Posts

সমালোচনা

এখানে শেয়ালমুখী ফুল হয়ে ফুটে আছো

June 11, 2024

MIZAN FARABI

গল্পের পর কবিতা আমার আগ্রহের শীর্ষে। তবে দৈঞ্চা কবিতার বই সংগ্রহ করি না। যা পড়ি বা সংগ্রহ করি এতে বাছাই বইয়ের তালিকাই বেশি। খুব বেছে বললে সাহিত্যে অগ্রগামী কিংবা সমসাময়িক যারা লেখায় এবং দেখায় সমৃদ্ধ ও এগিয়ে আছেন তাদের পড়তে ভালোলাগে, ঋদ্ধ হই। তেমনই গেলবার বইমেলা থেকে হৃদয় আন্দোলিত করা কবি কামরুজ্জামান কামু'র কবিতার বই নিয়েছি শৈল্পিক প্রকাশনী বৈতরণী থেকে। "এখানে শেয়ালমুখী ফুল হয়ে ফুটে আছো" গ্রামের পথে প্রান্তরে ফুটে থাকা ফুলটারে শিরোনাম করে বনাঞ্চল থেকে তুলে আনলেন বইয়ের প্রচ্ছদে, কবিতায়।

ব্লগে লেখালেখি কম পড়া হয়, তারচেয়ে কম পড়ি পিডিএফ, বইতেই আমার আনন্দ। তবুও কবিতা দেখলে কিছুটা আনন্দ নিয়ে ঢুঁ মেরে আসি। একবার কামরুজ্জামান কামু ভাইয়ের একটা কবিতা চোখে পড়লো— "আমাকে এবার পিছমোড়া করো"। এইটা আমারে কথায় ও ছন্দে আন্দোলিত করে খুব। ভাবায় তারচেয়েও বেশি। আমি এবার খুঁজে খুঁজে কামু ভাইয়ের কবিতা পড়তে শুরু করি। কবিতার আমার জীবনের অন্য আরো দশটার মতো একটা অনুষঙ্গ। 

রবার্ট ফ্রষ্টের— "স্টপিং বাই উডস অন অ্যা....... ইভিনিং" শিরোনামে একটা কবিতা আছে বেশ ইন্টারেস্টিং। এই কবিতার সাথে আমার পরিচয় খুব সম্ভবত ২০১৪ সালে। রুমের বড় ভাই ইংরেজীতে অনার্স পড়াকালীন তার বইয়ে চোখে পড়ে। এভাবে মাঝেমধ্যে চোখ বুলাতাম। মোটামুটি বই পড়া শুরু করি মাধ্যমিকের পরে। গল্প দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে কবিতায় আমার পথচলার একটা গতি হয়ে গেলো।

বাতিঘরে কিংবা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে কাঞ্চন ফুলের পাশ ঘেঁষে আমরা প্রায়ই নানান বিষয়ে আড্ডা দেই। ঘুরেফিরে কবিতা আমাদের আনন্দ দেয়। এ সময়ে অনেকের কবিতা, কথায়ই আড্ডা জমে উঠে। কয়েকদিন আগে ঢাকা বাতিঘরে আমি হুদা ভাইয়ের মুখে কামু ভাইয়ের ওই বিখ্যাত কবিতাটি পড়তে দেখে বেশ আপ্লূত হলাম। আলাদা একটা গাম্ভীর্য নিয়ে পড়া শুরু করলেন—

আমাকে এবার পিছমোড়া করো

চোখ বেঁধে ফেল প্রভু

আমি কোনোখানে কোনো মানুষের

হৃদয় দেখিনি কভু 

আমি শুনি নাই কম্পিত রাতে

কোনো প্রহরীর হাঁক

আজি বসন্তে কালো কোকিলের

তীক্ষ্ণ মধুর ডাক.......

শেষ হওয়া মাত্র বললাম, হুদা ভাই আবার পড়েন। পরে একটা মুসকি হাসি দিয়ে আরো ক'টা লাইন পড়লেন। হাতে দেখলাম "অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা" নামে একটা বই। সমসাময়িক অনেকের কবিতা এখানে সংকলিত। কবিতা পড়তে বলাতে উনি পাতা উল্টিয়ে কামু ভাইয়ের (আগের পড়া, পরিচিত) কবিতাটা পড়া শুরু করলেন।তারপর কবিতা নিয়ে দীর্ঘ আলাপে আগালাম।

সকালে চা খেতে বসে বইয়ের তাকে চোখ পড়লো কামু ভাইয়ের "এখানে শিয়ালমুখী হয়ে ফুটে আছো" বইটার দিকে। পড়তে পড়তে নানান রকমের ভাবনা রেখা টেনে গেল। সবচেয়ে বেশি হারালাম গ্রামের পথে প্রান্তরে। শৈশবের নস্টালজিয়া ঘিরে ধরলো আমারে। প্রতিটা কবিতায়ই আলাদা ভাবনায়, জাগরণ তোলে, ঘুরিয়ে আনে। এই হলো কবিতার আনন্দ, কবিতার শক্তি।

কবিতা পড়ি, প্রেম প্রকৃতি ও দ্রোহের কবিতা। এমন কবিতা পড়লেই নিজের ভেতরে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়, এগিয়ে যাবার প্রেরণা পাই। মানুষের কাছে  পৌছানোর একটা তাগিদ অনুভব করি। মনে হয় যেন কবিতাই একজীবন বেঁচে থাকার আনন্দ। 

Comments

    Please login to post comment. Login