পোস্টস

উপন্যাস

Twenty_Thousand_Leagues_Under_The_Sea

১৬ জুন ২০২৪

Hasan Mehedi

মূল লেখক Jules verne

অনুবাদক মেহেদী হাসান

PART 2 ---- চরিত্র পরিচিতি
তবে খুবই সত্য বটে, আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী গৃহভৃত্য কনসিলের মাধ্যমে সামুদ্রিক  প্রাণীটা সম্বন্ধে সামান্যতম উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষিত হয় নি।
একটা  কথা আগেই বলে রাখা উচিত ছিল। ক্যাপ্টেন ফ্যারাগুট দেশের সেরাতিমি শিকারী, হারপুন ছোঁড়ার অদ্বিতীয় বীর নেডকে জাহাজে, আমাদের সঙ্গী হিসেবে নিয়েছিলেন। এবারেও তাঁর কৃতিত্ব কম নয়, স্বীকার করতেই হয়। তারছোঁড়া, হারপুনের আঘাত অগ্রাহ্য করে পাড় পেতে পারে এমন কোন তিমি আছে বলে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। 
অতিকায় অমিত শক্তিশালী ও দ্রুত গতিবেগ সম্পূর্ণ জাহাজ আব্রাহাম লিংকন প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে তিন সপ্তাহ কাটিয়ে দিয়েছে।
অতিকায়, অমিত শক্তিশালী ও দ্রুত গতিবেগ সম্পন্ন জাহাজ আব্রাহাম লিঙ্কনএক বিকালে জাহাজের ডেকের ওপরে নেডকে নিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলাম।একথা-সেকথার পর আমি তাকে বললাম-নেড, একটা কথা, বিশালায়তন ওইতিমিটার ব্যাপারে তোমার মতামত কি, খোলসা করে বল তো?
সে মুচকি হেসে আমার প্রশ্নের জবাবে বলল-প্রফেসর, অন্ধের পক্ষে পৃথিবীরসব কিছু অকপটে মেনে নেওয়া খুবই সহজ বটে। কিন্তু ভু-তত্ত্ববিদ এবংজ্যোতির্বিদদের পক্ষে ভূত-প্রেত বা প্রেতাত্মার অস্তিত্ব মেনে নেওয়া কি সহজ,আপনিই বলুন? আমি ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে তিমি শিকার করতে গিয়ে বিচিত্র সবঅভিজ্ঞতা আমার ঝোলায় সঞ্চয় করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কোন নিদর্শন আমিপাইনি যে, তিমির দাঁতে জাহাজের খোল ফুটো হওয়া তো দূরের ব্যাপার, জাহাজেরগায়ে সামান্য আঁচড় লেগেছে।
নেড কোন যুক্তিতেই এমন ভয়ঙ্কর ও অমিত শক্তিধর কোন সামুদ্রিক প্রাণীরঅস্তিত্বের কথা মেনে নিতে উৎসাহী হল না। মোদ্দা কথা, তাকে কিছুতেই স্বীকারকরানো গেল না।
আমি আমতা আমতা করে তবুও বললাম-সমুদ্রের অতল গহ্বরে বসবাসকারীঅতিকায় কোন সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব যদি স্বীকার করাই হয় তবে সে যে অমিতশক্তির অধিকারী হবেই, আশ্চর্য কি? তার শারীরিক গঠনেও অবিশ্বাস্য বৈচিত্র্য থাকাঅসম্ভবই বা কি?-‘আমি তবুও বলব, তার শারীরিক গঠন বৈচিত্র্যময় হওয়ার সঙ্গত কারণই বাকি থাকতে পারে প্রফেসর?”
-‘এর সঙ্গত কারণও রয়েছে। সমুদ্রে অতল গহ্বরে, অত্যন্ত গভীরে জলের চাপপ্রবল। সেখানে সে চাপ অমিত শক্তিধর কোন প্রাণী ছাড়া কারো পক্ষে বরদাস্ত করাইতো সম্ভব নয়। জলজ প্রাণীদের জলের তলায় কী অস্বাভাবিক চাপ সহ্য করে টিকেথাকতে হয়, বলছি শোন-যদি তুমি কোনক্রমে জলের বত্রিশ ফুট গভীরে যাও তবেতোমার দেহকে, প্রতিবর্গ ইঞ্চিতে পনের পাউণ্ড চাপ সহ্য করতে হবে। এ হিসাবঅনুযায়ী দেখা যাবে, প্রায় দু'মাইল গভীরে প্রতি বর্গইঞ্চির জন্য পাঁচ হাজার দশপাউণ্ড চাপ সহ্য করতে হবে। তোমার এ দেহটা কত ইঞ্চি জায়গা দখল করতে পারে তা হয়ত তোমার অজানা। বলছি শোন, প্রায় দু'হাজার পাঁচ শ' ইঞ্চি। প্রতি ইঞ্চিতে যদি পনের পাউণ্ড চাপ প্রয়োগ হয় তবে হিসাব করলে দেখা যাবে তোমারদেহটা মোট সাতানব্বই হাজার পাঁচ শ' পাউণ্ড চাপ সহ্য করার ক্ষমতা ধারণ করেছে।
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, তোমার দেহের ভারসাম্য অক্ষুন্ন রাখে বিপরীতদিকের বাতাসের চাপ। আরও আছে উর্দ্ধচাপ এবং নিম্নচাপ আমাদের দেহেরভারসাম্য অক্ষুন্ন রাখার মূলে অবস্থান করে।নেড-এর মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল। মুহুর্ত কাল নীরবে ভেবে এবার মূখখুলল-হ্যাঁ, এতক্ষনে ব্যাপারটা আমাদের কাছে পরিস্কার হ'ল।“আগে আমরা বুঝতে পারলাম, বত্রিশ ফুট জলের গভীরে তোমার দেহসাতানব্বই হাজার পাচ শ' পাউন্ড আর তিন শ' ফুট গভীরে তার প্রায় দশগুন হবে।আবার বত্রিশ হাজার ফুট জলের গভীরে তোমার দেহ প্রায় সাতানব্বই কোটি পাঁচলক্ষ পাউন্ড ওজন বহন করবে।
’-আরে ব্বাস! এমন অবিশ্বাস্য কান্ড! কপালের চামড়ায় চিন্তার ভাঁজ এঁকে নেড বলে উঠল ।
-নেড, এবার তুমিই ভেবে দেখ,কয়েক শ' গজ দৈর্ঘ্য ও সে অনুপাতে প্রস্থবিশিষ্ট একটা প্রাণী যখন জলের তলায় অবস্থান করে তখন কতখানি চাপ তাকে সহ্যকরতে হয়। তার দেহের ওপর সে সহজেই কয়েক কোটি পাউন্ড চাপ বহন করে।এখন তুমিই ভেবে দেখ, যে প্রাণীটা এমন অবিশ্বাস্য চাপ সহ্য করতে সক্ষম সেকেমন অমিত শক্তির অধিকারী। আর তার শরীরের যন্ত্রতন্ত্র কতখানি শক্তিশালী। ঠিকএমনই অতিকায় এবং অমিত শক্তিধর সামুদ্রিক প্রাণী যে স্কোরশিয়া জাহাজেরতলদেশ ফুটো করে দিয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।ত্রিশে জুন। এর আগে পর্যন্ত লক্ষণীয় কোন ঘটনার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়নি। ত্রিশ তারিখেই আমরা কয়েকটি আমেরিকান তিমি শিকারি জাহাজ দেখতে পেলাম। তাদের মধ্যে একটা জাহাজের নাম ‘মনরো’। মনরো-র ক্যাপ্টেনেরা অনুরোধে আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেন ফ্যারাগুট, নেডকে অনুমতি দিলেন সে জাহাজে গিয়ে হারপুন ছুঁড়ে তিমি বধ করে দিয়ে আসার জন্য।বীর নেড হারপুন ছুঁড়ে দু'দুটো তিমি ঘায়েল করে ফিরে এল। অব্যার্থ বটে তার লক্ষ্যসাতই জুলাই। সেদিন আমাদের জাহাজ আব্রাহাম লিঙ্কন উত্তাল-উদ্দাম প্রশান্তমহাসাগরে পড়ল।
জাহাজের কর্মীদের অনুসন্ধিৎসু সজাগ দৃষ্টি সমুদ্রের বুকে অস্থির ভাবে ঘুরপাকখেতে লাগল। সবার চোখে-মুখেই অত্যুগ্র আগ্রহের প্রলেপ। আসলে পুরস্কারেরলোভই তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী করে কাজ করছে।
 

চ্যাপ্টার সমূহ