Posts

ফিকশন

পিঁপড়া

August 1, 2025

কামাল হাসান বাঁধন

64
View

আমি একটা লাল পিঁপড়া।পথে ঘাটে চলতে যাইয়া লোকমুখে শুনসি আমি নাকি হিন্দু পিঁপড়া আর ঐ কালা পিঁপড়াগুলা মুসলমান।আমি বুঝি না এই মানুষগুলা আমাদের মত এক নাদান প্রানীরে ধর্মের বেড়াজালে ফেলে কি আনন্দ পায়!আজ্ দুপুর দুইটা থেকে আমি মুগদা থানার ঠোলা মানে পুলিশ রাশেদের শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।উনি সুঠামদেহী।মাংসল শরীরে ঘুরে বেড়াতে আমার ভালোই লাগে;ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজের মত শরীরের মাংসের দলাগুলোতে ঘুরে আমার আনন্দ হচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন আমি আর আমাতে নেই।মাথার উপর সূর্যটা তখন খাড়া হয়ে আছে।খুব অস্বস্তিকর অবস্থা;এর মধ্যে রাশেদের ঘামে ভেজা শরীরের লবাণক্ত ঘাম দিয়ে আমি আমার গলাটা ভিজালাম।রাশেদের মাথায় তখন নানান চিন্তা।আমি বুঝি;আমাকে তো বুঝতে হয়।ডিউটি শেষ হওয়ার আর সময় বেশি বাকি নাই!কিন্তু এখনো টার্গেট মাফিক ধান্দার ট্যাকা পকেটে আসে নাই।তাই টিম নিয়ে দাঁড়াইলো টিটি পাড়া মোড়ে।এখানে সব নেশাখোরের ঘুরাঘুরি।গাঞ্জার স্পট,বাংলা পাওয়া যায় হাতের নাগালে।বেশ কয়েকটা ধান্দা পাওয়া যাবে।কিন্তু এইটাও মাথায় ঘুরে এই ফকিন্নির বাচ্চাদের থেকে কতই বা পাওয়া যাবে??(!)সে গাড়িটা নিয়া রাখলো রাস্তার আড়ালে;ঐ পাশ দিয়ে কোন গাজাঁখোর বা মাতাল বের হইলেই খপ!!ধর,ব্যাটারে।
 

রাশেদ ঘড়ি দেখে।৪টা বাজে প্রায়।আজ কি গাঞ্জুটিগূলার গাঞ্জা খাইতে মন চাইতেছে না?কই হালারা?রাশেদের মনেও তখন জয়েন্টে একটা টান দেওয়ার বাসনা জাগে!বাসনা কাইটা যায় এক রিক্সাওয়ালারে পেয়ে।লুংগির চিপায় পায় পোটলা।থাপ্পড় মেরে পুটলি নিজের পকেটে নেয় রাশেদ।আর বলে ‘খাঙ্কির বাচ্চা,গাঞ্জা খাস!!এক্কেরে কোর্টে চালান কইরা দিমু?’ রিক্সায় বলে, ‘স্যর,গরিব মানুষ রিক্সা চালাই।শরীল কামড়ায়,মাইঝেমধ্যে খাই,স্যর।এইবারের লাহান মাফ কইরা দ্যান স্যর।রাশেদে বলে, ‘চ্যপ,শুয়োরের বাচ্চা।কত কামাইছস দেহি আজকে?’’ রিক্সায় গুইনা দেখে ৬৫০ টাকা।বলে, ‘স্যর,মহাজনরে ৪০০ ট্যাকা জমা দিতে হইবো।আপনে এই লন,এই লন ২০০ রাহেন,স্যর।’ কিন্তু স্যর রাশেদ ৬০০ টাকা রেখে ৫০ টাকা ফেরত দ্যায়।রিক্সাওয়ালার জন্য তার খুব মায়া হয় বলে সে পোটলাও ফেরত দ্যায়।
 

আমার আজ ক্যান জানি খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে।আমি আর কতক্ষন সহ্য করতে পারব জানি না!আমাদের পিঁপড়া সমাজের টেলিপ্যাথি ক্ষমতা অসাধারণ।আমি আমার গং এর সাথে টেলিপ্যাথি খেললাম।হয়তো তারা টিটিপাড়ার দিকে রওনা দিয়েছে এতক্ষনে।

এর কিছুক্ষণ পরে দেখলাম রাশেদ নতুন টার্গেটের দিকে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়া আউলা চুলের এক ছেলের দিকে চেয়ে আছে।গাড়িটা এইখানে রাখাতে সুবিধা হইছে যা তা হইলো স্পট থেকে বোঝায় যায় না এইখানে পুলিশ আছে।আর এই নতুন টার্গেটে সেই ফাঁদে পা দিলো।আহা বেচারী!!‘এই যে এদিক আসুন’ রাশেদে বলে।‘আপনারে একটু চেক করতাম,সাথে কিছু নেই তো?থাকলে বলুন,ঝামেলা আমার একদম পছন্দ না।’ ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটা বইলা উঠে, ‘ঊহু,কিছু নাই।’ রাশেদ বলে, ‘দেখি’। একটু হাতাইতেই পেয়ে যায় সেই কাংখিত গাঁজ়ার রোল।আহ!কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।কোথা থেকে একটু দমকা হাওয়া এসে ধাক্কা দিলো।আমি তখন রাশেদের চুলে বসে ঘটনা দেখছি।বাতাসের ঝাপটায় পড়ে যাওয়ার অবস্থা হলো আমার।নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার পর দেখলাম রাশেদে ছেলেটাকে নিয়া গাড়িতে বসাইছে।কথা চালু হলো।‘আচ্ছা আপনে কম কইরা ৫ টা হাজার ট্যাকা দেন,আপনাকে ছেড়ে দেবো।দেখেন,দিনকাল খারাপ।আর রাস্তা যা ভাংগাচুরা।কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার ঝুক্কিঝামেলা আমি নিতে চাচ্ছি না?’ আমি দেখলাম ছেলেটা হ্যাঁ না কিছু না বলে অন্যদিকে মানে অন্যদিকে মনোযোগ দিচ্ছিলো।তার এই তাচ্ছিল্যের ভাবটা আমার ভালো লাগলো।এর মধ্যে আমার গং উপস্থিত।এই ব্যস্ত নগরীতে এত পিপঁড়ের ঝাঁক হয়তো কেউ আগে দেখেনি।আর হয়তো দেখবোও না।তারা গাড়ি বেয়ে উঠলো।উঠলো রাশেদ সহ অন্য ঠোলা মানে পুলিশের গায়ে।ছিলো লাল পিঁপড়া,কালো পিঁপড়া,আরো নানা জাতের পিঁপড়া।আমরা কামড়াতে শুরু করলাম।আমাদের বিষ ঢেলে দিলাম তাদের লোমকূপের গভীরে।আহ কি জ্বালা।ছেলেটা চোখের নিমিষে হাওয়া হয়ে গেল।আমি হয়তো এমনটায় চাইছিলাম।তাড়াহূড়া করে নেমে আসলাম রাশেদের প্যান্ট বেয়ে;ঢূকলাম তার প্যান্টের ভিতর।শুধু কি পুলিশের এই টার্গেট থাকবে!!আমারো তো একটা টার্গেট আছে,তাই না?আমি সবসময় সূক্ষ্ম জায়গায় কামড়াতে পছন্দ করি এবং আমি তাই করলাম।কামড়ে ধরলাম তার বিশেষ অংগের আগায়।রাশেদ চ্যাও-চ্যাও করে চিল্লিয়ে ঊঠলো।মাথা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেখলাম রাশেদ ও তার গ্যাং এর গা ভর্তি আমার গ্যাং।রাস্তায় দাঁড়িয়ে অফিস ফেরত মানুষগুলা আনন্দের সাথে শহরের এই নতুন ঘটনা দেখছে।আমার আজ খুব আনন্দ হচ্ছে।আবার একি সাথে এই নগরবাসীর জন্য কষ্টও হচ্ছে।আমি বুঝি না,আমি ভেবে পাই না এই ইট পাথরের শহরের মানূষগূলো কেনো আমাদের মত সংঘবদ্ধভাবে বাচঁতে পারে না,বাচঁতে চায় না।লোকে আরো বলে মানুষ বূদ্ধিমান প্রানী।কিন্তু আমি ভাবি আমরা ওদের থেকে বুদ্ধিমান আর সংঘবদ্ধ।আমাদের মধ্যে নাই কোন ভেদাভেদ,নাই হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান।আরো নাই পাহাড়ি,সাঁওতাল অথবা কোন উঁচু জাত আর নিচু জাত।আমরা শুধুই পিপঁড়া।আমি জানি না কবে এই মানুষগূলা নিজেরে 'মানুষ' পরিচয় দিয়া গর্ব করবে,চিৎকার দিয়া উঠবে?আমি সত্যি জানি না!!

Comments

    Please login to post comment. Login