বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম অন্যতম। এটি আইসিসি অনুমোদিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেট ভেনু হিসেবে পরিচিত। শুরুতে এই মাঠ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত ছিল, পরে নাম পরিবর্তন করে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম হয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এটি অবস্থিত এবং মাঠের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত।
চট্টগ্রামের মানুষের কাছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম একটি আবেগের নাম। এখানে নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম বেশি জেতে। আর চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমীরাও এটাকে বাংলাদেশের লাকি গ্রাউন্ড বলে মনে করেন। এই মাঠের দর্শক ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৯,০০০। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামটি ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন চট্টগ্রামের এম.এ. আজিজ স্টেডিয়াম ছিল প্রধান ক্রিকেট ভেন্যু । বর্তমান এটি ফুটবলের দিকে মনোনিবেশ করছে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের মধ্য দিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক জায়ান্ট স্ক্রিন, ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ড, প্রেসিডেন্ট বক্স, ফ্লাড লাইট, হসপিটালিটি বক্স, বিশাল ড্রেসিং রুম, মিডিয়া সেন্টারসহ আরও অনেক সুবিধা। স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকে দ্বিতল গ্যালারি এবং পুরো গ্যালারিতে আছে বিভিন্ন রঙের চেয়ার।
২০১১ বিশ্বকাপ এবং ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ ভেন্যুতে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের পর প্রতিবছর এখানে সব থেকে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
২০১১ বিশ্বকাপ উপলক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন করা হয়। সে সময় গ্যালারির এক পাশ দোতলা করে পুরো স্টেডিয়ামে প্লাস্টিকের চেয়ার বসানো হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই চেয়ারগুলোর বেহাল দশা হয়ে পরে। করোনাকালে মাঠে দর্শক প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই অবস্থাটা যেন বেশি খারাপ হতে থাকে। গ্যালারির কোথাও চেয়ার আছে কোথাও নেই, চেয়ার থাকলেও সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়। রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতায় চেয়ার ভেঙে যায় অনেক জায়গাতেই। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে সেই চেয়ারগুলো না থাকলেই যেন ভালো হতো। কারণ সেই চেয়ারগুলোয় বসে খেলা দেখা অসম্ভবই। তবে সিটগুলোর এমন বেহাল দশায় বিসিবি থেকে বারবার বলার পরও উদ্যোগ নেয়নি জাতীয় ক্রিড়া পরিসদ।
তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও গত বিপিএলকে সামনে রেখে এই মাঠকে সংস্কার করা হয়েছে। নতুন করে চেয়ার বসানো হয়েছে বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। এত দিন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দিকে তাকিয়ে ছিল বিসিবি। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় গ্যালারির সংস্কারের দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধেই তুলে নিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড।
স্টেডিয়ামের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ অঞ্চলেই বসেছে নতুন সিট। কেবল ভিআইপি গ্যালারী ছাড়া। স্টেডিয়ামের ১৯ হাজার সিটের মধ্যে নতুন সিট বসানো হয়েছে ১২ হাজার।
মূল স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে বেড় হয়ে ডান পাশে রয়েছে নতুন আউটার মাঠ। যেখানে রয়েছে অনুশীলনের দারুণ ব্যবস্থা। একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে ঝিনুক আকৃতির আধুনিক ইনডোর। যেটির উদ্বোধন হয়েছে এ বছর। নাম দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ইনডোর কমপ্লেক্স। এখন থেকে জাতীয় দল ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে পারবেন এখানে।
১৪২ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৫৮ ফুট প্রস্থের এই ইনডোরে আছে চারটি উইকেট। দুটি সবুজ টার্ফের এবং দুটি ম্যাটের। এ ইনডোর তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। ২০২০ সালে কাজ শুরু করেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অবশ্য আগেও একটি ইনডোর স্টেডিয়াম ছিল। বছর তিনেক আগে চট্টগ্রাম আউটার লিংক রোডের ফ্লাইওভার তৈরি করতে গিয়ে ভাঙা পড়ে সেই ইনডোরটি। ভাটিয়ারী থেকে কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার মাঝে জহুর আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামের ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল সিডিএ। যার বিনিময়ে তৈরি করা হয় স্টেডিয়াম চত্বরেই আন্তর্জাতিক মানের এই ইনডোর কমপ্লেক্সটি।
বিসিবির একাডেমি ভবন করারও পরিকল্পনা আছে এখানে। সেটি হলে সিলেটের মতো ক্রিকেট কমপ্লেক্স হিসেবে পূর্ণতা পাবে বন্দরনগরীর টেস্ট ভেন্যুটি।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামটি চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেখানে বীরত্বের পূর্ণতা এবং ইতিহাসের গভীরতা মিলে যায়। চট্টগ্রামের মানুষের কাছে এটি একটি আবেগের নাম। এই স্টেডিয়ামটি ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করে থাকে।