পোস্টস

গল্প

স্টয়িক দার্শনিকদের গল্প ও অন্য একটি গল্প

১৮ জুন ২০২৪

জিসান আকরাম

মূল লেখক জিসান আকরাম

রোমান স্টয়িক দার্শনিক মুসোনিয়াস রুফোজ একবার লেকচারে বলেছিলেন, পুরুষদের মত নারীরাও দর্শন শিক্ষা ও ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখেন। ইতিহাস থেকে তিনি নারী দার্শনিকদের উদাহরণ দিয়ে দেখান, ডায়োটিমা, এসপাশিয়া, হাইপেশিয়ার মত দার্শনিক ছিলেন।

শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, যদি নারীদের দর্শন শেখার ও চর্চার ক্ষমতা থেকে থাকে, তাহলে আমরা এখন চারপাশে নারী দার্শনিক দেখি না কেন?

মুসোনিয়াস রুফোজ বললেন, এইটা এইজন্য না যে নারীরা দর্শন শেখার অযোগ্য, বরং এটা এইজন্য যে, পুরুষেরা তাদের দর্শন শেখাতে অনাগ্রহী।

এটা স্টয়িক দর্শনের আরেক পয়েন্ট প্রকাশ করে। সবাইকে সমান মর্যাদা দিতে হবে। শেখা, ভার্চ্যু ও উইজডমের সম্ভাবনা সবার মধ্যেই রয়েছে।



রোমান স্টয়িক দার্শনিক সেনেকা লিখেছেন এই গল্প। একবার এক লোক নদীতে পড়ে সারা গায়ে কাদায় মাখামাখি হয়ে গেলো। এটা দেখে মানুষজন হাসছিলো। লোকটিও সেই হাসিতে যোগ দিলো। সে বলছিলো, আমারে কী অদ্ভুত দেখাচ্ছে!  

লুসিলিয়াসের সাথে চিঠিতে এই গল্প উল্লেখ করেন সেনেকা।

 

নিজেকে অতি গুরুত্বের সাথে না নেয়ার স্টয়িক প্রিন্সিপল বুঝাতে তিনি গল্পটা ব্যবহার করতেন। স্টয়িক দর্শন বলে, আমরা যেন নিজেদের বেশী সিরিয়াসলি না নেই, নিজের ভুল ও দূর্ভাগ্যকে হাস্য পরিহাস করার ক্ষমতা রাখি।


 

আলফ্রেড করজিভস্কি ছিলেন পোলিশ আমেরিকান দার্শনিক ও বিজ্ঞানী। মানুষেরা কীভাবে ঠিকঠাক কার্যকরভাবে যোগাযোগ করে, এই সম্পর্কিত বিদ্যায় তিনি প্রচুর অবদান রাখেন। তার বিখ্যাত উক্তি, 'ম্যাপ ইজ নট দ্য টেরিটোরি' আক্ষরিক অর্থে, মানচিত্রের জায়গা এবং বাস্তবের জায়গা এক না, এটা যেমন জীবনে স্মরণ রাখার মত এক কাজের মডেল, তেমনি নিচের গল্পটাও।

 

অগলিভির ররি সাদারল্যান্ড তার আলকেমি বইতে এটা উল্লেখ করেন।

একদিন করজিভস্কি লেকচার দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সাধারণ কাগজে মোড়ানো Iকছু বিস্কুট দিলেন তার সামনের সারিতে বসা শ্রোতা ছাত্রছাত্রীদের।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বিস্কুটগুলা মজার তাই না?

ছাত্রছাত্রীরা হেসে মাথা নাড়ালো।

তারপরে তিনি শাদা কাগজ ছিঁড়ে ফেললেন। দেখালেন সেখানে একটা কুত্তার ছবি, আর লেখা কুত্তার বিস্কুট।

দুইজনের বমির উপক্রম হলো। অন্যরা সবাই মুখে হাত দিলো। কয়েকজন দৌড়ে গেল টয়লেটে।

করজিভস্কি বললেন, আমি দেখালাম কীভাবে আপনি যখন খাবার খান তখন খাবারটাই খান না, শব্দও খান। এবং প্রকৃত খাবারের স্বাদের চাইতে এই শব্দের স্বাদ প্রায়শই বেশী শক্তিশালী।

করজিভস্কি দেখালেন, কীভাবে ভাষা, শব্দ, বাক্য আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের ধারণা পরিবর্তন করে দিতে পারে বাস্তবের সাথে মিল না থাকলেও।

কী শব্দ বাক্য আপনি প্রতিদিন অবলীলায় গ্রহণ করছেন, এবং সেগুলি আপনার বাস্তবতা কীভাবে পরিবর্তন করে দিচ্ছে, খেয়াল করেন কী?