Posts

গল্প

বুড়ো বিয়ে করতে চায়

November 29, 2025

Md. Anwar kadir

11
View

বিকালবেলা বসেছিলাম বাসার সামনে এক কাপ চা নিয়ে। হঠাৎ কোথা আসলো কলেজ জীবনের বন্ধু সজল। 
তার আগমনে অবশ্য ভালোই লাগছে চা-টা একা খাওয়ার চেয়ে একজন সাথে থাকলে ভালো। আড্ডা দেয়া যায়। সে খুব অস্থির। এসেছে আরেক বন্ধু রেজার কাছে। তাকে ফোনে পাচ্ছেনা, তাই আমার এখানে চলে এসেছে। 
মনে হলো বড় কোন সমস্যায় পড়েছে। প্রথমে জিজ্ঞেস করাতে কিছু বলতে চায়নি। পরে নিজ থেকেই বলা শুরু করলো। আসলে তার বুড়ো বাবা বিয়ে করতে চাচ্ছেন। 
এটা নিয়ে সে অত্যন্ত বিভ্রান্তকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। লোকসমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে? তার একটা চাকরি আছে। অফিসের লোকজন কি বলবে?
তারপর বাড়ির পাশে একটা মসজিদ আছে যার সভাপতি ওর বাবা। সে কিভাবে বাড়ি থেকে বের হবে এটা ভাবতেই লজ্জায় চুপসে যাচ্ছে বেচারা। আমি ওকে নানা কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। 
আসলেও ওর শশুর বাড়ির লোকজন এ কথা শোনার পর তো নাকি ছি ছি করছে। আহা! বেচারা! এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছে। রেজার সাথে পরামর্শ করতে এসেছে, ওই বেটা ভালো পরামর্শ দিতে পারবে, এটা আমিও মানি। 
অভয় দিয়ে বললাম,"দোস্ত। শান্ত হও। একটু রেস্ট নেয়ার পর দরকার হলে আবার রেজাকে কল দিস। আর আমি আছি না? বসে একটা ভালো আইডিয়া খুজে বের করে ফেলবো। ইনশাআল্লাহ।"
সজলের মা মারা গেছে ছোটবেলায়। একটা ছোট বোন আছে তারও বিয়ে হয়ে গেছে। 
মুরুব্বি একা হয়ে গেছেন।
তিনি নাকি মেয়েও দেখে রেখেছেন ইতোমধ্যে । তিনিও একজন ডিভোর্সি, বয়স হয়েছে যথেষ্ট। হয়ত তারও একজন সঙ্গী দরকার। 
সজল জিজ্ঞেস করলো,"দোস্ত। বুড়োকে ১২০দিনের জন্য চিল্লায় পাঠায়ে দিই, কি বলিস?"
আমি হেসে বললাম,"দারুন আইডিয়া। তাহলে উনারও একা লাগবেনা।"
এরপর সে বললো" আচ্ছা! এমন কোন মেডিসিন কি আছে যেটা খেলে আর বিয়ে করতে মন চাইবেনা? অথবা পুরুষত্ব হারাবে?"
আমি তো মেডিসিন সম্পর্কে কিছুই জানিনা। জানলেও এমন কাজ করতে সাহায্য করতাম না।
যাইহোক, ওকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলাম,"নবীজি সা: যখন আয়েশা রা: কে বিয়ে করেন তখন তো আলী রা: উনার মেয়ের জামাই। তাতে কি উনাদের কোন সমস্যা হয়েছে?"
সে বিরক্ত হয়ে বললো,"এই জন্যই এই বিষয়ে তোর সাথে কথা বলতে চাইনি আমি। এটা কি আরব? এটা বাংলাদেশ, এখানে তুই যা খুশি করতে পারোস না।"
বললাম,"উনি খারাপ কিছু করতে চাচ্ছেন না। কিছু মানুষ থাকবেই যারা তোর সব কাজেই ভুল খুযে বের করবে৷ যে বুঝে সে এটা করবেনা।"
তারপর বললাম,"তুই নিজেকে উনার অবস্থানে রেখে চিন্তা করে দেখেছিস কখনো? সারাজীবন ছেলেমেয়েদের জন্যে উনি নিজের কথাও চিন্তা করেননি৷ আর সন্তান হয়ে তুই কি করেছিস? আর তুই নিজের স্বার্থটাই শুধু দেখছিস।"
সজল আমার দিকে তাকালো। বললো,"আরে ভাই৷ মানুষ কি বলবে?"
বললাম,"যার বিবেক আছে, সে কিছুই বললবেনা। বরং আরো খুশি হবে, তোর প্রশংসা করবে। আর যার বিবেক নেই, তাকে তো আমি মানুষই মনে করিনা। তার কথার গুরুত্বও নেই।"
সে বললো,"দোস্ত। আমাদের সম্পদের পরিমাণ এত বেশি না। আমাদের ভাই-বোনকে কি দিবে?আর পরের সংসারে সন্তান হলে কি দিবে?"
আমি একটু হাসলাম। 
তারপর বললাম,"তোর একটা জিনিস বুঝা দরকার। উনার সম্পদ উনার, তোর না৷ উনি যদি তোকে দেন অথবা মারা যান তখনই সেটা তোর হতে পারে। উনি তোকে খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছেন, এটাই কি কম?"
সে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,"কি বলতে চাস তুই?"
বললাম,"ইসলামে সকল সম্পদের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ উনাকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন। উনি নিজ থেকে তোকে না দিলে সেটাকে তুই কিভাবে নিজের মনে করিস?"
সে আবার জিজ্ঞেস করলো,"আর উনার কিসের অভাব যে বিয়ে করতেই হবে? তাও আবার এই বয়সে এসে?"
বললাম,"তুই কেন করেছিস?"
তারপর আবার বললাম,"তুই শহরে বউ নিয়ে থাকিস ভাড়া বাসায়। উনাকে সাথে নিয়ে যেতে চাস। কিন্তু উনি তো গ্রামে উনার পরিবেশে থেকে বাকিটা জীবন কাটাতে চান। উনাকে সঙ্গ দিবে কে?"
এরমধ্যেই রেজা কল দিয়েছে সজলকে। সে আমার দিকে তাকালো। 
আমি বললাম,"দোস্ত। এতটা স্বার্থপর হইস না। আজ বা কাল তো মরবি। তখন আল্লাহর সামনে দাড়াবি কেমনে? যে বাবা তোদের জন্য এতটা বছর কষ্ট করেছেন তার প্রতি তুই অকৃতজ্ঞ হইস না।"
সে কলটা কেটে দিয়ে বললো,"এই জন্যই তোর সাথে এই বিষয়ে কিছু বলতে চাইনি।"
তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে হেসে বললো," যাইহোক। তুই ঠিকই বলেছিস, দোস্ত।"
তারপর চকে গেলো সে।

Comments

    Please login to post comment. Login