কিন্তু আজ রাতে সে এখানে এসেছে একটা লাশ রেখে যাওয়ার জন্য!

💔 এক মাস আগেও সব ঠিক ছিল...

একটা সময় ছিল যখন তাসনিয়ার জীবন একেবারে ছকে বাঁধা ছিল।  
সকাল ৭টায় মেডিকেল, দুপুরে গ্রুপ স্টাডি, আর রাত ৯টার পর ছোট বোন মীমের পাশে বসে পড়ানো।

মীম, ১৩ বছরের বুদ্ধিমান, মিষ্টি একটা মেয়ে। তাদের বাবা-মা বেঁচে নেই। তাসনিয়াই মীমের মা, আপু আর বন্ধুর মতো সবকিছু।

কিন্তু ঠিক এক মাস আগে সবকিছু বদলে গেল।

সে দিন সন্ধ্যায় মীম বাসায় ফিরে এসে মুখ নিচু করে শুধু বলেছিল,  
“আপু, আমি একটা ভুল করে ফেলেছি... আমাকে কেউ ব্ল্যাকমেইল করছে।”

তাসনিয়া প্রথমে ভেবেছিল এটা স্কুলের কোনো ছেলেমেয়ের বাজে মজা। কিন্তু যখন সে সেই লোকটির নাম শুনল—  
ড. সালমান হোসেন, এক বহুল পরিচিত মেডিকেল শিক্ষকের নাম, তখন যেন তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।

🧠 ব্ল্যাকমেইল: যেখানে ন্যায়বিচার কাজ করে না

ড. সালমান, তাসনিয়ার একাডেমিক গাইড। কলেজে সবার প্রিয় একজন মানুষ।  
কিন্তু সে-ই ব্যক্তি নাকি কয়েক মাস ধরে মীমকে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করছিল। মেয়েটির কিছু ব্যক্তিগত ছবি, চ্যাট, আর ভিডিও ক্লিপসে সে হুমকি দিচ্ছিল—

“তোর বোন মেডিকেল লাইনে থাকবে, না রাস্তায় নেমে যাবে— তা এখন আমি ঠিক করব।”

তাসনিয়া প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল, পুলিশের কাছেও যেতে চেয়েছিল।  
কিন্তু সে জানত, যদি ভিডিওটা ফাঁস হয়, মীম স্কুলেও যেতে পারবে না।  
সব রাস্তায় যেন কাঁটা। সময়ের সঙ্গে তাসনিয়ার ভেতর জমা হতে থাকে ঘৃণা, ভয় আর অসহায়তা।

এভাবেই আসে সেই রাত।

🔪 খুনের দিন: পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকা

৩ জুলাই, রাত ৯টা ১৮ মিনিট।  
তাসনিয়া তার হাত ব্যাগে রেখে দিয়েছিল একটা ইনজেকশন সিরিঞ্জ। তাতে ছিল পটাশিয়াম ক্লোরাইড — মুহূর্তেই হার্ট বন্ধ করে দিতে পারে এমন এক ভয়ংকর রাসায়নিক।

সে জানে, আজ যদি কিছু না করে, কাল আর কিছু করার সুযোগ থাকবে না।

ড. সালমান নিজের বাড়িতে একা ছিল। সে আগে থেকেই তাসনিয়াকে ফোনে বলেছিল,  
“আজ রাতে চলে এসো। তোমার প্র্যাকটিক্যাল রিপোর্ট ঠিক করে দেব। তবে দরজাটা পেছন দিয়ে ঢুকো, সামনেরটা বন্ধ থাকবে।”

তাসনিয়া ঢুকে পড়ে নিঃশব্দে।  
ঘরের আলো নরম, দেয়ালে ঝুলছে বড় বড় সার্টিফিকেট, মেঝেতে ফেলে রাখা একজোড়া মেয়েদের জুতো।

সে বুঝে যায়, এই মানুষটা শুধুমাত্র তার বোনকে নয়, অনেক মেয়েকে ধ্বংস করেছে।  
এক মুহূর্তের জন্যও আর দ্বিধা করে না।

সে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে দেয় তার হাতে— সোজা হার্টে।  
ড. সালমান চোখ বড় করে তাকায়, কিছু বলার আগেই নিথর হয়ে যায়।

📱 ভয় আসে এরপর, মুক্তি নয়

খুন করে যে মুক্তি পাওয়া যাবে, এটা তাসনিয়া ভাবেনি।  
কিন্তু সে ভাবেনি— কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকবে।

তিন মিনিট পর, ঘরের কোণ থেকে একটা মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বলে ওঠে।

একজন অপরিচিত কণ্ঠ বলে উঠল—

“তুমি তো ভেবেছিলে কেউ দেখছে না, তাই না?”  
“এখন তুমি আমার নির্দেশে চলবে।”

তাসনিয়া মোবাইলটা ধরতে গেল, কিন্তু ততক্ষণে লোকটা দৌড়ে পালিয়ে গেছে পেছনের দরজা দিয়ে।

📩 নতুন ব্ল্যাকমেইল শুরু হয়

সেদিন রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তার ফোনে আসে একটি ম্যাসেজ—

“তুমি যদি চাও তোমার বোন বেঁচে থাকুক, তাহলে কাল সকাল ৯টার আগে আমার শর্তে রাজি হও। না হলে তোমার খুনের ভিডিও আর মীমের ভিডিও একসঙ্গে ভাইরাল হবে।”  
— Anonymous

তাসনিয়া বুঝতে পারে, সে এখন নতুন কারও হাতের পুতুল।

💣 শেষ দৃশ্য: টেবিলের নিচে আরেকটি লাশ?

পরদিন সকালে পুলিশ এসে ড. সালমানের লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তারা আরেকটি মেয়ে শিশুর মৃতদেহ পায়, টেবিলের নিচে রেখে দেওয়া ছিল সে লাশ।

তাসনিয়া এই খবর শুনে হঠাৎ চিৎকার করে উঠে বলে—

“না! ও মীম না! এটা মীম না... প্লিজ বলো এটা মীম না!”

কিন্তু পুলিশ তখনও মেয়েটির পরিচয় জানে না।  
আর তাসনিয়ার হাতে তখনও পড়ে ছিল সেই মোবাইল—

যা কিনা তার নিজের খুনের ভিডিও রেকর্ড করেছিল।

🔥 To Be Continued…

👉 “নিস্পাপ – Part 2: নিয়ন্ত্রণ” এ জানতে পারবেন—
- মীম কি সত্যিই মারা গেছে?
- কে সেই গোপন ব্ল্যাকমেইলার?
- তাসনিয়া কি সত্যিই খুনি, না সে একটি বড় ষড়যন্ত্রের শিকার?
 

Comments

    Please login to post comment. Login