৯৬
নিরন্তর আমার এ অন্তর
কাঁদছে শুধু কাঁদছে!
কীজন্যে অন্তরের এ কান্না
আমিও কিছু বুঝি নে।
যত যা পেয়েছি ধন্য জীবন
যত যা পাইনি দুখী না মন,
কী রেখে যাচ্ছি এটাই কথন
কী দিলাম পৃথিবীকে।
নিরন্তর আমার এ অন্তর
কাঁদছে শুধু কাঁদছে॥
যা করলাম—করেছি যা জীবনে
সবই মনে হয় ভুল!
আপন আপন করে মরেছি শুধু
আপনচে নেই অতুল।
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বুঝছি
পিঠের আঘাতচে বুকের ব্যথা কী,
আপনার বলে থাকে কিছু যদি
আপন কর্মের মাঝে।
নিরন্তর আমার এ অন্তর
কাঁদছে শুধু কাঁদছে॥
২৬ পৌষ, ১৪২৬—মানামা, আমিরাত
৯৭
শ্রেষ্ঠ কর্মে
স্রষ্টার ধর্মে
দেখলাম যা নিদর্শন,
চৌকস সক্ষমে
সৃষ্টি কর্মক্ষমে
করা হয়েছে সৃজন।
মনেপ্রাণে যা চিনাল
মন ভালো তো সব ভালো,
বৃক্ষরাজি ফুলে
প্রাণের মূলে
পেয়েছি সন্ধান অতুলন।
শ্রেষ্ঠ কর্মে
স্রষ্টার ধর্মে
দেখলাম যা নিদর্শন॥
দুখীর দরদে
দুখীই জুটে
এটাই দুখীর নিয়তি,
সুখীর আনন্দে
সুখীই ছুটে
দুয়েতে বড়ই সংগতি।
জ্ঞাতিতে জ্ঞাতির টান
জ্ঞাতি ছাড়া সব সমান,
বৃষ্টির জলে
নদী সজলে
দেখি নে বিরূপ কখন।
চৌকস সক্ষমে
সৃষ্টি কর্মক্ষমে
করা হয়েছে সৃজন॥
৩০ পৌষ, ১৪২৬—মানামা, আমিরাত
৯৮
ধনী
তোমার দুনিয়াতে এসেছিলাম
চাইনি লেনের হাত।
দানী
দেনে অধিকারিত্ব চেয়েছিলাম
প্রাণের জগন্নাথ॥
তুমি দিলে না বলে সামর্থ্য
দিতে পারিনি আমি কিছুই তো,
ভাগ্যের ভাণ্ড এতটা নিকৃষ্ট
মনে বড় ঘাত।
ধনী
তোমার দুনিয়াতে এসেছিলাম
চাইনি লেনের হাত॥
ওই
দুখীরা আমার সামনে কেঁদে যায়
বড়ই আমার দুখ।
কই
সুখীরা হেসে যাচ্ছে হাসুক সদায়
এ প্রার্থনায় সুখ॥
অকৃতজ্ঞকারীর নেই সদ্গতি
হিংসাকারীরও তদ্রূপ নেই উন্নতি,
জীবনের স্মরণে রেখে যাচ্ছি কী
মিলাতে বসি খাদ।
ধনী
তোমার দুনিয়াতে এসেছিলাম
চাইনি লেনের হাত॥
১০ মাঘ, ১৪২৬—মানামা, আমিরাত
৯৯
বাবার কোলে নিরাপদ নয়
না মায়ের কোলে আপদহীন
আজকের শিশু!
এরচে জগতে আর কী হয়
সুরক্ষিত স্থান সন্তানসন্ততির
বল হে প্রভু?
দয়াহীন কেন আজ
এমন স্নেহবন্ধনের মাঝ?
আদরের চুম্বনে বিষের কাজ
কেন ফলপ্রসূ?
বল হে প্রভু?।
কতটা নির্মম হলে যে মানুষ
হতে পারে সন্তানের হন্তারক
কতটা পশুত্বপর?
নির্দয় কত হলে হয় অমানুষ
দেখার বাকি ছিল বোধহয়
মাতাপিতার অন্তর!
দেখালে মার আঁচলাশ্রমে
সন্তানের বিপদ কী জন্মে!
বাবার ছায়াতলে ক কী মর্মে
আপদমুক্ত কমু?
বল হে প্রভু?।
১৪ মাঘ, ১৪২৬—মানামা, আমিরাত
১০০
তোমরা বলছ,
তোমরা উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছ পৃথিবী।
আমরা বলছি,
আমরা সবে বিলুপ্তির পথে আছি ঘুরিফিরি।
তোমাদের কথা আর আমাদের দেখা
দুয়ের পার্থক্য যেন আলোকবর্ষ ব্যবধা
চিন্তা কী,
নিজের ধ্বংস নিজেরাই করছি মিলেমিশি॥
কোথা শুনছি,
পাশের ঘর পুড়লে নিজের ঘর পুড়বে।
কথা সত্যি,
দাঁড়িয়ে তামাশা দেখনেওয়ালারও রক্ষা নে।
ভাবছি—আমাদের গতি যাই হোক-না
তোমাদের জন্যে রইল মঙ্গলকামনা
প্রার্থনা করি,
আমরা না থাকি থাকুক তোমাদের বসতি॥
১৭ মাঘ, ১৪২৬—মানামা, আমিরাত