৩৬
মহাত্মারা কেমন ছিলেন
কে কেমনি মহৎ কত
হয়তো আমার পিতার মতো।
চলে-বলে কেমন ছিলেন
কে কেমনি নম্রনত
হয়তো আমার পিতার মতো॥
তাদের যাপন কেমনেতে
হয়েছিল এই ভবেতে
ধর্মকর্ম-সত্য-আদর্শেতে
মিথ্যা দলে যেত—
হয়তো আমার পিতার মতো॥
সাধন-শোধন-আরাধনে
মগ্ন কিবা থাকত বেশি
সৃষ্টিসেবায়—স্রষ্টাকে ভালোবাসি।
নিষ্ঠা-নৈষ্ঠিক-আচরণে
নিরপেক্ষ—নিখুঁত বেশি
সৃষ্টিসেবায়—স্রষ্টাকে ভালোবাসি॥
হয়নি হয়তো এমন কিছু
তাদের হাতে কর্মনিচু
ভুলেগোলে হলে তুচ্ছু
মরত দুঃখে শত—
হয়তো আমার পিতার মতো॥
২৬ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৩৭
কবরস্থানে
এখানে না এলে বুঝতে পারে কে
জীবনের মানে।
সসম্মানে
এখানে দাঁড়িয়ে পল-দু-পল নীরবতা
করে দেখ মনে॥
এই যে দালানবাড়ি—বড় বড় ইমারত
এই যে সুখের সংসার—ধনজনের মহব্বত
কিছুই কি হবে সঙ্গী কালকের যাত্রাক্ষণে?
কবরস্থানে॥
ক্ষুদ্রকার
চরকার মতো ঘুরে আসতে জীবন
পলকে পার।
বেসুমার
হয়েছে যা ভারী হিসেবের খাতা
বহানো ভার॥
ছোট্ট এ পরিসরে যা কিছু হয়েছে উপার্জন
কী জানি কী হতে পারে হাসি কিবা ক্রন্দন
বড় ডরে আছি হিসাবনিকাশের লেনদেনে—
কবরস্থানে॥
২৭ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৩৮
বাবার কবরের পাশে যেন আমার কবর হয়
মার ভালোবাসাও সেখানে পেতে পারি নিশ্চয়?
জীবদ্দশায় যে-ভালোবাসার ছোঁয়া কভু পাইনি
মৃত্যুর পরে দেখতে চাই তার রূপখানি॥
জন্ম থেকে ছুটতে ছুটতে সাত সমুদ্র পার
এপার থেকে হাতছানি দেখা যায় না আর
বিচ্ছেদের বিন্দু দুঃখ সিন্ধু সুখের সমান নয়—
বাবার কবরের পাশে যেন আমার কবর হয়॥
অভিমানের বেড়াজালে ভেঙেছিল যেই মন
ক্ষমা নেই হয়তো যত করি আল্লাহনাম জপন?
আমার ঈশ্বর আমার মাতাপিতাতে জানি
মাতাপিতার চরণে কিবা আমার জান্নাতখানি॥
ওপার গিয়ে যদি পাই তাদের স্নেহের পরশ
এপারের সমস্ত বিরাগ মুছে বন্ধন হবে সরস
এতটুকু প্রার্থনা তোমার দরবারে প্রভুদয়াময়—
বাবার কবরের পাশে যেন আমার কবর হয়॥
২৮ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৩৯
মাত্র এসেছি যাপন হয়নি অধিক
আবার যাওয়ার চলছে প্রস্তুতি!
মাত্র বসেছি জিরাইনি খানিক
হইচই পড়ে গেল নিত্যনিতি!
বাঃ বাঃ বাঃ লা-জবাব তুমি
জবাব নেই তোমার রচন আমি
ভাঙাগড়ার গ্রন্থন আশ্চর্য নিয়তি॥
কী পরিপাটি সাজানো কারখানা
এসে দেখি কী সুন্দর আয়োজন!
চলছে কারে করতে বরণবন্দনা
আমায় ঘিরে এত কী প্রয়োজন!
কান্নার ভেতরে বলছি—শুনেনি
তারপর হাসছি কী আর কাঁদিনি
এবার ভবের কান্না আমার প্রতি॥
২৯ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৪০
ভেঙে যাবে হাটের মেলা
ভেঙে যাবে রঙের খেলা
ভেঙে যাবে দেহের ভেলা
মাঠেঘাটে নামবে কুয়াশা॥
পড়ে যাবে যাওয়ার গোল
কার আগে কে পাবে কূল
কার আগে কে হয় মকবুল
লেগে যাবে কী ধুমধাড়াক্কা॥
খোলা হবে কাজের খাতা
দেখা হবে প্রাপ্যযোগ্যতা
নিঃস্ব না বিশ্ব—না যা তা
লিখা হয়েছে আমলনামা॥
এখানে যে রাজার রাজা
ওখানে সে কাটবে সাজা
শেষ হলে সব ঘষামাজা
বন্ধ হবে চিরবেচাকেনা॥
২৯ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম