১
— চটি পড়েন?
কফিতে চুমুক দিচ্ছিলাম। প্রশ্নটা শুনে ছোটোখাট একটা বিষম খেলাম। আর বিষম খাওয়ার কারণ হচ্ছে, প্রশ্নটা আমাকে করেছে একজন মেয়ে। এমন একজন মেয়ে যার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। শুধু তা ই না, আজকে, এই মুহূর্তে তার সাথে আমার কফি হাউজে ওয়ান টু ওয়ান মিটিং চলছে। আর সেটাও, ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম।
জাস্ট ইম্যাজিন! কোন মেয়ে অপরিচিত কোন ছেলেকে প্রথম দেখাতে এমন প্রশ্ন করছে, তা ও আবার যার সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে?
ব্যাপারটা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে? ওকে, আমি বরং শুরু থেকে শুরু করি। যদিও 'অপরিচিত' বলতে যে ব্যাপারটা মাথায় আসে, সেটা হচ্ছে, একেবারেই অচেনা, কিংবা জাস্ট হাই হ্যালো টাইপ ইন্ট্রো হয়েছে, এমন। সেই অর্থে আমি অতোটা অপরিচিত না। আমার আর অনন্যার অবস্থা তার চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়েছে। আই মিন, আমরা গত ত্রিশ মিনিট ধরে কফি খাচ্ছি আর গল্প করছি। সো, আমি যে একটা মাল্টিন্যাশনালে জব করি আর ও যে সাইকোলজিতে মাস্টার্স করছে এধরণের কনভারসেশান হয়ে গেছে।
এখন আলাপ প্রায় শেষের দিকে। আমি ডিসাইড করে ফেলেছি, ইট ইজ অ্যা 'নো'। মেয়েটা দেখতে আহামরি কিছু না। গায়ের রংও শ্যামলা আর ফর্সার মাঝামাঝি। তবে ইনটেলিজেন্ট। শুধু ইনটেলিজেন্ট না, বেশ বুদ্ধি রাখে। আর এতো বুদ্ধিমতী মেয়ে আমার দরকার নাই।
কথাবার্তা মোটামুটি থেমে গেছে। আমি আর নিজে থেকে কোন কিছু জানতে চাইছি না। মেয়েটা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বার দুয়েক আমার দিকে তাকিয়েছে। যেহেতু মাথায় বুদ্ধি আছে, আমার এই চুপ করে থাকা বা আলাপে অনীহার কারণটা, আশাকরি বুঝে গেছে। ওয়েট করছি কখন ওর কফি খাওয়া শেষ হয়।
মেয়েটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাটা অস্বস্তিকর, তাই এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। রেস্টুরেন্টটা বেশ ছিমছাম। মাঝে মাঝে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছি। আমার প্রায় শেষের দিকে আর ওর চুমুকটা বলে দিচ্ছে ওর ও কফি প্রায় শেষ। আর কিছুটা সময় পার করলে, ‘আজকে তাহলে উঠি’ বলাটা অভদ্রতা হবে না।
দেখতে দেখতে সেই সময়টাও পার করে ফেললাম। আর ঠিক যখন বিদায় নেব ভাবছি ঠিক তখন মেয়েটা বোমাটা ফাটালো। মুখে তখন আমার কফির শেষ সিপ— অ্যান্ড অল অফ অ্যা সাডেন, শী আসকড দিস কোয়েশ্চেন।
এনিওয়ে, গল্পে এগিয়ে যাওয়ার আগে, আমাদের ইন্ট্রোডাকশানটা বরং সেরে ফেলি। আমি বোরহান। একটা ফার্মা কোম্পানিতে আছি। সিনিয়র মার্কেটিং একজিকিউটিভ। বয়সের তুলনায় একটু রেসপন্সিবল পোস্ট। বাট আই আরনড ইট। জাস্ট কিছুদিন হল প্রোমোটেড হয়েছি। বয়স এডজ্যাক্টলি বলছি না, আপাততঃ এটুকু জানাচ্ছি, ওটা ত্রিশের কোঠায়।
আর এখানে, আই মিন, ধানমন্ডির এই কফি হাউজে আসবার কারণ হচ্ছে, কনে দেখা। সেই কনে হচ্ছে অনন্যা। প্রশ্ন হতে পারে, এতো ব্রিলিয়ান্ট পাত্র, স্টুডেন্ট লাইফে কি করেছে। তার উত্তর হচ্ছে, ইয়েস। ইউনিভার্সিটি লাইফে একজন ক্রাশ ছিল। লাবণী। বাট, সম্পর্কটা টেকেনি।
কেন টেকেনি, সেই তথ্য খুব জরুরী না। তা ও জানাচ্ছি। দারুণ একটা বিয়ের অফার এসেছিল। দেন… ঐ গল্প অন্য কোন সময় বলব।
যাই হোক, সেই ইন্সিডেন্টের পরে আর প্রেম ব্যাপারটা ট্রাই করিনি। প্রেমের ওপর ঘেন্না ধরে গিয়েছিল, ব্যাপারটা এমন না। লাবণী যে ডিচ করতে যাচ্ছে, ব্যাপারটার কিছুটা আভাস পেয়েছিলাম। আর সেজন্য সম্ভবতঃ মনে মনে তৈরিও ছিলাম। তাই, খুব ধাক্কা লেগেছিল, এমনটা বলব না। তবে বেশ কিছুদিন আপসেট ছিলাম। এরপরে, অ্যাজ ইউজুয়াল, লাইফ মুভড অন। স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে জীবন।
কথাগুলো শুনে আমাকে সেলফিশ ভাবতে পারেন। কিংবা ভাবতে পারেন আদৌতে সেটা প্রেম ছিল কি না। হোয়াটেভার, সেই ব্রেকাপটার কারণে আমার স্টাডি কিংবা লাইফ, কোনটাই সেভাবে সাফার করেনি। যথারীতি ফার্মেসীতে মাস্টার্স কমপ্লিট করি। এরপরে এমবিএটাও করি। উইদিন ওয়ান মান্থ, জব পেয়ে যাই, দেশের ওয়ান অফ দ্যা টপ ফার্মা কোম্পানিতে। এরপরে বেশ কয়েকটা প্রমোশান অ্যান্ড দেন, সিনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ।
মোট কথা, বয়স কিছুটা বেশি হলেও, এই বিয়ের বাজারে, পাত্র হিসেবে আমি এখনো এ ওয়ান ক্যাটাগরিতে পড়ি। তার মানে এই না যে, বিয়ের ব্যাপারে আমি ডেসপারেট। অনেস্টলি স্পিকিং, বিয়ের খুব একটা তাড়া আমার নেই। নিজের কাজ কর্ম নিয়েই মেতে আছি। 'আরও ওপরে উঠতে হবে অ্যান্ড অল দ্যাট'ই এই মুহূর্তে আমার এইম অফ লাইফ।
কিন্তু বাসায় সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। স্পেশালি আমার বড় বোন, নিশি আপা। ইয়েস, শী ইজ দ্যা 'ডি ফ্যাক্টো গার্জিয়ান' অফ দিস হাউজ। স্পেশালি বাবা মারা যাওয়ার পরে। মা এমনিতেই প্যাসিভ টাইপ ক্যারেক্টার। নিজের তেমন কোন ‘সে' নেই। বাবা বেঁচে থাকতে, বাবার কথাই ছিল ফাইনাল। আর উনি মারা যাওয়ার পরে, নিশি আপার। উনার সাথে সব ব্যাপারে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেন মা। ব্যাপারটায় আমার তেমন আপত্তি নেই। নিশি আপা বেশ ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে জানেন। আর আমার বিয়ে নিয়েও মূল উদ্যোগের পেছনে উনি। সেই অর্থে মার রোল কেবল, ‘ইয়েস' বলা। মেয়ের খোঁজ খবর থেকে শুরু করে মিটিং অ্যারেঞ্জ, বিয়ের পুরো ব্যাপারটা হ্যান্ডল করছেন নিশি আপা।
প্রেম না থাকলে যেভাবে বিয়ে হয়, আমারটাও সেভাবে হচ্ছে। একসময় ঘটক কিংবা পরিচিত খালা মামী চাচীরা পাত্রীর খোঁজ আনতেন। এখন ব্যাপারটা অনেক অর্গানাইজড। বেশ কিছু ম্যাট্রিমনি ওয়েবসাইটও যেমন আছে, তেমনি নামী দামী ঘটকও আছে। সেসব ঘটকদের নিজস্ব অফিসও আছে।
তবে নিশি আপা, অনলাইন সাইটের হেল্প নিয়েছেন। এসব সাইটের নিয়ম হচ্ছে, বেশ কিছু ফিসের বিনিময়ে এখানে নাম লেখাতে হয়। এরপরে আমাদের এক্সপেক্টেড ক্রাইটেরিয়া জানাতে হয়। সেই ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী উনারা সার্চ দেবেন। যেসব পাত্রীর নাম আসবে, সেসব পাত্রীর এক্সপেক্টেড ক্রাইটেরিয়া খোঁজা হবে। যাদের ক্রাইটেরিয়া ম্যাচ হবে, সেসব পাত্রীকে আমাদের সিভি দেবেন। আর আমাদেরকে দেবেন পাত্রীর সিভি।
তো, আপডেট হচ্ছে, ম্যাট্রিমনি ওয়েব পোর্টালে নাম লেখানোর পরে কয়েক দফা, সেখান থেকে পাত্রীদের লিস্ট আনা এবং পাত্রী যাচাই বাছাই হয়ে গেছে। প্রাথমিক যাচাই বাছাই এর পুরো ব্যাপারটাই নিশি আপা একাই করছেন। সিলেক্টেড ক্যান্ডিডেটদের ছবি প্রথমে মাকে এরপরে আমাকে দেখানো হচ্ছে। আমিও যদি ‘ওকে' করি, দেন আসে নেক্সট স্টেপ। অর্থাৎ সেই সিলেক্টেড ক্যান্ডিডেটদের সাথে কোন কফি হাউজে ওয়ান টু ওয়ান মিট।
আজকে যার সাথে মিট করতে এসেছি, মানে অনন্যা, উনি আমার জীবনের প্রথম পাত্রী নন। ও হচ্ছে পঞ্চম জন। এর আগের চার জন রিজেক্টেড। বাই মি। ভাল লাগেনি। আই মিন, খারাপ না, বাট… কেন যেন ইচ্ছে করেনি। মাঝে একবার সন্দেহ হয়েছিল, এই ভালো না লাগাটা সেই ইউনিভার্সিটি লাইফের প্রেমের হ্যাং ওভার কি না। পরে মনে হয়েছে, দ্যাট ইজ নট দ্যা কেস। আসলে আমার বয়স একটা ফ্যাক্টর। এই বয়সে বোধহয়, সুন্দরী মেয়ের চেয়ে প্রেজেন্টেবল মেয়ে বেশি প্রেফারেবল। এমন একজন যাকে বন্ধু বান্ধব বা আমার সার্কেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। জাস্ট সৌন্দর্য্যের পোটলা না হয়, একটু স্মার্ট, একটু ইনটেলিজেন্টও হবে। যেন আমার সারাউন্ডিংয়ে তাকে বেমানান না লাগে।
প্রথম চারটা মেয়েকে ‘নো' বলার পরে ‘তাহলে কেমন মেয়ে চাস?’ প্রশ্নের উত্তরে কথাটা নিশি আপাকে বলেও ছিলাম কথাটা। তার রেজাল্ট হচ্ছে, অনন্যা। এবার সম্ভবতঃ তিনি চেহারার বদলে, পাত্রীর অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার দেখেছেন। এই মেয়ে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি পাওয়া। ছাত্রী ভালো হলেও, সাইন্স নেয়নি। আর্টস নিয়ে পড়ছে। রেজাল্ট অবশ্য এখানেও বেশ ভাল। সাইকোলজিতে মাস্টার্স করছে। অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে।
গত আধ ঘণ্টার আলাপে আমার গাট ফিলিং হচ্ছে, মেয়েটা আসলেই শার্প। আমি যেমন কনেকে জাজ করছি, আমার ধারণা, অনন্যাও আমাকে স্টাডি করছে। আমার তাকানো, আমার প্রশ্ন, আমার উত্তর, সবকিছু থেকে, আমার সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করছে।
আর, ওর এই প্রচেষ্টাটা কেন যেন ভীতি তৈরি করল। প্রথমবারের মত মনে হল, বুদ্ধিমতী মেয়ে চাইলেও, আমি বোধহয় এতোটা শার্প মেয়ে চাই না। ইয়া, প্রগ্রেসিভ হলেও, আসলে আমি বোধহয় কিছুটা কনজারভেটিভও। বুদ্ধিমতী মেয়ে পছন্দ, তবে চালাক মেয়ে না। আই মিন, কিছু মেয়ে থাকে না, সব কিছুতে হিসেব করে, সব ব্যাপারেই লাভ খোঁজে, সেই টাইপ ক্যারেক্টার বেশ অপছন্দ।
এই মেয়েকে ঠিক চালাক মনে হচ্ছে না, বাট কেন যেন… ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারব না। আসলে ওর এই অ্যাসেস করার ব্যাপারটা কেমন যেন একটা অস্বস্তি তৈরি করছে। নিজেকে কেমন যেন গিনিপিগ গিনিপিগ লাগছে। আর তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, ফিরে গিয়ে বাকী চারজনের মত ‘নো' বলব।
এর আগের মিটিংগুলোতে যেমনটা করেছিলাম, এবারও ব্যতিক্রম করছি না। নিজে থেকে উঠতে চাইছি না। অপেক্ষায় আছি, অনন্যা কখন, ‘আজ তাহলে উঠি’ বলে। তাছাড়া কফি খুব আস্তে ধীরে খাচ্ছে অনন্যা। তাই উঠতে ইচ্ছে করলেও বসে আছি। কিংবা বলা যায়, অনন্যাই আলাপটা চালিয়ে যাচ্ছে। আর অনেক বিরতি নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট চুমুক দিয়ে কফি খাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ‘আজকে উঠি’ কথাটা আমাকেই বলতে হবে।
এই ছোট্ট সময়ে, অনন্যার ব্যাপারে আমি আরও একটা অ্যানালাইসিস করেছি। আমার অ্যান্সার যে ‘নো’ হতে যাচ্ছে, সেটা ও বুঝে গেছে।
তারপরও কেন আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। এতক্ষণ যা আলাপ হয়েছে তার বেশিরভাগই আবোল তাবোল টাইপ। একটু আগে আমার স্টুডেন্ট লাইফের গল্প শুনতে চেয়েছে।
স্টুডেন্ট লাইফের মেমোরেবল ডে শুনতে চাইল। জিজ্ঞেস করলাম, স্টুডেন্ট লাইফ তো বেশ লম্বা। কোন সময়ের শুনতে চান? বলল, চাইলে সব সময়েরই বলতে পারেন। চাইলে স্কুল লাইফে ক্লাস টিচারের প্রেমে পড়া দিয়েও শুরু করতে পারেন।
মেয়েটার এই সাবলীলতা কেমন যেন অশনি সংকেতের মত মনে হল। তারপরও কেন যেন শোনালাম। ক্লাস থ্রির মিস এর প্রেমে যে পড়েছিলাম, সেই গল্প বললাম। মনোযোগ দিয়েই শুনল। মাঝে মাঝে স্মাইল দিল। স্মাইলটা ভদ্রতা সূচকই মনে হল। খুব একটা এঞ্জয় করল বলে মনে হল না। ব্যাড অ্যাক্ট্রেস। আমার ধারণা, কোন পাত্রের সাথে মিটিং এটা ওর প্রথম না। আর আমি যদি খুব ভুল না করে থাকি, পাত্র দেখতে এসে এই কাজ ও প্রায়ই করে। পাত্র অ্যাসেস। অবশ্য তখন বুঝতে পারিনি…।
যাইহোক, একসময় মিস এর প্রেমে পড়ার গল্প শেষ করলাম। এরপরে জানতে চাইল, ‘কলেজ লাইফের?’
তখন কফি চলে এসেছে। চুমুক দিতে দিতে কলেজ লাইফের গল্প করলাম। জানালাম, কলেজে প্রথম বারের মত কো এডের স্বাদ পাই। যদিও ছেলে মেয়ে পাশাপাশি, একসাথে বসতাম না, তারপরও প্রথমবারের মত মেয়ে ছেলে একই ক্লাসে।
প্রথম কিছুদিন বেশ উত্তেজনা কাজ করেছিল। ফেসবুক, ইন্সটা জেনারেশানের আগের জেনারেশান আমরা। তাই মেয়েদের সম্পর্কে বেশ রূপকথা টাইপ ধারণা নিয়ে বড় হয়েছিলাম।
গল্প বলতে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চলে গিয়েছিলাম কলেজ লাইফে। ঈশিতার কথা মনে পড়ে গেল। ক্লাসের সুন্দরীতম মেয়ে। কমবেশি সবাই ওর দিকে আড়চোখে তাকাতাম। তবে ঐ পর্যন্তই। এসব গল্প অবশ্য বললাম না। ছোটখাট কিছু গল্প। বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার যাওয়ার গল্পটা শোনালাম।
এক্সপেক্ট করেছিলাম, এরপরে হয়তো ইউনিভার্সিটি লাইফের গল্প জানতে চাইবে। আমি অবশ্য তখন প্যাক আপের প্ল্যান করছি। ‘আজকের মত উঠি’ বলতে অস্বস্তি লাগছে। তাই অপেক্ষা করে আছি, কফি কখন শেষ করে, সেজন্য। এমন সময় আচমকা প্রশ্নটা করল অনন্যা।
‘চটি পড়েন?’
‘চটি' বলতে চটি স্যান্ডেলও বোঝানো যায়। তবে ওর প্রশ্নের ধরণ দেখে মনে হল না সেটা বোঝাচ্ছে। সাধারণ ভাষায়, ‘চটি' বলতে যা বোঝায়, ইট সিমস, শী মেন্ট দ্যাট। প্রশ্নটা স্কুল লাইফে, কোন বন্ধু করলে যতোটা নির্দোষ শোনাত, এখন, এই পরিস্থিতিতে প্রশ্নটাকে কেমন যেন অপমানজনক শোনালো। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, কিভাবে রিয়াক্ট করব।
‘কি যা তা বলছেন’ বলে ঝাঁঝিয়ে উঠব? না দুষ্টুমির একটা হাসি দিয়ে স্বীকার করে নেব, 'পড়ব না কেন?'
সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আর আমার ধারণা, একারণে আমার চেহারায় হতভম্ব একটা ভাব ঝুলে আছে। আমার সেই কনফিউজড চেহারা দেখে মুচকি একটা হাসি দিল অনন্যা।
এই মেয়ে তো বেশ ফাজিল। কেন যেন মনে হল একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ‘সত্যি বলার সাহস আছে?’ কিছুক্ষণ ওর হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এবার বেশ রাগ হল। কিন্তু সেই সাথে এটাও বুঝতে পারলাম, রেগে যাওয়া মানেই ওকে বুঝিয়ে দেয়া, আই অ্যাম এম্ব্যারাসাড। সেটা আবার হতে দিতে চাই না। রাগ না স্মাইল, কি রিয়াক্ট করব ভাবছি, এমন সময় প্রশ্নটা আবার করল অনন্যা
— উত্তর দিতে না চাইলে, ইউ ক্যান ডাক।
কি যে হল, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, ফ্রন্ট ফুটে খেলব। দেখি কাহিনী কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। অনেস্ট উত্তরটাই দিয়ে ফেললাম
— এক সময় পড়তাম। বাট এখন... ঠিক সময় পাইনা। তারপরও… পড়ি।
— কোন ফেভারেট রাইটার?
নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে গেল। ভেবেছিলাম, তাচ্ছিল্য করে কিছু বলবে। হয়তো কথার হুল ফুটিয়ে বোঝাবে, ‘ইউ আর অ্যা পার্ভার্ট'। কিন্তু তেমন কিছু করল না। জানতে চাইল ফেভারেট রাইটারের নাম। অবাক হয়ে টের পেলাম, নিজের অজান্তেই আমি ভাবতে শুরু করেছি, রাইটারের নাম। তখন ফিল করলাম, এসব পড়ার সময় কি কখনো রাইটারের নাম পড়েছি? আদৌ কি কেউ এসব লেখার রাইটারের নাম পড়ে? তাছাড়া কোন কোন লেখায় তো রাইটারের নামও লেখা থাকে না।
তাই ‘এসব লেখার আবার রাইটার’ এমন একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় স্মৃতি একটা নামই জানান দিল। রসময় গুপ্ত। কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। নিঃসন্দেহে ছদ্ম নাম। তারপরও, এই লেখকের অনেকগুলো বই পড়েছি। নামটা বলব কি না ভাবছি, এমন সময় বোমটা ফাটাল অনন্যা।
— আমি লিখি।