দক্ষিণ আমেরিকার এক তামাক ক্ষেতে কৃষ্ণাঙ্গ দাসরা মাঠে কাজ করছে, তারই সাথে সবাই সুরে সুর মিলিয়ে একসাথে গান গাইছে—
The captain don’t like me
Won’t allow me no show
Well, work don’t hurt me
Don’t care where in the world I go
Work don’t hurt me
Like the early rise
Well, work don’t hurt me
But that’s the thing that hurts my pride
ইংরেজ শাসন তখনও প্রায় দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। আফ্রিকা থেকে বন্দি করে এইসব কৃষ্ণাঙ্গ দাস, ইংরেজরা জাহাজে করে নিয়ে আসতো। ভৃত্য হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে, এইসব দাসদের নিলামে দাম হাঁকিয়ে কিনে আনা হতো। বন্দি হিসেবে মালিকের যে কোনো আদেশ মানতে তারা বাধ্য থাকত। কারণে-অকারণে তাদের উপর চলানো হতো আমানবিক নির্যাতন।
কলোনিয়াল স্টেইট গভর্নর হিসেবে ভার্জিনিয়া স্টেইটে সেসময় নিযুক্ত ছিলেন, ৪র্থ আর্ল অফ ডানমোর, জন মুরে। জনের ঠোঁটে একটা চুরুট, এসময়টাতে প্রায় প্রতিদিন খেতের থেকে ভেসে আসা গান আয়েশ করে শোনেন। আয়ারল্যান্ডের বংশভুত জন, ভীষণ সঙ্গীত অনুরাগী। গত দেড়শো বছরে আফ্রিকান এই দাসরা কিন্তু ইংরেজি ভাষাটা পুরোপুরি শিখে ফেলেছে, গানও গাইছে ইংরেজিতে। তাই গান বুঝতে জনের কোনো আসুবিধা হচ্ছে না, তিনি বুঝতে পারেন এগুলো: ‘ওয়ার্ক সং’। কিন্তু অন্যান্য ওয়ার্ক সং বা ফোক গান থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের গাওয়া মাঠের গান একদমই আলাদা রকমের।
ওয়ার্ক সং সাধারণত কাজের গতিতে দ্রুততা আনার জন্য সবাই একসাথে তালে তালে গেয়ে থাকে। কৃষ্ণাঙ্গদের গানগুলোতেও সে বিষয়টা আছে তো বটেই, তার সাথে সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে তাদের দাসত্ব জীবনের কষ্টের কথা। গানগুলোর সুর-তাল-লয় সবই ভিন্ন ধাঁচের। গতানুগতিক ইংলিশ বা আইরিশ ফোক গানগুলোর মতো নয়, কোনোভাবেই ক্লাসিক্যাল বা অপেরা ধাঁচের তো নয়ই। এইসব গানের সুর নিশ্চয়ই তাদের আদি বসতি আফ্রিকা থেকে ধার করা।
সন্ধ্যা প্রায় গড়িয়ে এলো, এসময় জন সাধারণত বাগানবাড়িতে থাকেন না, ইংলিশ কলনিতে ফিরে যান। যদিও একটা গোটা বাংলো তার জন্য সবসময়ই সুসজ্জিত থাকে কিন্তু কখনও থাকা হয়নি রাতে। আজ কী মনে করে যেন থেকে গেলেন।
ভালোই হলো, কাল খুব সকালে এমনিতেই বন্দরে আসতে হতো। আফ্রিকা থেকে তিনটি কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের জাহাজ ভিড়বে জেমসটাউন বন্দরে। এদের প্রায় সবাই এখানে তুলা, তামাক কিংবা চা বাগানে কাজ করবে। অল্প কিছু দাস নিলামে উঠবে এইবার। পরে এই জাহাজগুলোই আবার ইংল্যান্ড ফিরবে তামাক বোঝাই করে।
নদীর নামে শহরের নাম রাখা হয়েছে। দেড়শো বছরেরও আগে ব্রিটিশ এক এক্সপ্লোরার, জন স্মিথ এই নদী আবিষ্কার করেন। নদীর নাম দেন, ‘জেমস’, আর তার পার্শ্ববর্তী এলাকার নামকরণ করেন, ‘জেমসটাউন’।
জন মুরের বাংলোটা একদম জেমস নদী ঘেঁষেই। এক পেগ হুইস্কি হাতে জন তার বারান্দায় বসে প্রকৃতি উপভোগ করছেন, আর যেন ফিরে গেলেন দেড়শো বছর আগে।
ইংরেজ বসতির আগে, এই অঞ্চল রেড ইন্ডিয়ানদের অধ্যুষিত এলাকা ছিল। নিরীহ রেড ইন্ডিয়ানদের হটিয়ে শক্তিশালী ইংরেজ বাহিনী সহজেই পুরো ভার্জিনিয়া দখলে নিয়ে আসে। জন স্মিথের পরিকল্পনায় দ্রুত ভার্জিনিয়ায় ইংলিশ কলোনি গড়ে উঠে।
রেড ইন্ডিয়ানরা আলাদা কয়েকটা ট্রাইবাল দলে ভাগ হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের আধুনিক অস্ত্রের অভাব থাকলেও, সাহস ছিল প্রচণ্ড। এইসব আদিবাসী দলগুলো তির-ধনুক আর বল্লম দিয়ে আচমকা আক্রমণ করে বসত। এদেরকে ইংরেজ বাহিনীও রীতিমতো ভয় পেত। একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় ইংরেজরা সবসময়ই সুসজ্জিত সৈন্যবহর নিয়ে বের হতো।
একদিন এরকমই এক বহর নিয়ে জন স্মিথ যাচ্ছিলেন, কলোনি করার জন্য নতুন একটা জায়গার খোঁজে। পথে যা ঘটার ঠিক তাই হলো। রেড ইন্ডিয়ান পাওহাটান ট্রাইব তাদের আক্রমণ করে বসে। শিকারি তির-ধনুকের কাছে অস্ত্র-গোলাবারুদ হার মানল সেদিন। জন স্মিথের দলের প্রায় সবাই একে একে প্রাণ হারালো।
এবার জন স্মিথের পালা, জন তার চোখের সামনে নিশ্চিত মৃত্যু দেখতে পায়। ট্রাইবের রাজা তার বল্লম উঁচু করে তাকে মারতে যাবেন, ঠিক তখনি কোথা থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে, জন স্মিথের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাধা দেয়।
ট্রাইবের রাজকন্যা—পোকাহন্তাস, কিছুতেই তাকে মারতে দিবে না। রাজা তার আদরের মেয়ের সব কথা রাখেন, জন স্মিথের প্রাণ ভিক্ষা দিলেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, পরবর্তীতে জন স্মিথ, রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে শান্তি চুক্তি করেন, এবং তাদের নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখার অংশ বুঝিয়ে দেয়া হয়। যদিও সরল রেড ইন্ডিয়ানরা তখনও বুঝে উঠতে পারে নাই, শুধু ভার্জিনিয়া না, পুরো আমেরিকার প্রকৃত অধিবাসী তারাই। সে অর্থে, আমেরিকা নতুন করে আবিষ্কার করার কিছু নেই, কারণ সেখানে আদিবাসীদের বসতি ছিল অনেক আগে থেকেই... যাই হোক সে অন্য গল্প!
একসময় জন স্মিথ, পাওহাটান ট্রাইবের রাজাকে অনুরোধ করেন, এগারো বছরের পোকাহন্তাসকে সুশিক্ষায় বেড়ে ওঠার জন্য ইংলিশ কলোনিতে এসে থাকার জন্য। রাজা রাজি না থাকা সত্ত্বেও পোকাহন্তাস রাজি হয়। ইংলিশ কলোনির সবাই তাকে সসম্মানের সাথে গ্রহণ করে।
পোকাহন্তাস ছিল অতি বুদ্ধিমতি, দ্রুতই সে ইংলিশ ভাষা শিখে নেয়। দুই পক্ষের অবস্থার আরও উন্নতি হয়। জন স্মিথ ভার্জিনিয়া থাকা অবস্থায় পরবর্তী অনেক বছর রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে বড়ো কোনো ঝামেলা হয় নাই। এমনকি সেসময় পর্যন্ত, সেখানে দাসপ্রথাও শুরু হয়নি। এরও প্রায় এক দশক পরে আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ধরে আনা শুরু হয়।
পোকাহন্তাসের বয়স যখন ১৭, ভার্জিনিয়ার কলোনিয়াল গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হয় জন রোল্ফ। ইংলিশ কলোনিতেই তাদের দুজনের দেখা হয়, আর প্রথম দেখাতেই প্রেম।
রাজা জানতে পেরে, প্রথমবারের মতো মেয়ের ইচ্ছাতে আপত্তি তোলেন। কিন্তু একসময় রাজা বুঝতে পারেন, তার মেয়ে এই জন রোল্ফের জন্য পাগল। তখন বাধ্য হন মেনে নিতে।
কিন্তু মেনে নিতে পারেননি জন স্মিথ। স্বেচ্ছায় দেশান্তরিত হন তিনি, ভার্জিনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় নেন। ধারণা করা হয়, জন স্মিথ তার প্রাণ রক্ষাকারী পোকাহন্তাসকে ভালোবাসে ফেলেছিলেন, কিন্তু বয়সের অনেক পার্থক্যের কারণে কখনও বলতে পারেননি।
জন রোল্ফের সাথে পোকাহন্তাসের বিয়ে হয়। গভর্নরের স্ত্রী হিসেবে প্রথম কোনো রেড ইন্ডিয়ান সম্মান পায়।
এদিকে ভার্জিনিয়াতে নানা ধরনের শস্য উৎপাদনের চেষ্টা চলছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু কোনো কিছুরই ফলন তেমন ভালো হচ্ছিল না। এই নিয়ে জন রোল্ফের দুশ্চিন্তার কোনো শেষ ছিল না। পোকাহন্তাস তার স্বামীকে পরামর্শ দেয়, তামাকের চাষ করার জন্য। কিন্তু সে চেষ্টা করার পরও সবাই যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিচ্ছিল, পোকাহন্তাস তখন রেড ইন্ডিয়ান ট্রাইবের চাষের গোপন নিয়মগুলো শিখিয়ে দিলো। বেশ ভালো ফলন হলো। আর সেসময় থেকেই ভার্জিনিয়ায় শুরু হলো ব্যাবসায়িকভাবে তামাক চাষ।
কিন্তু নতুন আরেক সমস্যা দেখা দিল! মাঠে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত চাষি খুঁজে পাওয়া ছিল খুব মুশকিল। আর তখন থেকেই শুরু হয় আফ্রিকা থেকে কালো মানুষ ধরে আনা। শুরু হয় দাসত্বের কালো অধ্যায়।
জন রোল্ফ আর পোকাহন্তাস, বেশ দাপটের সাথে ভার্জিনিয়া পরিচালনা করে অনেকদিন। স্বামীর চাকরির সুবাদে ইংল্যান্ড পাড়ি দেয় পোকাহন্তাস। সেখানেও সবাই তাকে সাদরে গ্রহণ করে। জংলি রাজকন্যার জীবন এভাবে পালটে যাবে—তা কেউ ভাবেনি।
একসময় আবার ভার্জিনিয়া ফিরে যেতে চায় পোকাহন্তাস। স্বামী জন রোল্ফ রাজি হন। কিন্তু ভার্জিনিয়ার উদ্দেশ্য রওনা হওয়ার ঠিক একদিন আগে মরণব্যাধি এক জ্বরে আক্রান্ত হয় পোকাহন্তাস। মাত্র ২১ বছর বয়সেই পোকাহন্তাস মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পোকাহন্তাসের আর ভার্জিনিয়া ফিরে আসা হয়নি।
জেমস নদীর তীরের বাংলো বারান্দায় বসে জন মুরে দেড়শো বছর আগের জন রোল্ফ, জন স্মিথ আর পোকাহন্তাসের কথাই ভাবছিলেন।
এখন অনেক রাত, ঘুমানোর আগে আরেক পেগ হুইস্কি নেবেন কি না চিন্তা করছেন। ঠিক সেসময় কাছেই কোথা থেকে যেন আবার গান গাওয়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে—
I can’t sleep at night
I can’t eat a bite
’Cause the woman I love
She don’t treat me right
She makes me feel so blue
I don’t know what to do
Sometime I sit and sigh
And then begin to cry
’Cause my best friend
Said her last goodbye
There’s a change in the ocean
Change in the deep blue sea, my baby
I’ll tell you folks, there ain’t no change in me
My love for that woman will always be.
এটা কোনো ওয়ার্ক সং নয়, এই গান সম্পূর্ণ আলাদা আমেজের। বড়োই করুণ এই সুর, জনের চোখ ভিজে উঠে!
জন এর আগে এরকম করুণ গান আগে শুনেছেন কি না, তা মনে করতে পারলেন না। তিনি একজন সেন্ট্রিকে ডেকে পাঠালেন, তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এত রাতে কে গান গায়?”
সেন্ট্রি উত্তর দিল, “আর বলবেন না স্যার, দিন নাই রাত নাই, কিছু নিগ্রো ক্রীতদাস সারাক্ষণ গান গায়। আমি বুঝি না, সারাদিন এই হাড়ভাঙা কাজ করে এরা গান গাওয়ার এই শক্তি পায় কই?”
জন বিরক্তি চেপে জিজ্ঞাসা করলেন, “গান গাওয়ার শব্দ কোথা থেকে আসছে?”
“বাংলোর পিছনের দিকে ওদের সেল। মাঠের কাজ শেষ হলেই ওদেরকে আবার জেলে বন্দি করে রাখা হয়। আপনি খালি হুকুম দেন স্যার, যে ব্যাটা গান গাচ্ছে তাকে ধরে এনে এমন চাবুক পেটা করবো...কেউ রাতে তো দূরে থাক, দিনে কাজের সময়ও গান গাওয়ার সাহস করবে না আর কোনোদিন।”
জন একটু বিরক্তি নিয়েই বললেন, “আহা, তোমাকে কি এত কথা আমি বলতে বলেছি?”
“জি না, সরি স্যার।”
“যাও, যে এখন গানটা গাইছে, তাকে আমার সামনে হাজির কর...এখুনি!”
সেন্ট্রি ছুটে বেরিয়ে আসে বাংলো থেকে। সোজা সেলের দিকে রওনা দেয়। মনে মনে সে ভাবে, অনেকদিন কাউকে চাবুক পেটা করা হয় না। বড়ো সাহেবের হুকুমে আজ বেশ হাত সাফাই হবে, উনি বেশ চটে আছেন মনে হচ্ছে। তার বেশ খুশিখুশি লাগছে।
লিকলিকে গড়নের এক কৃষ্ণাঙ্গকে জনের সামনে হাজির করানো হলো। তার হাতপায়ে বেড়ি লাগানো, সেগুলোর ভারে ঠিকমতো দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছে না। তার উপর ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে।
সেন্ট্রি হাসিমুখে বলে, “মাই লর্ড, কয় ঘা চাবুক মারবো?”
জন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সেন্ট্রিকে বলেন, “তুমি এর হাতপায়ের বেড়ি খুলে দিয়ে, এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও!”
সেন্ট্রি থতমত হয়ে বেড়ি খুলতে শুরু করে। আবার একটু হাসিহাসি মুখ করে বলে, “আমারও কিন্তু এদের গান গুলো ভালোই লাগে...” এই কথা বলতে গিয়ে জনের রক্তচক্ষুর চোখাচোখি হয় তার। সেন্ট্রি ভয় পেয়ে যায়! সে বুঝতে পারে, জন বেশ খেপে আছেন আসলে তারই উপর। আর কথা না বাড়িয়ে, বেড়ি খুলে দিয়ে সে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি সটকে পড়ে।
জন ক্রীতদাসকে জিজ্ঞেস করে, “কী নাম তোমার?”
ক্রীতদাস ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়, “কুন্তাকিন্তে।”
“কি? কুন্টা...” জন নামটা উচ্চারণ করতে চেষ্টা করে, কিন্তু পেরে উঠে না ঠিক। সে আবার ক্রীতদাসকে বলে, “একটু আগে কী গান গাইছিলে?”
“আমাদের দুঃখের গান, মাই লর্ড। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।”
“হুম...” বলে, তার ইজিচেয়ার থেকে উঠে ক্রীতদাসের কাছে এলেন। ক্রীতদাস তখন থরথর করে কাঁপছে। জন তার পরনের লং কোট খুলে ক্রীতদাসের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, “এটা পরে নাও।”
ক্রীতদাস হাত বাড়াতে সাহস পাচ্ছে না দেখে, জন তাকে সেটা গায়ে পরিয়ে দিতে সাহায্য করল। তারপর ঘোষণা করার মতো করে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, “যাও, আজ থেকে তোমার নাম, গায়ক ফ্রাঙ্ক জন্সন।”
সকাল গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত সময় লাগলো জাহাজ আনলোড করতে। ক্রীতদাসদের নিয়ে যে যার গন্তব্যে রওনা হয়ে গেছে। আফ্রিকা থেকে আসা এইসব ক্রীতদাস, দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রীতদাস। প্রথম শ্রেণির দাস, আফ্রিকান-আমেরিকান, দেড়শো বছর ধরে আমেরিকায় পৈতৃকসূত্রে যুগেযুগে এরা ক্রীতদাস হিসেবেই জন্ম নেয়। ইংরেজি ভাষা জানা ক্রীতদাস!
কাজ বেশ দ্রুতই শেষ হয়েছে বলা যায়, কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। কাল থেকে তামাক লোড হবে। জাহাজের ক্যাপ্টেন আর তাদের নাবিকরা পুরো দুইদিন বিশ্রামের সময় পাবে। রাতে সবাইকে তার বাংলোতে খাবারের দাওয়াত দিয়ে জন ফিরে আসেন। এই পুরোটা সময় জন কেমন একটু অন্যমনস্ক ছিলেন, কাল রাতের গান আর ফ্রাঙ্কের আবির্ভাব তাকে বেশ নাড়া দেয়।
রাতে নৈশভোজের শেষে ফ্রাঙ্ককে আসতে বলেন তিনি। আগে থেকেই ফ্রাঙ্ককে বলে রাখা হয়, সাথে করে আরও কয়েকজন গায়ককে নিয়ে আসতে। ফ্রাঙ্কসহ মোট সাতজন পরিবেশন করবে। জন আগে থেকেই সবাইকে একটা করে ইংলিশ কোট দেন, পরিবেশনার সময় গায়ে দেয়ার জন্য। এরমাঝে একটা বাচ্চা ছেলেও আছে, কোটটা তার হাঁটু ছাড়িয়ে গেছে। তার হাতে আবার একটা বড়ো খাবারের থালা, এটাই তার বাদ্যযন্ত্র!
নাবিকদের সৌজন্যে নৈশভোজে ব্রিটিশ কলোনি থেকেও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আসতে বলেন জন। বিশাল ভোজের পর সবাই যখন পানীয় নিয়ে বসেছে। জন তখন সবার উদ্দেশ্যে বলেন, “লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলমেন, আজকে রাতে আপনাদের মনোরঞ্জনের জন্য গান গাইতে আসছে, ফ্রাঙ্ক জন্সন অ্যান্ড দ্য বয়েজ।”
সবাই একসাথে সজোরে হাততালি দেয়া শুরু করে, কিন্তু ফ্রাঙ্ক ও তার দল যখন একে একে আসতে লাগলো, তখন হাততালি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সবার মধ্যে একটা হালকা গুঞ্জন ওঠে। জন সবাইকে ইশারা করে থামতে বলেন। ফ্রাঙ্ক শুরু করে অন্যরা তাকে অনুসরণ করে। কেউ গান গাচ্ছে, কেউ শুধু তালে তালে মুখে আওয়াজ তুলে যাচ্ছে, বাচ্চা ছেলেটি কৌশলে থালাটায় আঘাত করে বিভিন্ন রকম তাল দিয়ে যাচ্ছে। ফ্রাঙ্ক ও তার দল একটা গস্পেল ব্লুজ গান ধরে—
Be ready when He comes, be ready when He comes
Be ready when He comes, oh Lord
He’s coming again so soon
Jesus is coming to this world again
Coming to judge the hearts of men
Don’t let him catch your heart filled with sin
He’s coming again so soon
Be ready when He comes, be ready when He comes
Be ready when He comes, oh Lord
He’s coming again so soon
জন তার চোখের সামনে কী ঘটছে, বুঝে উঠতে পারেন না। তবে এরকম কিছু তিনি কেন, কোনো ইংরেজ আগে শুনেছে কি না সন্দেহ।
অতিথিদের কেউ কেউ দ্রুত বেরিয়ে যায়, কেউ অসম্মতিতে মাথা নাড়ছে। কালোমানুষদের গানের জন্য এখনও তারা প্রস্তুত নয়। সেটা মেনে নেয়ার মানসিকতা তখনও তৈরি হয়নি।
জন অবাক বিস্ময়ে অনবদ্য এক নতুন ধরনের গান শুনছেন। কালো মানুষের নীল গান!