পোস্টস

বাংলা সাহিত্য

‘রৌজা’ গীতিকবিতা পর্ব (১৮)

১৬ জুন ২০২৪

আযাহা সুলতান

মূল লেখক আযাহা সুলতান

৮৬ 

স্মরণ করবে কি পৃথিবী আমারে 

আমি চলে গেলে কাল পৃথিবী থেকে, 

         করলাম কি কাজ এমন একটিবারে

মনে রাখার মতো পৃথিবী আমাকে। 

 

         আমিও পৃথিবীর স্বজন একজন 

         করতে চেয়েছি পৃথিবীকে আপন,

আমারও স্বপ্ন ছিল কিছু কর্ম করে যেতে—

         মনে রাখার মতো পৃথিবী আমাকে॥

 

সবাই তো আসে পৃথিবীতে শূন্য হাতে 

শূন্যে ফিরে—জীবনটা বুঝে কয় জনে,

         যে বুঝে জন্মের মানে পারে কিছু হতে 

সে রেখে যেতে পারে অবদান স্মরণে। 

 

         গুণীরা চায় না কবে বরণীয় হোক

         স্মরণীয় হতে পারলেই বরণ্যলোক,

আফসোস—পারিনি ইয়াদগার হতে—

         মনে রাখার মতো পৃথিবী আমাকে॥

                  ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৫—মানামা, আমিরাত 

৮৭ 

আর কারে বোঝাব মনের দুঃখ আমি 

তুমি ছাড়া বোঝার কে আছে অন্তর্যামী। 

         পিতা বুঝে না পুত্রের মত 

         পুত্র বুঝে না পিতার দরদ 

ভবে বুঝে স্বার্থের জপ—বুঝ শুধু তুমি—

আর কারে বোঝাব মনের দুঃখ আমি॥ 

 

ভাই-বন্ধু-স্বজন যত মনে করি আপন 

শোনালে শুনে না কেউ কষ্টের কথন। 

         ধন থাকলে পূজে জনে 

         জন থাকলে ডরায় ক্ষণে 

মন থাকলে—নিঃস্বার্থ একমাত্র তুমি—

আর কারে বোঝাব মনের দুঃখ আমি॥ 

                  ২২ বৈশাখ, ১৪২৬—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৮৮ 

কোথায় আছ প্রাণের বন্ধু আমার 

         কেমনে পাই তোমারে? 

কোথায় গেলে মিলে দেখা তোমার 

                  চেতন কিবা ঘুমের ঘোরে।

দেখল যারা তোমায় মনশ্চক্ষে 

         ভুলল জগৎ আর ভুলল নিজেকে! 

আমায় কবে ভুলাবে ‘সত্য’ বলে 

         ধন্য মরণ মনসুরে। 

কোথায় আছ প্রাণের বন্ধু আমার 

                  কেমনে পাই তোমারে?।

 

বলে কি তারা বুঝে আসে না 

         বিশ্বের সৃষ্টি এমনি? 

আমি বুঝি তুমি না থাকলে 

                  সমস্তের শৃঙ্খলা কেমনি!

যত সহজে গাই জীবনের গান 

         তত সহজ কিরে অজানার সন্ধান?

নিজেরে আমি বুঝি না যেখানে 

         অপরে বুঝি কী করে! 

কোথায় আছ প্রাণের বন্ধু আমার 

                  কেমনে পাই তোমারে?।

                  ৩০ বৈশাখ, ১৪২৬—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৮৯ 

স্রষ্টা! তুমি যদি সৃষ্টি কর আমায় 

না না—আমার কোনো সন্দেহ নাই।

তবে? মনে কেন জানি ভাবায় 

         অনেক কথা শুনি তাই॥ 

 

এত ভালো দেখালে জগৎ 

         তবু জগতের মনে দ্বিমত, 

কোথা থেকে আসে ভেবে না পাই—

না না—আমার কোনো সন্দেহ নাই॥

 

আমি তো মহাদিবসের ভয়ে আছি 

কোথায় স্থান আমার কেঁদে যাচ্ছি। 

কী হবে সেদিনের রূপরং ভাবছি 

         আমার মধ্যে আমি নাই॥ 

 

যে যা ভাবে ভাবুক গে 

         ভাবনার বলে মরুক গে, 

আমি বাঁচি—আমারে দাও প্রচ্ছায়—

স্রষ্টা! তুমি যদি সৃষ্টি কর আমায়॥ 

                  ১৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৬—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম 

৯০ 

ফলবান বৃক্ষ দেখছি 

         কেমনে ফলছে ফল, 

বর্ষিত আসমান দেখছি 

                  কেমনে বর্ষে জল। 

         নদী কেনে বয়ে চলছে 

সাগরে মিশে ঢেউ তুলছে, 

         এই বিশ্ব আর এই মহাচক্র 

                  দেখে যাচ্ছি অবিরল॥

 

পাই নে ভেবে কূলকিনারা 

         ফুল বিনে ফল কেনে, 

বটের গাছে ক্ষুদ্র গোটা 

                  লতার ফসল মণে মণে।

         শূন্যে কেনে ভাসছে পাথর 

জলে কেনে ডুবছে না গতর, 

         হাজারো আশ্চর্যে জগদ্দর্শন

                  তবু মানবহৃদে ছল॥

                  ২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৬—ডি সি রোড, চট্টগ্রাম