পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

‘রৌজা’ গীতিকবিতা পর্ব (১৬)

১৪ জুন ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

৭৬ 

প্রার্থক আমি তোমার বারে আল্লাহ 

করছি না নিজের ভালোর সুখকামনা। 

         না করছি সন্তানের মঙ্গলপ্রার্থনা

জগতে বজায় থাকুক শান্তিশৃঙ্খলা॥ 

 

         রক্ষা কর—করো পৃথিবীর ক্ষয় 

         ঘটছে—ঘটবে বিশাল বিপর্যয়, 

         তুমি রক্ষক আছ বলে সান্ত্বনা—

প্রার্থক আমি তোমার বারে আল্লাহ॥ 

 

আমার যেতে হবে—দিন বেশি নেই 

যাওয়ারই ডাক ভেসে আসছে কানে। 

         মুমূর্ষুর দোয়া কবুল হয় কি জানি নে 

সুখী হোক—সুখী করো বাস্তুহারা সবেই॥ 

 

         দেখি বিলীন হর পুরের পর পুর

         শুনি গভীর ঘুমে ভাঙনের সুর,

         সর্বহারাদের কী দরদভরা কান্না—

প্রার্থক আমি তোমার বারে আল্লাহ॥ 

                  ৩ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৭৭ 

হায় প্রভু! হায় প্রভু! 

         পৃথিবী আর কত—কী পরিমাণ নিঠুর হবু? 

                  হায় প্রভু! হায় প্রভু!

 

পিতার হাতে পুত্রের খুন 

         পুত্রের হাতে পিতা! 

ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের খুন 

                  স্বাভাবিক আজকের পৃথিবীটা!

         বাকি আর রইল কী তবু—

                           হায় প্রভু! হায় প্রভু!। 

 

আর কত! আর কত! 

         হৃদয়হীনের প্রেমের বাজারে প্রেমিকের হত? 

                  আর কত! আর কত! 

 

স্বামীর চক্রান্তে স্ত্রীর কতল 

         স্ত্রীর চক্রান্তে স্বামী!

প্রিয়ার চক্রান্তে প্রিয়ের কতল 

                  ছলনার হাটে মরছে প্রেমিকপ্রেমী!

         সাঙ্ঘাতিকতা আর বাড়বে কতটু—

                           হায় প্রভু! হায় প্রভু!। 

                  ৭ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৭৮ 

গেল রে গেল মনে হয় 

         দিন বেশি রইল না! 

ফেল রে ফেল হে ভাই 

         দুর্ভাগ্যের বেচাকেনা॥ 

 

ভেঙেচুরে এলে তুফান 

         আমার যদি থাকে না স্থান, 

ভেবে দেখ তোমার অবস্থান 

         অক্ষুণ্ন রইবে কি না। 

                  ফেল রে ফেল হে ভাই

         দুর্ভাগ্যের বেচাকেনা॥ 

 

অর্থের লোভে আত্মহারা 

         কে ভাবছ শুধু স্বার্থ? 

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’ 

         বুঝতে চাও কথাটার অর্থ॥ 

 

‘বুদ্ধি হলে নয়েতে হয় 

         না-বুদ্ধি নব্বইয়েও নয়’ 

‘পুরানে পুরোনো কথা কয় 

         আজকে ভাবা যায় না’ 

                  গেল রে গেল মনে হয়

         দিন বেশি রইল না॥ 

                  ১১ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৭৯ 

বিবেকবান কর খোদা তাদের 

         বিবেকহীন কাজ যারা করছে। 

স্থান কোথা এর দেখাও এদের 

         বেহেশতে যেতে নিজেও মরছে॥ 

 

জমেছে যে কী গ্লানির পাহাড় 

         দেখাও তারে উপায় কী তার, 

জান্নাতের সুখ তো অনেক দূরের 

         দোজখে হাবিয়া মরে তো কপটে॥

 

বোঝাও তারে—তাদের দরদ দিয়ে 

         পরের দরদ বুঝে না যে—যারা। 

নিজের হারাও—কিছু না হারালে 

         অন্যের দুঃখ বুঝবে না তারা॥

 

ধর্মের প্রতীকী বুকে আঁকি 

         কর্ম যারা করছে অধার্মিকী,

কোনো ধর্মের অনুসারী নয় এরা 

         স্বার্থহাসিলে গানধর্মের গাইছে॥

                  ১৩ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 
৮০ 

মা, আমার কপালে লাগাও শুভ্রতিলক 

মনের সমস্ত কালিমা দূর হোক নিমেষে। 

         মা, আমায় দোয়া কর দিব্য হোক চোখ 

সব সময় মনিবের পদছায়া দেখে সে॥ 

 

         সারা জীবনের অন্ধমনের সন্দ আমার 

দ্বন্দ্ব ভুলে প্রভুর বন্দনে ঝুঁকুক এবার, 

         তাঁকে ছাড়া যে গতি নেই বুঝুক মূর্খ 

         সফল হওয়া যায় না কোনো ছদ্মবেশে।

মা, আমার কপালে লাগাও শুভ্রতিলক 

         মনের সমস্ত কালিমা দূর হোক নিমেষে॥ 

 

আমায় কী আশায় আশান্বিত করে মা 

কে জাগায় মনে দেখা কেন সে দে না! 

         বল তবে কী আদবে নমিলে তাঁরে হাঁ 

পাওয়া যায় গোপন আশেকের ঠিকানা॥ 

 

         আমি পেতে চাই না আলোর আকাশ

যদি সেই সুবর্ণতায় না থাকে ওঁর বাস, 

         বিদায়কালে এ আশ্বাসে মনে পাক সুখ 

         ছিলেন তিনি সাথে আছেন ভালোবেসে।

মা, আমায় দোয়া কর দিব্য হোক চোখ 

         সব সময় মনিবের পদছায়া দেখে সে॥ 

                  ১৫ কার্তিক, ১৪২৫-মানামা, আমিরাত