ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর- (পর্ব-২৯)
১৬ জুন ২০২৪
পার্থসারথি
ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর (ক্যাম্পাসভিত্তিক রোমান্টিক প্রেমের ধারাবাহিক উপন্যাস )
*পার্থসারথি
পর্ব-২৯
পড়ন্ত বিকেলে এল পারমিতা। রুমে ঢুকে চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে। ভাবছে রুচিদিকে ঘুমের মধ্যে ডিস্টার্ব করবে না।
রুচিরা বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে। আর ভাবছে সৈকতকে নিয়ে। কিছুক্ষণ পর পারমিতা বুঝতে পারল রুচিরা সজাগ। পারমিতা গলা খাকাড়ি দিয়ে উপস্থিতি জানান দিল। রুচিরা চমকে ওঠে ফিরে তাকায়।
অবাক হয়ে তাকায় পারমিতা এবং বলে- তোমার কী হয়েছে রুচিদি?
রুচিরা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- না, কিছু হয়নি। শরীরটা একটু ম্যাজম্যাজ করছে তাই শুয়ে আছি।
তা বুঝতে পারলাম। কিন্তু তোমার চোখ বলছে অন্য কথা।- পারমিতা রুচিরার চিবুকে ভালোবাসার হাতটুকু রেখে চোখের ওপর চোখ রাখে।
রুচিরার হঠাৎ খেয়াল হয় কান্নার জলে ভেজা বালিশের কথা। বালিশটা উল্টে রাখে।
কিন্তু পারমিতার চোখ এড়াতে পারেনি। আবারও সে জানতে চায়- রুচিদি সত্যি করে বলো তো, তোমার কী হয়েছে?
রুচিরা হালকাভাবে বলে- কিছু হয়নি। কিছু হয়নি লক্ষী বোনটি আমার।
পারমিতা বুঝতে পারে যে, রুচিরা কিছু একটা লুকাতে চাচ্ছে। পারমিতা কাছাকাছি হয়ে বলে- রুচিদি তুমি কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়েছে। তোমার এত কষ্ট অথচ আমাকে কিছুই বলতে চাচ্ছ না। তোমরা সবাই আমাকে এত অবিশ্বাস কর কেন। পারমিতার কণ্ঠটা কান্নায় ধরে আসে।
রুচিরা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। পারমিতার হাতে হাত রেখে বলে- সত্যি বলেছি আমার খারাপ কিছুই হয়নি। আমি সুখে কাঁদছি।
পারমিতা তাকিয়ে থাকে কিছু একটা শোনার জন্য।
রুচিরা বলে- মনে কিছু করো না পারমিতা। এই কথাটি আমি তোমাকে বলতে পারব না।
ঠিক আছে, তুমি সুখী হলে তাতেই আমার আনন্দ। আমি শুনতে চাই না। কিছুক্ষণ কী যেন ভাবল, তারপর আবার বলল- চাকরীতে গেলে না?
ইচ্ছে হচ্ছিল না একদম। তারপর বল তোমার খবর কী?- রুচিরা ইচ্ছে করেই প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে এ কথাগুলো।
তোমার কাছে একটা কাজে এসেছি রুচিদি। রুচিরা বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে- বলো।
তৃষ্ণার বাবার প্রমোশন হয়েছে।
রুচিরা বেশ খুশী হয় এবং বলে- দারুণ খুশীর খবর! শুধু মিষ্টি খাওয়ালে চলবে না। চাইনিজ খাওয়াতে হবে কিন্তু।
পারমিতা বলে- সেই সাথে বদলি। সম্ভবত কিছুদিনের মধ্যেই চলে যেতে হবে।
রুচিরা কোন কথা বলে না। শুধু চেয়ে থাকে। পারমিতা বলে- শুনেছি সৈকত এখন ক্লাস রীতিমত করে। অথচ আমি ওর নাগাল পাই না। ও আমাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলে। ওকে একটু দরকার ছিল এবং খুব শিগগির।
হলে গেলেই হয় তো পতেে পারো ।- রুচরিা স্বাভাবকি ভাবইে বলে।
পারমিতা জবাবে কোন কথা বলে না। রুচিরা বুঝতে পারে যে পারমিতা হলে যেতে চাচ্ছে না। একটু ভেবে রুচিরা বলে- ঠিক আছে, তুমি আগামী কাল সকাল এগারটায় লাইব্রেরির সামনে থেকো।
পারমিতা খুশী হয়ে রুচিরাকে জড়িয়ে ধরে এবং বলে- রুচিদি, তুমি আমার জন্য যা করলে তা কোনদিন ভুলতে পারব না। সৈকতকে তুমি নতুন জীবন দিলে। আমি কিছুটা হলেও সুখী হলাম। আর নয়ত সারাটা জীবন আমার মনের ভেতর দাগ পড়ে থাকত।
রুচিরা কথার মোড় ঘুরাবার প্রয়াসে বলে- তৃষ্ণামণি কেমন আছে?
ভালো আছে। বাসায় আস না কেন? সময় করে একবার আস না রুচিদি। ক’দিন পরই-আবার ঢাকার বাইরে চলে যেতে হবে। তখন যে কতদিন পর দেখা হবে ভেবেই পাচ্ছি না।- কথাগুলো বলতে বলতে পারমিতা বিষন্ন মনে রুচিরার দিকে তাকায়।
রুচিরা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলে- চিন্তা করো না, সব সময় যোগাযোগ রাখব।
পারমিতা চলে যেতেই রুচিরা আবার বিছানায় গড়াগড়ি যায়। সুখের আচ্ছন্নতায় ডুবে ডুবেই সারাটি রাত কেটে যায় ওর। ভালোবাসা কী, রঙ তার কেমন, ভালোবাসার হাওয়ায় ভাসতে কেমন লাগে, কেমন লাগে প্রতিটি মুহূর্তে ভেসে ভেসে সুখ নিংড়ে নিতে। রুচিরা এখন ভালোবাসার ডিঙিতে সাত-সমুদ্রের যাত্রী; যেখানে হাত বাড়িয়ে অপেক্ষায় আছে ভালোবাসার মানুষটি। ভাবতেই সুখের আচ্ছন্নতায় বারবার ডুবে যাচ্ছে সৈকতের মন-ভুবনের আকাশে।
*
ঘুম থেকে উঠেই সৈকতকে নিয়ে ভাবে। গতকাল সুখের তোলপাড়ে আর লজ্জায় সৈকতকে কিছুই বলতে পারেনি। সৈকতকে দেখার জন্য মনটা ভীষণ রকম উতলা হয়ে আছে। রুচিরা আর দেরি করেনি। হালকা মেকাপ টেনেই বাইরে পা বাড়ায় রুচিরা। সৈকতের রুমের কাছে এসে রুচিরা ঘড়িতে চোখ রাখে। সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ। দরজার কাছে এসে খানিক দাঁড়ায়। তারপর করা নাড়ে। দরজা খুলে অনিক সরে দাঁড়ায় এবং বলে- আসুন রুচিদি ভেতরে আসুন।
শব্দহীন হাসি ছড়িয়ে দিয়ে রুচিরা রুমের ভেতর ঢুকে। সৈকত উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। চেহারাটাও দেয়ালের দিকে। পুরোপুরি দেখা যাচ্ছেনা। হাত দুটো এমনভাবে গুটিয়ে রেখেছে যেন একটা অসুখী মানুষ। রুচিরার মনটা খারাপ হয়ে যায়। গতকাল কষ্ট করে হলেও কিছু কথা বলার দরকার ছিল। রুচিরা এবার অনিকের দিকে তাকায় । অনিক জুতা-জোড়া পরছে। রুচিরা বলে- কোথাও যাচ্ছ নাকি অনিক?
আটটায় ক্লাস আছে।- এই বলে অনিক জুতার ফিতা বেঁধে টেবিলের উপর থেকে বইপত্র হাতে নেয়। তারপর রুচিরাকে বলে- রুচিদি আপনি বসুন, আমি ক্লাসে যাচ্ছি। সৈকত গতরাতে সম্ভবত বেশি রাতে ঘুমিয়েছে। এই বলে অনিক চলে যায়। রুচিরা সৈকতের কাছাকাছি চেয়ারটায় গিয়ে বসে। চুপচাপ চেয়ে থাকে সৈকতের দিকে। সোয়া আটটা নাগাদ সৈকত ঘুমন্ত অবস্থাতেই টেবিলের ওপর হাত বাড়ায়। কিছু একটা সম্ভবত খুঁজছে। রুচিরা দেখে হাতের কাছেই সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা পড়ে আছে। রুচিরা সৈকতের হাতের নাগালে পোঁছে দেয়। সৈকত চিৎ হয়ে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সিগারেট ধরায়। এবার সৈকত ছাদের দিকে তাকায় । হাত একটা আড়াআড়ি করে কপালে ফেলে রাখে।
ভাবনার জালে আবদ্ধ হয়ে আপন মনে সিগারেট টানছে। অথচ স্বপ্নের রানী যে ওর পাশেই বসা সে কথা এখনও জানে না। রুচিরা পলকহীন দৃষ্টিতে সৈকতকে দেখছে। সিগারেট টানা বন্ধ করে সৈকত যেন কী ভাবছে। সিগারেটের ধোঁয়া কুগুলী পাকিয়ে ঊর্ধ্বমখী হচ্ছে। সিগারেটে শেষ টানটা বেশ লম্বা করেই দেয়। তারপর উঠে বসে। রুচিরার ওপর চোখ পড়তেই বিস্ময়াভূত হল সৈকত। পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুচিরা মিটমিট হাসছে। কী বলবে সৈকত ভেবে পাচ্ছে না। কারণ রুচিরা আসবে একথা সৈকত ভাবেনি কখনও; অবাক ও বিস্ময়ে হতবাক। রুচিরা প্রথম কথা বলে- এত গভীর হয়ে কী ভাবছিলে?
চলবে...