৫১
ভাবি না কেন যে আমি
নগণ্য হয় হিরণ্যের চেয়ে দামি—
ভাবি না কেন যে আমি।
মাঠে মাঠে চরায় গরু সেজে রাখাল
রাধা বিনে কে চিনে ব্রজের গোপাল।
হাল চালায় বলরাম পায় সীতা
রামায়ণ রচে চোর—রত্নাকর দেবতা
বনবাসে রাম গেলে রাবণ হয় নামি—
ভাবি না কেন যে আমি॥
যা ভাবি তা কাজে আসে না
যা কাজের তা কখনো ভাবি না—
যা ভাবি তা কাজে আসে না।
কাছের রত্ন তুচ্ছ লাগে সর্বদা
দূরের পাথর রত্নচেয়ে দামি সদা।
বাইরের অপূর্বতায় মুগ্ধ হই সবে
অন্তরের স্নিগ্ধতা বুঝি কে কবে
কেনে পিতা ছাড়া পুত্র হয় জগৎস্বামী—
ভাবি না কেন যে আমি॥
২ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৫২
আল্লাহ আমায় করো না কারও করুণার নির্ভর
তার আগে নিভে দিয়ো আমার জীবনের প্রহর।
তবু যদি প্রাণের বায়ু চালাও হরদম
দুঃখদুর্ভিক্ষে যেন স্থির রাখ কদম
গ্লানির সুখ থেকে কষ্টের নির্মলাশ্রু অনেক প্রখর।
আল্লাহ আমায় করো না কারও করুণার নির্ভর॥
নত কর প্রভু বারবার করো তোমার কদমে মাথাটি
কারও দয়ায় ডুবিয়ে করো না ক্রীতদাসের জিন্দেগি।
এ দয়া নির্দয় থেকে বড় নির্দয় অরে
অতি বোঝা হয়ে দাঁড়ায় প্রাণের পরে
গঞ্জনার সঞ্জীবনী অমৃতচে ভালো বিষযন্ত্রণালহর।
আল্লাহ আমায় করো না কারও করুণার নির্ভর॥
৩ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৫৩
ধন্য কর ধন্য কর ধাতা
যারা হামেশ মার খাচ্ছে যেথা।
পূর্ণ কর পূর্ণ কর অপূর্ণতা
সর্বহেরে নিঃস্ব হচ্ছে কোথা॥
দাও দাও রাজ্য ফিরে তাদের
বাস্তুহারা হয়েছে যে উদ্বাস্তুদের
ভাণ্ডারেতে নেই তোমার হ্রস্বতা—
পূর্ণ কর পূর্ণ কর অপূর্ণতা॥
গণ্য হোক গণ্য হোক তারা
নিজের ঘরে বেগানা আজ যারা।
বরণ্য হোক বরণ্য হোক সারা
জঘন্যতায় হেরে যাচ্ছে কারা॥
নারাজ হয়ে থেকো না আর তুমি
ভুল হতেও পারে মানুষ আমি
মানুষ আমরা—মানুষ বলে কথা—
ধন্য কর ধন্য কর ধাতা॥
৪ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৫৪
জগদীশ্বর হে
জগন্মন কেন এত নীরন্ধ্র যে?
কেন এত অকৃতজ্ঞ ও অপ্রসন্ন সে?
জগদীশ্বর হে॥
দুঃখকোনো সংকটে দেখা যায়
জানপ্রাণ দিতেছে সন্দেহ নাই
উদ্ধারপর কে তুমি চিনি নাই
ভালো হয় সরে দাঁড়ালে—
জগদীশ্বর হে॥
কেন এমন তবে
কেন হয় আসে না বুঝে?
বুঝি শুধু সবে ‘হামবড়া’ ভাবে—
কেন এমন তবে॥
আসমানে হয় যার অবস্থান
থাকে না তার আর মাটির টান
মাটিতে যার বাসস্থান
বিরক্ত বেশি তার ধুলাতে—
জগদীশ্বর হে॥
৫ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম
৫৫
আর কত আর সংঘাতে ধ্বংস হবে ধরা?
আর কত রক্তে রক্তিম হবে মাটিমৃত্তিকা?
জীবনভর খেয়েছে মার কারা? দুর্বলেরা!
জীবনভর এমনভাবে মার খাবে কি তারা?।
কত হবে নিরীহরা লাঞ্ছিত আর?
কত হবে হত্যা মানব ও মানবতার?
কেন এত রোষারোষি হানাহানি রক্তবাহা?।
কদিনের জিন্দেগি—কেন থাকে না স্মরণ?
কদিন আর কতক্ষণ থাকতে পারি বরং?
এতসব এসব কার জন্য—কীসের জন্য করণ?
এতসব কাজে এসেছে কার—আসবে কখন?।
তবে কেন, কী স্বার্থে এই লড়ালড়ি?
কেন, কী হাসিলে ধ্বংসের বাড়াবাড়ি?
কীসের এত পোদ্দারি? এত কীসের দাম্ভিকতা?।
এই আছি এই নেই—দুর্বলের এত বড়াই কী?
এই দেখি হারাতে বসেছে সবার বিবেকবুদ্ধি!
আজকে প্রভুর ঘরও নেই নিরাপদের সাক্ষী!
আজকে প্রভুর ঘরেও রক্তবন্যা বইতে দেখছি!।
মন্দির যদি হয় প্রভুর আরাধনালয়?
মসজিদ কি খোদার এবাদতখানা নয়?
বাবরিকে ঘিরে কেন তবে দাঙ্গাহাঙ্গামা খাড়া?।
এখানে কেন এই জাতীয় বিদ্বেষ বুঝছি না!
এখানে কেন যে সমতার বনিবনা হয় না!
ওখানে কার কেমন বসবাস কেউ জানি না!
ওখানে কার কোথায় স্থান? কোথায় ঠিকানা?।
তা হলে করছি কেন বিবাদদ্বেষ জারি?
মানুষে মানুষে মানুষের ব্যবধান তৈরি!
পূজা-অর্চনা-এবাদতে প্রভেদ কোনটে দেখাও-না?।
১০ আশ্বিন, ১৪২৪—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম