বিদেহীর আর্তনাদ

১১ জুন ২০২৪

শ্রাবন দেবনাথ

একটি মেয়েকে কতগুলো ছেলে শিয়াল-কুকুরের মতো ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে।চোখের সামনে একটি নিষ্পাপ প্রাণের ধর্ষণ হচ্ছে।হায়! আমি কি করবো,এখন কি করা উচিত,এইসব ভাবার আগেই,আমি গর্জে উঠি সেই কুকুরগুলোকে উদ্দেশ্য করে।এতে কাজ হয়,ওরা মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়।কিন্তু এগিয়ে আসতে থাকে আমার দিকে।ওদের আমার কাছে আসতেই দেখি ওদের কারো কারো হাতে রিভলবার, কারো কারো হাতে ছুরি।আমি বুঝে গেলাম,আমি এদের হাত থেকে রক্ষা পাবো না।এইদিকে আমার পা মাটিতে এঁটে আছে।পা নাড়াতে পর্যন্ত পারছি না।কিন্তু ভিতরে একটা যুদ্ধই বারবার চলছে, নিজে মরলেও সেই মেয়েটিকে আমাকে বাঁচাতে হবে।শেষ চেষ্টা করলাম,এক নিশ্বাসে যতটুকু পারি ফুসফুসে বায়ু নিয়ে ছুটলাম। আমার পিছনে সেই কুকুরগুলোও ছুটছে।আধ-অন্ধকারে ওদের নিশানা ঠিক হচ্ছিল না,ওরা আমাকে গুলি করছিলো কিন্তু একটাও ছুতে পারেনি।সেই অন্ধকারের শহর হতে ওদের অনেক দূরে নিয়ে এসছি।পাশে ঝাড় পেতেই অন্ধকারে লুকিয়ে পরলাম।সে যাত্রায় আমি বেঁচে গেলেও ঐ মেয়েটার আর কোনো খোঁজ আমি পাইনি।বৃদ্ধ লোকটি তার কথা এখানেই শেষ করলো।আমি বুঝে যাই,ভূতের কুয়াশা দিয়ে অন্ধকারের শহরের পৈশাচিকতা গুলো ঢেকে চলেছে এক গোষ্ঠী নরপিশাচ। নরপিশাচগুলো টেনে হিচড়ে নিয়ে আসে কত শত নারীকে,ধর্ষণ করে,আর হয়তো এখানেই পুঁতে ফেলে।শত শত নারী কতগুলো কুকুরের দৈহিক পিপাসার কবলে পড়ে অমানবিক নির্যাতন আর শেষে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে।
এই নরপিশাচ গুলোর জন্য কত শত বোন বাড়ি ফিরতে পারেনি।কত শত মা তার সন্তানকে শেষ বারের মতো খাওয়াতেও পারেনি।কত নির্মম নির্যাতনের শিকার ওনাদের হতে হয়েছে।এগুলো ভাবতে ভাবতে অজান্তেই চোখ থেকে জল গরিয়ে পড়তে লাগল।আমি জানি না আমি কি শুনলাম,কি জানলাম,শুধুই চোখের সামনে তাদের উপর হওয়া পৈশাচিক অত্যাচারের দৃশ্য ভেসে উঠছে।একদিকে ভিতরে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে।আর অন্যদিকে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নির্যাতিতার স্বজনের আহাজারির শেষ বিন্দু।সত্যিই তাহলে,তারা ছায়ামানবী নন,তারা সেই শত-লক্ষ বোনেরা,মায়েরা যারা আজও নিজেদের ন্যায় বিচারের জন্য আটকে আছেন।আজও তারা আর্তনাদ করছেন,সেই অপরাধের বিচারের জন্য যা রাতের আধারেই মিলিয়ে যায়,ভোরের আলোতে কখনোই আসে না।৭১" এ রাজাকার নামে নরপিশাচগুলো চলে গেছে।কিন্তু আমাদের নিজেদের ভিতরের নরপিশাচগুলো কি সত্যি চলে গেছে?নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে উত্তরের অপেক্ষায় অনুসন্ধানে। কিন্তু সেই অন্ধকারের শহরের ছায়ামানবীদের ন্যায়ের জন্য কিছু হলেও কি করতে পারি সেটা ভাবতে ভাবতেই চোখ লেগে যায়।ঘুম ভাঙ্গে আবার এক বিকট আর্তনাদে।ঘড়িতে ২ঃ১৭, সেই আর্তনাদ বারবার আমাকে জানান দিচ্ছিলো তাদের ন্যায় হবে তখনই যখন আর কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হবে না।আর কেউ ঐ পৈশাচিক দাবানলে জ্বলে মরবে না। আবার এক বিকট চিৎকার আর সব চুপ।শুধু চোখের সামনে চলতে থাকে সেই অন্ধকারের শহরের ছায়ামানবীদের আর্তনাদ।
প্রাণ থাকিতে দেহী খুঁজিয়া যায় শান্তি-সুখ,
দেহী বৃথা হেথা,
বিদেহীর শ্মশানে গড়িয়াছে তারা অত্যাচারীর দোযখ্।
অন্ধকারের শহরে হারায়ে চলিছে,
শত নব স্ফুটিত প্রাণ,
আদর বৃথা হেথা,
বঞ্চিত শিশু, হতে মৃত মায়েরও স্তন পান॥