পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

‘রৌজা’ গীতিকবিতা পর্ব (১৭)

১৫ জুন ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

৮১ 

বেসেছি ভালো যাঁরে গোপনে গোপনে 

এ ভালোবাসার কথা বলি তাঁরে কেমনে। 

         কেমন করে জানাই প্রিয়রে মনের কথা 

         মনেতে রইল পাওয়ার কী যে আকুলতা,

কী যে উন্মুখ হয়ে আছে পরান মিলনে। 

         এ ভালোবাসার কথা বলি তাঁরে কেমনে॥ 

 

সবকিছু ভুলতে পারি—পারি না বন্ধুরে 

বন্ধুর ভালোবাসা ছাড়া অসার এ মর্ম রে। 

         জীবনের সার হোক তবে এ শুধু তপ 

         মরণে যে করে যেতে পারি বন্ধুর জপ,

এ বিনে চাই নে কিছু আর চাই নে মনে। 

         বেসেছি ভালো যাঁরে গোপনে গোপনে॥

                  ২১ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৮২ 

আমার মাথা নত হলে পর্বতের মতো উচুঁ 

         এই ধরণির কূলে। 

আমি নিচু করি মাথা কেবল তাঁর পদতলে 

                  হরদম হরহামেশা পলেপলে—

         এই ধরণির কূলে॥ 

 

কোনো প্রলোভনের লোভনপ্রাসাদে 

         এই মাথা নত হবে না কোনো শর্তে,

অভাব-উপোসে দিতে পারি জীবন বিসর্জন 

                  নিতে পারি না ধিক্কার ঝুলিঝুলে—

         এই ধরণির কূলে॥ 

 

আমি করিনি—করি না—করব না কারে তোয়াজ 

         না-করাক আল্লাহ তোষামোদী। 

এ জীবন ছোট হতে হতে মিলে যাক-না শেষাবধি 

                  তবু যেন হীনাত্মার পরিচয় না দি—

         না-করাক আল্লাহ তোষামোদী॥ 

 

নপুংসকের জিন্দেগির বাদশাহিচেয়ে 

         পুংসকের ভিক্ষার ঝুলির তুলনা নেয়ে, 

সৃষ্টির কোনো কিছুই ছোট হওয়া দোষের নয় 

                  দোষ—আত্মা ছোটর মালিক হলে—

         এই ধরণির কূলে॥ 

                  ২৫ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৮৩ 

বিধি, 

         শোনাও না আর ঘাসের কান্না 

বলতে চেয়েও অনেক কিছু পারি না। 

করতে চাই না আর শান্তির কলরব 

সত্যকথা বলার মাঝে দুঃখ হে রব॥ 

 

বিধি, 

         দেখাও না আর বিধানের বিধান

ফেরেশতা যত-না তারচে বেশি শয়তান। 

আজকের জিন্দেগি কালকে গল্পগুজব—

সত্যকথা বলার মাঝে দুঃখ হে রব॥ 

 

বিধি, 

         ভাগ্যিস মানুষে দাওনি অদৃশ্যশক্তি

তুমি স্রষ্টা আছ বলে কভু মানতো না যুক্তি। 

এটুকু পেয়ে এতটুকুন মানুষের গর্ব কত 

আরেকটু পেলে তুমি জানো মানুষ কী হতো॥ 

 

বিধি, 

         কোথা আছে দেখাও নরাধমের ধাম

আমাকে জানতে হবে হীনাত্মার পরিণাম। 

তা হলে স্তব্ধ করে দাও আমার ভৈরব—

সত্যকথা বলার মাঝে দুঃখ হে রব॥ 

                  ২৭ কার্তিক, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৮৪ 

         শোকরান 

দিলে তুমি অপরূপ পথের সন্ধান, 

                           গীতিয়ান

গাওয়ালে বেসুরের কণ্ঠে সুরের গান। 

         ভুলা যায় না—যাবে না অমৃত এ দান—

                                    শোকরান॥

 

         কোনো দিন 

ভাবিনি আমি এমন মঞ্চ পাব একদিন, 

                           সীমাহীন

এ দয়া—আমাকে ঋণী করছে দিনদিন।

         নিজেরে ভুলতে পারি—পারি না এ মান—

                                    শোকরান॥

 

         আমার 

ভুবনে আছে—থাকুক বেদনার পাহাড়,

                           তোমার 

জিকিরে প্রকাশ না হোক মনের আঁধার। 

         আমারে লুকাতে পারি—পারি না এ ঘ্রাণ—

                                    শোকরান॥

                  ২ অগ্রহায়ণ, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৮৫ 

মরণ তো আছে একদিন 

         মরতে হবে আমারি, 

তা যেন মরণের মতো হয় 

                  এতটুকু কামনা করি।

 

জিন্দেগি যাইবা দিলে শোকরিয়ে 

         লাঞ্ছনার মৃত্যু দিয়ো না প্রিয়ে,

এ মন হাসিখুশির মধ্যে দিয়ে 

                  করে নিয়ো তোমারি।

মরণ তো আছে একদিন 

         মরতে হবে আমারি॥ 

 

এলাম-গেলাম এরকম যেন 

         না হয় এ জিন্দেগি, 

এ জিন্দেগির কোনো মানে নেই 

                  তুমিই তো বলেছ সুধী।

 

জীবন কী জ্ঞাত কর আমায় 

         যদি হয় ভালো কিছু করে যাওয়ায়,

তবে যেন হয় জীবনটা তাই 

                  করো জীবন পুরোপুরি।

মরণ তো আছে একদিন 

         মরতে হবে আমারি॥ 

                  ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত