পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

‘রৌজা’ গীতিকবিতা পর্ব (১০)

৪ জুন ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

৪৬ 

কী সুন্দর করে সাজালে খোদা বিশ্বরে 

আমারে করলে কত কত মহব্বত। 

কী নুরালা আছে আরও তোমার ঘরে 

         আমি যে করতে পারি না অনুভব॥

 

এত জ্ঞানহীন আমারে করলে 

         আমি বুঝেও বুঝি না ছলছলে 

দেখেও দেখি না ভালো মনে ভালোরে 

মন্দ আমায় গ্রাস করছে অনবরত॥ 

 

‘হায় হায় হায়’ করছে সঙ্গী আমায় 

সব সময় চলছি কুপথ অবলম্বনে। 

তুমি যে তবু তোমার কল্যাণী ছায়ায় 

         আগলে রাখ আমে কত দয়াদানে॥ 

 

এ সম্মান কী—কী বুঝি আমি 

         হতে পারিনি যখন রত্ন দামি 

রতনের মর্যাদা জহুরি বুঝতে পারে 

রতনের কারবারে যার সিদ্ধ হস্ত॥ 

                  ৩১ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৪৭ 

দিনশেষে দিলে কেন এ চেতনা 

         কিছুই যে বুঝি না বিভু বুঝি না! 

এ দায়ভার কেমনে যে করি বহনা 

কিছুই যে জানি না বন্ধু জানি না॥ 

 

         অভাবের বেড়াজালে আটকায় 

অধমে রাখলে ধনমোহমায়ায় 

         এখন যদি বল ‘তাল-সুর চাই’ 

বেতাল বাঁশির সুর ফিরাই কী মনা॥ 

 

মনহীন জ্ঞানহীন হীন হীনে রাখি 

         অসময়ে ডাক দিলে মেলতে আঁখি!

কী যে করি উপায় হাতেকলমে শিখি 

নিরুপায় হয়ে ভাবছি বসে করি কী॥ 

 

         আজ্ঞাবাণী শুনছি গভীর স্বপনে

অস্থির হয়ে আছি নিগূঢ় ভাবনে 

         জড়তা ঘুচুক তবে বাকি জীবনে

এ বেশ—রাজবেশ ত্যাগী হই নির্জনা॥

                  ৩১ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৪৮ 

যখন আমি গভীর মনোযোগে শুনি 

শুনতে পাই মর্মোপদেষ্টার আদিষ্টবাণী 

         আমার জন্যে হয়েছে যা নির্দিষ্ট পারী 

তার বেশি চাওয়া হলে জিন্দেগি ভারী॥ 

 

         ওজন যত বাড়বে তত কঠিন হবে বহন

         কথাটি না বুঝলে চলার পথে কষ্ট ভীষণ 

জীবন তো এক মহা ছিদ্র—বহুল সুরেসুরি 

         যেদিক ফুঁকি সেদিক বাজবে অপূর্ব বাঁশুরি॥ 

 

ক্ষুদ্রলতা-পথ-পর্বত যে যার কর্তব্যরতক 

একটা মক্ষী হয়নি সৃষ্টি অনাবশ্য-অনর্থক 

         আমার কাজে আমি বড়—মৌচাকে মধুকরী 

সবার রাজ্যে সবে শ্রেষ্ঠ বোঝা বড় দরকারি॥ 

 

         এখানে অরণ্যবাস কেউ নয় রাজাধিরাজ

         মানুষ-অমানুষ মিলেমিশে প্রাণের এক সমাজ 

সবার জন্য সবার দরদ থাকা চাই জড়াজড়ি 

         হৃদ্যতা ভুলে যেন না হয় কিছু জোরাজুরি॥ 

                  ৩১ ভাদ্র, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৪৯ 

মন বলে, নাই...মন বলে, হায়...

মন বলে, কোথা তবে মমতার কুলায়। 

         মন বলে, এ...মন বলে, সে...

মন বলে, আমি কেবল ভাবনার প্রচ্ছায়!। 

 

ভালো লাগে না, ভালো লাগে না, 

ভালো লাগে না এত উঁচুনিচু। 

         ভালো লাগে না, ভালো লাগে না,

ভালো লাগে না অনেক কিছু। 

এই হাট, এই মাঠ, এই আকাশ 

         সর্বসব দোলছে স্বার্থের দোলায়॥

 

মন বলে, কেমনে...মন বলে, বুঝে নে...

মন বলে, লালপাহাড় থেকে যোজনযোজনে। 

         মন বলে, দু...মন বলে, সু...

মন বলে, ভালোমন্দ সব নিজের কারণে!। 

 

ভালো হোক, ভালো হোক, 

ভালো হোক যত নিকৃষ্ট মান। 

         ভালো হোক, ভালো হোক, 

ভালো হোক সমস্ত অনিষ্টপ্রাণ। 

এই মায়ার গৃহ, এই মাটির স্নেহ 

         ছেড়ে যেতে হবে অজানায়॥ 

                  ১ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৫০ 

নিদারুণ সুরে ওঠছে কী ঝঙ্কারি 

আমার গহিন অন্তরে-রি-অন্তরি 

কার নূপুরের ব্যথার আহাজারি 

         ভেসে আসছে কানে আমারি॥ 

 

কী করুণ আওয়াজ—সকরুণ ধ্বনি 

         হাওয়ায় হাওয়ায় বাজছে শুনি 

         কোথা কে ধর্ষিতা বলছে চিৎকারি

         আল্লাহ তুমি ছাড়া কে রক্ষাকারী॥

 

‘বাঁচাও বাঁচাও’ ‘আল্লাহ আল্লাহ’ সব 

কে শুনে কার ডাক চারি দিকে রব 

কে বাঁচায় কারে ঘরে আগুন সবারি 

         জীবন যার বাঁচাতে ব্যস্ত দৌড়াদৌড়ি॥

 

দেখছে বিশ্ব আজ নিঃস্বদের খেলা 

         দেখছে মানবতা কী রূপরঙে উজালা

         এঘর জ্বললে ওঘর বাঁচে কেমন করি 

         সহজ কথাটা ভাবে কে—কার দরকারি॥ 

                  ১ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম